নায়করাজকে হারানোর ৭ বছর
ঢালিউডের নায়করাজ রাজ্জাক চলে গিয়েও যেন থেকে গেছেন দীর্ঘ এক ছায়া হয়ে, বাংলার হৃদয়ে। ৭৫ বছরের জীবনের মধ্যে পাঁচ দশকের বেশি সময় দিয়েছেন সিনেমায়। এ দেশের সিনেমা শিল্পের উত্থানে যে’কজনের ভূমিকা সর্বাধিক, তিনি তাদের মধ্যে অন্যতম। তবে অন্য অনেকের চেয়ে তিনি একটি জায়গায় ব্যতিক্রম- অভিভাবকত্ব। শুধু নিজের কাজটুকু করেই তিনি দায় সারতেন না, বরং সবাইকে সহযোগিতা-পরামর্শ দিয়ে ইন্ডাস্ট্রির পিতা তথা রাজার ভূমিকাও পালন করতেন।
আজ বুধবার (২১ আগস্ট) নায়করাজের চলে যাওয়ার দিন। ২০১৭ সালের এই দিনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন না ফেরার দেশে। দেখতে দেখতে রাজাহীন ঢালিউডের ৭ বছর কেটে গেছে।
সাংগঠনিক কোনও আয়োজনের খবর না মিললেও রাজ্জাকের জন্ম ও মৃত্যুদিনে তার পরিবারের পক্ষ থেকে দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে। রাজ্জাকপুত্র নায়ক সম্রাট বাংলা বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘প্রতি বছরই প্রায় একই নিয়মে এই দিনটিকে সাজাই। বনানী গোরস্থানে বাবার কবর জিয়ারত হয়, মাদ্রাসা, মসজিদ এবং বিভিন্ন স্থানে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়, পারিবারিকভাবে কোরআন খতম হয় আর মসজিদে থাকে মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন। আমার বাবার জন্য সবার কাছে একটু দোয়া চাই। আর কিছু নয়।’
নায়করাজের পুরো নাম আব্দুর রাজ্জাক। জন্মেছেন ১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি কলকাতার নাকতলা এলাকার জমিদার বাড়িতে। ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি আকৃষ্ট হন তিনি। তৎকালীন বম্বে গিয়েছিলেন অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে। কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি। তাই কলকাতায় ফিরে আসেন। আর মাত্র ২০ বছর বয়সেই পারিবারিক আয়োজনে বিয়ে করেন।
এরপর কলকাতায় দাঙ্গা শুরু হলে সেখানে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকা কঠিন হয়ে যায়। তাই ঢাকায় চলে আসেন রাজ্জাক। এখানে এসেও নিজের স্বপ্নটাকে বুকে নিয়ে নাম লেখান সিনেমা অঙ্গনে। ১৯৬৪ সালে সহকারী পরিচালক হিসেবে ঢাকার সিনেমায় কাজ শুরু করেন। এর দু’বছর পর আসেন অভিনয়ে। ‘১৩ নম্বর ফেকু ওস্তাগার লেন’ দিয়ে তার বর্ণিল অভিনয় অধ্যায়ের সূচনা হয়।ৎ
দীর্ঘ রূপালি জীবনে তিন শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন রাজ্জাক। বাণিজ্যিক মাসালা সিনেমা থেকে গল্পনির্ভর ছবি, সবখানেই দ্যুতি ছড়িয়েছেন। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সিনেমা হলো- ‘বেহুলা’, ‘আগুন নিয়ে খেলা’, ‘এতটুকু আশা’, ‘নীল আকাশের নীচে’, ‘জীবন থেকে নেয়া’, ‘ওরা ১১ জন’, ‘অবুঝ মন’, ‘রংবাজ’, ‘আলোর মিছিল’, ‘অশিক্ষিত’, ‘ছুটির ঘণ্টা’, ‘বড় ভালো লোক ছিল’ ইত্যাদি।
শুধু অভিনয় নয়, নির্মাণেও নৈপুণ্য দেখিয়ে গেছেন তিনি। তার পরিচালিত ছবির সংখ্যা ১৬।
এক জীবনে প্রায় সব অর্জনই নিজের করে নিয়েছেন তিনি। দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন ২০১৫ সালে। শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন পাঁচবার। অর্জন করেছেন আজীবন সম্মাননাও। খ্যাতি পেয়েছেন নায়করাজ হিসেবে।
তবে পুরস্কারের ঊর্ধ্বেও তার প্রাপ্তি হলো সর্বস্তরের মানুষ ও ঢালিউড ইন্ডাস্ট্রির ভালোবাসা। বলা বাহুল্য, ঢালিউডের অন্যতম ক্লিন ইমেজের সর্বজনপ্রিয় তারকা তিনি। যার অভাব প্রতি মুহূর্তে ভাবায়, ভোগায় ঢাকাই সিনেমাকে।