সাদিয়া আয়মানের কাছে ক্ষমাও চাইলেন, সাফাইও গাইলেন অভিনেতা
ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে আওয়ামীপন্থী তারকাদের ‘আলো আসবেই’ নামক একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খোলা হয় সাবেক তথ্যপ্রতিমন্ত্রী এ আরাফাত ও সংসদ সদস্য চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদের নেতৃত্বে। সেই গ্রুপের বেশকিছু স্ক্রিনশট গতকাল (৪ সেপ্টেম্বর) প্রকাশ্যে এসেছে। তাতে উঠে এসেছে গ্রুপে সক্রিয় শিল্পীদের কথোপকথন।
তারমধ্যে একটি বিষয় ছিলো এ সময়ে ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মানকে নিয়ে। আন্দোলন চলাকালে বিটিভির অফিস ভাঙচুর দেখে কান্নাকাটি করায় অভিনেত্রী-সাবেক সংসদ সদস্য শমী কায়সারকে নিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন তরুণ অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মান। পোস্টটি সেই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে শেয়ার করেছিলেন অভিনেতা মিলন ভট্টাচার্য। যেখানে সাদিয়াকে এ সময়ের ‘তথাকথিত’ জনপ্রিয় অভিনেত্রী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়।
এ জন্য এবার ক্ষমা চেয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন অভিনেতা। সেই সঙ্গে জানিয়েছেন কেন গ্রুপটিতে ছিলেন তিনি? গ্রুপে না থাকলে তুলে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছিল তাকে।
মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টার দিকে ফেসবুক পোস্টে মিলন লেখেন, ‘আজ ফেসবুকে এবং গণমাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় আমাকে নিয়ে কিছু পোস্ট ভাইরাল হচ্ছে। কিছু কথা আমি পরিষ্কার করতে চাই। মানুষের যেকোনো দলকে সাপোর্ট করার স্বাধীনতা থাকতেই পারে তার মানে এই নয় কোন হত্যা বা অন্যায়ের পক্ষে থাকবো বা সেটাকে সমর্থন করবো। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে যারাই মাঠে নেমে বিভিন্ন প্রোগ্রাম করেছে সেখানে আমি কখনোই যাই নাই। কারণ আমি মনেপ্রাণে ছাত্র আন্দোলনের পক্ষেই ছিলাম। আমাকে বলা হয়েছিল এই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপটি ছাত্র আন্দোলনের সমস্ত দাবি দাবা মেনে নিয়ে দেশটি যাতে শান্তিতে চলে সেই জন্য তৈরি করা।’
ক্ষমা চেয়ে এই অভিনেতা আরও লেখেন, ‘সাদিয়ার কথা বলতে চাই, আমি ফোনে বলেছিলাম যে আপনারা যে শান্তির আন্দোলন করছেন সেটা কিন্তু প্রকাশিত নয় আমাদের আর্টিস্টরাই আপনাদের বিরুদ্ধে পোস্ট করছে, তাহলে আমরা তো ছাত্রদের পক্ষে কাজ করছি সেটা তো মনে হচ্ছে না। তখন তারা জানতে চেয়েছিল কারা পোস্ট করছে সেই প্রেক্ষিতে আমি এই ছবিটি দিয়েছিলাম। কারণ আমার বিশ্বাস ছিল এরা ছাত্রদের পক্ষেই কাজ করবে। আমি যখন দেখলাম ছাত্রদের বিরুদ্ধে যাচ্ছে তখন আমি আশ্চর্য হয়েছি কারণ আমার ধারণা ছিল না এরা এমন করবে।’
গ্রুপ থেকে বের হবার কোন সুযোগ ছিল না জানিয়ে মিলন লেখেন, ‘কারণ সবসময় হুমকির উপর রাখতো। সাদিয়ার ছবি হয়তো এভাবে আমার দেয়া উচিত হয়নি তার জন্য তার কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। কিন্তু কোন উদ্দেশ্যে দিয়েছি সেটা আমি পরিষ্কার করলাম। ব্যক্তিগতভাবে অনেক প্রশাসনিক প্রেসারের মধ্যে আমাদের রাখা হয়। এমনকি আমার পরিবারের উপর হুমকি দেয়া হয়। কাজ বন্ধ করে দিবে সেটাও বলা হয়। এমন পরিস্থিতিতে যারা পড়েছে তারাই জানে। এখন বলতে পারেন এ কথা, এখন কেন বলছি? ভাই আমার এত সাহস নাই। আমাদের লিস্ট করা হইছে অনেককে উঠায় নিয়ে যাওয়া হবে। অনেক প্রেসার। আপনারা যে গ্রুপটা দেখছেন সেখানে ছাত্রদের বিরুদ্ধে আমি কখনোই কোনো কমেন্ট করি নাই। ভেতরে ভেতরে ছাত্রদের পক্ষেই আমি কথা বলেছি যারা আমার কাছের তারা জানেন। আমি বরাবরই ছাত্রদের পক্ষেই ছিলাম। রাজপথে ছাত্রদের সাথেই ছিলাম। সর্বোপরি আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ আমাকে ভুল বুঝবেন না।’
তবে কে বা কারা এই অভিনেতাকে হুমকি দিয়েছে তা জানা যায়নি। জানতে ফোন দিলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি। মিলনের পোস্টে অনেকেই মন্তব্য করেছেন নিজের দোষ ডাকতে ভোল পাল্টিয়েছেন তিনি। তবে পোস্ট দেওয়ার কিছুক্ষণ পরই স্ট্যাটাসটি সরিয়ে নেন এই অভিনেতা।
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে সাদিয়া আয়মান বলেন, ‘‘আপনাকে ধন্যবাদ মিলন ভট্টাচার্য দাদা, মানুষের মতো দেখতে, শিল্পী নামে শয়তান বেশধারীদের কাছে আমার মতো ‘এই সময়ের তথাকথিত জনপ্রিয় অভিনেত্রী’কে চিনিয়েছেন, যে ভুলকে ভুল বলতে জানে, সত্য কে সত্য বলতে জানে। গ্রুপের নাম দিয়েছেন ‘আলো আসবেই’ তা বেশ ভালো, তবে আপনারা জানেন আপনাদের নিজেদের জীবনে, মস্তিষ্কে সত্যিকারের আলোর যে ভীষণ প্রয়োজন?’’