সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রল হতে হবে এমন কিছু করি না: রিয়েলি
চিত্রনায়িকা নিপা আহমেদ রিয়েলির চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় ২০২১ সালে অনন্য মামুন পরিচালিত ‘মেকাপ’ সিনেমার মাধ্যমে। হাতে রয়েছে ঈদুল ফিতরের উদ্দেশ্যে নির্মিত ‘খোদা হাফেজ’ সিনেমাটি। এই নায়িকা বার্তা২৪.কমের ক্যামেরার ধরা দিয়েছেন ভিন্ন আমেজে। তার সঙ্গে কথা বলেছেন মাসিদ রণ
মাসিদ রণ: আপনার তৃতীয় ছবি ‘খোদা হাফেজ’-এর টিজার মুক্তি পেয়েছে। ছবিটি নিয়ে জানতে চাই...
নিপা আহমেদ রিয়েলি: টিজারে আমরা বেশ ভালো সাড়া পেয়েছি। দর্শক বলেছে, আমাকে তারা নতুনভাবে দেখতে পাচ্ছে। আসলেই তাই, এর আগে আমার যে দুটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে (‘মেকাপ’ আর ‘ক্যাসিনো’) তাতে গ্ল্যামারাস চরিত্রে অভিনয় করেছি। তবে এই সিনেমায় আমাকে একেবারেই সাদামাটা একটা মেয়ের চরিত্রে দেখা যাবে। ছবিটির শুটিং পুরোপুরি শেষ। শুধু একটি গানের কাজ বাকী। পুরো শুটিং দেশে হলেও গানের শুটিং করতে আমরা বিদেশের লোকেশনে যাব বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। অনিক বিশ্বাস পরিচালিত এই ছবিতে আমার বিপরীতে আছেন সাঞ্জু জন আর নবাগত দিদার। ঈদুল ফিতরে ছবিটি মুক্তির পরিকল্পনা করছে জাজ মাল্টিমিডিয়া। আশা করছি দর্শক ছবিটি পছন্দ করবেন।
মাসিদ রণ: হাতে আর কোন কাজ আছে?
নিপা আহমেদ রিয়েলি: আমি আসলে সিনেমার অভিনেত্রী হিসেবেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছি। তাই যে কোন কাজ পেলেই করছি না। শুধু টাকার কথা ভাবলে হয়তো মডেলিং, টিভি নাটক কিংবা শো রুম উদ্বোধনের কাজগুলো করতাম। শুধু ভালো মানের সিনেমাতেই কাজ করতে চাই, যাতে দর্শকের একটা আস্থা তৈরি হয় আমার ওপর।
তবে বর্তমান সময়ে ওটিটি দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তাই সিনেমার পাশাপাশি একটি ওয়েব সিরিজের কাজ করেছি। সেটিও পরিচালনা করেছেন আমাদের চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নির্মাতা সৈকত নাসির। সিনেমার আদলেই ‘নেটওয়ার্ক’ নামের সিরিজটির শুটিং করেছেন তিনি। আমরা পরপর দুই সিজনের কাজ শেষ করেছি। এখন ভালো একটি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পাবে সিরিজটি। এই সিরিজে আমাকে অ্যাকশন লেডি হিসেবে দেখতে পাবেন দর্শক।
আমার কাজের দিকে খেয়াল করলে দেখবেন প্রতিটি চরিত্রই একটি থেকে আরেকটি ডিফরেন্ট। আমি আসলে অভিনয়টা খুব ভালোবাসি। অভিনয় নিয়ে অনেক দূর যেতে চাই। তাই নিজেকে সব ধরনের চরিত্রে দেখতে চাই।
মাসিদ রণ: অভিনয় ব্যস্ততার মাঝে প্রেম-ভালোবাসার জন্য সময় পান?
নিপা আহমেদ রিয়েলি: আমি আসলে এখনই ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাই না। আমি চাই আমার কাজ নিয়েই যেন আমাকে নিয়ে আলোচনা হয়। এজন্য দেখবেন আমাকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় অতোটা চর্চা নেই। কারণ, খুবই সচেতন থাকি এসব নিয়ে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রল হতে হবে এমন কোন কাজ বা এমন কোন কথা বলি না। এমনকি যে সব টক শোতে শিল্পীদের ডেকে নিয়ে ব্যক্তিগত বিষয়, জামা কাপড়ের দাম, সুগার ড্যাডি আছে কি না, এটা কে কিনে দিলো? ওটা কে কিনে দিলো- এসব প্রশ্ন করা হয় সেসব অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানালেও যাই না।
মাসিদ রণ: ঢালিউডে আপনি নতুন। নতুনদেরকে এই ইন্ডাস্ট্রি কতোটা সহজে গ্রহণ করে বলে আপনি মনে করেন?
নিপা আহমেদ রিয়েলি: আসলে নতুন পুরনো সব ধরনের শিল্পী নিয়েই তো ইন্ডাস্ট্রি চলে। ফলে নতুন বলে কাউকে এই ইন্ডাস্ট্রি দূরে সরিয়ে দেয় না। দিলে প্রতি বছর নতুন শিল্পী আসতো না। তবে এটাও ঠিক যে, একজন নতুন শিল্পী নিজেকে প্রমাণ করার জন্য উপযুক্ত সুযোগটুকু সহজে পান না। আমার মনে হয় সুযোগটা অন্তত দেওয়া উচিত, তাহলে না বোঝা যাবে কে কতোদূর যেতে পারবে।
আর নতুনদেরও ইন্ডাস্ট্রিতে আসার আগে কিছু শিখে আসতে হবে। দূর থেকে শোবিজ ইন্ডাস্ট্রির গ্ল্যামার দেখে চলে আসলে হবে না। এটাও অনেক কষ্টের জায়গা, সবাই অনেক পরিশ্রম করে নিজের জায়গা নিজে তৈরি করেন। ফলে কাজ করতে হলে অভিনয়, নাচ, কথা বলা, ফ্যাশন সেন্স- এসব একটু হলেও শিখে তারপর আসা উচিত।
মাসিদ রণ: অভিনয় নিয়ে আপনার অনেক স্বপ্নের কথা বললেন। কিন্তু বিয়ের পর যদি শশুরবাড়ি থেকে কোন বাঁধা আসে?
নিপা আহমেদ রিয়েলি: আমি যেহেতু অভিনয়টা চালিয়ে যেতে চাই, তাই অবশ্যই এমন কাউকেই জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নেবো যিনি আমার অভিনয় পেশাকে সম্মান করবেন এবং সাপোর্ট করবেন।
মাসিদ রণ: জীবনসঙ্গীর মধ্যে কোন গুণগুলো প্রত্যাশা করবেন?
নিপা আহমেদ রিয়েলি: জীবনসঙ্গী হিসেবে আমার খুব বেশি চাওয়া নেই। তাকে আমি স্পেস দেবো, সব বিষয়ে নাক গলাবো না। সে এতোদিন যেভাবে বড় হয়েছে আমি চাইবো না সেসব ভুলে নিজেকে বদলে ফেলুক। শুধু এইটুকু চাই, যেন আমার সঙ্গে তিনি সবকিছুতে সৎ থাকেন। অনেক টাকা পয়সাওয়ালা মানুষও আমি চাই না। অতো টাকা পয়সার পেছনে ছুটলে তো নিজেই শোবিজে অনেক ধরনের কাজ করতে পারতাম। আমি তা না করে শুধু ভালো কিছু চরিত্রে অভিনয় করতে চেয়েছি। সেটা করতে পারলেই আমার সন্তুষ্টি হবে।
মাসিদ রণ: শোবিজে নারীদের যৌন হয়রানির শিকার হওয়া নতুন কিছু নয়। আপনার ছোট্ট ক্যরিয়ারে এমন কিছুর সম্মুখীন হতে হয়েছে কি?
নিপা আহমেদ রিয়েলি: অবশ্যই যৌন হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। খারাপ প্রস্তাব দেয়াটাকেও আমি যৌন হয়রানি বলেই মনে করি। আমি সিনেমায় অভিনয় করতে এসেছি, অনেক বেশি সততার সঙ্গে কাজটি করতে চাই। এখন কেউ যদি আমাকে কাজ দেয়ার কথা বলে অন্য উদ্দেশ্য হাসিল করতে চায় তাহলে তারসঙ্গে কখনোই কাজ করবো না। কিন্তু কাজের সূত্রে মিটিং-এ গিয়ে আমাকে বাজে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমি সোজাভাবে তাদের জানিয়ে দিয়েছি আমি অনৈতিক কিছু করে কাজ করতে চাই না।
তবে একটা কথা বলতে চাই। শুধু শোবিজে নয়, সমাজের যে কোন ক্ষেত্রেই কিন্তু নারীদের যৌন হয়রানির শিকার হতে হয়। রাস্তায় একটি মেয়ে হাটলে অনেক পুরুষ তাকে খুব বাজেভাবে দেখে। এটাও তো এক ধরনের যৌন হয়রানি। তবে আমরা মেয়েরা সব সময় এগুলোকে আমলে না নিয়ে শুধু কাজটাই করি। তবে সীমালঙ্ঘন করলে অবশ্যই সেটা নিয়ে মুখ খোলা উচিত। যাতে সেই লোকটি আর কারও সাথে একই আচরণ না করতে পারে। এজন্য আমি মি টু মুভমেন্টকে সমর্থন করি। যারা মি টু নিয়ে মুখ খুলেছেন তাদের সাহসের তারিফ না করে পারা যায় না।