ধর্মান্তরিত গায়ক মনি কিশোরের চাওয়া, তাকে কবর দেওয়া হোক
একেবারেই নিরবে নিভৃতে না ফেরার দেশে চলে গেছেন ‘কি ছিলে আমার, বলো না তুমি’খ্যাত গায়ক মনি কিশোর। এই শিল্পীর মরদেহ উদ্ধার টিমে ছিলেন রামপুরা থানার এসআই জুবায়ের রহমান।
তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমরা উনার প্রতিবেশীদের কাছ থেকে খবর পাই। এরপর বাড়িওয়ালা আর এলাকাবাসীর উপস্থিতিতে উনার বাসায় গিয়ে মরদেহ পাই। এখনো ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসেনি। তাই স্পষ্ট করে উনার মৃত্যুর কারণ বলা যাচ্ছে না। তবে মরদেহ থেকে যে ধরনের গন্ধ ছড়াচ্ছিল তা দেখে ধারণা করতে পারি, উনি কয়েকদিন আগেই মারা গেছেন। যেহেতু একা থাকতেন বাসায়, তাই হয়তো কেউ টের পায়নি যে উনি মারা গেছেন। তবে আমরা তার শরীরে কোন আঘাত বা আত্মহত্যার কোন লক্ষন পাইনি। ধারণা করছি, অসুস্থতা থেকেই উনি মারা গিয়েছেন।’
নব্বই দশক থেকেই গান গেয়ে শ্রোতার মন জয় করেছেন মনি কিশোর। শুধু ‘কী ছিলে আমার, বলো না তুমি’নয়, ‘সেই দুটি চোখ কোথায় তোমার’, ‘তুমি শুধু আমারই জন্য’, ‘মুখে বলো ভালোবাসি’, ‘আমি মরে গেলে জানি তুমি’সহ বেশকিছু জনপ্রিয় গানের শিল্পী মনি কিশোর। অডিওতে চুটিয়ে কাজ করেছেন এক সময়। তার সবচেয়ে শ্রোতাপ্রিয় গান ‘কী ছিলে আমার’ তারই সুর করা ও লেখা।
কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে ছিলেন লোকচক্ষুর অন্তরালে। অনেকটা অভিমান থেকে নিজেকে আড়াল করে রেখেছিলেন। শেষ দিকে তো এমনও হয়েছে, কেউ যাতে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারে, নিজের ব্যবহৃত পুরোনো মুঠোফোন নম্বর বন্ধ করে দিয়েছিলেন।
রামপুরা টেলিভিশন ভবনের পাশে একটি ভাড়া বাসায় একা থাকতেন। গতকাল শনিবার রাতে চিরদিনের জন্য তার শেষ পৃথিবী ভ্রমণের খবর পাওয়া যায়। মারা যাওয়ার পর মরদেহ কী করতে হবে, তা বলে গিয়েছিলেন একমাত্র মেয়ে নিন্তিকে। নব্বই দশকের শুরুতে বিয়ে করেন মনি কিশোর। দেড় যুগ আগে তাদের দাম্পত্যজীবনের ইতি ঘটে। বিয়ের সময়ই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন মনি কিশোর। সে হিসেবে তার মরদেহের দাফন করা হবে বলে জানালেন ভাই অশোক কুমার।
তিনি জানালেন, মনি কিশোর বেঁচে থাকা অবস্থায় তার দাফনের বিষয়টি একমাত্র মেয়ে নিন্তিকে জানিয়েছিলেন। আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে। এরপর তারা যা সিদ্ধান্ত নেবে, সেখানেই মরদেহ দাফন করা হবে। মেয়ে শুধু এটুকু বলেছে, ওর বাবাকে যেখানে কবর দেওয়া হচ্ছে, সেখানে যেন একটা চিহ্ন রাখা হয়।
নব্বই দশকের শুরুতে ‘চার্মিং বউ’ অ্যালবামের ‘কী ছিলে আমার’ গানটি মনি কিশোরকে ব্যাপক পরিচিত করে দেয় সংগীতাঙ্গনে। একে একে ৩০টির বেশি একক অ্যালবাম করে ফেলেন। তারপর একসময় অডিও জগৎ নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে যেতে থাকল। একটা সময় মনি কিশোরের আর নিয়মিত দেখা মেলেনি।
তবে চলতি বছর এক সাক্ষাৎকারে জানান, তিনি আবারও গান করছেন। এমনকি পুরোনো গানগুলো ইউটিউবে দিচ্ছেন পর্যায়ক্রমে। জনপ্রিয় গান ‘কী ছিলে আমার’ নতুন করে প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তার ভাষ্য ছিল, এ প্রজন্মের শ্রোতারা গানটি শুনেছেন। ইউটিউবে প্রচুর ভিউ। স্টেজে গেয়ে থাকেন তরুণেরা। কিন্তু গানের মূল গায়ককে তারা চেনেন না। গানটির সুরকার ও গীতিকার কে, তা জানেন না। এ রকম জায়গা থেকে ভেবেছেন, এ প্রজন্মের কাছেও গানটি পরিচিত হোক। তাদের মধ্যে এটি ছড়িয়ে দেওয়া দরকার। এ ছাড়া আলাদা করে দেড় শ গান তৈরি করেছেন। তিনি বলেছিলেন, ‘গানগুলো আমার জীবদ্দশায় প্রকাশ করতে চাই না। কিছু গান মৃত্যুর পরও প্রকাশ পাবে।’ মনি কিশোর তার এই গানগুলো প্রকাশের আগেই চলে গেলেন অনন্তযাত্রায়। এই শিল্পী যেমনটি চেয়েছিলেন, হয়তোবা সেই ইচ্ছা পূরণ করবে তার পরিবার। তার তৈরি হওয়া গানগুলো হয়তোবা সামনে প্রকাশিত হবে।
মনি কিশোরের প্রকৃত নাম অরুণ কুমার মণ্ডল। পুলিশ কর্মকর্তা বাবা অনিল কুমার মণ্ডলের ছেলে অরুণ কুমার মণ্ডল ছিলেন কিশোর কুমারের ভক্ত। ডাকনাম ছিল মনি। কিশোর কুমারের ভক্ত ছিলেন বলে নামের সঙ্গে ‘কিশোর’ জুড়ে নিয়েছিলেন। জীবিত থাকা অবস্থায় মনি মজা করে বলেছিলেন, ‘কুমার শানু নিয়েছেন “ওস্তাদের” নামের একাংশ। আমি নিয়েছি তার নামের আরেক অংশ।’