শিল্পীর ঠিক করা উচিত তিনি কোন শ্রেণির শিল্পী হবেন: পুতুল
জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী, কম্পোজার, উপস্থাপক ও লেখক সাজিয়া সুলতানা পুতুল। নিজের পরিচয়ের সব ক’টি কাজ নিয়েই রয়েছে তার ব্যস্ততা। এরই ফাঁকে বার্তা২৪.কমের ক্যামেরার ধরা দিয়েছেন তিনি। সমসাময়িক বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন এই শিল্পী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাসিদ রণ
মাসিদ রণ: জীবনে কী চলছে এখন?
সাজিয়া সুলতানা পুতুল: নাথিং স্পেশ্যাল। কাজ আর সংসার ধর্মেই কাটছে জীবন। গান করা, লেখালেখি, উপস্থাপনা সবটাই চলছে। এখন স্টেজ শো হচ্ছে না বললেই চলে। তাই ঘরের কাজ আর স্টুডিওভিত্তিক কাজই বেশি করা হচ্ছে। মেয়েকে নিয়ে, পরিবারের সবাই নিয়ে চলে যাচ্ছে সময়।
মাসিদ রণ: গানের নতুন কোন খবর আছে?
সাজিয়া সুলতানা পুতুল: আমার কাছে সব সময় নতুন গানের খবর থাকে। কারণ আমি মৌলিক গান করতে খুব ভালোবাসি। অনুষ্ঠানেও নিজের গান করতে চাই। দর্শকের অনুরোধে গুণী শিল্পীদের গান যে একদম করি না, তা নয়। তবে নিজের পছন্দ মৌলিক গান করা। এই মৌলিক গানগুলোই একটা সময় আমাকে দর্শকের মাঝে স্বকীয়তা এনে দেবে, আমাকে বাঁচিয়ে রাখবে বলে বিশ্বাস করি। গত মাসেই একটি মৌলিক গান প্রকাশ পেয়েছে। আশীষ দেব রয়ের কথা এবং সুরে, সৈয়দ রেজা আলীর সঙ্গীতে ‘ডুবে যাবে চাঁদ’ শিরোনামের গানটি যারা শুনেছেন তারা প্রশংসা করেছেন। একই গীতিকারের আরো একটি গান আগামী মাসে প্রকাশিত হবে।
মাসিদ রণ: ‘প্রজেক্ট রেজা পুতুল’-এর কোন আপডেট আছে?
সাজিয়া সুলতানা পুতুল: ‘প্রজেক্ট রেজা পুতুল’ ইউটিউব চ্যানেলে তিনটি গান প্রকাশিত হবে অচিরেই। এখন আরও নতুন তিনটি গানের কাজ করছি। তারমধ্যে একটি গানের কথা আলাদা করে একটু বলতে চাই, কারণ গানটি নিয়ে আমি এবং আমার স্বামী (সুরকার ও কম্পোজার সৈয়দ রেজা আলী) খুবই এক্সাইটেড। আমরা অনেকদিন ধরেই একটা রাগাশ্রয়ী গান করবো ভাবছিলাম। অবশেষে সেই গানটির কাজ ধরেছি। এছাড়া আরও দুটি গান করছি যা আমার জন্য একেবারেই নতুন। সম্পূর্ণ ইলেকট্রনিক্স মিউজকনির্ভর গান হবে, এ ধরনের টেকনো বেইজড গান আগে কখনো করিনি। তাই নতুন প্রতিটি গানেই আমার আলাদা উত্তেজনা রয়েছে। গানগুলোর কথা, সুর ও সঙ্গীতায়োজন সৈয়দ রেজা আলীর।
মাসিদ রণ: এবার বইমেলায় আপনার নতুন বই আসবে কি?
সাজিয়া সুলতানা পুতুল: হ্যাঁ, বিগত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতা এবারও থাকবে। এর আগে আমার লেখা মোট ৯টি বই প্রকাশিত হয়েছে। এবার আসছে একটি উপন্যাস। এখনই উপন্যাসটির নাম বলতে চাই না। তবে এটুকু বলতে পারি, এ যাবতকালে যতো লেখা আমি লিখেছি তারমধ্যে এই উপন্যাসটি আমার সবচেয়ে প্রাণের কাছের। কারণ এই উপন্যাসের পরতে পরতে দর্শক আমাকেই খুঁজে পাবেন। আমি নিজেও লেখার সময় নিজেকে খুঁজে পাচ্ছি। তবে একথা বলে রাখি যে, এটা পুরোপুরি আমার গল্প নয়। যেহেতু আমি আমাদের শোবিজ অঙ্গনের গল্প নিয়ে এবারের উপন্যাস লিখছি ফলে আমাকে কিছু কিছু জায়গায় খুঁজে পাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।
মাসিদ রণ: আপনি নিজেও উপস্থাপনা করেন। কিন্তু সম্প্রতি টক শো’তে যাওয়া নিয়ে এক ধরনের নেতিবাচক মানসিকতার প্রকাশ পেয়েছে আপনার একটি ফেসবুক কমেন্টে। সে বিষয়ে কিছু বলবেন?
সাজিয়া সুলতানা পুতুল: দেখুন, আমার উপস্থাপনা নিয়ে দর্শনটাই আলাদা। আমার ‘পুতুলঘরের আত্মকথন’-এ যারা অতিথি হয়ে আসেন তাদের যে কাউকে প্রশ্ন করুন, আমি কখনোই তাদের কোন কিছু বলতে কোন রকম জোর করি কি না? তারা যতোটুকু বলতে চান ততোটুকুই বলার স্বাধীনতা রয়েছে আমার শো’তে। আর আমিও এমন কোন বিষয়বস্তু তুলে আনি না যাতে আমার অতিথি বিব্রতবোধ করেন। এটা আমার এথিকসের ব্যাপার।
তবে আজকাল শোগুলোতে এই চর্চা থাকে না। ফলে আমি কোন অনুষ্ঠানে যাবো আর কোন অনুষ্ঠানে যাবো না সেটি নিয়ে চিন্তায় থাকি। আগে থেকেই জেনে বুঝে টক শোতে যাওয়ার চেষ্টা করি। কারণ অযথা আমাকে নিয়ে আলোচনা বা সমালোচনা হোক সেটি কখনোই চাই না। এটা আসলে শিল্পীর ওপরও নির্ভর করে। শিল্পীর ঠিক করা উচিত তিনি কোন শ্রেণির শিল্পী হবেন। যে শিল্পী তার অডিয়েন্স হিসেবে মননশীল মানুষদের বেছে নেন তারা কখনোই এমন কোন কাজ বা কথা বলবেন না যাতে নিচু মানসিকতার পরিচয় পায়। আর যারা সস্তা পরিচিতি কিংবা আলোচনার জন্য যাচ্ছে তাই কথা বার্তা বলবে বুঝতে হবে তাদের অডিয়েন্সও ওই শ্রেণির! তাদের ওইসব কথা বার্তা শুনে হয়তো দর্শক সাময়িক বিনোদন পাবেন। কিন্তু ওই শিল্পীকে তারা হাসির পাত্র হিসেবেই দেখবেন। শিল্পীর কাজ, তার জীবনদর্শন দ্বারা যদি দর্শক আকৃষ্ট না হয় তবে সেই শিল্পী কখনোই বেঁচে থাকবেন না মানুষের মনে।