আমি একেবারেই সঙ্গীহারা হয়ে গেলাম: দিলারা জামান
আজ বিকেলে রাজধানীর নিজ বাসাতেই মৃত্যু বরণ করেছেন দেশের প্রতিথযশা অভিনেতা মাসুদ আলী খান। মৃত্যুর আগে তিনিই ছিলেন দেশের সবচেয়ে প্রবীণ অভিনেতা। আর অভিনেত্রীদের মধ্যে এখন সবচেয়ে প্রবীণ হলেন জনপ্রিয় তারকা দিলারা জামান। মাসুদ আলী খান আর দিলারা জামানের বন্ধুত্বের বয়সও বহু বছর। শেষ বিদায়ে প্রিয় বন্ধুকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন দিলারা জামান। কথা বলেছেন মাসিদ রণ
আজ আমাকে অভিনেতা মামুনুর রশিদ ফোন করে স্বাস্থ্যের খোঁজ খবর নিচ্ছিলেন। তারও বয়স হয়েছে, আমিও তার কুশল জানতে চাইলাম। অনেকদিন পর মামুনুর রশিদের ফোন পেয়ে খুব ভালো লাগছিলো। সেই রেশ থাকতে থাকতেই পেলাম মাসুদ আলী খানের মৃত্যুর খবর। নিমিষেই সব উল্টে গেলো। আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে খবরটি মেনে নিতে।
এক এক করে শূণ্যতা তৈরি হয়ে যাচ্ছে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে। মাসুদ আলী খানের মতো এমন অভিনেতা আর আসবে না। তার শূণ্যস্থানও কেউ পূরণ করতে পারবে না।
মাসুদ আলী খানের সঙ্গে আমার দেখা আশির দশকের শুরুর দিকে বিটিভির একটি নাটক করতে গিয়ে। তার দারুণ অভিনয়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম। এরপর এতো কাজ একসঙ্গে করেছি, কখন যে একজন সিনিয়র শিল্পী আমার বন্ধুপ্রতিম হয়ে গেলেন বুঝতেই পারিনি। ব্যক্তিজীবনে আমি অবশ্য তাকে ভাই বলেই ডাকতাম, বয়সে কিংবা অভিনয়জীবনে তিনি আমার সিনিয়র। কিন্তু সম্পর্কটা সিনিয়র-জুনিয়র ছিলো না। তাকে আমি মনে করতাম একাধারে সহকর্মী, বন্ধু ও পরিবারের মানুষ।
আমাকে নাম ধরেই ডাকতেন। আমার স্বামীকে খুব শ্রদ্ধা করতেন মাসুদ আলী ভাই। তাই মাঝে মাঝে মজা করে বলতেন, ভাবী অনেক দিন আপনার হাতের খিচুড়ি খাই না। তাকে খিচুড়ি খাওয়ানোর মানে তো শুধু তাকেই খাওয়ানো নয়, পুরো শুটিং ইউনিটকে খাওয়াতে হতো। আমার বেশ ভালো লাগতো খাওয়াতে। কারণ তিনি খাওয়ার পর যে তৃপ্তির হাসি হাসতেন সেটি দেখার জন্যই রান্না করা কোনো কষ্টই মনে হতো না। স্বামী আমাকে একা করে চলে গেলেন, এরপর প্রিয় বান্ধবী শর্মিলি আহমেদকে (প্রখ্যাত অভিনেত্রী) হারালাম। আর আজ সেই প্রিয় বন্ধুকে হারিয়ে বলতে পারেন আমি সঙ্গীহারা হয়ে গেলাম!
উনি কিন্তু দারুণ মজার মানুষ ছিলেন। সেন্স অব হিউমার ছিলো দেখার মতো। তবে একটা বাচ্চা মনও তার ভেতর লুকিয়ে ছিলো। একবার আমার বড় মেয়ের কাছে বেড়াতে গিয়েছিলাম জাপানে। উনার জন্য খুব সামান্য একটা উপহার এনেছিলাম। কিন্তু সেটা পেয়েই যে কী খুশি হয়েছিলেন সেটা বলে বোঝাতে পারবো না।
আজ উনার মৃত্যুর পর কতো স্মৃতি যে চোখের সামনে ভেসে আসছে! বিখ্যাত ধারাবাহিক নাটক ‘একান্নবর্তী’র শুটিংয়ের দিনগুলো খুব বেশি করে মনে পড়ছে। অনেক কাজ একসঙ্গে করেছি, হিসেবও নেই। একটা জুটি হয়েছিলো আমাদের। কিন্তু এই নাটকের কথাই বেশি মনে পড়ছে। আমাদের জুটি সে সময় অসম্ভব পছন্দ করেছিলো দর্শক। গত বছরও আমি, অপি করিম, সুইটিসহ ‘একান্নবর্তী’ নাটকের অনেকে মাসুদ আলী ভাইকে তার বাসায় দেখতে গিয়েছিলাম। দারুণ একটি দিন কাটিয়েছিলাম আমরা।
আমি চাই আল্লাহ যেন আমার প্রিয় বন্ধু সহশিল্পী মাসুদ আলী ভাইকে ভালো রাখেন। কারণ তিনি আপাদমস্তক একজন ভদ্র মানুষ ছিলেন। জীবনটাকে অনেক নিয়মের মধ্যে পালন করতেন। সরকারি চাকরি আর অভিনয় পেশাকে দারুণভাবে সামলাতেন। তার কাছ থেকে আমিও শিখতাম আমার শিক্ষকতা পেশা আর অভিনয়জীবনকে ব্যালেন্স করার বিষয়টি।