গেল বছর নিজের জন্মদিনে ফার্স্টলুক প্রকাশের মাধ্যমে ‘জংলি’ নামে নতুন ছবির ঘোষণা দেন চিত্রনায়ক সিয়াম আহমেদ। গত বছর কোরবানির ঈদে ছবিটি মুক্তি পাওয়ার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে যায়। তবে নতুন বছরের প্রথমদিন সিয়াম জানিয়ে দিলেন, চলতি বছর সিনেমা হলে আসছে ‘জংলি’।
এই সিনেমার জন্য নিজের সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে গেছেন সিয়াম। তাই ‘জংলি’র চরিত্রটা গেল এক বছর আগলে ধরে রেখেছেন তিনি। চরিত্র হয়ে উঠতে চেষ্টার কোনো কমতি রাখেননি এই নায়ক।
বিজ্ঞাপন
থার্টি ফার্স্ট নাইটে সিয়াম ফেসবুকে লেখেন, ‘অভিনেতাদের জীবনে মাঝে মাঝে এমন চরিত্র আসে যার কারণে সে নিজের সর্বস্ব দিয়ে দিতে রাজি হয়ে যায়। ‘জংলি’ আমার জীবনে তেমনই এক চরিত্র হয়ে এসেছে এই বছর। হয়তো চুল-দাড়িতে এক্সটেনশন লাগালেই হতো তবুও প্রায় ৭ মাস চুল-দাড়ি কাটিনি। এক বছর চরিত্রটাকে আগলে ধরে রেখেছি। কারণ, চরিত্রটাকে যাপন করতে চেয়েছি, দর্শকদের নতুন কিছু উপহার দিতে চেয়েছি। আমি চেষ্টা করেছি, বাকিটা দর্শকের হাতে।’
‘জংলি’ ছবির গল্প লিখেছেন আজাদ খান, চিত্রনাট্য করেছেন যৌথভাবে মেহেদী হাসান ও কলকাতার সুকৃতি সাহা। পরিচালনার দায়িত্বে আছেন এম রাহিম। এতে রোমান্স, অ্যাকশন, ড্রামা, সাসপেন্স সব কিছুই আগে। বলা চলে, পুরাদস্তুর কমার্শিয়াল সিনেমা। সিনেমার শুটিং শেষে ভারতে পোস্ট প্রডাকশনের কাজও শেষ। চমক নিয়ে আসবে ‘জংলি’ যা চলতি বছর সিনেমা হলে দেখা যাবে বলে জানালেন সিয়াম।
বিজ্ঞাপন
তার কথায়, ‘২০২৪ সালে সবটুকু যার নামে করে দিয়েছি, সেই ‘জংলি’ নিয়ে আসছি ২০২৫ সালে। আপনারা সিনেমা হলে আসবেন। আমাদের গোটা টিমের প্রচণ্ড ভালোবাসা ও কষ্টের ‘জংলি’ দেখবেন সিনেমা হলে বসে। এটাই আমার কামনা। দারুণ চমক নিয়েই ‘জংলি’ আসছে ২০২৫ সাল।’
এর আগে সিয়ামকে নিয়ে অ্যাকশনধর্মী সিনেমা ‘শান’ বানিয়েছিলেন এম রাহিম। ‘জংলি’তেও সেই ধারা অব্যহত রেখেছেন নির্মাতা। ‘জংলি’র সিনেমায় সিয়ামের বিপরীতে আছেন শবনম বুবলী। এতে বিভিন্ন চরিত্রে আরও অভিনয় করেছেন, দিলারা জামান, শহীদুজ্জামান সেলিম, রাশেদ মামুন অপু, সোহেল খান, এরফান মৃধা শিবলু প্রমুখ।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের অগ্রগতি এবং উন্নয়নে একত্রে কাজ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চলচ্চিত্র শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ ফিল্ম স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন’ আগামী ২৯ জানুয়ারি আয়োজন করছে ‘সংস্কারে চলচ্চিত্র, পরিবর্তনে দেশ’ স্লোগানে ‘জাতীয় চলচ্চিত্র সম্মেলন ২০২৫’। এই আয়োজনটি হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে বিকাল ৩টা থেকে ৭টা পর্যন্ত।
চলচ্চিত্র একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর, সর্বাধুনিক অডিও-ভিজ্যুয়াল আর্ট যা গণযোগাযোগের মাধ্যমে সমাজকে প্রভাবিত করার অন্যতম হাতিয়ার। বিশ্বের অনেক দেশে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক খাতও বটে। বাংলাদেশে গত ৬০ বছরে চলচ্চিত্রকে একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ, কলা ও বাণিজ্যের মাধ্যম হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হলেও নানা কারণে তা সম্ভব হয়নি। দেশের প্রতিটি খাতে এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সহযোগিতায় সংস্কার কার্যক্রম চলমান। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সহায়তায় সকল অংশীজন মিলে চলচ্চিত্রকে বাংলাদেশের অন্যতম গণযোগাযোগ, বিনোদন, শিল্প চর্চা ও বাণিজ্যক খাত হিসেবে গড়ে তুলতে অতীব জরুরী ভিত্তিতে কিছু দাবি বাস্তবায়নের রূপরেখা চূড়ান্ত করাই জাতীয় চলচ্চিত্র সম্মেলন ২০২৫ এর মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আরেক উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করবেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সার্চ কমিটির আহ্বায়ক মোঃ আল আমিন রাকিব (তনয়)। উক্ত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন ৫০০’র অধিক চলচ্চিত্র শিক্ষার্থী, শিক্ষক, নির্মাতা, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকর্মী, অভিনয়শিল্পীসহ অনেকেই।
জাতীয় চলচ্চিত্র সম্মেলন ২০২৫ এ যেই বিষয় সমূহ উপস্থাপিত হবে-
১। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন এর সংস্কার
২। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন এর গঠন পরিবর্তন
৩। সিনেমা ডিজিটাল ডিস্ট্রিবিউশন, ই-টিকেটিং সার্ভার ও বক্স-অফিস
৪। জাতীয় চলচ্চিত্র কেন্দ্র
৫। টিকিট শেয়ার মানি
৬। চলচ্চিত্র শিক্ষার প্রসার
৭। গাজীপুর ফিল্ম সিটি
৮। চলচ্চিত্র আমদানি-রফতানি উন্মুক্তকরণ
৯। এন্টি-পাইরেসি সেল গঠন
১০। চলচ্চিত্রে সরকারি বিনিয়োগ সহ ১৮ এর বেশি সংস্কার ,কর্ম প্রস্তাবনা এবং দাবি উপস্থাপিত হবে।
টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে একটি প্রসাধনসামগ্রীর শোরুম উদ্বোধনের জন্য কথা ছিল ঢাকােই ছবির আলোচিত-সমালোচিত চিত্রনায়িকা পরীমণির। কিন্তু তিনি আসার খবর ছড়িয়ে পড়লে তাকে ঠেকাতে প্রস্তুতি নেয় স্থানীয় একটি মহল। এরপর চাপের মুখে ‘হারল্যান স্টোর’ নামে এলেঙ্গার টিন মার্কেটের ওই শোরুমের মালিক মীর মাসুদ রানা উদ্বোধনী অনুষ্ঠান স্থগিত করেন।
শনিবার (২৫ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৩টায় জেলার কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গার টিন মার্কেটে পরীমণির শোরুম উদ্বোধনের কথা ছিল।
স্থানীয়রা জানায়, প্রায় ১৫ দিন ধরে এলেঙ্গায় টিন মার্কেটে ‘হারল্যান স্টোর’-এর শোরুমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চিত্রনায়িকা পরীমনি উপস্থিত থাকার বিষয়টি জানিয়ে কর্তৃপক্ষ মাইকিং করে আসছিল। বিষয়টি নিয়ে দুই-তিন ধরে হেফাজতে ইসলামসহ স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা পরীমনিকে ঠেকাতে বিভিন্ন কর্মসূচির পরিকল্পনা করছিলেন।
পরীমণিকে যাতে এলেঙ্গার মাটিতে না আনা হয়, সে ব্যাপারে আন্দোলনসহ অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরীমণির উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বাতিলের ব্যাপারে পুলিশ ও শোরুম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন হেফাজতে ইসলামের নেতাসহ কয়েকজন মুসল্লি।
এ ছাড়া বিভিন্ন মসজিদে পরীমনির শোরুম উদ্বোধন ঠেকাতে আলোচনা হয়। এতে শোরুম উদ্বোধনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছিল, এলেঙ্গায় ততই উত্তাপের আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। এক পর্যায়ে শোরুম কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন চাপের মুখে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান স্থগিত করতে বাধ্য হয়।
শোরুমটির মালিক মীর মাসুদ রানা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পরীমণি থাকার কথা ছিল। এ নিয়ে হেফাজতে ইসলাম অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করে। তারা ঘোষণা দেন, পরীমণি এলে রক্তের বন্যা বয়ে যাবে। এ বিষয়ে বিভিন্ন মসজিদে আলোচনাও হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে হেফাজতে ইসলামের এক নেতা ফোন করেছিলেন। বিভিন্ন পরিস্থিতির কারণে থানা পুলিশ আপাতত নিষেধ করেছে। পরে কম্পানির সঙ্গে কথা বলে তাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি স্থগিত করেছি। পরে ফেসবুকে দেখেছি তাদের কর্মসূচিও বাতিল করেছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘১০-১২ দিন ধরে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছি। বিভিন্ন জায়গায় মাইকিং করেছি। আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। ব্যবসায় বড় ধাক্কা খেয়েছি।’
এই বিষয়ে কালিহাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবুল কালাম ভূঁইয়া গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রগ্রামটি নিয়ে কিছু হুজুর আপত্তি করেছিলেন। পরে কর্তৃপক্ষ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি স্থগিত করেছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহাদাত হুসেইন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘স্টোর কর্তৃপক্ষ আমার কাছে অনুমতি নিতে এসেছিল। তাদের শর্ত দেওয়া হয়েছিল সেখানে কোনো যানজট বা জনদুর্ভোগ করা যাবে না। সেটা মেনেই তারা রাজি হয়েছিল। তারা প্রগ্রামটি করতে পেরেছিল কি না, বিষয়টি জানায়নি।’
সাইফ আলী খানের ওপর হামলার মামলাকে ঘিরে এক প্রশ্ন উঠেছে বলিউডপাড়ায়। বড় প্রশ্ন, সাইফ-কারিনার সদগুরু শরণ আবাসন থেকে সামান্য দূরত্বে লীলাবতী হাসপাতাল। কিন্তু যেতে কেন এত সময় লাগল অভিনেতার।
সাইফ আলী খানকে ১৬ জানুয়ারি ভোররাত ৪টা ১১ মিনিটে লীলাবতী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। রিপোর্ট অনুযায়ী, সাইফ আলীর ওপর দিবাগত রাত প্রায় আড়াইটায় হামলা হয়েছিল। আর তাকে ভোর রাত ৪টা ১১ মিনিটে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এদিকে সাইফের বান্দ্রার অ্যাপার্টমেন্ট থেকে লীলাবতী হাসপাতালের দূরত্ব মাত্র ১০–১৫ মিনিট। এখন প্রশ্ন যে হামলার ১ ঘণ্টা ৪১ মিনিট পর কেন সাইফকে লীলাবতী হাসপাতালে ভর্তি করা হলো।
আরেকটি প্রশ্ন, চিকিৎসকের রিপোর্ট অনুযায়ী সাইফের শিরদাঁড়ার কাছে চাকুর একটা টুকরা আটকে ছিল। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চিকিৎসক সাইফের শরীর থেকে ছুরির অংশটি বের করেছেন। এখন প্রশ্ন, অভিনেতা কী করে এতক্ষণ রক্তাক্ত অবস্থায় ছিলেন।
বান্দ্রা পুলিশের কাছে যে মেডিকেল রিপোর্ট জমা করা হয়েছে, সেই অনুযায়ী সাইফের বন্ধু ও ব্যবস্থাপক জেইদি তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
এতে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে জেইদি সাইফকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলেন। রিপোর্টে জেইদির নাম, তার ফোন নম্বর ও ঠিকানা সব বিস্তারিত লেখা আছে। আর তিনিই সাইফকে হাসপাতালে ভর্তিসংক্রান্ত সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেছেন।
এদিকে সাইফের ব্যবস্থাপকের বক্তব্য যে, অভিনেতা গৃহকর্মীর সঙ্গে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। সাইফ আলী খানকে অটোরিকশাচালক ভজন সিং রানা হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। তার দাবি, সাইফের শরীর থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। আর অভিনেতার সঙ্গে ছোট একটি বাচ্চা ও আরেক ব্যক্তি ছিলেন। সাইফ অটোতে উঠে চালককে প্রথম প্রশ্ন করেছিলেন যে কত সময় লাগবে। লীলাবতী হাসপাতালের চিকিৎসক জানিয়েছেন, সাইফ যখন রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে এসেছিলেন, তখন তার সঙ্গে পাঁচ থেকে ছয় বছরের এক শিশু ছিল।
সম্প্রতি নতুন করে আলোচনায় আসে জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’। ঠাকুরগাঁওয়ে ধারণকৃত ইত্যাদির একটি পর্ব নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া দারুণ সরব হয়েছিলো। প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি দর্শক সমাগমের ফলে ইত্যাদির সেটে শুরু হয় হট্টগোল।
অবশেষে সেই পর্বটি এবার আসছে বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডের পর্দায়। গণমানুষের প্রিয় অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’র এই পর্বটি আগামী ৩১ জানুয়ারি, শুক্রবার রাত ৮টার বাংলা সংবাদের পর প্রচারিত হবে।
সেই নব্বই দশক থেকেই শেকড়ের সন্ধানে ইত্যাদি স্টুডিওর চার দেয়াল থেকে বের হয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। তুলে ধরছে আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, প্রত্ননিদর্শন, আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রসহ বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। তারই ধারাবাহিকতায় এবারের পর্ব ধারণ করা হয়েছে ঐতিহ্য ও আর্থসামাজিক সম্ভাবনার জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে। মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক সংরক্ষিত ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার রাজা টংকনাথের রাজবাড়ির সামনে। অনুষ্ঠান ধারণ উপলক্ষে বর্ণীল আলোয় রাজবাড়ি যেন নতুন সাজে সেজেছিল। কেউ কেউ মন্তব্য করেন প্রায় ১০০ বছর পর রাজবাড়ি যেন তার হারানো যৌবন ও অতীত ঐতিহ্য ফিরে পেয়েছে।
ইত্যাদির ধারণ উপলক্ষে পুরো ঠাকুরগাঁও জেলায় ছিল উৎসবের আমেজ। অনুষ্ঠানস্থলকে ঘিরে বসে জমজমাট মেলা। বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে দোকানীরা, ছিল নাগরদোলাও। রাণীশংকৈলে ধারণ হলেও দর্শকরা আসেন ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন উপজেলাসহ পাশর্^বর্তী জেলা পঞ্চগড় এবং দিনাজপুর থেকেও। বিকাল ৩টা থেকেই আমন্ত্রিত অতিথিরা অনুষ্ঠানস্থলে আসতে শুরু করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় অনুষ্ঠানস্থল। আমন্ত্রিত দর্শক ছাড়াও অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ উপস্থিত হন তাদের ভালোবাসার অনুষ্ঠান দেখার জন্য। ফলে দুই কিলোমিটার ব্যাপী প্রচণ্ড যানজটের সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে দর্শকরা তাদের প্রিয় ইত্যাদি ও এর প্রাণপুরুষ হানিফ সংকেতকে দেখার জন্য বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের মত অনুষ্ঠানস্থলে ঢুকে পড়ে। ফলে অনুষ্ঠান ধারণের সুবিধার্থে কিছু সময়ের জন্য অনুষ্ঠান ধারণ স্থগিত করা হয়, স্থানীয় প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতায় কিছুক্ষণ পরেই আবার ধারণ শুরু হয়। স্থানীয়রা জানান, ইতোপূর্বে ঠাকুরগাঁওয়ে কখনও কোন অনুষ্ঠানে এত দর্শক সমাগম হয়নি। অনুষ্ঠানস্থলে ধারণক্ষমতার কয়েকগুণ লোক বেশি হওয়ার কারণে স্থানাভাবে অনেক দর্শকই আশেপাশের বিভিন্ন স্থাপনার ছাদ, রাস্তা, দেয়াল ও গাছের উপর উঠে তীব্র শীত উপেক্ষা করে দীর্ঘ সময় ধরে অবাক বিস্ময়ে উপভোগ করেছেন তাদের প্রিয় অনুষ্ঠানের ধারণ। কিছুক্ষণ পরপরই চলছিলো হাজার হাজার দর্শকের উচ্ছ্বাসপূর্ণ চিৎকার আর তালি বৃষ্টি। উল্লেখ্য দর্শকপ্রিয় ইত্যাদি এ বছর পা রেখেছে তার ৩৭তম বছরে।
এবারের ইত্যাদিতে রয়েছে ঠাকুরগাঁওয়ের সন্তান একসময়ের ঠাকুরগাঁওয়ের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রাণপুরুষ, বর্তমানে রাজনীতিবিদ জনাব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের একটি বিশেষ সাক্ষাৎকার। সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক এই সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে তার জীবনের অনেক অজানা কথা।
এবারের অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেছেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী রবি চৌধুরী ও লিজা। গানটির কথা লিখেছেন লিটন অধিকারী রিন্টু। সুর ও সংগীতায়োজন করেছেন কিশোর দাস। এছাড়াও অনুষ্ঠানের শুরুতেই রয়েছে ঠাকুরগাঁওকে নিয়ে মনিরুজ্জামান পলাশের কথায় একটি পরিচিতিমূলক গানের সঙ্গে নৃত্য। পরিবেশন করেছেন স্থানীয় শতাধিক নৃত্যশিল্পী। নাচটির কোরিওগ্রাফি করেছে রোহিত খান তুহিন, কণ্ঠ দিয়েছেন তানজিনা রুমা, রাজীব, অয়ন চাকলাদার ও সানজিদা রিমি। গানটির সুর করেছেন হানিফ সংকেত এবং সংগীত আয়োজন করেছেন মেহেদী।
দর্শকপর্বের নিয়ম অনুযায়ী ধারণস্থান ঠাকুরগাঁওকে ঘিরে করা প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে উপস্থিত দর্শকের মাঝখান থেকে ৩ জন দর্শক নির্বাচন করা হয়। ২য় পর্বে নির্বাচিত দর্শকরা সাম্প্রতিক কিছু বিষয় নিয়ে রচিত একটি নাট্যাংশে অভিনয় করেন। যা ছিল বেশ উপভোগ্য।
শেকড় সন্ধানী ইত্যাদি সবসময়ই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রচার বিমুখ, জনকল্যাণে নিবেদিত মানুষদের তুলে ধরার পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলের অচেনা-অজানা বিষয় ও তথ্যভিত্তিক শিক্ষামূলক প্রতিবেদন প্রচার করে আসছে। আর সেই ধারাবাহিকতায় এবারের পর্বেও রয়েছে কয়েকটি হৃদয় ছোঁয়া প্রতিবেদন। রয়েছে ঠাকুরগাঁওয়ের উপর একটি তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন। ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে অবস্থিত এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় আমগাছ, ঠাকুরগাঁওয়ের পনির বা চিজ উৎপাদন, লোকায়ন জীবন বৈচিত্র্য জাদুঘর এবং ধারণস্থান রাজা টংকনাথের রাজবাড়ির উপর রয়েছে একটি প্রতিবেদন। দেশের অন্যতম দার্জিলিং জাতের কমলার বাগান ঠাকুরগাঁওয়ের অরেঞ্জ ভ্যালির উপর রয়েছে একটি চমৎকার প্রতিবেদন। যেখানে কমলার পাশাপাশি হলুদ রংয়ের মিষ্টি মাল্টার চাষও করা হয়। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের ক’জন প্রবীণ মিলে গড়ে তুলেছেন একটি ব্যতিক্রমধর্মী সংগঠন। এই সংগঠনের উপর রয়েছে একটি অনুকরণীয় প্রতিবেদন। ২০১৮ সালে যখন সুনামগঞ্জের টেকেরঘাটে ইত্যাদি ধারণ করা হয় তখন এখানে মোটর সাইকেল ছাড়া তেমন কোন বাহনই ছিলো না এবং ইত্যাদির আগে কোন টেলিভিশন ক্যামেরাও সেখানে যায়নি। ইত্যাদি ধারণের পর টেকেরঘাটের বর্তমান অবস্থা নিয়ে এবারের পর্বে রয়েছে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। সাগরের বুকে ভাসমান দোকানের উপর একটি তথ্যভিত্তিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। রয়েছে কক্সবাজার জেলার টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের পল্লী চিকিৎসক ঝন্টু বড়ুয়ার উপর একটি মানবিক প্রতিবেদন। যিনি এ পর্যন্ত ৪১ জন মানসিক রোগীকে সুস্থ করে তাদের দেয়া ঠিকানা অনুযায়ী পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছেন। বিদেশি প্রতিবেদন পর্বে রয়েছে গণচীনের রাজধানী বেইজিং এ অবস্থিত বিশ্বের বৃহত্তম পাবলিক স্পট বা জনসমাগম স্থল ঐতিহাসিক তিয়েনআনমেন স্কয়ারের উপর একটি তথ্যসমৃদ্ধ প্রতিবেদন।
ঠাকুরগাঁওয়ের মঞ্চে এবার নাতিকে দেখা গেলেও দেখা যায়নি নানিকে। সাথি হারা নাতি কি করেছে এবারের ইত্যাদিতে, দেখতে হলে অপেক্ষা করতে হবে অনুষ্ঠান প্রচারের দিন পর্যন্ত।
এছাড়াও ইত্যাদির নিয়মিত পর্ব চিঠিপত্র পর্ব ছাড়াও সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় ও প্রসঙ্গ নিয়ে সামাজিক অসঙ্গতি ও সমাজ সংস্কারের উপর রয়েছে বেশ কিছু তীক্ষè ও তীর্যক নাট্যাংশ। জ্যোতিষের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ, একালের বিবাহবার্ষিকীতে সেকালের উপহার, সময়ের বিবর্তনে ঘরোয়া ভাষার পরিবর্তন, সবজি বাজারে ঘোরগ্রস্থ ক্রেতা, চিৎকার সর্বস্ব উপস্থাপকের সাক্ষাৎকার, পারিবারিক শিক্ষা বনাম পারিপাশির্^ক শিক্ষা, ইউটিউবের নেশায় বিপর্যন্ত পারিবারিক পরিবেশ, নিজের বেলায় ষোল আনা, দিন যায় কথা থাকে, চাপা আতঙ্কসহ বেশ কয়েকটি নাট্যাংশ। ইত্যাদি রচনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেছেন হানিফ সংকেত। নির্মাণ করেছে ফাগুন অডিও ভিশন।