মূকাভিনেতা থেকে অভিনেতা খায়রুল বাসার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগীত বিভাগে পড়াশোনা করেছেন খায়রুল বাসার। সংগীতে পড়ালেখা শেষ করলেও গানের মানুষ না হয়ে খায়রুল হয়েছেন অভিনয়ের মানুষ। অভিনয়ের শুরুটা ২০১১ সালে মূকাভিনয় দিয়ে। সম্প্রতি আলোচনায় এসেছেন ক্লোজ আপ কাছে আসার গল্প ‘তোমার পাশে হাটতে দিও’ নাটকে অভিনয় করে। এছাড়া ১৩ই মার্চ মুক্তি পাচ্ছে তার অভিনীত দ্বিতীয় সিনেমা ‘উনপঞ্চাশ বাতাস’। এসব প্রসঙ্গে বার্তা২৪.কম কথা বলেছে খায়রুল বাসারের সঙ্গে। তাকে নিয়ে লিখেছেন গোলাম মোর্শেদ সীমান্ত।
শুরুটা মূকাভিনয় দিয়ে
খায়রুল বাসারের অভিনয়ের শুরুটা মূকাভিনয় দিয়ে। ২০১১ সাল থেকে মূকাভিনয় করছে সে। তার মূকাভিনয়ের গুরু মীর লোকমান। ক্যাম্পাসের সিনিয়র সেই পরিচয় থেকেই শ’খানেক কাজ করা হয়ে গিয়েছে তার সঙ্গে। মীর লোকমান ২০১০ সালের দিকে প্রথম খায়রুলের মূকাভিনয় দেখেন।
এরপর ২০১১ সালে ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি মাইম অ্যাকশন’ নামে মূকাভিনয় সংগঠন নিয়ে যাত্রা শুরু হয় এই তরুণ অভিনেতার। তখন থেকেই নিয়মিত চর্চা শুরু হয়। তারপর দেশে ও দেশের বাইরেও মূকাভিনয় নিয়ে ছুটেছেন বহুবার। ২০১৭ সাল পর্যন্ত খুব সক্রিয় ছিলেন মূকাভিনয়ে। খায়রুল বাসার জানালেন, ২০১১ থেকে ২০১৭ সালের এই সময়টাতে প্রায় ৪০০ শো করেছি (স্ট্রিট শো এবং স্টেজ শো মিলিয়ে)। মূকাভিনয় দল নিয়ে দেশের বাইরেও গিয়েছি। সেখান থেকেও পুরস্কার নিয়ে ফিরেছি, প্রশংসা কুড়িয়েছি। এক কথায় মীর লোকমান ভাই আর মূকাভিনয়ের সাথে যাত্রা ছিলো এক বিশাল অভিজ্ঞতা এবং অবশ্যই ঐশ্বর্যপূর্ণ।
অভিনেতা খায়রুল বাসার
নাটক, শর্ট ফিল্মের পর চলচ্চিত্রেও নাম লিখিয়েছেন খায়রুল বাসার। গেল বছর অভিনয় করেছেন বাংলাদেশের অমনিবাস চলচ্চিত্র ‘ইতি তোমারই ঢাকা’তে। এই সিনেমা প্রসঙ্গে খায়রুল বাসার বলেন, হলে বসে বড় পর্দায় এই প্রথম নিজের সিনেমা দেখা; সে অনুভূতি ব্যাখ্যাতীত। দর্শকদের সাথে বসে সিনেমা দেখছি। সিনেমার বিভিন্ন দৃশ্যে দর্শকের রিয়েকশন কিছুটা কাঁপিয়ে দিচ্ছিলো আমাকে। সত্যি এই অনুভূতি প্রথম প্রেমের চেয়েও সুন্দর। তখন ভাবছিলাম মূকাভিনয়ের কথা মঞ্চের কথা। দর্শকের হাততালি তাদের চিৎকারে শরীরের ভেতর শিরায় শিরায় যেন টান পড়তো। ঠিক সিনেমায় দর্শকদের রিয়েকশনে এমন অনুভব হচ্ছিলো। গল্প ও নিজের চরিত্র সম্পর্কে বলতে গেলে তো অনেক কথা! এর চেয়ে বরং সিনেমাটা নেটফ্লিক্সে আছে, সময় করে দেখে ফেলুন।
নিজের অভিনীত দ্বিতীয় সিনেমা ‘উনপঞ্চাশ বাতাস’ মুক্তি পাচ্ছে ১৩ই মার্চ। সম্প্রতি ‘শুকনো গোলাপ’ গানের মিউজিক ভিডিওতে দেখা গিয়েছে এই তরুণ অভিনেতাকে। ক্যাম্পাস ভিত্তিক সিনেমা ‘ক্যাম্পাস ক্লাইমেক্স’ সিনেমায় অভিনয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছে ঢাবিয়ানদের থেকে। এছাড়া এখন পর্যন্ত তিরিশটির মতো টিভিসি এবং ওভিসিতে দেখা গিয়েছে খায়রুল বাসারকে।
‘অনি’ হয়ে উঠেছে সকলের প্রিয়
ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে বিগত কয়েকবছর যাবত ক্লোজআপের ব্যানারে দর্শকদের পাঠানো গল্পে নির্মাণ করা হয় ৩টি নাটক। এবার দর্শকদের গল্পের ‘তোমার পাশে হাটতে দিও’ নাটকে খায়রুল বাসারকে অভিনয় করতে দেখা গেছে অনি চরিত্রে। অনম বিশ্বাসের পরিচালনায় এই নাটকে অভিনয় করা প্রসঙ্গে খায়রুল বাসার বলেন, আসলে পূর্বে নাটকে কাজ হয়েছে খুব কম। যে কয়েকটি নাটকে পার্শ্ব চরিত্রে কাজ করেছি সেখানেও আমি আসলে চরিত্রটি গল্পে কতটা প্রভাবক সেদিকটায় সচেতন ছিলাম এবং সে চরিত্রটাকে গল্প অনুযায়ী সাধ্যমতো উপস্থাপনের চেষ্টা করেছি। তবে এবার এই গল্পে কেন্দ্রীয় চরিত্রে কাজ করতে গিয়ে ‘অনি’ চরিত্রটাকে নিয়ে বিশেষভাবে ভাবতে হয়েছে। আমার কাছে মনে হয় কেন্দ্রীয় চরিত্র মানে একটা বড় দায়িত্ব এবং দায়িত্বশীল হওয়ার ব্যাপারটা বরাবরই সুন্দর এবং আমি তা উপভোগ করি। এদিক থেকে আমি আমার ডিরেক্টর অনম বিশ্বাস ভাইয়ের কথা বলতে চাই। উনার ক্যারেক্টার এনালাইসিস খুব চমৎকার। তিনি ‘অনি’ চরিত্রের নানা বৈশিষ্ট্য খুব সুন্দর ও সহজ করে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। যা ওই দায়িত্বের পথটা অনেক সহজ করে দিয়েছে এবং আমি সেভাবেই চেষ্টা করে গেছি। কাজটা আসার পর দর্শকদের প্রতিক্রিয়া পাচ্ছি বলা যায়, ৯৯ ভাগই ভালো প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে। তবে আমার নিজের মনে হচ্ছে আরও ভালো করার দরকার ছিল।
‘উনপঞ্চাশ বাতাস’
মাসুদ হাসান উজ্জ্বলের প্রথম সিনেমা ‘উনপঞ্চাশ বাতাস’। সিনেমাটিতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইমতিয়াজ বর্ষণ ও শার্লিন ফারজানা। চলচ্চিত্রটিতে গুরুত্বপূর্ণ একটা চরিত্রে দেখা যাবে তরুণ অভিনেতা খায়রুলকে। এই সিনেমার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুটিং করেছি মোহাম্মদপুর, পুরান ঢাকা সহ ঢাকার বিভিন্ন অলিগলিতে। আমি খুব আশাবাদী এই সিনেমা নিয়ে। বিশেষ করে মাসুদ হাসান উজ্জ্বল ভাইয়ের ভাবনা তার চিন্তার একটা বড় প্রতিফলন এই সিনেমায় ঘটবে। শুধু এটুকুই আপাতত বলতে চাই ‘উনপঞ্চাশ বাতাস’ ছুঁয়ে যাবে সবাইকে। আশা করি দর্শক হলে গিয়ে বাকিটা দেখবেন।
অভিনয়টা ভালোবাসা খায়রুল বাসারের কাছে
আমার পড়াশোনা গান নিয়ে। গানের প্রতি দুর্বলতা আছে। আমি প্রচুর মিউজিক শুনি। গান ছাড়া খুব অস্বস্থি হয়। তবে এখনো তেমন কোন পরিকল্পনা নেই গান নিয়ে। এটুকু বলতে চাই গানটা আমি ছেড়ে দেইনি বরং গান এখনো আমাকে গ্রহণ করেনি। যথেষ্ট ভালোবাসা ও যত্নশীল হলে গান নিশ্চয়ই আমার হবে। বর্তমানে ব্যস্ততা অভিনয় নিয়েই। একটা কাজ শেষ হলেই আমি পরবর্তী কাজ নিয়ে ভাবি, একটা ওয়েব সিরিজে কাজ করছি। এর শুটিং প্রায় শেষ পর্যায়ে। এ কাজটা শেষে পরবর্তী কাজ নিয়ে ভাববো। কিছু কাজের কথাবার্তা চলছে।
এর বাইরে অভিনয় নিয়ে আমার পরিকল্পনা বলতে আমি অপেক্ষায় থাকি এবং আছি। আমি একটা সুন্দর চিঠির ( স্ক্রিপ্ট) অপেক্ষায় থাকি। আমি আমার প্রেমিকের (ডিরেক্টর) অপেক্ষায় থাকি। অভিনয়ে প্রতিটা কাজেই প্রচণ্ড ভালোবাসা নিয়ে ভালো কিছু করার চেষ্টা করেছি। ভালোবাসায় আমি দিনরাত ডুবে থাকি। আমি জানিনা এই ভালোবাসার পরিণতি কি?