ধৈর্য ধরে সুদিনের অপেক্ষা করি আসুন: সুমি

  • বিনোদন ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

শারমিন সুলতানা সুমি, ছবি: ফেসবুক

শারমিন সুলতানা সুমি, ছবি: ফেসবুক

দেশের করোনা পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে জনপ্রিয় ব্যান্ড দল ‘চিরকুট’র সদস্যরা প্রিয় ৩ জিনিস নিলামে তুলেছিলেন। যা ১০ লাখ টাকায় নিলামে কিনেছেন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী জায়েদি সজীবের স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশ কালচারাল এক্সচেঞ্জ ইনক (এবিসিএক্স)। নিলামে পাওয়া এই অর্থ দিয়ে ২০ পরিবারের ৫ মাসের দায়িত্ব নেবে ‘চিরকুট’। এই প্রসঙ্গ ছাড়াও ঘর বন্দি সময়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে সম্প্রতি বার্তা২৪.কমের সঙ্গে কথা বলেছেন ‘চিরকুট’র গীতিকার, সুরকার ও প্রধান শিল্পী শারমিন সুলতানা সুমি। তার সঙ্গে আলাপচারিতা দীর্ঘ করেছেন কৌশিক।

বার্তা২৪.কম: আপনার নথ, ইমনের মেন্ডোলিন ও পাভেলের ড্রামস কিট নিলামে তুলেছিলেন। নিলামের মাধ্যমে দেশের এই দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চিন্তাটা কীভাবে?

বিজ্ঞাপন

সুমি: করোনায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর ব্যাপারে মোটামুটি একটি চিন্তাভাবনা করেছিলাম; এরই মধ্যে করোনার তহবিল সংগ্রহের নিলামের ব্যবস্থা করা ‘অকশন ফর অ্যাকশন’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আমাদের সাথে যোগাযোগ করে এবং তাদের পরিকল্পনাটা আমাদের জানায়। তাদের পরিকল্পনা শুনে ভালো লেগেছিলো। তখন ভাবলাম ব্যাপারটা অসাধারণ, যদি আমরা নিজেদের প্রিয় জিনিস দিয়ে কিছু মানুষের পাশে মুখে হাসি ফোটাতে পারি। মূলত নিলামে অংশ নেওয়ায় পরিকল্পনাটা এভাবেই। ঠিক করি আমার প্রিয় নথ নিয়েই হাজির হবো, আমার খুব প্রিয় একটা জিনিস এটা, খুব যত্ন করে রাখি সবসময়। এটি কখনোই হারাতে চাইনি কিন্তু দেশের প্রয়োজনে কিংবা মানুষের জীবনের প্রয়োজনের থেকে আর বড় কিছু হতে পারেনা।

ব্যান্ড দল ‘চিরকুট’র সদস্য, ছবি: ফেসবুক 

বার্তা২৪.কম: আপনার নথের সাথে নিশ্চয়ই অনেক স্মৃতি?

বিজ্ঞাপন

সুমি: এটি আমার প্রিয় জিনিসগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটিকে ঠিক শুধু নথ বললেও ভুল হবে এটি আমার আবেগের বস্তুও বলতে পারেন। ২০১৬ সালে এটি কিনেছিলাম। এই নথের সাথে আমার স্মৃতি বলে শেষ করা যাবেনা। এই নথ পরেই হাজির হয়েছি অসংখ্য অনুষ্ঠানে। এটি শুধু আমার কাছেই নয় আমার শুভাকাঙ্ক্ষী কিংবা আত্মীয়স্বজন যাই বলুন সবার কাছেই বেশ পরিচিত। এই নথ পড়েই অনেক কনসার্টে অংশ নিয়েছি, গান করেছি। এই নথের সাথে কাটানো মুহূর্তের স্মৃতিগুলো আমার জন্য সত্যিই অসাধারণ। আমাদের অন্য সদস্য পাভেলের কাস্টম মেইড ড্রামস কিটটা স্কটল্যান্ড থেকে আনা। আর ইমনের প্রিয় মেন্ডোলিন যা দিয়ে সে অনেক কনসার্টে অংশ নিয়েছে। প্রিয় জিনিসটির সাথে ওদের স্মৃতিগুলোও চমৎকার, জিনিসগুলোর সাথেই কেটেছে অসাধারণ অনেক মুহূর্ত।

বার্তা২৪.কম: কেমন লাগছে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে?

সুমি: এই অভিজ্ঞতাটাও ভিন্ন রকম, গর্বের। অতুলনীয়ও বলতে পারেন। যত টাকাতেই বিক্রি হোক না কেনো ব্যাপারটা আমাদের তথা পুরো মিউজিকের জন্যই আনন্দের দিন; আমরা কারো প্রয়োজনে আসতে পেরেছি। এই ১০ লক্ষ টাকাটা আমাদের জন্য ১০ কোটি টাকার সমান। নিলামের টাকায় প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে ২০ পরিবারের ৫ মাসের খাবারের জোগান দেওয়া হবে এটা ভেবেই খুব ভালো লাগছে। কিছু মানুষের জীবনে কাজে আসতে পেরেছি এর জন্য অবশ্যই কৃতজ্ঞতা সৃষ্টিকর্তার প্রতি। আশা করি এভাবেই বারবার মানুষের প্রয়োজনে এগিয়ে আসতে সক্ষম হবো।

বার্তা২৪.কম: ঘরে সময় কাটছে কিভাবে?

সুমি: কাজের ব্যস্ততার মধ্যেই মূলত বাসার সময়গুলো পাড় হচ্ছে। লেখালেখি করছি, গান করছি, নতুন নতুন কিছু জানার চেষ্টা এভাবেই নিজেকে ব্যস্ততায় রেখে দিনের বেশিরভাগ সময়টা যাচ্ছে।

শারমিন সুলতানা সুমি, ছবি: ফেসবুক 

বার্তা২৪.কম: ‘চিরকুট’র ‘আলোর গান’ নামের উদ্যোগ...

সুমি: এই ঘর বন্দি সময়টায় ভিন্ন কিছু আয়োজনের চিন্তা থেকেই আমাদের এই উদ্যোগ। অদ্ভুত এই ঘর বন্দী জীবনে আলো বলতে ওই বারান্দা, ছাদ আর জানালাটুকুই এখন আমাদের সম্বল। এই টুকরো টুকরো আলোতেই এখন তাই বুকের ভিতর গড়তে হবে একটা পুরো সূর্য’র শক্তি। যা এই প্রবল অন্ধকারেও হয়তো পথ দেখাবে আমাদের। আর তাই এই ছোট্ট প্রয়াস। এই উদ্যোগে অংশ নিতে পারেন যেকোনো কেউই, অন্ধকার এই সময়ে আপনার বাড়ির ছাদ, বারান্দা অথবা জানালার আলোর সামনে দাঁড়িয়ে সপরিবারে অথবা একা পছন্দের যেকোন গান গেয়ে, ভিডিও করে পাঠিয়ে দিন আমাদের মেইলে। আমাদের শর্তটা হচ্ছে গানটা করতে হবে সূর্য অথবা চাঁদের আলোয় গাইতে হবে বারান্দায়, ছাদে অথবা জানালার সামনে বসে/দাঁড়িয়ে যেভাবে খুশি। এই অন্ধকার দিনের মাঝে আলোকে ফুটিয়ে তুলতেই আমাদের এই উদ্যোগ।

শারমিন সুলতানা সুমি, ছবি: ফেসবুক 

বার্তা২৪.কম: এই দুর্যোগে কনসার্টে বড় ধরণের প্রভাব পড়বে নিশ্চয়ই?

সুমি: নিঃসন্দেহে এই দুর্যোগে গানের জগতে একটি বড় ধরণের প্রভাব পড়ছে এবং আগামীতেও তা পড়বে। এটিকে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। এটি ঠিক, দুর্যোগের পর কনসার্টে ফেরাটা মোটেই সহজ হবে না। তবে আমি বিশ্বাসী একটু সময় নিলেই তা সম্ভব। সময়টা এক কিংবা দুই বছর যাই হোক, আমি সবসময় বিশ্বাস করি ধৈর্য্য ধরলে অবশ্যই ভালো কিছু সম্ভব। খুব শীঘ্রই আমরা ফিরে আসব।