প্রকৃতিরানীর প্রথম পছন্দই কাশ

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

শারদপ্রকৃতির শুভ্রতার প্রতীক কাশ/ ছবিঃ বার্তা২৪.কম

শারদপ্রকৃতির শুভ্রতার প্রতীক কাশ/ ছবিঃ বার্তা২৪.কম

প্রকৃতির রানী শরৎ। দীর্ঘ বর্ষাকে ধীরে ধীরে মুছে ফেলে সে ধীরপায়ে প্রকৃতিতে আবির্ভূত হয়। শুরুতে আকাশেই তার রূপলাবণ্য ফুটে উঠতে থাকে। নীলাকাশময় সৌন্দর্য প্রকৃতিপ্রেমীদের অকপটে ভরসা দেয়- আমি এসে গেছি!

রবীন্দ্রনাথ একটি গানে লিখেছিলেন- ‘অতি নির্মল, অতি নির্মল, অতি নির্মল উজ্জ্বল সাজে/ ভুবনে নব শারদলক্ষ্মী বিরাজে’। সত্যিই যেন তাই। নির্মল আকাশ প্রেমময় নীলে ভর করে আরো অতি মাত্রায় নির্মল হয়ে যায়। বলা যেতেই পারে- প্রকৃতিরানী শরতের প্রথম পছন্দই কাশ।

বিজ্ঞাপন

শরৎপ্রেমীদের তখন ঘরে বসে থাকা দায়। তারা সবান্ধবে বেরিয়ে পড়ে নীলাকাশের সৌন্দর্য আর শরৎরানীর প্রিয় শুভ্রকাশে মাখামাখি হতে। শহুরে ক্লান্তজীবন নদীর ধারে কিংবা ছড়ার ধারে এসেই যেন পুনরায় জেগে ওঠার সতেজতা ফিরে পায়। হৃদয়ের তীব্র আকর্ষণ আর দু’চোখের ব্যাকুলতাটুকু অনায়াসে স্বস্তি খুঁজে পায়- শ্বেতশুভ্র কাশের পরশ পেয়ে।

 কাশের রাজ্যে পর্যটকের উপস্থিতি/ ছবিঃ বার্তা২৪.কম 

বিজ্ঞাপন

 

কাশফুলের ইংরেজি নাম Kans grass এবং বৈজ্ঞানিক নাম Saccharum spontaneum। এটি Poaceae পরিবারের উদ্ভিদ। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলার ছড়া-নদীতে জেগে ওঠা চরে, জলামাঠের ধারে, বালুচরে অথবা একটু ছোট্ট প্রাকৃতিক জলাশয়ের ধারে কাশফুলগুলোকে গুচ্ছগুচ্ছভাবে মাথা তুলে নীরবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। নদীর বালুমাটির সঙ্গে সহজে কাশের বীজগুলো চলে আসায় এসব জায়গায় এ কাশ সহজেই জন্মায়। এছাড়াও মাঝে মাঝে নগর মৃত্তিকার নির্জনতায় কখনো কখনো কাশফুল ফুটে প্রকৃতিপ্রেমীদের অবাক করে দেয়।

কাশফুলগুলো নরম ও তুলতুলে। এটি অপেক্ষাকৃত লম্বাটে। পাতার কিনারা ধারালো। মূলত শরৎ ঋতুতেই কাশ প্রকৃতিতে ফুটে ওঠার দৃশ্য সাড়ম্বরে দেখা যায়। তবে মাঝে মাঝে হেমন্তেও তার দেখে মেলে। সাধারণত জলাভূমির ধারেই এরা স্বাচ্ছন্দ্যে বাড়ে এবং বছরের পর বছর বেঁচে থাকতে পারে। সাদা মেঘের ভেলার সঙ্গে কাশফুলের দুলে ওঠা আবহমান বাংলার চিরচেনা রূপ। যা হৃদয়কে ভীষণভাবে নাড়া দেয়।

মনোমুগ্ধকর কাশফুল/ ছবিঃ বার্তা২৪.কম

চরাঞ্চলের প্রান্তিক মানুষেরা কাশকে সহজলভ্য জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। কাশফুলের গাছটি দেখতে অনেকটা ধানজাতীয় গাছের মতো, তবে অনেকখানি উচ্চতায় ঘেরা। এই ঘাসজাতীয় উদ্ভিদটি খুব কষ্টসহিষ্ণু। খরা, বন্যা, তীব্র কুয়াশাসহ নানান প্রতিকূলতার সাথে কষ্ট সহ্য করে এরা প্রকৃতিতে টিকে থাকতে পারে।

ঘরবন্দি জীবন একটুখানি বেরুতে চায়। নিঃশ্বাস নিতে চায় প্রকৃতির বুকে। এ অবস্থায় গৃহকোণে আটকে থাকা কোনো মানুষ তার প্রিয় মানুষটির হাত ধরে বালুচরের কাশরাজ্যে এসে তাদের পরশ পাওয়ার অনুভূতি কিন্তু সত্যিই বর্ণনাতীত।

ওপরে নীলাকাশ আর নিচে কাশফুলের মেলা। সেই সাথে ভুবন চিলসহ নানান পাখিদের উড়ে যাওয়ার দৃশ্য বড়ই মনোমুগ্ধকর। প্রিয় পরিবারকে সাথে নিয়ে কাশপ্রকৃতিতে বৈকালিক ভ্রমণমুহূর্তটি জীবনের অন্যতম প্রাপ্তি হতে বাধ্য। এক বান্ধবী অপর বান্ধবীর দীর্ঘকেশের এককোণে ছেড়া কাশের ডাল গুঁজে দেওয়ার আনন্দ যেন অসীমতায় বাঁধা।