ছানা তুলতে না পারায় বিপন্ন ল্যাঞ্জা-রাতচরা

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সংকটাপন্ন এখন ল্যাঞ্জা-রাতচরাদের জীবন। ছবি: সংগৃহীত

সংকটাপন্ন এখন ল্যাঞ্জা-রাতচরাদের জীবন। ছবি: সংগৃহীত

নানা কারণে দেশব্যাপী বনের প্রাকৃতিক পরিবেশ ক্রমশ বিপন্ন হয়ে পড়েছে। সরাসরি যার ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে দেশের মূল্যবান জীব-বৈচিত্র্যের উপর। এর ফলে নানা প্রজাতির পাখিসহ বন্যপ্রাণীরা আজ মারাত্মকভাবে বিপন্ন।

আবাসস্থলের পরিবেশ বিনষ্ট হওয়ায় কিছু কিছু পাখিদের টিকে থাকে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। ছানা তুলতে না পারায় বনের পাখিদের জীবন এখন অতি সংকটাপন্ন। এমনি একটি প্রজাতির নাম- ল্যাঞ্জা-রাতচরা (Large-tailed Nightjar)।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশে যে কয়েকটা পাখি মাটিতে বাস করে তাদের মধ্যে এ পাখিটি অন্যতম। বলতে দ্বিধা নেই, মাটিতে বসবাস করা পাখিদের অবস্থা আজ খুবই খারাপ। কারণ আমাদের দেশে নিরাপদ মাটি নেই। এরা দেশের সুলভ আবাসিক পাখি হলেও আজ বিপন্ন হয়ে গেছে।

নিরাপদ মাটি মানে নির্জন অবস্থান বা যেখানে মানুষসহ অন্যান্য পশু-পাখির উপস্থিতি নেই। শিশু থেকে মানুষ কিংবা বিভিন্ন পশুর উপস্থিতি সত্ত্বেও ল্যাঞ্জা রাতচরা একদম মাটির উপরে বাসা করে চিরকাল ধরে ছানা ফুটিয়ে আসছে। কিন্তু এখন আর পারছে না। এভাবেই তার জীবন অত্যন্ত সংকটাপন্ন হয়ে গেছে। আজ এমন নির্জন-র্নিঞ্ঝাট বনজঙ্গল কোথায়ও নেই।

বিজ্ঞাপন

অপরদিকে আরেকটি বিষয়ও গুরুত্বপূর্ণ। সেটি হলো পোকা-মাকড় খাওয়া পাখিদের জীবন তো এমনিতেই আমরা শেষ করে ফেলেছি। ল্যাঞ্জা রাতচরাও একটি পোকা খাওয়া পাখি। খাদ্যের পরেই রয়েছে তার প্রজনন সংকট। মাটিতে তাদের ডিম হলেও নানা কারণে তার ডিমটি টেকে না। কোনোক্রমে যদিওবা ডিমটি টেকে গিয়ে ছানা ফুটলেও শেষ পর্যন্ত কিন্তু ওই ছানাটিও টেকে না। এমনি চরম অবস্থা তাদের।

বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব সূত্রে জানা গেছে, ল্যাঞ্জা-রাতচরার ছানা বড় না হওয়া পর্যন্ত পুরো দুই মাস তাকে বনজঙ্গলের মাটিতেই বসে থাকতে হয়। ল্যাঞ্জা রাতচরা দৈর্ঘ্যে প্রায় ৩৩ সেন্টিমিটার। সারা দেহে কালচে-বাদামি নকশা। বসে থাকলে ডানায় তিন সারি বাদামি লাইন দেখা যায়।

নির্জন স্থানের মাটিতে ঘুমায় ল্যাঞ্জা-রাতচরা। ছবি: সংগৃহীত

এরা লম্বা ও প্রশস্ত লেজের নিশাচর পাখি। ভোরে এবং গোধূলিতে এরা বেশি তৎপর থাকে এবং ডাকাডাকি করে। রাতে বন, তৃণভূমি এবং শষ্যক্ষেতের উপর উড়ে উড়ে পোকা খায়। দিনের বেলা কবরস্থান, বনের রাস্তা, ঝরাপাতার উপরে অথবা গাছের কাণ্ডে বুক লাগিয়ে ঘুমায়।

অন্যান্য দেশে এর অবস্থান সম্পর্কে বার্ড ক্লাব থেকে আরো জানা গেছে, পৃথিবীর অন্যান্য দেশে তারা ভালই আছে এ জন্য যে সেখানে পতিত জমি অনেক পড়ে রয়েছে। সেখানে তারা র্নিঞ্ঝাট জীবন কাটাতে পারে। তাছাড়া পর্যাপ্ত খাদ্যসম্ভারও রয়েছে। ওখানে কেউ পোকা-মাকড় দমনের কীটনাশক ঔষধ ছিটাচ্ছে না।

সারাদিন তারা মাটিতেই থাকে। মাটিতেই ঘুমায়। প্রজনন সময়ে মাটিতেই বাসা তৈরি করে ডিম পেড়ে ডিমে তা দিয়ে ছানা ফোটায়। ছেলে পাখিটি খাবার এনে তা দিতে বসা মেয়ে পাখিকে খাওয়ায়। আবার মাঝে মাঝে ছেলে পাখিটিও ডিমে তা দেয়। এভাবেই আগন্তুক নতুন প্রজন্মটিকে টিকিয়ে রাখার অদেখা যুদ্ধ চলে নিজেদের মাঝে।

ল্যাঞ্জা-রাতচরা পাখির মতো দেশের মূল্যবান প্রাণ-প্রকৃতির কথা ভেবে বনের প্রাকৃতিক পরিবেশকে সুস্থ করে তোলার দায়িত্ব এখনই আমাদের নিতে হবে। নয়তো নীরবে দেশের বনভূমি থেকে চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যাবে- বন আশ্রিত কোনো কোনো জীব-বৈচিত্র্য।