৮০০ বছর পর বৃহস্পতি-শনি এত কাছাকাছি

  • শুভ্রনীল সাগর, স্পেশালিস্ট রাইটার, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

১৩ ডিসেম্বর (২০২০) ভার্জিনিয়ার শেনানডোয়া ন্যাশনাল পার্ক থেকে সূর‌্যাস্তের পর তোলা শনি ও বৃহস্পতির ছবি (Photo: NASA/Bill Ingalls)

১৩ ডিসেম্বর (২০২০) ভার্জিনিয়ার শেনানডোয়া ন্যাশনাল পার্ক থেকে সূর‌্যাস্তের পর তোলা শনি ও বৃহস্পতির ছবি (Photo: NASA/Bill Ingalls)

রূপকথার গল্পের মতোই বলতে হবে, সে বহুকাল আগের কথা। কিন্তু ব্যাপারটি আসলেই তাই। সাল ১২২৬। সেবছরের ০৪ মার্চ বৃহস্পতি ও শনি গ্রহ একে অপরের সবচেয়ে কাছাকাছি এসেছিল। এরপর কেটে গেছে প্রায় ৮শ বছর। এই এত বছর পর, দুই গ্রহ এর চেয়েও কাছাকাছি এসে দেখা দেবে চলতি বছরের ২১ ডিসেম্বর (২০২০)।

একের অধিক গ্রহ-নক্ষত্র খুব কাছাকাছি এসে সারিবদ্ধ হওয়ার এই মহাজাগতিক ঘটনাকে জোতির্বিজ্ঞানের ভাষায় বলে ‘কনজাংশান’। বাংলায় কনজাংশানের প্রচলিত অর্থ সংযোগ বা মিলন হলেও, অন্য একটি খটমট অর্থ ‘যুগপৎ সংঘটন’ই এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো যায়। যুগপৎ মানে একই কালে বা সঙ্গে এবং সংঘটন মানে ঘটনা। যেহেতু বৃহস্পতি ও শনি সৌরজগতের বড় দুই গ্রহ, এজন্য জোতির্বিজ্ঞানীরা এটিকে বলছেন ‘গ্রেট কনজাংশান’। মোটামুটি দুই দশক পরপর এমন বিরাট ঘটনা ঘটে থাকে।

বিজ্ঞাপন
২৫ আগস্ট (২০২০) নাসা’র হাবল স্পেস টেলিস্কোপ দিয়ে তোলা বৃহস্পতির ছবি (Photo: NASA, ESA, STScI, A. Simon, M.H. Wong and the OPAL team)

রাইস ইউনিভার্সিটি’র পদার্থ ও জোতির্বিজ্ঞানের অধ্যাপক প্যাট্রিক হার্টিগান বলছেন, কিন্তু এইবারের এই যুগপৎ সংঘটন সত্যিই ব্যতিক্রম কারণ, এই প্রথমবারের মতো তারা এত কাছাকাছি আসবে।

এমনকি তারা এতটাই কাছে আসবে যে, কোনোকিছু ছাড়া দেখলে অনেকের জন্য তাদের আলাদা করে দেখাটাই মুশকিল হয়ে যাবে! মনে হবে, দুটি গ্রহ জোড়া লেগে গেছে। কাজেই এটি সত্যিই একটি দুর্লভ মহাসংঘঠন, যোগ করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

কীভাবে দেখা যাবে এই দুর্লভ ঘটনা

এমনিতে বৃহস্পতি আর শনির মাঝখানে ব্যবধান পৃথিবী আর সূর্যের মধ্যকার দূরত্বের (১৪৯,৫৯৭,৮৭০ কিলোমিটার) চারগুণেরও বেশি। তবে এই বিশেষ রাতে তাদের মধ্যে ব্যবধান থাকবে মাত্র প্রায় ৬৯৫ কিলোমিটারের মতো, বলছেন হার্টিগান।

২১ ডিসেম্বর (২০২০) টেক্সাসের হউস্টনে টেলিস্কোপ থেকে এভাবেই দেখা যাবে বৃহস্পতি ও শনি (Photo: Patrick Hartigan/Rice University/Adapted from Stellarium graphics)


 

নাসা আবার এই কনজাংশানের নাম দিয়েছে ‘ক্রিসমাস স্টার’, কারণ আকাশের রোজকার তারার চেয়েও বেশি উজ্জ্বল হয়ে দেখা দেবে এই গ্রহ-জোড়।

হার্টিগানের মতে, এই মহাঘটনা দেখতে সূর্যাস্তের ঘণ্টাখানেক পরেই টেলিস্কোপ তাক করতে হবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় দিগন্তে। তবে আকাশে মেঘ থাকলে চলবে না।

তার পরামর্শ, অন্ধকার হওয়ার আগেই টেলিস্কোপ ঠিকঠাক করে ফেলুন। সঙ্গে একটি বাইনোকুলার রাখা যেতে পারে, যেটি বৃহস্পতির চারটি চাঁদ খুঁজে পেতে সাহায্য করবে।

যদি ২১ ডিসেম্বর সন্ধ্যার আকাশে মেঘ থাকে, তাহলেও চিন্তার কারণ নেই। কনজাংশান শুরু হয়েছে ১৭ ডিসেম্বর থেকে আর চলবে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে এটা ঠিক, ২১ ডিসেম্বর সেন্ট্রাল স্ট্যান্ডার্ড টাইম (সিএসটি) ১৮০০টায় তারা সবচেয়ে কাছাকাছি আসবে। ২১ ডিসেম্বর সিএসটি ১৮০০টা মানে বাংলাদেশ সময় ২২ ডিসেম্বর রাতগত ভোর ৬টা। এদিন সূর‌্যোদয় ৬টা ৩৯ মিনিটে। দক্ষিণ-পশ্চিম দিগন্ত মেঘমুক্ত থাকলে আশাকরি টেলিস্কোপে ধরা দেবে এই দুর্লভ মহাজাগতিক মুহূর্ত।

১৯৮০ সালে ভয়েজার-১ এর তোলা শনি ও এর চাঁদগুলোর ছবি (Photo: SSPL/Getty)

যারা বাইরে যেতে পারবেন না, তাদের জন্যও রয়েছে সহজ ব্যবস্থা। অ্যারিজোনার ‘লওয়েল অবজারভেটরি’ টেলিস্কোপের মাধ্যমে এই গ্রেট কনজাংশান ইউটিউবে লাইভস্ট্রিম করবে। ইস্টার্ন টাইম (ইটি) ১৯০০টা অর্থাৎ বাংলাদেশ সময় ২২ ডিসেম্বর রাতগত ভোর ৬টা থেকে শুরু করবে তারা। রোমে ‘দ্য ভার্চুয়াল টেলিস্কোপ প্রজেক্ট’ও লাইভ করার পরিকল্পনা রেখেছে।

আগামী কনজাংশান দেখা যাবে ২০৮০ সালে

গত ২০০০ বছরে মাত্র দুইবার বৃহস্পতি ও শনি কাছাকাছি এসেছিল। প্রথমবার ১২২৬ সালে এবং পরেরটি ১৬২৩ সালে কিন্তু সূর্যের অতিরিক্ত আলোক বিচ্ছুরণে সেবার দেখতে পাওয়া সম্ভব হয়নি। তাই ১৬২৩ সালের কনজাংশানকে সেভাবে বিবেচনায় রাখা হয় না। কিন্তু ২১ ডিসেম্বর ২০২০ সালের পর ভাগ্যদেবী আমাদের ওপর বেশ প্রসন্ন! নিকটবর্তী কনজাংশান ২০৮০ সালের ১৫ মার্চ।

তবে দুই গ্রহ একইরকম কাছাকাছি থাকলেও, এইবারের চেয়ে ২০৮০ সালের কনজাংশান আরও সহজে দেখা যাবে। সেবার দিগন্তের বেশ উপরেই তারা দৃশ্যমান হবে বলে জানান হার্টিগান।

যদি এইবার কোনোভাবে দেখার সুযোগ হারান, তবে তখন আরও ভালোভাবে দেখতে পাবেন। কিন্তু সেজন্য আপনাকে বাঁচতে হবে আরও ৬০ বছর।