করোনার চেয়েও প্রাণঘাতী ভাইরাস আসছে
অধ্যাপক জ্যাঁ-জ্যাক মুয়েম্বে তামফুমের কথা মনে আছে? প্রায় চার দশক আগে ১৯৭৬ সালে তিনি ইবোলা ভাইরাস আবিষ্কার করেছিলেন। ইবোলা একসময় বহু মানুষের প্রাণ নিয়েছে।
অতি সম্প্রতি অধ্যাপক তামফুম সতর্ক করেছেন, মানবজাতি এখন অজানা অনেক নতুন ও মারত্মক ভাইরাসের মুখোমুখি। আফ্রিকান ট্রপিকাল রেইনফরেস্ট থেকে এর উদ্ভব বলে তার ধারণা।
তার ধারণার সত্যতাও মিলেছে। ইতোমধ্যেই কঙ্গোর এক প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীর মধ্যে হেমরজিক ফিভারের উপসর্গ পাওয়া গেছে। এই জ্বর সাধারণত অনেকগুলো ভাইরাসের সংক্রমণে হয়ে থাকে, যা রক্তনালীর ব্যাপ্তি বাড়িয়ে ত্বকের অভ্যন্তরে এবং মুখ বা অন্যান্য রন্ধ্র দিয়ে রক্তপাত ঘটায়।
সিএনএন’র একটি খবর বলছে, ইনগেন্দে অঞ্চলের ওই নারীর ইবোলাসহ অনেককিছুর পরীক্ষা করা হয় কিন্তু সবগুলোই নেগেটিভ আসে। কিন্তু তার শরীরে ইবোলার মতোই প্রায় সব উপসর্গ বিদ্যমান।
চিকিৎসকরা ধারণা করছেন, এই নারী হয়তো নতুন কোনো ভাইরাসে সংক্রমিত যা করোনা ভাইরাসের মতোই ছড়াতে পারে। তারা আপাতত এর নাম দিয়েছেন ‘ডিজিজ এক্স’। নতুন এই রোগে ইবোলার মতো ৫০-৯০ শতাংশ প্রাণহানির হার হতে পারে।
ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগানাইজেশন’র (ডব্লিউএইচও) ভাষ্য, ‘ডিজিজ এক্স’র এক্স এখানে ‘আকস্মিক বা ধারণাতীত’ অর্থ বহন করছে। এটি এখনও অনুমিত পর্যায়ে থাকলেও বিজ্ঞানী ও গণস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এটি করোনার চেয়েও মারত্মক প্রাণঘাতী ও সংক্রমণ ক্ষমতাসম্পন্ন হতে পারে।
আমরা এখন এমন একটি পৃথিবীতে বাস করছি যেখানে নিত্যনতুন রোগজীবাণু বেরিয়ে আসবে এবং এটি অবশ্যই মানবজাতির জন্য বড় হুমকি, বলছেন অধ্যাপক তামফুম।
কিসশাসাতে তামফুম ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ (আইএনআরবি) নামে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান চালান। এটির মূল পৃষ্ঠপোষক ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশান।
সিএনএন তাকে জিজ্ঞেস করেছিল, নতুন এই রোগ কোভিড-১৯ এর চেয়েও ধ্বংসাত্মক কিনা? তার উত্তর, ‘হ্যাঁ, আমি তা মনে করি’।
সম্প্রতি গবেষকরা করোনা ভাইরাসের নতুন ‘স্ট্রেন’ (অণুজীবের জিনগত ভিন্ন প্রকার) খুঁজে পেয়েছেন যা আরও ৭০ গুণ সংক্রমণ ক্ষমতাসম্পন্ন। ইতোমধ্যেই এই স্ট্রেন যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। গণসংক্রমণ এড়াতে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আকাশ যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে অন্যান্য অনেক দেশ। বাংলাদেশেও স্ট্রেনের খোঁজ মিলেছে।
তামফুম আরও সতর্ক করেছেন, সামনে আরও অনেক রোগজীবাণু পশু-পাখি থেকে মানব শরীরে প্রবাহিত হবে। রেবিস ও ইয়েলো ফিভারের মতো কোভিড-১৯ এর উৎপত্তিও এইভাবে। এসএআরএস-সিওভি-২ (SARS-CoV-2), যেটি করোনা ভাইরাসজনিত রোগের জন্য দায়ী– সন্দেহ করা হচ্ছে, বাদুড় থেকে এর উৎপত্তি। প্রাণীরাজ্যেরই কোনো পশু বা পাখি হতে পারে আগামীর কোনো প্রাণঘাতী ভাইরাসের প্রাকৃতিক পরিবাহক।
ব্যাপকভাবে বন ধ্বংসকে বিজ্ঞানীরা এর কারণ হিসেবে দায়ী করছেন। পশু-পাখির অভয়ারণ্য ধ্বংসের ফলে অনেক প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে ইকোসিস্টেম বিঘ্নিত হচ্ছে। এর পাশাপাশি, খাবার ও টিকে থাকার প্রয়োজনে লোকালয়ের দিকে চলে আসছে পশু-পাখিরা। এভাবে নানা রোগজীবাণু মানুষের শরীরে প্রবাহিত হচ্ছে।
‘যদি কোনো জীবাণু আফ্রিকা থেকে উদ্ভব হয় তাহলে সারাবিশ্বে ছড়াতে এটি বেশ সময় নেবে। কাজেই অনাগত ভাইরাসটি যদি শুরুতেই শনাক্ত করা যায়, যেমনটি আমার প্রতিষ্ঠান করছে – তাহলে বাকি বিশ্বের জন্য এটি একটি বড় সুযোগ। আগামীর জীবাণুগুলো মোকাবিলায় কর্মকৌশল তৈরিতে তা সাহায্য করবে।’
জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়’র কোভিড-১৯ ট্র্যাকার অনুযায়ী, সারাবিশ্বে এখন পর্যন্ত প্রায় ৮৭ মিলিয়নের বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে সংক্রমিত এবং এই সংখ্যা এখনও থামেনি। প্রাণ হারিয়েছে ১৮ লাখ ৮৩ হাজার ৭শ ৬১ জন (প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত) বেশি মানুষ।