এর আগে, ২০১৬ ছিল ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণ বছর। সদ্য গত হওয়া মহামারি বছর ২০২০-ও তার হাতে হাত মেলালো। রেকর্ডে ২০১৬ সালের পাশে এখন একই কাতারে জায়গা দিতে হবে গেলো বছরকেও।
কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস বলছে, এই উপমহাদেশের জন্য আবার সবচেয়ে উষ্ণ বছর ছিল ২০১৯ — যা পরের বছরে দশমিক চার ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ইউরোপের সবচেয়ে উষ্ণ বছর।
বিজ্ঞাপন
গত বছর লা নিনা’র শৈত্যপ্রবাহ সত্ত্বেও উষ্ণতম বছর হিসেবে ২০১৬ সালের সঙ্গে টাই হয়েছে। অবশ্য সেই শৈত্যপ্রবাহ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। এন নিনো’র শক্তিশালী উষ্ণ প্রভাবে রেকর্ডে স্থান করে নেয় ২০২০। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৈষ্ণিক উষ্ণতার (গ্লোবাল ওয়ার্মিং) যে বিষয়টি বিজ্ঞানীরা বলতে বলতে গলা শুকিয়ে ফেলছেন, এর কুপ্রভাব টের পেতে শুরু করেছে বিশ্ব।
ক্লাইমেট সার্ভিস সেন্টার জার্মানি’র বিজ্ঞানী কার্স্টেন হউস্টেইন এক প্রতিবেদনে বলেন, ২০১৬ সালের সঙ্গে ২০২০ টাই করার মাধ্যমে সর্বপ্রথম যে বিষয়টি সামনে আসে, মানবসৃষ্ট জলবায়ু দূষণ নিরবচ্ছিন্নভাবে অব্যাহত রয়েছে। এটি বিশেষভাবে লক্ষণীয়, ২০২০ সালটি সেভাবে এল নিনোর প্রভাবের মধ্যে ছিল না। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের একটি প্রকার অতিরিক্ত উত্তাপের যোগান দিয়ে রেকর্ড বুকে জায়গা করে নেয়। প্রকৃতপক্ষে, কেবলমাত্র একটি ঠান্ডা ডিসেম্বর (নভেম্বরের তুলনায়) ২০২০ সালকে একক উষ্ণতম বছরে পরিণত হতে বাধা দিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
এদিকে বায়ুমণ্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। ২০২০ সালের মে মাসে পার্টস পার মিলিয়ন (পিপিএম) দাঁড়ায় সর্বোচ্চ ৪১৩। গত বছর স্ট্যান্ডার্ড ১৯৮১-২০১০ রেফারেন্স পিরিয়ডের তুলনায় দশমিক ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণ ছিল। যা ১৮৫০-১৯০০ সালের প্রাক-শিল্পকালের তুলনায় প্রায় ১.২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। এর মানে, গত ছয় বছর ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণকাল, বলছে কোপার্নিকাস সার্ভিস।
রেফারেন্স পিরিয়ডের (১৯৮১-২০১০) হিসাবে গতবছর সুমেরু ও উত্তর সাইবেরিয়া গড় তাপমাত্রার চেয়েও ছয় ডিগ্রি বেশি উষ্ণ ছিল।
হউস্টেইনের সতর্কবার্তা, এই হারে বৈষ্ণিক উষ্ণতা বাড়তে থাকলে ২০৩০ সাল নাগাদ তাপমাত্রা বেড়ে দাঁড়াবে ১.৫ ডিগ্রি আর চলতি শতাব্দী শেষে তিন ডিগ্রি ছাড়িয়ে যাবে।
ধীর পায়ে আসছে শীত। শোনা যাচ্ছে শিশিরের পদধ্বনি। এদিকে, দূষণ ও যান্ত্রিক তাণ্ডবে রাজধানী ঢাকা হয়ে আছে উতপ্ত। তবে, ছোট শহর আর গ্রামের দিকে কুয়াশার প্রলেপ মেখে হাজির শীতের আগাম পরশ।
বাংলাদেশের পরিবেশগত বৈচিত্র্যের কারণে উত্তরবঙ্গে, সিলেটে, চট্টগ্রামে শীত চলে আসে আগেভাগে। ফলে আবহাওয়ার নির্দেশ মেনে তীব্র শীত আসার আগেই নাগরিক রসনায় যুক্ত হয়েছে শীতের আমেজ। পোশাকেও আসছে পরিবর্তন। বাহারি রঙের গলাবন্ধ, ফুলহাতা জামা-কাপড় আলমারির বন্দিজীবন থেকে বের হয়ে মানুষের শরীরে ঝলমল করছে।
খাবার-দাবার নিয়ে আমাদের চিন্তাভাবনা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার কোনও শেষ নেই। মৌসুম ও পরিবেশের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রতিটি সমাজেই বেছে নেওয়া হয় উপযুক্ত খাবার-দাবার। যে কারণে শীত-প্রধান আর গ্রীষ্ম-প্রধান অঞ্চলের খাদ্য তালিকা সম্পূর্ণ আলাদা। বাংলাদেশেও ঋতুতে ঋতুতে বদলায় খাদ্যাভ্যাস, রুচি ও খাবারের মেনু।
চিরায়ত বাংলার গ্রামে-গঞ্জে শীতের আবহে পাওয়া যায় খেজুরের রস, পিঠা, পুলি। বাংলার শীত মানেই বিচিত্র খাবারের সম্ভার। গ্রামের খাদ্য তালিকা শহরের ব্যস্ততা ও ভিড়ে পাওয়া সহজ নয়। শহরের বাস্তবতায় চট-জলদি খাবারের দস্তুরই বেশি। ফাস্ট ফুড, ইনস্ট্যান্ড কফি, চটপটি এন্তার পাওয়া যায় শহরের গলি, মোড় ও এভিনিউ-এ।
তবে, ইদানিং শহরেও পাওয়া যাচ্ছে শীতের পিঠা, পুলি। প্রসার বাড়ছে চিরায়ত খাবারের আইটেমগুলোর। খালা ও নানী বয়সী মহিলারা নানা জাতের পিঠা সরাসরি তৈরি করছেন জ্বলন্ত উনুনে। নানা বয়সের মানুষ ভিড় করে খাচ্ছেন সেসব। এভাবেই শাশ্বত বাংলার ঐতিহ্য ফিরে আসছে নগরের বিন্যাসে। মানুষ উপভোগ করতে পারছেন শীত ঋতুর খাদ্য সম্ভার।
শহর ভেদে ও এলাকার পার্থক্যে খাবারের পরিবর্তন বিশেষ ভাবে লক্ষ্যণীয়। দেশের বিভিন্ন শহরের খাদ্য-বৈচিত্র্যের মতোই বন্দর নগরী চট্টগ্রামের একেক এলাকায় দেখা পাওয়া যায় একেক রকমের খাদ্য তালিকা। চট্টগ্রাম শহরের এক প্রান্তে বৃহত্তর পাহাড়তলী এলাকাকে বলা যায় ‘রেল শহর‘। রেলের বহু কারখানা ও প্রতিষ্ঠান এখানে অবস্থিত। এক সময় রেলের কাজে যুক্ত হয়েছিল বিহারি লোকজন। তাদের অনেকেই এখনও রয়েছেন পাহাড়তলীর ওয়্যারলেস, ঝাউতলা, আম বাগান, সর্দার বাহাদুর কলোনি, পাঞ্জাবি লাইন, আকবর শাহ প্রভৃতি মহল্লায়। এখানেও চলে এসেছে শীতের পিঠা। তবে, সেগুলো চিরায়ত বাংলার মাটির উনুনে সরাসরি বানানোর বদলে তৈরি হচ্ছে আলাদা ভাবে। বলা ভালো, বাঙালি ও বিহার-উত্তর ভারতের উর্দু ভাষী সংস্কৃতির মিশেল হয়েছে এসব খাবারে।
পাহাড়তলী ওয়্যারলেস মোড়ে কায়দা করে সাজানো অনেকগুলো পিঠার দোকানের পাশাপাশি রয়েছে চাট হাউস। যেখানে মৌ মৌ করছে কাবাব, হালিম, তেহারি, নলা, বট, তন্দুরের সুগন্ধ। ঢাকায় যেমন মোহাম্মদপুর ও মীরপুরে বিহারি কলোনিগুলোর আশেপাশে পাওয়া যায় মাংসের অনেক রকম সুস্বাদু আইটেম, চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর কয়েকটি পয়েন্টেও মিলছে সেসব খাবার। আশেপাশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও কর্পোরেট হাউসের তরুণ জনশক্তি ভিড় করছেন এসব দোকানে।
‘বেশির ভাগ সময় কফি শপে বসা হলেও মাঝেমাঝে স্বাদ বদল করতে এসব দোকানেও আসি', বললেন আইরিন শম্পা। তিনি বন্ধুদের নিয়ে খেতে খেতে বললেন, `খোলামেলা পরিবেশে মাংসের আইটেম বা পিঠা টেস্টে চেঞ্জের জন্য বেশ ভালো। শীতের আমেজে এসব ঝাল খাবার এক ধরনের উষ্ণতা দেয়।‘
খাদ্য বা খাদ্যাভ্যাস নিয়ে মানুষের আগ্রহ ঐতিহাসিক। খাবার বিষয়ক আলাপ-আলোচনা, ব্লক, পটকাস্ট বর্তমানে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। তার একটি কারণ হয়তো মানুষের যাপনের ইতিহাসের সঙ্গে এর ওতপ্রোতভাবে সম্পর্ক। ক্যারল ক্যুনিহান, কেন আলবালা, কৃষ্ণেন্দু রায়, লিজ়ি কলিংহ্যাম, তপন রায়চৌধুরী তাবড় পণ্ডিতেরা লিখেছেন, খাদ্য ও খাদ্যাভ্যাস কীভাবে সমাজচিত্রকে ফুটিয়ে তোলে। খাদ্য যে শুধু রসাস্বাদনের কথা বলে তা তো নয়, বৈচিত্র্য ও বৈষম্যের কথাও বলে। সংস্কৃতি তথা বর্ণ, লিঙ্গ, জাতপাতের ভেদাভেদের কথাও বলে।
খাবার বিষয়ক বইও বেশ পাঠকপ্রিয়তা পাচ্ছে আজকাল। মুঘল খাবারের নানা ধরন নিয়ে রয়েছে একাধিক বেস্ট সেলার বই। দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন ঘরানার খাদ্য, যেমন হায়দরাবাদী, দক্ষিণ ভারতীয়, কাশ্মিরী সম্পর্কে এবং বিশেষত স্ট্রিটফুড নিয়ে বিস্তর লেখালেখি রয়েছে। অধুনা নীলাঞ্জন হাজরা ‘খিচুড়ি‘র আদ্যোপান্ত নিয়ে লিখেছেন আস্ত একটি বই। আমাদের জীবনে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, চাল-ডাল মিশ্রিত এই খাদ্যের চমৎকার উপস্থাপনা রয়েছে বইটিতে। লেখক জানিয়েছেন, উত্তর ও দক্ষিণ ভারতে আদি-মধ্যযুগে প্রচলিত নিরামিষ খিচুড়ির সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ এবং ব্রিটিশ রানি ভিক্টোরিয়ার জন্য বানানো ‘রাইস আ লা স্যোর নাইটিঙ্গল’ সম্পর্কেও।
বাংলাদেশের শহরগুলোতে, বিভিন্ন অঞ্চলে, ঋতুতে ঋতুতে খাবারের যে বৈচিত্র্য, তা নিয়ে গবেষণা হয়েছে কমই। সামাজিক বিজ্ঞানের পরিসরে খাদ্য সংস্কৃতি ও রুচির মধ্যকার সম্পর্ক পরিমাপ করাও একটি জরুরি কাজ বটে। নাগরিক রসনায় শীতের আমেজ মেখে মুখরোচক খাদ্য আস্বাদনের পাশাপাশি সেসবের উৎপত্তি, বিকাশ ও ইতিহাস জানাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ এবং চিত্তাকর্ষক।
শিশুদের জন্য বুকের দুধ দান করে পুরাতন রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড গড়েছেন টেক্সাসের অ্যালিস ওগলেট্রি নামের এক নারী।
ভারতীয় গণমাধ্যম এবিপি এক প্রতিবেদেন এই খবর জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলায় হয় , অ্যালিস ওগলেট্রি অকাল শিশুদের জন্য তিনি এবার ২৬৪৫ লিটার বুকের দুধ দান করেছেন। এর আগে ২০১৪ সালে ১৫৬ লিটার দুধ দান করে প্রথমবারের মতো রেকর্ড গড়েছিলেন এই নারী। এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন লাখ শিশুকে বুকের দুধ দিয়ে সাহায্য করেছেন তিনি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০১০ সালে আমেরিকান এই নারী বুঝতে পেরেছিল যে, স্বাভাবিকের চেয়ে তার বেশি দুধ উৎপাদন হচ্ছে। তাই ছেলের চাহিদা মেটানোর পর অতিরিক্ত দুধ অপচয় হবে বিধায় তিনি এর বিকল্প ব্যবহারের জন্য হাসাপাতালে যোগাযোগ করেন। হাসপাতাল থেকেই তিনি জানতে পারেন যে, দুধ অন্যান্য শিশুদের জন্য দান করা যায়।
এ বিষয়ে অ্যালিস ওগলেট্রি জানান, মানুষকে সাহায্য করার জন্য তার একটি বড় মন আছে। সবসময় অর্থ দিয়ে সহায়তা করতে পারেন না। তাই শিশুদের জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
প্রতিনিয়ত দুধ দান করার বিষয়ে তিনি আরও জানান, ‘আমি সব সময় প্রচুর পানি পান করতাম, আমি পাম্প করার জন্য আমার সময়সূচীর সাথে সামঞ্জস্য রেখেছিলাম, আমি স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়েছিলাম এবং আমি আমার মতো পাম্প করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছি। কারণ আমি জানতাম এই পরিশ্রম কতগুলো শিশুকে সাহায্য করবে।’
অ্যালিস ওগলেট্রির এই অনুদান উত্তর টেক্সাসের মায়েদের মিল্ক ব্যাংকে সংগৃহীত হয়। মাদার্স মিল্ক ব্যাংক অব নর্থ টেক্সাসের নির্বাহী পরিচালক শাইনা স্টার্কস গিসেন ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসকে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ‘অ্যালিস ওগলেট্রি ভঙ্গুর শিশুদের জন্য একটি অবোধ্য পরিমাণ উদ্বৃত্ত স্তনদুগ্ধ দান করার জন্য তার অসাধারণ প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে আমাদের আবারও বিস্মিত ও অনুপ্রাণিত করেছে।’
প্রশান্ত মহাসাগরের দূরবর্তী সলোমন দ্বীপপুঞ্জের কাছে বিশ্বের বৃহত্তম প্রবালের খোঁজ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। মহাকাশ থেকে এটিকে একটি বড় আকৃতির জীবের মতো দেখা যায়।
বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) বৈজ্ঞানিক ও শিক্ষামূলক সংস্থা ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি এই তথ্য জানিয়েছে। খবর আল জাজিরা।
সংস্থাটি জানায়, বিশাল এই প্রবালটির দৈর্ঘ্য ৩২ মিটার (১০৫ ফুট) এবং প্রশস্ত ৩৪ মিটার (১১১ ফুট)। প্রবালটি প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো বলে মনে করা হচ্ছে। এটি প্রধানত বাদামী রঙয়ের। তবে এর আস্তরণ উজ্জ্বল হলুদ, নীল এবং লাল রঙে ছিটানো। এটা অনেকটা দেখতে সমুদ্রপৃষ্ঠে ঢেউয়ের মতো।
বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের সমুদ্র এবং প্রবালজীবন জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হয়েছে। যেমন, অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের ক্ষতির প্রধান কারণ হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সাগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি। এর ফলে বেশ কয়েক বছর ধরে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের প্রবালের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে সামান্য গভীর জলে এই বিশাল আকৃতির প্রবালকে গবেষকরা মরূদ্যানে সাক্ষী হওয়া 'এক আশার আলো' হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
গবেষকরা জানান, প্রবালটির রঙ ও আকার থাকা সত্ত্বেও খালি চোখে এটিকে সমুদ্রের পৃষ্ঠের নীচে এক বিশাল শিলার মতো দেখায়। এর আয়তনের কারণে প্রথমে এটিকে দেখে মনে হয়েছিলো কোনো জাহাজের ধ্বংসাবশেষ হতে পারে। কিন্তু যখন একদল গবেষক পানিতে ডুব দিয়ে এটির কাছে গিয়ে দেখে, তখন আবিষ্কার করে এখানে বিস্তার করেছে বিশাল এই প্রবাল।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির গবেষক ও প্রিস্টাইন সিসের প্রতিষ্ঠাতা এনরিক সানা জানান, ‘আমরা এখন মনে করি পৃথিবীতে নতুন করে অনুসন্ধান করার মতো আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। ঠিক তখনই আমরা প্রায় এক বিলিয়ন ছোট পলিপের সমন্বয়ে তৈরি হওয়া এই বিশাল প্রবালটি খুঁজে পেলাম। যা জীবন এবং রঙের সঙ্গে স্পন্দিত হচ্ছে।’
বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা গাছ খুঁজে পাওয়ার মতোই, এটি একটি উল্লেখযোগ্য বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার বলেও জানান তিনি। নথি অনুযায়ী এর আগে আবিষ্কৃত সবচেয়ে বড় প্রবাল ছিল আমেরিকান সামোয়াতে অবস্থিত ‘বিগ মোমা’। এই প্রবাল দ্বীপটি আগের সেই রেকর্ড-ব্রেকারের চেয়ে তিনগুণ বড় এবং এর আকার প্রায় দুটি বাস্কেটবল কোর্ট বা পাঁচটি টেনিস কোর্টের সমান।
কিন্তু প্রবালটির টিকে থাকা নিয়ে শঙ্কার কারণ রয়েছে বলেও জানান এই গবেষক। তিনি বলেন, প্রবালটি দূরবর্তী অবস্থানে থাকা সত্ত্বেও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের থেকে ঝুঁকিমুক্ত নয়।
বিশালাকৃতির এই প্রবালটির সন্ধান এমন সময়ে এসেছে, যখন ২০০টি দেশের প্রতিনিধিদল জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন-কপ২৯ এ সমবেত হয়েছেন। জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর প্রভাব মোকাবিলায় পদক্ষেপের জন্যই প্রতিবছর এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে পানির নিচের জীবনের টিকে থাকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা। তারা বলেছেন, পৃথিবীজুড়ে যেভাবে জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে, তাতে একসময় পানির নিচে থাকা এসব প্রবালগুলো পাওয়া দুষ্কর হয়ে যাবে। গতকাল (বুধবার) প্রকৃতি সংরক্ষণ এবং প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা আইইউসিএন জানায়, সামুদ্রিক প্রবাল প্রজাতির ৪৪ শতাংশ বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে সলোমন দ্বীপপুঞ্জ। গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর কারণে অঞ্চলটি প্রবাল ঝুঁকির প্রথম সারিতে রয়েছে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।
জীব বৈচিত্র্য রক্ষায় সলোমন দ্বীপপুঞ্জ জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জেরেমিয়া মানেলে। তিনি বলেছেন, "সমুদ্র আমাদের জীবিকা সরবরাহ করে এবং আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে অনেক অবদান রেখেছে। আমাদের বেঁচে থাকা এসব প্রবাল প্রাচীরের উপর নির্ভর করে। তাই এই প্রবাল আবিষ্কার ভবিষ্যত প্রজন্মকে রক্ষা ও টিকিয়ে রাখতে আমাদেরকে সচেতন থাকতে হবে।"
অস্ট্রেলিয়ায় পেঙ্গুইনের বসবাস নতুন কিছু নয়। কিন্তু দেশটিতে সম্প্রতি একটি পেঙ্গুইন নিয়ে চলছে আলোচনা, যা আবার বিরল এক ঘটনার জন্ম দিয়েছে। প্রথমবারের মতো সম্রাট প্রজাতির এক পেঙ্গুইনের দেখা মিলেছে দক্ষিণ-পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার ডেনমার্ক শহরের একটি পর্যটন সমুদ্র সৈকতে। এ পর্যন্ত ঠিকাছে। কিন্তু অবাক করা বিষয় হচ্ছে এই প্রজাতির পেঙ্গুইনের বসবাস অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে। সেখান থেকে প্রায় ২ হাজার ২০০ মাইল (৩ হাজার ৫৪০ কিলোমিটার) পথ পাড়ি দিয়ে এসেছে অস্ট্রেলিয়ায়। এমন ঘটনায় অবাক হয়েছেন দেশটির বিজ্ঞানীরাও।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম স্কাই নিউজ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়।
স্কাই নিউজ জানায়, গত ১ নভেম্বর এই প্রজাতির পেঙ্গুইনের দেখা পাওয়া যায়। এটি অপুষ্টিজনিত একটি সম্রাট পেঙ্গুইন। পেঙ্গুইনের প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে বেশি ওজন থাকে সম্রাট প্রজাতির। এদের উচ্চতা এক মিটারের একটু বেশি হয়। আর ওজন হয় ৪০ থেকে ৪৫ কেজি পর্যন্ত। কিন্ত এক মিটার উচ্চতার এই পেঙ্গুইনটির ওজন ছিল ২৩ কেজি।
ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার গবেষক বেলিন্ডা ক্যানেলের মতে, সম্রাট হল বৃহত্তম পেঙ্গুইন প্রজাতি। এই প্রজাতির পেঙ্গুইন এর আগে অস্ট্রেলিয়ায় দেখা যায়নি।
তিনি বলেছেন, কেন এতো দীর্ঘ যাত্রা করে এটি এসেছে তার কোনও ধারণা নেই, যদিও এর আগে কিছু সম্রাটকে নিউজিল্যান্ডে দেখা গেছে।
ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার জীববৈচিত্র্য ও সংরক্ষণ বিভাগ জানিয়েছে, সামুদ্রিক পাখি পুনর্বাসনকারী ক্যারল বিডুলফ পেঙ্গুইনটির যত্ন নিচ্ছেন। এই সময়ে অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়া উষ্ণ হওয়ায় জলবায়ুর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে ঠাণ্ডা পানির স্প্রে করা হচ্ছে।