রিফিউজি জীবন থেকে সেরা ক্যাম্পাসে
১৮ এপ্রিল ১৯৫৫ সালে আলবার্ট আইনস্টাইন (জন্ম- ১৪ মার্চ ১৮৭৯) যখন মারা যান, তখন তার পেছনে ছিল রিফিউজি জীবনের করুণ অধ্যায়, যার পরেও তিনি পেয়েছিলেন নোবেল পুরস্কার। একজন ইহুদি হয়েও তিনি জার্মানির একজন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী রূপে শেষ জীবনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেরা ক্যাম্পাসে নিজের আসন পাকা করেছিলেন। তার জীবন হলো সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে বিজয় অর্জনের আখ্যান।
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে বিশেষ অবদান এবং বিশেষত আলোক-তড়িৎ ক্রিয়া সম্পর্কীত গবেষণার জন্য আইনস্টাইন সমাদৃত। তিনি পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রচুর গবেষণা করেছেন এবং নতুন উদ্ভাবন ও আবিষ্কারে তার অবদান অনেক। ১৯৯৯ সালে টাইম সাময়িকী আইনস্টাইনকে 'শতাব্দীর সেরা ব্যক্তি' হিসেবে ঘোষণা করে। এ ছাড়া বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানীদের একটি ভোট গ্রহণের মাধ্যমে জানা গেছে, তাকে প্রায় সবাই সর্বকালের সেরা পদার্থবিজ্ঞানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
আইনস্টাইনের শৈশব কেটেছে জার্মানিতে, কৈশোর ইতালি, যৌবন সুইৎজারল্যান্ডে, প্রৌঢ়ত্ব জার্মানি আর বার্ধক্য আমেরিকায়। এক বার জাপানে মানুষে টানা রিকশায় তাকে উঠতে বলা হলে, ব্যথিত হয়ে তিনি বলেন: 'এক জন মানুষ পশুর মতো টানবে, আমি নির্বিকার চিত্তে বসে থাকব তা কী করে হয়'!
বহু অনুরোধ করেও ফল হয়নি। ওঠানো যায়নি রিকশায়। অহংকারী ছিলেন না, কিন্তু আত্মবিশ্বাসের অভাব ছিল না। জার্মানি শেষ বার ছাড়ার পর সে সময়কার একশো বিজ্ঞানী তার তত্ত্ব ভুল বলে মহা হইচই শুরু করেন। আইনস্টাইন রাগ করলেন না, ব্যাপারটা সহজ ভাবেই নিলেন। অসম্ভব আত্মবিশ্বাস নিয়ে বললেন: 'আরে এ সব কী, একশো জনের কি প্রয়োজন, মাত্র এক জন ভুল ধরিয়ে দিলেই তো হয়'!
যুদ্ধকে আজীবন অন্তর দিয়ে ঘৃণা করে গেছেন এই মনীষী। তার নিজের কথায়, 'মানুষ হত্যা আমার কাছে নিদারুণ বিরক্তিকর একটি ব্যাপার। আমার এই মনোভাব কোনও বিজ্ঞ চিন্তা থেকে আসেনি। এর মূলে রয়েছে ঘৃণা আর নিষ্ঠুরতার প্রতি আমার তীব্র বিদ্ধেষ।'
আইনস্টাইন ছিলেন অসম্ভব জনপ্রিয়। একটা নমুনা এ রকম, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ১৪ জন বিজ্ঞানীর নাম বিজ্ঞানীদের কাছ থেকে গোপন ভোটের মাধ্যমে চাওয়া হলে, বিভিন্ন নাম ওঠে এল। কিন্তু আইনস্টাইনের নাম কারও পছন্দ থেকে বাদ পড়ল না।
আইনস্টাইন বলেছিলেন, 'আলোর চেয়ে বেশি গতিতে আর কেউ ছোটে না এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে। শূন্যস্থানে আলো প্রতি সেকেন্ডে পাড়ি দেয় ২৯ কোটি ৯১ লাখ ৯২ হাজার ৪৫৮ মিটার। এর চেয়ে বেশি গতি পৃথিবীতে আর কারও নেই।'
আর এই দাবিই আইনস্টাইনের বিশেষ আপেক্ষিকতা সূত্রের ভিত।
বস্তুত এই গতিসীমার ওপরই দাঁড়িয়ে আছে গোটা পদার্থবিদ্যা অনেকখানি। তার আপেক্ষিক তত্ত্ব খুব আলোড়ন তুললেও অনেকে সেটা বোঝে না। এটা বোঝানোর জন্য রসিকতা করে তিনি বলেছিলেন, 'তুমি যদি আগুনের পাশে এক মিনিট বসে থাকো তা হলে মনে হবে এক ঘন্টা ধরে বসে আছ, আর যদি একটি সুন্দরী মেয়ের পাশে এক ঘন্টা বসে থাকো তা হলে মনে হবে মাত্র এক মিনিট ধরে বসে আছ। বাস্তবে এটাই আপেক্ষিকতা।'