নীল সৌন্দর্যের পরিযায়ী ‘নীলাম্বরি’
সবুজ গাছ আর পাতার রাজ্যে যেন এক বিন্দু নীল! নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে একা। উড়ে যাবার ইচ্ছে নেই। শুধুই একমনে এদিক-ওদিক দূর-দৃষ্টি নিক্ষেপ।
নীলের এই অপূর্ব সম্ভারই তাকে প্রকৃতিতে বিশেষত্ব দান করেছে। চিনে নিতে অসুবিধে হয় না পাখিটিকে। তার এমন হালকা নীল সৌন্দর্য বরাবরই মনকে রাঙায়। যতবার দেখিছি, মুগ্ধ না হয়ে থাকা যায়নি।
ক্ষুদ্র হলেও তার কার্যশক্তি অতি প্রখর। বিশ্বস্ত ডানায় পাড়ি দিতে পারে প্রায় ২০ হাজারের উড়ন্ত পথ! তবে একসঙ্গে নয়; একটু একটু করে। গাছে গাছে। পাতা আর ডালে ডালে। পাখিটির নাম নীলাম্বরি। ইংরেজি নাম Verditer Flycatcher এবং বৈজ্ঞানিক নাম Eumyias Poliogenys। তার দৈর্ঘ্য মাত্র ১৬ সেন্টিমিটার। নীল-কটকটিয়া, নীল চটক নামেও উল্লেখ হয় তাদের। এরা আকারে দোয়েলের মতো।
বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রখ্যাত পাখি গবেষক ইনাম আল হক বলেন, চুটকিরা অধিংকাশই পরিযায়ী পাখি। এ ভারডিটার ফ্লাইকেচার পাখিটিও তাই। শীতে পাহাড়ে ওঠে যায়। হিমালয়ের উপর থাকে। এমনি কি ওরা তুন্দ্রাতে চলে যায়। অথবা তাইগাতেও চলে যায়। উড়ে উড়ে ওরা দশ হাজার কিংবা বিশ হাজার কিলোমিটার দূরেও চলে যেতে পারে।
‘এ পাখিটিকে অন্য চুটকিদের তুলনায় খুব স্পষ্ট দেখা যায়। এরা খোলা জায়গাগুলোতে বসে। অন্য চুটকিগুলো গাছের ডালে ডালে লুকিয়ে বসে। কারণ শিকারী পাখি ওদের ধরে খেয়ে ফেলবে বলে তাদের এমন আত্মরক্ষা। এরা কিন্তু প্রকাশ্যে বসে। কারণ ওরা উড়ন্ত পোকা ধরে ধরে খায়। আবার ডালে এসে বসে।’
ইনাম আল হক বলেন, ‘‘ওরা কিন্তু খুব তীক্ষ্মদৃষ্টিসম্পন্ন পাখি। অন্য চুটকিদের চাইতে ওরা সংখ্যায় বেশি এবং ভালো ভাবেই আছে আমাদের দেশে। এটিও একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় যে, এই পাখিরা যে পোকা খাচ্ছে বা যে পোকাগুলো খাচ্ছে সেগুলো হয়তো কীটনাশকে কম আক্রান্ত হচ্ছে। কীটনাশক সব পোকা-মাকড়কে সমানভাবে ক্ষতি করে না। এগুলো সবই ‘হয়তো’ দিয়েই বলতে হবে। তবে অন্য চুটকিগুলো কিন্তু ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত খুশি যে, এই ভারডিটার ফ্লাইকেচার পাখিটি আমাদের দেশে বেশ ভালই আছে। এটি আপনি শীতের শুরুতেই দেখতে পাবেন। এরা বাংলাদেশ থেকেও দক্ষিণে চলে যায়। এখানে যে ওরা পুরো শীতটা কাটায় তাও নয়। অনেকে আরো দক্ষিণে অর্থাৎ থাইল্যান্ড, ফিলিপাইনেও চলে যায়। আর যদি আপনি উত্তরে যান অর্থাৎ ভারতের পাহাড়ি অঞ্চল বা হিমালয়, ভূটান বা নেপালে তখনও দেখতে পাবেন এই পাখিদের। তারা বাসা করছে অরণ্যেক পরিবেশে।’
‘ওরা পাহাড়ি গাছের ডালে বাসা বাঁধে। গ্রীষ্মে ওরা উত্তরের দিকে চলে যেতে থাকে। যেখানে খুব বেশি গরম নয়, এবং বৃষ্টিও বেশি নয় এমন জায়গায়। এই পোকাগুলোই হয়তো ওরা ওখানে খুঁজে পায় – যে পোকাগুলো ওরা খেয়ে থাকে।’
প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন (আইইউসিএন) এর তালিকায় নীলাম্বরি ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত তালিকার পাখি।