আলেম হতে চায় জন্মান্ধ এতিম শিশু আশিক
জন্মান্ধ শিশু মো: আশিকুর রহমান
জন্মের দেড় বছরের মধ্যেই বাবা-মা দুজনকেই হারান জন্মান্ধ শিশু মো: আশিকুর রহমান (১৪)। পৃথিবীর কঠিন বাস্তবতা কি জিনিস সেটা তখনও তার বোঝার বয়সও হয়নি। আশিক যখন মায়ের পেটে ঠিক সেই মুহূর্তে একটি দুর্ঘটনায় বাবাকে হারায় সে। তারপর আশিক যখন পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হয় ঠিক তার দেড় বছরের মধ্যেই হারায় মমতাময়ী মাকে।
যে বয়সে একটি শিশু তার মায়ের কোলে আশ্রিত থাকার কথা, সেই বয়সে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি আশিক। বাবা-মা দুজনেরই মৃত্যুর পর ছোট শিশু আশিক কোথায় যাবে, কার কাছে থাকবে, কে লালন পালন করবে এমন একটা মানুষও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।
শুধু আশিকই না, তখন চরম বাস্তবতার মুখোমুখি হয় আশিকের বড় ভাই হাসেম মিয়া (২৩)। হাসেমের বয়স তখন বছর দশেক হবে। দুই ভাই পড়ে যায় গভীর সাগরে। সমাজের কেউ তাদের পাশে এগিয়ে আসেনি। বাড়িয়ে দেয়নি সহযোগিতা ও সহানুভূতির ভালোবাসার দুই হাত।
এতিম এই দুই ভাইয়ের পাশে তখন এগিয়ে আসেন তাদের হতদরিদ্র মামা হারুন মিয়া। যেখানে নিজের সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হয় সেখানে এতিম দুই ভাগনেকে নিয়ে আসেন তার নিজ বাড়ি রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির নারুয়া গ্রামে। এখানেই শত কষ্টের মাঝে নানা প্রতিকূলতাকে ভেদ করে বড় হতে থাকেন দুই ভাই। বড় ভাই হাসেম এখন বিয়ে করে শ্বশুড় বাড়িতে ঘরজামাই থাকেন। আর আশিকের দিন কাটছে হতদরিদ্র মামা-মামির সংসারে।
জন্মান্ধ এতিম শিশু আশিকুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, মামা-মামির কাছেই মানুষ হয়েছি। এখন তারাও অসুস্থ। আমি চোখে না দেখলেও বিভিন্ন মাধ্যমে শুনে শুনে প্রায় দেড় শতাধিক গজল, হামদ-নাত, সূরা ও ওয়াজ মুখস্ত করেছি। আমি ভবিষৎতে একজন আলেম হতে চাই। যদি কেউ আমাকে সেই সুযোগটা করে দিত তাহলে আমি কৃতজ্ঞ থাকতাম। আমার অনেক ইচ্ছা আমি একজন আলেম হবো।
আশিকের মামার বাড়ির প্রতিবেশি নারুয়া গ্রামের বাসিন্দা সোহেল বার্তা২৪.কমকে বলেন, বাবা-মাকে হারানো আশিকের দু-চোখই অন্ধ। কিন্তু এর পরেও আশিক অনেক হামদ-নাত, সূরা, ওয়াজ মুখস্ত করেছে। ওর কণ্ঠও অনেক সুমধুর। কোন পৃষ্ঠপোষকতা বা কারো কোন সহযোগিতা পেলে ও অনেক বড় আলেম হতে পারবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। আমরা গ্রামের মানুষ অনেক সময় ওকে ডেকে নিয়ে ওর কণ্ঠে গজল শুনি।
আশিকের মামা হারুন মিয়া বার্তা২৪.কমকে বলেন, আশিক বড় অসহায়। ও জন্ম থেকেই অন্ধ। ওকে আমরা দেড় বছর বয়স থেকে এতো বড় করেছি। কিন্তু এখন আর পারছিনা। আমি অন্যের বাড়ি কাজ করে যা আয় করতাম তাই দিয়ে সংসার চালাতাম। এখন আমি ও আমার স্ত্রী দুজনই অসুস্থ। আর পারছিনা।
আশিক রাজবাড়ী সদর উপজেলার কল্যানপুর গ্রামের বাসিন্দা মৃত ছোয়েদের ছেলে। আশিক এখন তার মামার বাড়ি রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির নারুয়াতেই বাস করছেন। যদি কোন সহৃদয়বান ব্যক্তি আশিকের আলেম হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে চান তাহলে ওর ফোনে যোগাযোগ করতে পারেন। ফোন নাম্বার- ০১৭০৭ ২০ ২৬ ৩৬।
