মুক্তিযুদ্ধের গান : আমাদের সাংস্কৃতিক বিপ্লব



রায়হান রহমান রাহিম, কন্ট্রিবিউটর
জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের যন্ত্রপাতি

জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের যন্ত্রপাতি

  • Font increase
  • Font Decrease

“মুক্তির মন্দির সোপান তলে
কত প্রাণ হলো বলি দান
লেখা আছে অশ্রু জলে”

পরাধীনতা শেঁকল ভেঙে ১৯৭১ সালে বিশ্ব মানচিত্রে বাঙালি জাতির পূর্ণাঙ্গ আত্মপ্রকাশ ঘটে। জাতি হিসেবে কাগজে কলমে স্বাধীনতার এই স্বীকৃতির সমস্ত ইতিহাস খুঁজলে আজও শুধু রক্তগঙ্গার উত্তাল ঢেউ প্রিয়জন হারিয়ে চিরস্থায়ী শূন্যতার খতিয়ানে তীব্র যন্ত্রণার ইতিবৃত্ত আমাদের বারবার শুধু স্তব্ধই করে দিয়ে যায়। দেশের জন্য জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে যাওয়া সমস্ত সূর্য-সন্তানদের এই মহান আত্মত্যাগের পাশাপাশি বাঙালি জাতির একটা বিরাট সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময়কালও কিন্তু ১৯৭১ সাল। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন নানা সাংস্কৃতিক চিন্তা, কর্মকাণ্ডের ইতিহাসের দিকে গভীর মনোনিবেশ করলে একটা বিষয় সেখানে খুব স্পষ্ট চোখে পড়ে। সেটি হলো যুদ্ধ চলাকালীন জাতি হিসেবে আমাদের ঐক্যের বুনিয়াদ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ভেসে আসা ওই গানগুলোই গড়ে দিয়েছিল। উত্তাল সেই দিনগুলোতে প্রিয়জন হারানোর বিভৎস কষ্টে ভেঙে না পড়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের পথে ধাবমান প্রত্যেকটি সত্তার কাছে এই গানগুলো এসে এমনভাবে মিশেছিল যেন একেকটা গানই শুধু হতে পারে সম্মুখ সমরে লড়াই চালিয়ে যাবার একমাত্র শক্তি। বিজয়ের এই দিনে রক্ত সংগ্রামে মাখা সেই শক্তিমান গানগুলোকে নিয়ে রইল আজকের পাঠকদের জন্য বিশেষ আয়োজন।

মুক্তিযুদ্ধের সময়কার গান, তার মনস্তত্ত্ব এবং ইতিহাস সমন্ধে ভালোভাবে জানতে হলে আমাদের একটু পিছনে ফিরে যেতে হবে। কারণ দেশ ও জনতাকে স্বাধীনতাকামী এবং অধিকার সচেতন করে গড়ে তোলার প্রয়াসে গান রচনার ঐতিহ্য শুরু হয়েছিল ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময়ে। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর পাকিস্তানের তখন দুইটি অংশ ছিল। একটি পূর্ব পাকিস্তান আরেকটি পশ্চিম পাকিস্তান। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানই বর্তমান বাংলাদেশ এবং পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলত। পাকিস্তানের এই দুই অংশের প্রথম বিবাদ শুরু হয়েছিল মাতৃভাষার প্রশ্নে। অন্যায়ভাবে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেয়ার প্রশ্নে আপোসহীন বাঙালি জনতার ওপর ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান সরকার গুলিবর্ষণ করে। সালাম, বরকত, শফিক, জব্বারসহ নাম না জানা আরো অনেকেই গুলির আঘাতে শহিদ হন। মাতৃভাষার জন্য প্রাণ দানের ঘটনা সারা পৃথিবীতে এটিই ছিল প্রথম। এবং সে ঘটনার পরপরই চাপের মুখে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। বলা যায়, জাতির পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে বেরিয়ে আসার প্রথম প্রচেষ্টাটিই ছিল মাতৃভাষার স্বীকৃতির প্রশ্নে এই প্রাণদানের সংগ্রামী ইতিহাস।

তৎকালীন ২১ শে ফেব্রুয়ারির সেই মর্মান্তিক ঘটনার ওপর ভিত্তি করে বাগেরহাটের চারণ কবি শামসুদ্দিন আহমেদ একটি গান রচনা করেছিলেন—

“রাষ্ট্রভাষার আন্দোলনও
করিলিরে বাঙালি
তোরা ঢাকার শহর রক্তে ভাসাইলি”

প্রথমে তিনি নিজেই গানটিতে লোকসুর আরোপ করে গাইতেন। পরবর্তীতে শহীদ আলতাফ মাহমুদ গানে নতুন করে সুরারোপিত করেন এবং রথীন্দ্রনাথ রায়ের কন্ঠে গানটি বিখ্যাত হয়।

সে সময়েই ফজল এ খোদা রচনা করেছিলেন আরেকটি গান—

“সালাম সালাম হাজার সালাম
সকল শহীদ স্মরণে
আমার হৃদয় রেখে যেতে চাই
তাঁদের স্মৃতির চরণে
মায়ের ভাষায় কথা বলাতে
স্বাধীন আশায় পথ চলাতে
হাসিমুখে যারা দিয়ে গেল প্রাণ
সেই স্মৃতি নিয়ে গেয়ে যাই গান
তাদের বিজয় মরণে
আমার হৃদয় রেখে যেতে চাই
তাঁদের স্মৃতির চরণে”

আব্দুল জব্বার সুরে এই গান আব্দুল জব্বারের কণ্ঠেই দেশ জুড়ে প্রবল সমাদৃত হয়।

একুশের যে গানটি আমাদের জাতীয় চেতনার সাথে মিশে আছে সে গানটি রচনা করেছিলেন আবদুল গাফফার চৌধুরী। ওইদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ শহিদ রফিকের লাশ দেখে ফেরার পর তিনি লেখেন—

“আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি?
ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রু
ঝরা এ ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি?”

প্রাথমিকভাবে গানটিতে আবদুল লতিফ সুরারোপিত করেছিলেন। পরে শহীদ আলতাফ মাহমুদের সুরে গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।

একুশে ফেব্রুয়ারির আরেকটি গান বেশ বিখ্যাত। আবদুল লতিফের সে গানটি হলো—

“ওরা আমার মুখের ভাষা
কাইড়া নিতে চায়
ওরা কথায় কথায় শিকল পরায়
আমার হাতে পায়”

আবদুল লতিফ নিজেই এই গানটিতে সুর দিয়েছিলেন।

১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ দিবাগত রাতে ঘুমন্ত জনতার ওপর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অতর্কিত হামলা এই দেশের মানুষকে হতবাক করে দেয়। সেই রাতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার পর পর দেশের প্রায় সব জায়গায় আপামর জনতা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। দীর্ঘ নয় মাসের সেই যুদ্ধে লক্ষ প্রাণের ঝরে যাবার মধ্য দিয়েই আমরা স্বাধীনতা লাভ করেছিলাম।

যুদ্ধকালীন আঘাত-পাল্টা আঘাতের পাশাপাশি মননশীলতার যে সংগ্রাম, সেটিও যুদ্ধকে দারুণভাবে গতিশীল করেছিল ৷ ২৫ শে মার্চের ‘অপারেশন সার্চলাইট’-পরবর্তী ২৮ শে মার্চ যত্রতত্র বিমান হামলায় করণীয় সম্পর্কে নির্দেশমালা চট্টগ্রাম বেতার থেকে প্রচারিত হয়। পরবর্তীতে ৩০ শে মার্চ বেতারে ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ গানটি বাজানোর মধ্য দিয়েই ধারণা করা যায় মুক্তিযুদ্ধে দেশের গানের ভূমিকা ইতিহাসের সূচনা।

ওইদিন বেতার কেন্দ্রে পাক বাহিনীর বিমান হামলায় কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যায় এবং তারপরই প্রতিষ্ঠাতাগণ দুটি দলে ভাগ হয়ে কিছু অক্ষত বেতার যন্ত্রসহ আগরতলা ও শিলিগুড়ি সংলগ্ন বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েন। এবং সেখান থেকেই দেশবাসীর উদ্দেশ্যে এই মহৎপ্রাণ মানুষেরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেতারে সম্প্রচার করতেন। ১০ই এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠন-পরবর্তী সরকার ও বেতার কর্মীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ভারত সরকার তাদের একটি শক্তিশালী ট্রান্সমিটার প্রদান করেছিলেন। তার পরপরই সমস্ত বেতার কর্মীরা ধীরে ধীরে মুজিবনগরে এসে জড়ো হতে থাকেন এবং কলকাতার বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের একটি দোতলা বাড়ি থেকে পুনরায় নতুন করে বেতার সম্প্রচার শুরু হয়, যার নাম ছিল ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’।

এই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রই ছিল পুরো মুক্তিযুদ্ধে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মূল কেন্দ্রবিন্দু। এখানে বসেই গান লিখে, তৎক্ষণাৎ সুর প্রদান করে গেয়ে গেয়ে প্রচার ছিল যুদ্ধের ভেতর আরেক যুদ্ধের মতো কঠিন কাজ। তবে প্রাথমিক অবস্থায় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কোনো নিজস্ব গান ছিল না। ডিএল রায়, রবিঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলামের লেখা গানগুলোর সাথে গণনাট্য সংঘের গানগুলো প্রচার করা হতো, প্রচার করা হতো একুশে ফেব্রুয়ারির সময়কার গানগুলোও। পরবর্তীতে আস্তে আস্তে মুক্তিকামী মেধাবী গীতিকার, সুরকার, গায়কেরা স্বেচ্ছায় এসে যোগ দেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে। ধীরে ধীরে তাদের কাছ থেকে একের পর এক কালজয়ী দেশাত্মবোধক গান উঠে আসতে থাকে যা মুক্তি সংগ্রামের লড়াইকে অভূতপূর্ব গতিময়তা প্রদান করেছিল।

সে সময় একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন ছিল যাদের নাম না বললেই নয়। ‘বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রামী শিল্পী সংস্থা’ নামের ওই সংগঠনটি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বিভিন্ন ট্রেনিং ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের গান শোনাতে যেতেন। তারা ট্রাকে করে এক ক্যাম্প থেকে অন্য ক্যাম্পে দেশের গান পরিবেশন করে মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্বু্দ্ধ করতেন। জানা যায়, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সংগীত পরিচালক সমর দাসের ডাকে সারা দিয়ে তারা বেতারেও গান পরিবেশন করেছিলেন। তাদের এই সংগ্রাম মার্কিন চলচ্চিত্র পরিচালক, আলোকচিত্র শিল্পী লিয়ার লেভিন ফুটেজ আকারে ধারণ করে দেশে ফিরে গেলে পরবর্তীতে সে ফুটেজ থেকেই তারেক মাসুদ এবং ক্যাথরিন মাসুদ নির্মাণ করেন বিখ্যাত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মুক্তির গান’৷

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে যেসব বিখ্যাত গান তৈরি হয়ে পরবর্তীতে প্রচারিত হয়েছিল সেগুলোই ছিল মুক্তিযোদ্ধা এবং আপামর দেশবাসীর কাছে লড়াইয়ের সাংস্কৃতিক রসদ। সেসব বিখ্যাত গানগুলো সমন্ধে এবার একটু জেনে আসা যাক।

“মোরা একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি
মোরা একটি মুখের হাসির জন্য অস্ত্র ধরি”

গোবিন্দ হালদারের লেখা আপেল মাহমুদের সুর এবং কণ্ঠের এই গান শুনলেই বোঝা যায় ঠিক কোন পরিস্থিতিতে পড়ে বাঙালি জাতি যুদ্ধে নেমেছিল।

চিরকালীন শোষণ আর নিপীড়নের বিরুদ্ধে আচমকা যুদ্ধের ইতি বাঙালি বিজয় দিয়েই দেখতে চেয়েছিল যাতে এসে সামিল হয়েছিল অসংখ্য দেশপ্রেমী মানুষের মহান দেশপ্রেমের অনুভব আর প্রাণপণ লড়ে যাবার গৌরবদীপ্ত বাসনা। সে সময় নঈম গহর লিখেছিলেন—

“নোঙ্গর তোলো তোলো
সময় যে হলো হলো
নোঙ্গর তোলো তোলো”

পরবর্তীতে সমর দাস তাতে সুরারোপিত করলে বাঙালি যেন স্বাধীনতার লড়াইয়ে নতুন করে মনে বল অনুভব করে।

গৌরিপ্রসন্ন মজুমদারের কথায় হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া ‘মাগো ভাবনা কেন’ গানটি শুনতে শুনতে কত তরুণ মুক্তিযোদ্ধা যে ঘর ছেড়ে যুদ্ধে গিয়েছিল ইতিহাসে আজ সেসব হিসেব নেই।

মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মানুষদের মাঝে সংখ্যায় একটা বিরাট অংশ যারা ছিলেন বয়সে তরুণ। তরুণদের বাঁধনভাঙা রক্ত টগবগ করা সাহস স্বাধীনতার সংগ্রামকে দিয়েছিল একটা নতুন মাত্রা। সেইসব তরুণ প্রাণকে উদ্দীপনা প্রদান করতে সে সময়ে রচিত হয়েছে প্রচুর গান। তার মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ গান হচ্ছে গোবিন্দ হালদারের লেখা, সমর দাসের সুর করা—

“পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে
রক্ত লাল রক্ত লাল রক্ত লাল
জোয়ার এসেছে জন সমুদ্রে
রক্ত লাল রক্ত লাল রক্ত লাল
বাঁধন ছেঁড়ার হয়েছে কাল”

গেরিলা যোদ্ধাদের তড়িৎ আক্রমণে পাকবাহিনী প্রায় নাজেহাল দশায় থাকত। মাত্র নয় মাসেই দেশ স্বাধীন হতো না, যদি এই তরুণ গেরিলারা বড় বড় অপারেশনগুলো চোখের পলকে সম্পন্ন করে দিয়ে না আসতেন। তরুণ মুক্তিযোদ্ধাদের সেই উত্তাল সময়ে যে গান প্রবল সাহস দিয়েছিল সেই গানটি আপেল মাহমুদই লিখেছিলেন এবং সুর করেছিলেন—

“তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর
পাড়ি দিব রে
আমরা ক’জন নবীন মাঝি
হাল ধরেছি, শক্ত করে রে”

স্বাধীনতার অনেক বছর পর আজও গানটি সমানভাবে তরুণদেরকে প্রেরণা দেয়।

সে সময়ই গীতিকার নঈম গহরের লেখা আজাদ রহমানের সুরে ফিরোজা বেগম গাইলেন—

“জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো
এমন করে আকুল হয়ে
আমায় তুমি ডাকো
তোমার কথায় হাসতে পারি
তোমার কথায় কাঁদতে পারি
মরতে পারি তোমার বুকে
বুকে যদি রাখো আমায়
বুকে যদি রাখো মাগো”

সর্বস্তরের জনতার অংশগ্রহণ আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রামকে দাবিয়ে রাখতে পারত না। সিকান্দার আবু জাফর সে বুঝেই হয়তো লিখেছিলেন—

“জনতার সংগ্রাম চলবেই
আমাদের সংগ্রাম চলবেই
জনতার সংগ্রাম চলবেই”

পরে সুরকার শেখ লুৎফর রহমানের সুরে শিল্পীরা যখন সম্মিলিত সুরে এই গান গাইলেন তা এক আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের মতন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল।

এ ছাড়াও যারা ট্রাকে করে ঘুরে ঘুরে মুক্তিবাহিনীর বিভিন্ন ক্যাম্পে গান শুনিয়ে আসতেন তারাও সেইসব উত্তাল দিনকে রাঙিয়েছেন সুরের ঐশ্বরিক মূর্ছনায়। লিয়ার লেভিনের রেকর্ডকৃত ১১ টি গানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য গানগুলি ছিল—‘পাক পশুদের মারতে হবে’, ‘এই না বাংলাদেশের গান’, ‘আমার সোনার বাংলা’-সহ আরো অনেক অনেক দেশাত্মবোধক গান।

পুরো বিশ্ব জুড়ে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া এই মর্মান্তিক যুদ্ধ সমন্ধে জানান দিতে এগিয়ে এসেছিলেন পণ্ডিত রবিশংকর, জর্জ হ্যারিস, জোয়ান বায়েজের মতো শিল্পীরা। তারাও গানে গানেই জানিয়েছিলেন বাংলাদেশের কথা, আয়োজন করেছিলেন ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’-এর।

জোয়ান বায়েজ গেয়েছিলেন—

“Bangladesh, Bangladesh
when the sun sinks in the west
Die a million people of the Bangladesh”

বিটলস এর জর্জ হ্যারিসন গেয়েছিলেন—

“My friend came to me
with sadness in his eyes
told me that he wanted help
before his country dies...”

আশ্চর্যের বিষয় হলো পাকিস্তানিদের এই ধ্বংসতাণ্ডব বাঙালিরা মাত্র নয় মাসেই থামিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু প্রায় ত্রিশ লক্ষ শহিদের হারিয়ে যাওয়ার শূন্যতা আজও দেশবাসী নিজেদের প্রত্যেকটি জাতীয় অর্জনেই সবচেয়ে বেশি অনুভব করে। তাই বিজয়ের মাস এলেই কানে বাজে—

“সব ক’টা জানালা খুলে দাও না
ওরা আসবে চুপি চুপি
যারা এই দেশটাকে ভালোবেসে
দিয়ে গেছে প্রাণ”

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে গীতিকার হিসেবে ছিলেন সিকান্দার আবু জাফর, আবদুল গাফফার চৌধুরী, নির্মলেন্দু গুণ, আসাদ চৌধুরী, টি এইচ শিকদারসহ প্রমুখ গুণী ব্যক্তিত্ব।
আলতাফ মাহমুদ, সমর দাস, আবদুল জব্বার, আপেল মাহমুদ, রথীন্দ্রনাথ রায়, অরুণ গোস্বামী, মান্না হক, মাধুরী চ্যটার্জী, এম চান্দ, ইয়ার মোহাম্মদ, প্রবাল চৌধুরী, কল্যাণী ঘোষ, উমা খান, নমিতা ঘোষ, স্বপ্না রায়, জয়ন্তী লালা, অজিত রায়, সুবল দাশ, কাদেরী কিবরিয়া, লাকি আখন্দ, ইন্দ্রমোহন রাজবংশী, বুলবুল মহালনবীশ, ফকির আলমগীর, মকসুদ আলী সাই, তিমির নন্দী, মিতালী মুখার্জী, মলয় গাঙ্গুলী, রফিকুল আলমসহ আরো নানা শিল্পীর কণ্ঠে সে সময়ে গানগুলো পূর্ণতা পেত। শাহীন সামাদ, বিপুল ভট্টাচার্য, মাহমুদুর রহমান বেনী, তারেক আলী, ডালিয়া নওশীন, শারমীন মোর্শেদ, লতা চৌধুরী, ইনামুল হক, স্বপন চৌধুরী, বেবী চৌধুরীসহ আরো নাম না জানা অনেক শিল্পীদের ক্যাম্পে ক্যাম্পে ঘুরে ঘুরে গান মুক্তির এই সংগ্রামে যোগ করেছিল একটি নতুন মাত্রা।

আজ ১৬ই ডিসেম্বর। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পেছন ফিরে তাকালে উত্তাল একাত্তরের সেই সংগ্রামের দিনগুলো যখন সামনে আসে তখন সম্মুখ সমর শেষে একটি মাত্র রেডিওকে খুব কম সাউন্ডে কানের কাছাকাছি এনে মুক্তিযোদ্ধাদের সেইসব জ্বালাময়ী গান শোনাকে কেমন স্বপ্ন মনে হয়।

যদি স্বাধীনতা একটি দেশের প্রাণ হয় সংস্কৃতি তার সৌন্দর্য। সংস্কৃতিকে বুকে আগলে স্বাধীনতার লড়াই মুক্তিযুদ্ধকে যে মহান আবেগের বস্তু বানিয়েছিল, সে ঘটনাই জাতি হিসেবে আমাদের চূড়ান্ত দেশপ্রেমের নিদর্শন।

“এক সাগর রক্তের বিনিময়ে
বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা
আমরা তোমাদের ভুলব না”

গানে গানে মুক্তিযোদ্ধাদের এই মহান আত্মত্যাদের স্বীকৃতি কিন্তু সংগীত শিল্পীরাই প্রথমেই দিয়েছিলেন। সম্মুখ সমর থেকে তাদের লড়াই যে কোনো অংশ থেকে কম ছিল তাও নয়। এখন সেসব জাগরণের গানের সঠিক সংরক্ষণই এই প্রজন্মকে আলোর পথের রাস্তা দেখিয়ে স্বাধীনতার সম্মান ধরে রাখার শক্তি এবং তা আগলে রাখাসূচক গর্বের স্বরূপ কী তা পূর্ণাঙ্গ ভাবে দেখাতে পারে। প্রজন্ম সেদিকে মনোযোগী হবে সে আশাই রইল।

   

সম্মানসূচক ডি. লিট উপাধি পেল 'বিড়াল'!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে 'ম্যাক্স' নামের একটি বিড়ালকে সম্মানসূচক ‘ডক্টরেট অব লিটারেচার’ বা ডি. লিট উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। দেশটির ভারমন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের স্নাতক অনুষ্ঠানে বিড়ালটিকে এই সম্মানসূচক ডিগ্রি দেওয়া হয়। তবে সেই অনুষ্ঠানে বিড়ালকে আমন্ত্রণ জানানোর নিয়ম না থাকায় উপস্থিত ছিল না ম্যাক্স। 

বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্তৃপক্ষ বলছে, অনুষ্ঠানে বিড়ালটি উপস্থিত ছিল না। তাই বিড়ালের মালিক অ্যাশলে ডোর কাছে খুব শিঘ্রই এই ডিগ্রি পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।   

বন্ধুসুলভ এই বিড়ালটিকে তার ইঁদুর শিকারের দক্ষতা বা অতিরিক্ত ঘুমানোর জন্য নয় বরং তার সহচার্যের জন্যই স্বীকৃতি দিয়েছে।   বিড়ালটিকে এই ডিগ্রিতে ভূষিত করা হয়। ভারমন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটির ক্যাসেলটন ক্যাম্পাস।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সম্মানসূচক ডি. লিট উপাধি পেল 'বিড়াল'!

বিশ্ববিদ্যালয়টি একটি ফেসবুক পোস্টের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ম্যাক্স দ্য ক্যাট, অনেক বছর ধরেই ক্যাসেলটন পরিবারের একজন আদুরে সদস্য। ভারমন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের প্রবেশদ্বারের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া রাস্তায় পাশেই বসবাস করে এক পরিবার। বিড়ালটি সেই পরিবারেরই পোষা।

বিড়ালের মালিক অ্যাশলে ডো বলেন, ‘বিড়ালটি ঠিক করেছে সে ক্যাম্পাসে যাবে। এরপর থেকেই সে কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আড্ডা দিতে শুরু করে। আর শিক্ষার্থীরাও তাকে আদর করতে শুরু করে।’

বিড়ালটি প্রায় চার বছর ধরে ক্যাম্পাসে আসা যাওয়া করছে। বিড়ালটিকে পথের ধারে শুয়ে থাকতে দেখলেই সবাই তার সঙ্গে সেলফি নেয়।

এমনকি সাবেক ছাত্ররাও যখনই ক্যাম্পাসে আসেন তারা তখনই বিড়ালটির খোঁজ নিতে তার মালিক ডো-এর কাছে যান। ডো তাদের কাছে বিড়ালটির মা হিসেবেই বেশি পরিচিত।

;

৯৩ বছর বয়সে বৃদ্ধের অবিশ্বাস্য কর্মকাণ্ড



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বৃদ্ধ জন স্টারব্রুক

বৃদ্ধ জন স্টারব্রুক

  • Font increase
  • Font Decrease

শৈশবে খেলা, কৈশরে পড়ালেখা, যৌবনে চাকরি, মধ্যবয়সে সংসার, বৃদ্ধবয়সে একটা মাথা গোজার ঠাঁই খুঁজে অবসরে সময় কাটিয়ে দেওয়া। কপাল খারাপ থাকলে বিছানাতেই শোয়া বা আধশোয়া থেকে মৃত্যুর দিন গোণা। সাধারণত এভাবেই মানুষের জীবন কেটে যায়। অনেকে আবার মধ্যবয়সের পরেই নানারকম রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। অথবা শরীরকে বিভিন্ন রোগের আবাসস্থল বানিয়ে দুর্বল হয়েই বেঁচে থাকেন। তবে খড়ের গাদায় সূচের মতো দু-একজন থাকে যারা একেবারেই ব্যতিক্রম। তেমনভাবেই আলোচনায় এসেছেন ৯৩ বছরের এক বৃদ্ধ।  তার ব্যতিক্রমী জীবনযাপনের ধারাই আলোড়ন সৃষ্টি করেছে যুসমাজে।     

যুক্তরাজ্যের বাসিন্দা জন স্টারব্রুক। তিনি একজন ওয়াটার পোলো খেলোয়াড়। এটি মূলত পানির মধ্যে বাস্কেটবলের মতো একধরনের খেলা। এইখেলার সাথে কুস্তি খেলারও কিছুটা সাদৃশ্য রয়েছে। জনের বর্তমান বয়স ৯৩ বছর। এই বয়সেও যথেষ্ট সুস্থ এবং সবল তিনি। সমবয়েসীদের যেখানে সোজা হয়ে দাঁড়াতেও ২ জনের সহায়তা লাগে, সেখানে এখনো ম্যারাথনে দৌড়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। পাশাপাশি বেশ দক্ষ সাঁতারুও বটে! ৮০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সাঁতার কাটা অব্যাহত রেখেছেন তিনি।

প্রায় শতাব্দি ছুঁই ছুঁই বৃদ্ধের এমন কারিশমা দেখে চোখ ছানাবড়া হবার উপক্রম। জন মূলত একজন সাঁতারু। পেশাগতভাবে না হলেও অনেক ছোটবেলা থেকেই তিনি সাঁতার কাটেন তিনি। দেশের সম্মানজনক অনেপ্রতিযোগীতায় একাধিক বার চ্যাম্পিয়নের খেতাবও জেতেন। চাকরি করেছেন ‘ব্রিটিশ আর্মি মেডিক্যাল কর্পস’-। সেখানেও সাঁতারের দক্ষতার কারণে তার বেশ সুনাম ছিল।   

ম্যারাথনে দৌড়াচ্ছেন ৯৩ বছরের জন

তবে সাঁতারের পাশাপাশি এখন ম্যারাথেনেও অংশগ্রহণ করেছেন জন। ৫২ টির বেশি ম্যারাথনের দৌড় শেষ করেছেন তিনি। জানালেন এই বয়সেও তার এমন চ্যালেঞ্জিং সব কাজের অভিজ্ঞতা। সুস্থতা ধরে রাখার রহস্যও ফাঁস করলেন সকলের কাছে। ব্রিটিশ নাগরিক জন বন্ধুদের কাছে ‘দ্য লিজেন্ডনামেই পরিচিত। একই নামে তাকে আখ্যায়িত করছে ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলো

জন স্টারব্রুক জানান, তিনি এখনো সপ্তাহের ৬ দিনই জিমে যাতায়াত করেন। বিশেষ কোনো খাদ্যাভাস নেই তার। খাদ্যতালিকায় প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি রাখতে পছন্দ করেন- এই যা। তাছাড়া প্রতিদিন সকালে পোরিজ খান তিনি। তবে তিনি কখনো ধূমপান করেননি। অ্যালকোহলও খুব সীমিত পরিমাণে সেবন করতেন। মূলত এই বয়সেও এটা সবল থাকার পেছনে বংশ পরম্পরায় পাওয়া নিজের জীন আসল কারণ- বিশ্বাস করেন জন।

কারণ যাই হোক, প্রানবন্ত এই বৃদ্ধ বিশ্ববাসীকে অবাক করেছে। তার মতোই দৃঢ় মানসিকতা ধরে রাখার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন যুবক-যুবতীরা।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

;

প্রশ্ন আর উত্তর যেন পরস্পরের সাংঘর্ষিক!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রশ্ন থাকে এক আর তার উত্তর হয় ভিন্ন। এমন উত্তরপত্রের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায়ই দেখা যায়। এবার এমনই এক উত্তরপত্রের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে ভাইরাল হয়েছে। যা দেখে রীতিমতো সবাই অবাক! তবে এই ঘটনার জন্ম দেওয়া দেশটি বাংলাদেশ নয়, প্রতিবেশী দেশ ভারতের একটি হিন্দি পরীক্ষায় ঘটেছে এমন কাহিনী।

ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রকাশিত ভিডিওতে পরীক্ষার্থীর এমন উত্তর দেখে শিক্ষককেও হাসতে দেখা যায়। 

ভিডিওটি ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করা হয়েছে @n2154j অ্যাকাউন্টের একটি আইডি থেকে।

ওই ভিডিওতে দেখা যায়, একটি প্রশ্ন ছিল এমন, সংযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ (যৌগিক ব্যঞ্জনবর্ণ) কী? এই প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষার্থীটি একটি খাদ্য রূপক দিয়ে উত্তর দিল: "মাটার পনির এবং সব মিশ্র সবজি একত্রিত একটি খাবার।"

আরেকটি প্রশ্ন ছিল "অতীত কাল কাকে বলে?" এর উত্তরে ওই পরীক্ষার্থি লিখেছে, "যখন অতীত আমাদের অতীতের আকারে আসে, তখন তাকে অতীত কাল বলা হয়।"

ভিডিও অনুযায়ী আরও একটি প্রশ্ন ছিল "বহুবচন কাকে বলে?" এর উত্তরে সে লিখেছে "যে পুত্রবধূ তার শ্বশুরবাড়ির কথা শোনে তাকে বহুবচন বলে।"

শিক্ষার্থীটির এমন উত্তর শুনে হাসিতে ফেটে পড়েন শিক্ষক। এমন উত্তরগুলোকে শিক্ষক ভুল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। যদিও এমন উত্তরের জন্য তাকে পুরোপুরি হতাশ করা হয়নি। তাকে ১০ মার্কের মধ্যে ৫ নম্বর দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষক পরে তার উত্তরপত্রে লিখে দিয়েছিলেন, এই ৫ মার্ক তোমার মস্তিষ্কের জন্য, ছেলে।

ভিডিওটি দেখে সবাইকে হাসির ইমোজি দিতে দেখা যায়। সম্পূর্ণ নম্বর না পাওয়ায় অনেকেই যুক্তি দিয়ে লিখেছেন, ছাত্রটি তার কৌতুক প্রতিভার জন্য পূর্ণ নম্বর পাওয়ার যোগ্য।

তবে এমন ঘটনা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছেন, ছাত্র এবং শিক্ষকের হাতের লেখা সন্দেহজনকভাবে একই রকম।

অন্য এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, "প্রশ্ন এবং উত্তর একই হাতের লেখা"। 

;

ফেনী শহরে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে কৃষ্ণচূড়া



মোস্তাফিজ মুরাদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ফেনী
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

'কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরি কর্ণে-আমি ভুবন ভুলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে' জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই মনোমুগ্ধকর গানে ফুটে উঠেছে কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য। কৃষ্ণচূড়া যেন প্রকৃতিকে দান করেছে লাল আভার অপরূপ সৌন্দর্যের মহিমা। সাথে গ্রীষ্মের উত্তাপে শহরে সৌরভ ছড়াচ্ছে নানা জাতের ফুল। তীব্র তাপদাহের পর কালবৈশাখী, এরপর মাঝারি বৃষ্টির মধ্যে ফুলের আগমন। এতে রঙের উল্লাসে মেতে উঠেছে ফেনী শহরবাসী।

ফেনী শহরের কোর্ট বিল্ডিং, এলজিইডি, পুলিশ লাইন, নবীন চন্দ্র সেন কালচারাল সেন্টার, ফেনী সরকারি কলেজ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ফুটে আছে কৃষ্ণচূড়া। এটি একদিকে প্রকৃতিকে যেমন সাজিয়েছে অপরূপ সৌন্দর্যে, অন্যদিকে এর সৌন্দর্য মুগ্ধ করছে তরুণ-তরুণী, নানা শ্রেণি-পেশার মানুষসহ ফুলপ্রিয় পথচারীদের। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে, সরকারি দফতরসহ স্কুল-কলেজে কৃষ্ণচূড়া গাছের লাল ও উজ্জ্বল সবুজ পাতার সংমিশ্রণ দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছে চারপাশ।


কৃষ্ণচূড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ফুলের ঘ্রাণে মুখরিত হয়ে আছে পুরো শহর। শহরের মূল সড়কের ডিভাইডারে পৌরসভার উদ্যোগে লাগানো হাসনাহেনা, রজনিগন্ধা, গন্ধরাজসহ নানা জাতের ফুল গাছে ফুল ফুটেছে। এটি একদিকে বাড়িয়েছে সৌন্দর্য অন্যদিকে হেঁটে কিংবা রিকশায় চলাচল করলে পাওয়া যায় এসব ফুলের সুঘ্রাণ।

ফেনী শহরের কৃষ্ণচূড়ার অপরূপ সৌন্দর্য দেখে ফুলপ্রিয় পথিকরা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া ফুল প্রকৃতিকে অনন্য সাজে সাজিয়েছে। এই ফুলের সৌন্দর্যের কারণে পথচারীরা একবার হলেও এই ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এর গাছের উপর নজর দিবে। পাশাপাশি তীব্র গরমে অন্যান্য ফুলের সুঘ্রাণে চারপাশ মুখরিত হওয়াতে ক্লান্তিতা কিছুটা হলেও কমছে।


তারা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া ফুলের এই নান্দনিক দৃশ্য দেখতে এর গাছ রোপণ করা জরুরি। রাস্তা প্রশস্তকরণ, ঘর-বাড়ি নির্মাণসহ নানা প্রয়োজনে গাছ কেটে ফেলা হয়। অন্যান্য গাছ রোপণ করার পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া রোপণ করলে একদিকে যেমন সৌন্দর্য বাড়াবে অন্যদিকে পরিবেশ বান্ধব হবে।

সাজিদ হাসান নামের এক পথচারী বলেন, কৃষ্ণচূড়া একদিকে যেমন প্রকৃতিতে অপরুপ সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে, আরেকদিকে গ্লোবাল ওয়ার্মিং কমাবে। সারাদেশে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে, আমার মতে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে এই গাছটিও যুক্ত করা উচিত। তীব্র গরমের পর বৃষ্টি হলো, এরপর শহরে নানা রঙের ফুলের দেখা মিলছে, ফুলের ঘ্রাণে চলাচল করতেই ভালো লাগছে।

ফারজানা ইয়াসমিন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ফুলের সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে। অন্যান্য ফুলের পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া ফুল আমার অনেক ভালো লাগে। আমাদের কলেজে বকুল তলা আছে, ক্যান্টিনের পাশে কৃষ্ণচূড়া গাছ আছে। সুযোগ পেলেই ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করি।

অনিক মোহন নামে একজন বলেন, রিকশায় করে যখন বাসায় ফিরি, শহরের রাস্তার মাঝে ভিডাইভারে লাগানো নানা জাতের ফুলের ঘ্রাণ মনকে আনন্দিত করে। রাতের বেলা শহর যখন নিস্তব্ধ হয়ে যায়, তখন এ ফুলের সৌন্দর্য কয়েকশ’ গুণ বেড়ে যায়।

সড়কের পাশে কৃষ্ণচূড়া লাগানো হলে সৌন্দর্য বাড়বে বলে মনে করেন পথচারী মিনহাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, রাস্তা প্রশস্তকরণের জন্য যে গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে, ওই গাছগুলোর জায়গা কৃষ্ণচূড়ার গাছ লাগালে রাস্তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে।

একই কথা বলেন শহরের ব্যবসায়ী নাদিম আহমেদ। তিনি বলেন, সৌন্দর্য ও পরিবেশের কথা বিবেচনা করে এই গাছ রোপণ করা উচিত আমাদের। তাপমাত্রা যেভাবে বাড়ছে অন্যন্যা গাছ রোপণ করার পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া গাছ রোপণ করার উদ্যোগ নিতে হবে। যেগুলো শহরে আছে তাতেই সৌন্দর্য বেড়ে গিয়েছে কয়েকগুণ, আরও যদি লাগানো যায় ফুলে ফুলে ভরে উঠবে আমাদের শহর।

কৃষ্ণচূড়া মাদাগাস্কারের শুষ্ক পত্রঝরা বৃক্ষের জঙ্গলে পাওয়া যায়। যদিও জঙ্গলে এটি বিলুপ্ত প্রায়, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে এটি জন্মানো সম্ভব হয়েছে। সৌন্দর্যবর্ধন গুণ ছাড়াও, এই গাছ উষ্ণ আবহাওয়ায় ছায়া দিতে বিশেষভাবে উপযুক্ত। কৃষ্ণচূড়া উদ্ভিদ উচ্চতায় কম (সর্বোচ্চ ১২ মিটার) হলেও শাখা-পল্লবে এটি বেশি অঞ্চল ব্যাপী ছড়ায়।

শুষ্ক অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে কৃষ্ণচূড়ার পাতা ঝরে গেলেও, নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে এটি চিরসবুজ থাকে। কৃষ্ণচূড়া ফুলের রং উজ্জ্বল লাল। পত্র ঝরা বৃক্ষ, শীতে গাছের সব পাতা ঝরে যায়। বাংলাদেশে বসন্ত কালে এ ফুল ফোটে। ফুলগুলো বড় চারটি পাপড়ি যুক্ত। পাপড়িগুলো প্রায় ৮ সেন্টিমিটারের মত লম্বা হতে পারে। কৃষ্ণচূড়া জটিল পত্র বিশিষ্ট এবং উজ্জ্বল সবুজ। প্রতিটি পাতা ৩০-৫০ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ২০-৪০ টি উপপত্র বিশিষ্ট। কৃষ্ণচূড়ার জন্মানোর জন্য উষ্ণ বা প্রায়-উষ্ণ আবহাওয়ার দরকার। এই বৃক্ষ শুষ্ক ও লবণাক্ত অবস্থা সহ্য করতে পারে।

জানা যায়, অপরূপ সৌন্দর্য ছড়ানোর পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর পাতা, মূলের বাকল ও ফুল ভেষজ গুণাগুণ সম্পূর্ণ, যা জ্বর ও খুশকি নিরাময়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। ভেষজটি হেমিপ্লেজিয়া, আর্থরাইটিস এবং কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। কৃষ্ণচূড়া গাছের শিকড়, বাকল এবং ফুল সবই পরজীবী সংক্রমণ নিরাময়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।

;