হারানো শহর আটলান্টিস!
আটলান্টিস শুধুই কি এক পৌরাণিক কাহিনী, নাকি আসলেই ছিল এর অস্তিত্ব? হারানো শহর আটলান্টিসকে প্রাচীন সময়ের আধুনিকতার কেন্দ্রস্থল হিসেবে ধরা হয়। জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিল্প-বাণিজ্যের সম্প্রসার ছাড়াও এটি ছিল একটি সমৃদ্ধশালী ও উন্নত শহর।
ধারণা করা হয় পৃথিবী থেকে এ পর্যন্ত হারিয় যাওয়া শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আটলান্টিস। যার সম্পর্কে প্রথম জানা যায় খৃষ্টপূর্ব ৩৬০ অব্দে প্লেটোর ‘ডায়ালগ টাইমাউস এন্ড ক্রিটিয়াস’ বইয়ে। প্লেটোর মতে প্রায় ৯ হাজার বছর আগে আটলান্টিস ছিল হারকিউলিসের পিলারের পাদদেশে একটি দ্বীপ।
আটলান্টিসকে হারিয়ে যাওয়া প্রাচীন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সভ্যতা হিসেবেও ধরা হয়। এই দ্বীপের খনিজ সম্পদের মধ্যে সোনা, রূপা, তামার অস্তিত্ব ছিল উল্লেখযোগ্য। প্রায় ৯ হাজার বছর আগে আটলান্টিসের বাসিন্দারা ব্যবহার করতেন সেসব সম্পদ। দ্বীপের মূল আকর্ষণ ছিল এর কেন্দ্রস্থলে থাকা শহরটি। গোলাকৃতির এই শহর হার মানায় আধুনিক যুগের যেকোনো স্থাপনাকেও।
শুধু এখানেই শেষ নয়! মনে করা হয় আটলান্টিসের অধিবাসীদের অলৌকিক ক্ষমতা ছিল। এমনকি, তাদের আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতাও ছিল। গ্রীক পুরাণে বলা হয়েছে তারা রাগ করলে কিংবা কারো ওপর ক্ষুব্ধ হলে সমুদ্রের তলদেশে নানা ধরণের ঝড় ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় এর সৃষ্টি করত। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলেন অন্যকথা। তাদের মতে আটলান্টিস বলে যদি আদৌ কোন শহর থেকে থাকত, তবে সে শহরের মানুষ হত বর্বর প্রজাতির জলজ জাতি।
আটলান্টিসের বাসিন্দারা ছিল পরিশ্রমী এবং বুদ্ধিদৃপ্ত। নিজেদের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে তাঁরা গড়ে তুলেছিল অত্যাধুনিক শহর। শিল্প, বাণিজ্যের দিক থেকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল অন্যান্য সকল সভ্যতাকে। ফলে দ্বীপে আবদ্ধ না থেকে এক সময় তাঁদের স্বপ্ন জাগে নতুনের সন্ধান করার। আর সেই লক্ষ্যেই বেরিয়ে পড়েন তাঁরা। নিজেদের উন্নত যন্ত্রাদি এবং নৌ-ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে আটলান্টিসবাসী ইউরোপের অধিকাংশ স্থান জয় করেছিল। তবে চিরস্থায়ী হয়নি তাঁদের সম্রাজ্য আর ক্ষমতা। এথেন্স জয় করার একটি ব্যার্থ প্রয়াসের পর এক প্রলয়ে দ্বীপটি বিলীন হয়ে যায় সমুদ্র গর্ভে। হারিয়ে যায় লোক চক্ষুর আড়ালে।
গভেষকদের মতে আটলান্টিস নামে যদি কোনো দ্বীপের অস্তিত্ব থেকে থাকে তবে তা আজকের সমগ্র এশিয়া মহাদেশের সমান বড়। ধারণা করা হয় যে আটলান্টিস শহরটি পানির নিচে বড় বড় পাথুরে পাহাড়ের ওপর অবস্থিত এবং এটিকে ঘিরে আছে পানি ও ভূমির বলয়।
আটলান্টিসের খোঁজে অনেক অনুসন্ধাণ চলছে। প্লেটোর এই গল্পের সত্যতা এখনো কেউ সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি। দেখাতে পারেনি কোনো উল্লেখযোগ্য প্রমাণও। তবে গভেষকরা একে একেবারেই বানোয়াট গল্প হিসেবেও উড়িয়ে দিচ্ছেন না। অনেকে এর সম্ভাব্য অবস্থান খুঁজে পেলেও এখন পর্যন্ত আধুনিক বিশ্বের দৃষ্টিগোচর হয়নি রহস্যময় এই শহর!