পাহাড়ি বনের বিরল প্রাণী ‘বনছাগল’

  • বিভোর বিশ্বাস, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

জানকিছড়া রেসকিউ সেন্টারে থাকা বিরল ‘বনছাগল’। ছবি: বিভোর

জানকিছড়া রেসকিউ সেন্টারে থাকা বিরল ‘বনছাগল’। ছবি: বিভোর

পাহাড়ি বনের সব প্রাণীকে দেখা যায় না। ওরা নিভৃতেই থাকে। দিনের পর দিন নিজেকে আড়ালে রেখে প্রকৃতির মাঝেই পুরো একটা জীবন কাটিয়ে দেয়। সত্যি এ দারুণ ব্যাপার!

সম্প্রতি পাচারকারীদের হাত থেকে উদ্ধার হওয়া ‘বনছাগল’ তেমনি একটি প্রাণী। যাকে সহজে দেখা যায় না। ওরা গভীর বনে আত্মগোপনেই থাকে। বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞদের মতে, এ প্রজাতির বনছাগল বাংলাদেশে বিরল।

বিজ্ঞাপন

বনবিভাগ সূত্র জানায়, মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) সকালে সিলেট বন বিভাগের সুনামগঞ্জ রেঞ্জাধীন শক্তিয়ারখলা বিটের ঢুলারা বিজিবি ক্যাম্প এলাকায় একটি বন্যছাগল দেখা যায়। বিরল প্রজাতির এই বন্যপ্রাণীটিকে দুষ্কৃতিকারীদের হাত থেকে রক্ষা করে স্থানীয় জনগণ ও বিজিবি সদস্যরা। খবর পেয়ে রেঞ্জ কর্মকর্তা সুনামগঞ্জ ও বিট কর্মকর্তা শক্তিয়ারখোলা এটিকে উদ্ধার করে মিনি ট্রাকযোগে সিলেট বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়।

আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন), বাংলাদেশের মূল্যায়ন অনুযায়ী সেরো বাংলাদেশে বিপন্ন, বিশ্বব্যাপী সংকটাপন্ন।

বিজ্ঞাপন

মৌলভীবাজারের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা মির্জা মেহেদী সরোয়ার জানান, এটি লম্বায় ৪ ফুট, উচ্চতা ৩.৫ ফুট। প্রথমে সবাই বলছিল এটি হরিণের বাচ্চা। কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করে এটিকে ‘রেড সেরো’ হিসেবে সনাক্ত করি। বাসস্থানের ক্ষতি এবং শিকারের জন্য এ প্রজাতির বনছাগলের অস্তিত্ব পুরো পৃথিবীতে হুমকির মুখে।

তিনি আরও বলেন, বনছাগল বা সেরো সন্ধ্যা খুব ভোরে খেতে বের হয়। সারাদিন লুকিয়ে থাকে বা গর্তে বসে জাবর কাটে। ঝোপ-ঝাড়ে কিংবা পাথরের ঢালে পালিয়ে থাকে বলে এদের দেখা পাওয়া মুশকিল। এরা এক ধরনের গন্ধগ্রন্থির সাহায্যে গন্ধ ছড়িয়ে টেরিটোরি মার্ক করে রাখে। বনছাগল বাংলাদেশে অত্যন্ত বিপন্ন ও দুর্লভ প্রাণী।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. জাহাঙ্গীর আলম জানান, বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) রাত ৮টার দিকে মৌলভীবাজারের রাজকান্দি রিজার্ভ ফরেস্টে বনছাগলটিকে অবমুক্ত করেছি। আমি নিজেও এ ছাগলটিকে পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি ছাগলটি সুস্থ রয়েছে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে আমাদের লাউয়াছড়া রেসকিউ সেন্টারে তাকে স্থানান্তর করা হয়েছিল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুনতাসির আকাশ বলেন, মৌলভীবাজারেই বনছাগলের চমৎকার বুনো পরিবেশ আছে। এ বছরেই আমরা বাচ্চাসহ ছবি পেয়েছি। আশা করি, এটাকে সেখানেই ছেড়ে দেওয়া হবে। ক্ষুরযুক্ত প্রাণীদের সহজেই ক্যাপচার স্ট্রেস মায়োপ্যাথি হয়ে মারা যাবার আশঙ্কা থাকে। যথাসম্ভব সহজ করে বাঁধা ও কম নাড়াচাড়া করতে পারলে ভালো। নাকের ডগা থেকে লেজ পর্যন্ত প্রাণীটি ১৭০ সেন্টিমিটার হতে পারে। কাঁধ পর্যন্ত উচ্চতা ৯৫ সেন্টিমিটার।

তিনি আরও বলেন, পুরুষ সেরো প্রায় ১২০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। বাংলাদেশে দুই ধরনের সেরো থাকতে পারে, ‘লাল সেরো’ আর ‘ইন্দো–চায়নিজ সেরো’। তবে এ নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।