শেষ সময়ের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা
`আজ সমীরণ আলোয় পাগল
নবীনও সুরেরও লীলায়,
আজ শরতে আকাশবীণায়
গানের মালা বিলায়।
তোমায় হারা জীবনও মম
তোমারই আলোয় নিরুপম
ভোরেরও পাখি ওঠে গাহি
তোমারই বন্দন।
মাতলো রে ভুবন,
বাজলো তোমার আলোর বেণু…..'
গীতিকার বাণী কুমারের কলমে সাজানো এই পংক্তি যেন এখন দেবী দুর্গার আগমন প্রত্যাশী সকলের মনের বাসনা।দরজায় কড়া নাজছে শারদীয় দুর্গা পূজা। বছর ঘুরে বহুল প্রতীক্ষিত দেবী দুর্গা মর্ত্যে এলেন বলে!
পিতৃপক্ষ কাটিয়ে দেবীপক্ষের প্রারম্ভে আগমনী গান গেয়ে এবং চণ্ডীপাঠের মাধ্যমে মহালয়া সম্পন্ন হয়েছে। পূজা শুরু হওয়ার আর মাত্র কিছুদিন বাকি। এই শেষ মুহূর্তে পূজার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সকলে। তবে সবচেয়ে বেশি কাজের চাপে রয়েছেন প্রতিমা শিল্পীরা।
অকালবোধনে দেবীর চক্ষুদানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে শারদীয় দুর্গাপূজার উৎসব। তাই তার আগেই দেবীর প্রতিমা তৈরি কাজ এবং সাজসজ্জা সম্পন্ন করতে হবে। সেজন্যই ব্যস্ততা দেখা যাচ্ছে মৃৎশিল্পীদের মধ্যে।
চট্টগ্রাম মহানগরীর সদরঘাট কালীবাড়িতে বরাবরই পূজার আগে ব্যস্ত সময় কাটে মৃৎশিল্পীদের। আসন্ন দূর্গাপূজার প্রতিমা তৈরির শেষ তুলির আঁচড়ে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন বিভিন্ন নামকরা শিল্পালয়ের মৃৎশিল্পীগণ।
১৯৭০ সাল থেকে লোকনাথ শিল্পালয়ের কর্ণধার অমল পাল প্রতিমা বানানোর সাথে যুক্ত রয়েছেন। পৈতৃক এই শিল্পায়নে তারা প্রায় ৮০ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রতিমা তৈরি করেন তারা। তাদের তৈরি করা প্রতিমা শুধু চট্টগ্রামেই নয়, সরবরাহ করা আশেপাশের জেলাগুলোতেও। কক্সবাজার, ফেনী, খাগড়াছড়িতেও এবছর তাদের তৈরি প্রতিমাতে পূজো হবে।
লোকনাথ শিল্পালয়ের অমল পাল জানান, ‘আমার পূর্বপুরুষ থেকে এই প্রতিমা বানানোর কাজ হচ্ছে। আমার বাবা-দাদারা প্রতিমা বানানোর কাজ করতেন, আমিও এতবছর ধরে কাজ করছি। তবে করোনাতে আমার ছেলে মারা গেছে। তাই, আমার পরে আর কেউ থাকবে বলে মনে হয় না।’
আরেক প্রতিষ্ঠান নটরাজ শিল্পালয়ের কর্মীরাও প্রতিমা বানানোর অনুভূতি প্রকাশ করেন। তারা জানায়, ‘আমরা ৫-৭ বছর ধরে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত আছি। প্রতিমা বানানোর কাজ আমাদের ভালো লাগে। আমাদের পুরো পরিবার এই প্রতিমা বানানোর কাজের উপরই নির্ভর করে।
আগে প্রতিমা বানিয়ে অনেক আয় হতো। করোনার পর থেকে আয় অনেকটা কমে গেছে। এবার সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকায় প্রতিমা বিক্রি হয়েছে। এবছর কর্মব্যস্ততাও অনেকটা কম। সামনে কালীপূজা হবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। দুর্গাপূজায় আমাদের খরচের সব টাকার উপকরণ লেগেছে। কালীপূজা না হলে লাভের বাড়তি আয় হবে না। আমাদের মাঠে মারা যেতে হবে।’
জ্যৈষ্ঠ মাস থেকেই প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করেন শিল্পীরা। দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, মনসা নানান দেব-দেবীর প্রতিমা তৈরির কাজ চলে। বাইরে থেকে কাঠ, বাঁশ, কাইন,মাটি কিনে এনে প্রতিমা তৈরি প্রতিমা তৈরি করা হয়। কাঠামোতে মাঠির প্রলেপের দেব-দেবীর গড়ন তৈরি করা হয়। তারপর রঙ করে সাজ-পোশাক, গহনা, অস্ত্র সকল কিছু দিয়ে প্রতিমা সাজানো হয়। পূজা শুরুর আগে প্রতিমার সাজ সম্পন্ন করে পূজো মণ্ডপে প্রতিমা পাঠানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে চক্ষুদানের মাধ্যমে হবে অকালবোধন। সপ্তমীতে দেবীর আগমনী উৎসবে মেতে উঠবে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। দশমীতে দেবী এক বছরের জন্য বিদায় নিয়ে কৈলাশে ফিরবেন।