বাকৃবিতে এক পশলা বৃষ্টি, শিক্ষার্থীদের আবেগ ও অনুভূতি
কয়েকদিনের দমবন্ধ করা গরম থেকে যেনো এক নিমিষেই স্বস্তি নিয়ে এসেছে আজকে বৃষ্টিতে। কবির ভাষাতেই আমার পুরো শহর জুড়ে আজ বৃষ্টি নেমে এসেছে, নবযৌবনের সতেজতায় ছেয়ে গেছে রুক্ষ প্রকৃতি।
প্রকৃতির রুক্ষতা দূর করতে সেই সকাল থেকে বৃষ্টি। ক্লাসের জানালা দিয়ে তাকিয়ে প্রকৃতির সাথে বৃষ্টির মধুর সম্পর্ক উপভোগ করেছে শিক্ষার্থীরা। প্রতিটা ফোঁটা যেনো প্রকৃতির বুকে ভালোবাসার ছোঁয়া একে দিচ্ছে। বলছিলাম প্রকৃতিকন্যা খ্যাত ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) বৃষ্টিমুখর একটি দিনের কথা।
১২৩০ একরের সবুজের মহাসমারোহে ঘেরা অপরুপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাকৃবি বৃষ্টিতে এক মোহনীয় রূপ ধারণ করে। জব্বারের মোড়, টিএসসি, নদের পার, বোটানিক্যাল গার্ডেন, সোহরাওয়ার্দী হলের মাঠ, লাভ রোড, লন্ডন ব্রিজ, কে. আর মার্কেট, বৈশাখী চত্বর, কৃষিবিদ চত্বরসহ সমগ্র ক্যাম্পাসেই নতুন এক সজীবতা ফিরে আসে। কে.আর মার্কেট বা জব্বারের মোড়ের আওয়ালের দোকানে এক কাপ চায়ের সাথে বিনামূল্যে বৃষ্টি বিলাস, একটি মাত্র ছাতার নিচে দল বেঁধে বন্ধুদের হেটে যাওয়া, ছাত্রদের হলের মাঠে বা কৃষিবিদ চত্বরে ফুটবলে মেতে ওঠা, কে.আর মার্কেটের ভূতের গলির তিন ভাজাপোড়া খাওয়া কিংবা প্রেমিক যুগলের বৃষ্টি বিলাশ সবমিলিয়ে ক্যাম্পাস জুড়ে রোমাঞ্চকর এক অনুভূতির সৃষ্টি হয়।
বৃষ্টি যে শুধু প্রেমিক যুগলের জন্যই বৃষ্টি বিলাশের সুযোগ করে দেয় তা নয়। পার্থিব জগতের ব্যস্ততাকে ছুটি দিয়ে এই দিনটি অনেকেই বন্ধুদের সঙ্গে কাটায় খেলাধুলা, আড্ডা কিংবা রান্নাবান্নায়। বাকৃবির হলে হলে চলে রুমমেটদের নিয়ে খিচুড়ি রান্নার মহা উৎসব। ভুনা খিচুড়ির গন্ধে মৌ মৌ করে পুরো হল। হঠাৎই আবার কোনো ছেলের কাছে উত্তরপাড়া থেকে আসে প্রেমিকার খিচুড়ি পার্সেল। এ নিয়ে বন্ধুদের সাথে কয়েক দফা হাসাহাসি ও খুনশুটি চলতে থাকে। প্রেমিকার হাতের রান্না একা খাওয়ার সুযোগ নেই হলে থাকা কোনো প্রেমিকের। বন্ধুদের নিয়েই ত এখন একটা পরিবার। তাই উত্তর পাড়া থেকে আসা খিচুড়ি সবাইকে নিয়েই ভোজন করতে হয়। তবে শুধু যে প্রেমিকার কাছ থেকেই খিচুড়ি আসে তা নয়, মাঝে মাঝে দক্ষিণপাড়া থেকেও প্রেমিকার কাছে যায় বৃষ্টির দিনের সামান্য ভালোবাসা।
বৃষ্টি কীভাবে ক্লান্তি দূর করে তা নিয়ে বাকৃবির শিক্ষার্থী সন্দীপ সাহা বলেন, ক্লাস-পরীক্ষার চাপে অনেকটা যান্ত্রিক জীবন কাটাতে হয়। তাই বৃষ্টির দিন পেলে খুবই ভালো লাগে। যখন বৃষ্টি শুরু হয় তখন আমার ভেতরে একটা আনন্দের অনুভূতি কাজ করে। এছাড়া আমাদের ক্যাম্পাসে গাছপালা পরিমাণও বেশ ভালো। হল থেকে বেরিয়ে বৃষ্টির মধ্যে ক্যাম্পাসে ঘুরতে, বন্ধুবান্ধবদের সাথে আড্ডা দিতে খুবই ভালো লাগে। বৃষ্টির মধ্যে টঙের চা পানের অনুভূতিটা তো আরো অসাধারণ।
আরেক শিক্ষার্থী রিসালাত আলিফ বলেন, ক্যাম্পাসে বৃষ্টির দিনগুলো সবারই প্রিয়। বৃষ্টির দিনে ভিজে কেউবা মেতে ওঠে আড্ডা-গানে, কেউবা বেরিয়ে পড়েন প্রিয়জনের সঙ্গে রিকশা ভ্রমণে। বৃষ্টিবিলাসে ক্যাম্পাসের মাধুর্য আরো বেড়ে যায়। ক্যাম্পাসের চা এর দোকানে ভীর জমে যায় বৃষ্টিবিলাসী চা প্রেমিদের৷ এমন দিন বাকৃবিতে বার বার ফিরে আসুক।
আসিফ ইকবাল বলেন, তপ্ত গরমের পর সজীবতা নিয়ে আসল রিমঝিম বৃষ্টি। বৃষ্টির পরশে আরো সজীব, উচ্ছল ও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠা বাকৃবির অপরূপ সৌন্দর্যের মাঝে যে কেউ হারিয়ে যাবেই। বৃষ্টির দিনের ক্যাম্পাসের চেহারা সত্যিই অন্যরকম। কাজের প্রতি সবারই যেন গা-ছাড়া ভাব। প্রকৃতিকে উপভোগেই ব্যস্ত হয়ে পড়ে সবাই।