রিকশার তিন চাকায় ভর করে লড়ছেন জরিনা

  • মশাহিদ আলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

রিকশার তিন চাকায় ভর করে লড়ছেন জরিনা

রিকশার তিন চাকায় ভর করে লড়ছেন জরিনা

সন্তানদের মুখে দু-বেলা দুমুঠো ডাল-ভাত তুলে দিতে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করছেন মধ্যবয়সী জরিনা বেগম। সিলেট নগরীতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান তিনি। স্বামী কামাল মিয়া মাদকাসক্ত হয়ে পরিবারের সঙ্গে না থাকায় বাধ্য হয়ে এই পেশা বেছে নিয়েছেন তিনি। আগে ইট ভাঙার কাজ করলেও চোখের সমস্যা এবং অল্প মজুরি দিয়ে ঘরভাড়া-সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। তাই কিস্তিতে নেওয়া একটি ব্যাটারিচালিত তিন চাকার বাহন রিকশায় ভর করে লড়ছেন তিনি।

তিন ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে সিলেট নগরীর শামীমাবাদ এলাকায় একটি কলোনিতে ভাড়া বাসায় থাকেন জরিনা। জন্ম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হলেও ১০ বছর বয়স থেকে বেড়ে ওঠা সিলেট শহরে। জরিনার তিন ছেলে সালমান, শাওন ও আরমান। ছেলেদের পড়ালেখা করানোর ইচ্ছে থাকলেও সামর্থ নেই তার। মায়ের কষ্টের ভাগ কমাতে ও ছোট ভাইদের পড়ালেখা করাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কের একটি বেকারির দোকানে কাজ করেন ১২ বছরের ছোট্ট শিশু সালমান।

বিজ্ঞাপন

রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর ও বিকেল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত জরিনা রিকশা নিয়ে ছুটে চলেন শহরের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায়। মাঝখানে যে সময়টুকু পান বাসায় ফিরে সন্তানদের জন্য রান্না করা ও তাদেরকে গোসল করিয়ে মুখে খাবার তুলেন তিনি। রিকশা চালিয়ে যে টাকা রোজগার করেন তা দিয়ে ঘরভাড়া ও সন্তানদের ভরণপোষণ চালান। সময় যত যাচ্ছে জরিনার সংসারে অভাব যেন তাড়া দিচ্ছে তত। এক হাত ভাঙা অবস্থায় অভাব দূর করতে যে রিকশাটি কিস্তিতে নিয়েছিলেন সেটির ব্যাটারি নষ্ট হয়ে গেছে। মেরামতের জন্য প্রয়োজন ২০-২৫ হাজার টাকা।

জরিনা বেগম ও তার দুই সন্তান

টাকার অভাবে সন্তানদের পড়ালেখা ও চোখের অপারেশন করাতে পারচ্ছেন না এই সংগ্রামী নারী। তাই সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের সাহায্য চাইলেন জরিনা।

বিজ্ঞাপন

জরিনা বেগম বলেন, রিকশা চালাতে গিয়ে কোনো সমস্যা হয় না। যাত্রীরা ভালো ব্যবহার করেন। সবাই অনেক উৎসাহ দেন। শুরুর দিকে রিকশাচালাতে গিয়ে কিছুটা সমস্যা হয়েছিল। স্বামী মদ-গাঁজা সেবন করেন। সে ঘুমাতে না পারলে আমার সন্তানদের মারপিট করে। কিছুদিন আগে কাজ করতে গিয়ে আমার একটি হাত ভেঙে যায়। টাকার অভাবে ভালোমতো চিকিৎসা করাতে পারেননি। বাসাভাড়া দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, মানুষের বাসা-বাড়িতে যে টাকা পেতাম তা দিয়ে আমার সংসার চালানো সম্ভব না। পরে ইট ও কংক্রিট ভাঙার কাজ করতে গিয়ে চোখ জ্বালাপোড়া করায় বাধ্য হয়ে সেই কাজ ছেড়ে দেই। এখন কিস্তিতে একটি রিকশা কিনেছি। সেই কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে খুব কষ্ট হচ্ছে।

সংগ্রামী এই মা জানান, ছেলেদের লেখাপড়া শেখাতে খুব ইচ্ছে ছিল কিন্তু টাকার অভাবে সেটা হয়ে উঠছে না। প্রথম দিকে প্রতিদিন ৮শ থেকে ১ হাজার টাকা রোজগার করা গেলেও এখন ৪০০-৫০০ টাকা রুজি করতে পারি।