বেশিরভাগ উল্কা আসে গ্রহাণুর টুকরো থেকে!
পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকে যতগুলি উল্কাপিণ্ড ভূপৃষ্ঠে এসে পড়েছে, তার উৎস বিজ্ঞানীদের কাছে এতদিন ছিল অজানা।
সম্প্রতি, এক গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল থেকে বিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে আরও জানার পর রীতিমতো আশ্চর্য হয়েছেন।
এর আগে মাত্র ৬ শতাংশ উল্কাপিণ্ডের উৎপত্তির কথা জানা ছিল বিজ্ঞানীদের।
সম্প্রতি, বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন, উল্কাপিণ্ডের কিছু কিছু এসেছে আমাদের একমাত্র উপগ্রহ চাঁদ, মঙ্গলগ্রহ এবং ভেস্তা গ্রহাণু থেকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় উল্কাপিণ্ডটি এসেছে মঙ্গল ও বৃহস্পতি গ্রহের কক্ষপথে অবস্থানরত মূল গ্রহাণুপুঞ্জ থেকে।
নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, পৃথিবীতে আসা ৭০ হাজার উল্কাপিণ্ডের মধ্যে ৭০ শতাংশ উল্কাপিণ্ড এসেছে মঙ্গল ও বৃহস্পতি গ্রহের কক্ষপথের মধ্যে অবস্থিত প্রধান গ্রহাণু বেল্টের ৩টি সংঘর্ষ থেকে।
এ বিষয়ে একটি গবেষণাপত্র ‘অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিকস’ বিজ্ঞান সাময়িকীতে এবং অন্য দুটি বিজ্ঞান সাময়িকী ‘নেচার’-এ প্রকাশিত হয়েছে।
সমীক্ষা অনুসারে সংঘর্ষগুলি ৫.৮, ৭.৫ ও ৪০ মিলিয়ন বছর আগে ঘটেছিল।
এই উল্কাপিণ্ডগুলি ‘কারিন’, ‘করোনিস’ ও ‘মাসালিয়া’ নামে পরিচিত ৩টি তরুণ গ্রহাণু ‘পরিবার’-এর এর সঙ্গে মিলে গেছে। অন্তত ৩০ কিলোমিটার জুড়ে গ্রহাণুর ধ্বংস থেকে এই পরিবারগুলি গড়ে উঠেছে। পৃথিবীতে আসা বেশির ভাগ উল্কাপিণ্ডই এই পরিবারগুলি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা।
সাধারণত, এই ছোট ছোট উল্কাপিণ্ডগুলি অত্যন্ত গতিসম্পন্ন। তারমানে এই উল্কাপিণ্ডগুলি গ্রহাণু বেল্টের অন্যান্য বস্তুর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি অতিক্রম করে মহাশূন্যে ছুটে চলেছে।
এইসব উল্কাপিণ্ড পাথর (কনড্রাইট) দিয়ে তৈরি। এগুলি কার্বোনেশিয়াস (‘সি’– যেমন, চাঁদ এবং মঙ্গল থেকে আসা), ‘এইচ’ এবং ‘এল’ পরিবারে ভাগে ভাগ করেছেন গবেষকেরা। শতকরা ৪০ ভাগ উল্কাপিণ্ড এসেছে এই ‘এইচ’ পরিবার থেকে। ৩৫ শতাংশ উল্কাপিণ্ড এসেছে ‘এল’ পরিবার থেকে। কিন্তু ‘এইচ’ ও ‘এল’ শ্রেণিভুক্ত উল্কাগুলি কোন পরিবার থেকে এসেছে, তা এখনো বিজ্ঞানীদের কাছে রহস্য হিসেবেই রয়ে গেছে।
ল্যাবরেটরিতে তৈরি সিমুলেশন অনুসারে, ৩৭ শতাংশ উল্কাপিণ্ড এসেছে, ‘মাসালিয়া’ পরিবার থেকে। এই ‘এল’ পরিবারভুক্ত উল্কাগুলি এখন থেকে প্রায় ৪০ মিলিয়ন বছর সংঘর্ষের ফলে সৃষ্টি হয়েছিল।
বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন, প্রায় ৪শ ৫০ মিলিয়ন বছর আগে যখন গুহাণুগুলির সঙ্গে অন্যান্য গ্রহাণুর সংঘর্ষ হয়েছিল, তখন ‘ম্যাসালিয়া’ পরিবার থেকে অনেক উল্কাপিণ্ডও তৈরি হয়েছিল।
টেলিস্কোপিক জরিপের মাধ্যমে এক কিলোমিটার বা তারও বেশি এলাকা জুড়ে বিস্তৃত থাকা গ্রহাণুগুলি বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা এ তথ্য জানতে পেরেছেন। এই গ্রহাণুগুলিই এখন পৃথিবীর প্রাণিকূলের অস্তিত্ব বিপন্ন করে তুলতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে দিয়েছেন।