৫০০ বছরের ঐতিহ্য: জয়পুরহাটে ঘোড়ার মেলা
জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে ঐতিহ্যবাহী গোপিনাথপুর মেলায় ঘোড়ার হাট জমে উঠেছে। বিজলি, কিরন মালা, রানী, সুইটি আরও কত যে বাহারি নাম। ওদের ক্ষিপ্রতা আর বুদ্ধিমত্তায়ও মেলে নামের সার্থকতা। ঘোড়াগুলোর দুলকী চলনে বিদ্যুৎ গতি, চোখের পলকে যেন মাইল পার। এমন নানামুখী গুণের কারণে দেশি-বিদেশি ঘোড়াগুলোর কদরও যথেষ্ট। পছন্দের ঘোড়াকে পেতে ক্রেতাদের মধ্যেও রীতিমতো কাড়াকাড়ি।
প্রতি বছর দোল পূর্ণিমা উপলক্ষে জয়পুরহাটে শুরু হয় মাসব্যাপী মেলা। মূল মেলা এক মাস হলেও পশুর মেলা হয় ১০ দিন। ঘোড়া ছাড়াও মহিষ, গরু, ভেড়া ও ছাগল বেচাকেনা হয় এ মেলায়।
আয়োজকরা বলছেন, দেশের এক মাত্র ঘোড়া বেচাকেনার হাট এটি। এ কারণে সারাদেশ থেকে আনা কয়েক হাজার ঘোড়া জড়ো করা হয় এখানে। এটিকে ঘোড়ার মিলনমেলা বললেও অত্যুক্তি হবে না।
ক্রেতা বিক্রেতা ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর ঐতিহ্যবাহী গোপীনাথ মেলার ঘোড়ার হাট। দরদাম ঠিকঠাকের পর একটি খেলার মাঠে ঘোড়া নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ক্রেতাকে দেখানো হয় ঘোড়ার দৌড়।
দোলপূর্ণিমা মেলা কমিটি আয়োজকরা জানান, ৫০০ বছরের পুরনো এ মেলা শুরু থেকেই ঘোড়ার জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। স্বাধীনতার পরও মেলায় নেপাল, ভুটান, ভারত, পাকিস্তানসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে উন্নত জাতের ঘোড়া আসত। বর্তমানে সেসব এখন স্মৃতির পাতায় হলেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ঘোড় সওয়ারি ও ঘোড়া মালিকরা এ মেলায় ঘোড়া নিয়ে আসেন।
স্থানীয়রা জানায়, এ মেলায় ময়মনসিংহ, জামালপুর টাঙ্গাইল, বগুড়া, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, পাবনা, রাজশাহী, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঘোড়ার আমদানি হয় এ মেলায়।
সিরাজগঞ্জ সদর থেকে আসা বাসেদ আলী একটি ঘোড়ার দাম হেঁকেছেন ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা পরে তা দুই লাখ টাকায় বিক্রি করেন বলে জানান তিনি।
নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার চকমরিয়ম গ্রামের আব্দুল খালেক জানান, তিনি ২৫ বছর ধরে মেলায় ঘোড়া নিয়ে আসেন এখানে। এবার তিনি চারটি ঘোড়া এনেছিলেন, ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকায় সবগুলো বিক্রি করেছেন।
এবার হাটে সর্ব্বোচ্চ ৫ লাখ টাকায় যে ঘোড়াটি বিক্রি হয়েছে তার মালিক হোসেন আলী জানান, ঘোড়াটির বয়স সাড়ে চার বছর। এটি রেসিং ঘোড়া। দ্রুত দৌড়াতে পারে সাদা-কালো ডোরাকাটা ঘোড়াটির যত্ন তিনি নিজেই নিতেন।
বাহারি ঘোড়াটি কিনেছেন রাজশাহীর সেকেন্দার বাদশা নামে এক সৌখিন ঘোর সওয়ারি। নাটোরের কুতুব আলী প্রায় সাড়ে আট ফুট উচ্চতার বড় কালো রংয়ের এক তাজি ঘোড়া ১ লাখ ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন বলেও জানান তিনি।
ঘোড় সওয়ারি ও ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান, আগেও তাদের বাপ-দাদারা এ মেলায় ঘোড়া কেনাবেচা করতেন, পূর্ব পুরুষের সূত্র ধরে তারাও আগলে রেখেছেন সেই পারিবারিক ঐতিহ্য। আগে ঘোড়ার হাট ও ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে ঘোর দৌড়ের বিস্তীর্ণ মাঠ থাকলেও বর্তমানে সেই স্থানটি সংকুচিত করা হয়েছে বলে ঘোড়া বেচাকেনায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।
গোপীনাথপুর ইউপির চেয়ারম্যান ও মেলা কমিটির প্রধান কর্তা আবু সাইদ জোয়ার্দ্দার বলেন, প্রশাসনের পাশাপাশি মেলা কমিটিও সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে। এতো বড় পুরনো এবং ঐতিহ্যবাহী বৃহৎ মেলা উত্তরবঙ্গের কোথাও নেই বলেও জানান তিনি।
আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) কিরণ কুমার রায় জানান, মেলা উপলক্ষে বিপুল মানুষের সমাগম হয়েছে। তাদের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশের পাশাপাশি আনসার মোতায়েন রয়েছে।