বারানসিতে যারা আসেন থাকেন খুশিতে
ভারতের উত্তর প্রদেশ থেকে (বারানসি): কতো হাজার বছর বয়স হবে এ শহরের। বারানসি বা বেনারসকে বলা হয় ইতিহাসের প্রাণকেন্দ্র। এখানে যারাই আসেন গঙ্গার ঘাটে যাওয়ার পর ধর্ম মত নির্বিশেষে সকলের মন ভালো হয়ে যায়। সকলেই থাকেন খুশিতে।
বিশ্বাসীরা তাদের পাপ মোচনে নদীতে স্নান করে অপার আনন্দ পান, তেমনি যারা শুধু ভ্রমণের জন্য এসেছেন তাদেরও ভ্রু নেচে ওঠে।
কতো পেশা এ প্রাচীন জনপথে। গঙ্গা নদীর পাশ দিয়ে যখন আপনি হাঁটবেন মনে হবে অন্তত তিন হাজার বছরের পুরোন মানুষের উত্তরসূরী।
কেউ নৌকা চালায়। ইউরোপীয় কিছু গা মালিশ করতে সটান শুয়ে পড়ছে ঘাটের সিড়িতে। আবার কেউ কম পয়সায় দাড়ি কাটায় ইত্যাদি।
দালাল, পুরোহিতের ছড়াছড়ি কিন্তু জোরাজুরি নেই। পাপ মোচনকারিণী পবিত্র গঙ্গার পশ্চিম তীরে অবস্থিত এই শহর কাশি নামেও পরিচিত ও পৃথিবীর অন্যতম পুরোনো জীবিত শহর।
কাশি থেকে কিছু দক্ষিণী নারী-পুরুষ সকলেই মাথা কামিয়ে কি যে আনন্দ। ঘাটে বসে হাওয়া খাচ্ছেন।
স্থানীয় মানুষজন মনে করেন যে এই শহর প্রায় তিন হাজার বছর আগে তৈরি হয়।
যখন আপনি ছাই মেখে বসে থাকা নাঙ্গা সন্যাসীকে ঘাটের ধারে ধ্যানে বসে থাকতে দেখবেন তখন মনে হবে এটি আরো পুরাতন শহর।
হিন্দুশাস্ত্র মতে, এই শহর মোক্ষ লাভের শহর যা বিখ্যাত হয়ে আছে শক্তিপীঠ ও দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের জন্যে (কাশি বিশ্বনাথ মন্দির)। এটি হিন্দুদের সাতটি পবিত্র শহরের মধ্যে একটি। হিন্দু ধর্মবিশ্বাসী মানুষজন মনে করেন যে, এখানে কোনো মানুষের মৃত্যু ও দাহ হলে তারা সরাসরি মোক্ষলাভ করেন ও পুনর্জন্ম থেকে নিষ্কৃতি পান।
বারানসিতে রয়েছে শতশত গলি। রয়েছে প্রায় ১০০’র মতোর ঘাট। এর মধ্যে বিখ্যাত অসি ঘাট, চেত সিং ঘাট, দ্বারভাঙ্গা ঘাট, দশাশ্বমেধ ঘাট, মান মন্দির ঘাট, সিন্ধিয়া ঘাট, ভোঁসলে ঘাট, মণিকর্ণিকা ঘাট ইত্যাদি।
তবে বারানসিতে বাণিজ্য বেশ সমৃদ্ধ। প্রতিদিন গভীর রাত পর্যন্ত চলে বেচা-কেনা। তবে জোর করে কাউকে গুজিয়ে দেওয়ার প্রবণতা খুব কমই দেখা যায় দোকানিদের মধ্যে।
এখানকার বেনারসি শাড়ি বিখ্যাত। তৈরি সিল্ক, সুগন্ধি, হাতির দাঁতের কাজ ভুবন বিখ্যাত। শহরের ধর্মীয় গুরুত্ব শীর্ষস্থান অধিকার করে অষ্টম শতাব্দীতে, যখন আদি শঙ্করাচারিয়া এখানে শিবের পুজা শুরু করেন ও মন্দির তৈরি করেন। মুসলিম রাজত্বেও এই শহর হিন্দু উপাসনা, অতীন্দ্রিয়বাদ ও কাব্যের এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পীঠস্থান ছিল। ফলে বারানসি সংস্কৃতি ও ধর্মশিক্ষার একটি মিলনস্থলে পরিণত হয়।
কাশি রাজার পৃষ্ঠপোষকতায় এখানে বেনারসি ঘরানার হিন্দুস্তানি ক্লাসিক্যাল সঙ্গীত বিকাশ লাভ করে। ষোড়শ শতাব্দীতে মুঘল সম্রাট আকবরের আমলে বারানসি সাংস্কৃতিক রেনেসাঁ দেখে। তিনি শিব ও বিষ্ণুর দুটি বিশাল মন্দির তৈরি করেন ও এই শহরের উন্নতিকল্পে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেন। তবে এখানকার বেশিরভাগ উন্নয়নই হয় অষ্টাদশ শতাব্দীতে মারাঠি ও ব্রাহ্মণ রাজাদের আমলে। বেনারসের রাজাকে মোঘল ও ব্রিটিশরা সরকারি পদমর্যাদায় রাজা বলে মেনে নেন তা চলে ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার আগে অব্দি। তাই এখানে নদীর পাশে অনেক প্রাসাদ দেখা যায়।