২৬ বছর ধরে বেঁচে থাকার অবলম্বন কালাই রুটি
রাজশাহী থেকে: গ্রীষ্মের পড়ন্ত বিকাল। রাজশাহী নগরীতে অন্য যেকোনো দিনের চেয়ে আজ (শনিবার ২০ এপ্রিল) তাপমাত্রা বেশি। ৩৪ ডিগ্রি তাপমাত্রার মধ্যে কালাই রুটি বানাচ্ছেন মোসলেমা বেগম।
রাজশাহী অঞ্চলের জনপ্রিয় সুস্বাদু খাবার কালাই রুটি। কেউ রাজশাহী আসবেন আর কালাই রুটি খাবেন না, এমন মানুষ পাওয়া ভার। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বিনোদপুর থেকে জিরো পয়েন্ট (বাজার) পর্যন্ত যেতে রাস্তার পাশে এমন অনেক দোকান চোখে পড়ে।
অস্থায়ী এই দোকানে যারা কাজ করেন, তারা এই ব্যবসাকে বড় আপন করে নিয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন মোসলেমা বেগম (৫০)। তিনি দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে এই পেশাকে আঁকড়ে ধরে আছেন বেঁচে থাকার অবলম্বন হিসেবে। স্বামী ছাড়া সংসারে মেয়েকে বিয়ে দেওয়া আর ছেলেকে পড়াশোনা করিয়েছেন এর উপার্জন দিয়ে।
শনিবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে রাজশাহী নগরীতে ঘুরে এমন অনেক কালাই রুটির দোকানের দেখা মেলে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেটের পাশে মোসলেমার টং দোকানটি প্রায় সবারই নজর কাড়ে।
মোসলেমা বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘প্রতিদিন ২০টি করে রুটি বানায়। প্রতিটির দাম ২০ টাকা করে। মোট ৪০০ টাকা থেকে লাভ হয় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। যা দিয়ে আমার চার সদস্যের সংসার চলে।’
মোসলেমা বলেন, ‘বিয়ের দুই বছর পরেই স্বামী চলে যায়। তারপর যখন পেটে ভাত যায় না, তখন নিজেই শুরু করি এ দোকান। আজ ২৬ বছর ধরে এভাবে চালিয়ে আসছি।’
এই জীবন-সংগ্রামী নারী আরও বলেন, ‘যখন ঝড় বৃষ্টি হয়। তখন দোকান বন্ধ রাখতে হয়। সেই সময়টা আমার খুব খারাপ যায়। মাঝে মাঝে পুলিশের লোকজন এসে জায়গা থেকে তুলে দেয়। তখনও খুব কষ্ট হয়। কিছুদিন পরে পেটের জ্বালায় আবার দোকানে বসি, আবার তুলে দেয়।’
‘আমি বুঝিনা। সরকারি জায়গায় থেকে কেন তারা তুলে দেয়। আমি তো জায়গা নষ্ট করছি না। চারটা মানুষের পেট চালাচ্ছি। ছোট একটা দোকান দিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে অটোচালক, রিকশাচালকরা আমার বানানো রুটি খায়।’
এ সময় অটোচালক মহিউদ্দিন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘সকালে খেয়ে বের হই। রাতে গিয়ে খায়। মাঝখানে এই একটা কালাই রুটি খায়। আমি অবশ্য অন্য কোথাও খাই না। মোসলেমা খালা খুব ভাল রুটি বানায়।’
অন্য দোকানগুলো ঘুরে দেখা যায়, দুপুরের মধ্যে দোকানগুলোতে রুটি শেষ হয়েছে। শেষ সময়ে রুটির সঙ্গে কেউ পেঁয়াজ-মরিচ, সরিষার তেল দিয়ে খাচ্ছেন। কেউ বা আবার মাংস দিয়ে কিংবা পোড়া বেগুনের ভর্তা দিয়ে খাচ্ছেন। তবে এটা খেটে খাওয়া মানুষের সাশ্রয়ী একটা খাবার। তাদের অধিকাংশই ক্ষুধা নিবারণের জন্য এই রুটি খেয়ে থাকেন।