নেলসন ম্যান্ডেলা : সংগ্রামই যার জীবন



তানিম কায়সার, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
নেলসন ম্যান্ডেলা

নেলসন ম্যান্ডেলা

  • Font increase
  • Font Decrease

সংগ্রামী জীবন বলে যদি কোনো জীবনকে আখ্যায়িত করা যায় তবে সেখানে একজন ব্যক্তি অনায়াসেই জায়গা করে নেবেন। তিনি নেলসন ম্যান্ডেলা। যিনি নিজের জীবনের ২৭টি বসন্ত কাটিয়ে দিয়েছেন চার দেওয়ালের ভেতর। অপরাধ ছিল একটাই, মানুষের ন্যায্য অধিকার নিয়ে কথা বলা। আর এই অপরাধের কারণেই তাকে বরণ করে নিতে হয়েছিল এক বন্দী জীবন। তিনি চাইলেই অবশ্য এরচেয়ে ভালো জীবন বেছে নিতে পারতেন। আপোস করে, একটু অন্যায়ের কাছে অনুগত হলে তাকে এমন জীবন কাটাতে হতো না। কিন্তু যার শরীরে ছিল ঐতিহ্যবাহী থেম্বু রাজবংশের রক্ত, সে মানুষ কেমন করে এমন সাধারণ জীবন যাপন করবেন।

দক্ষিণ আফ্রিকায় ম্যান্ডেলা পরিচিত মাদিবা নামে। সেখানকার মানুষেরা তাকে আদর করে, সম্মান করে মাদিবা বলে ডাকে। মাদিবা শব্দের বাংলা হলো জাতির জনক। শুনলে হয়তো অবাক হবেন, ম্যান্ডেলার হাতের ছাপ অবিকল আফ্রিকান মহাদেশের আকৃতির মতো! হ্যাঁ এটা একেবারে সত্যি ঘটনা কিন্তু! সুতরাং চোখ বন্ধ করে বলে দেওয়া যায় এ লোকের জন্মই হয়েছিল মাদিবা হওয়ার জন্য, জাতির জনক হওয়ার জন্য।

একজন সাধারণ ম্যান্ডেলা থেকে মাদিবা হয়ে যাওয়ার এই পথটা মোটেও মসৃণ ছিল না। এর জন্য তাকে পাড়ি দিতে হয়েছে দীর্ঘ পথ। যেই পথের প্রতিটা বাঁকে বাঁকেই ছিল কাঁটা বিছানো। এই পথ চলতে গিয়ে কোনো কাঁটা বিঁধেছে পায়ে, কোনোটা হাতে, আবার কোনোটা একদম হৃদয়ের প্রকোষ্ঠে। কিন্তু নেতৃত্বের গুণাবলি যার রক্তে, সংগ্রাম করে নিজের জাতিকে রক্ষার ইতিহাস যার বংশে, সেই মানুষকে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে বাধা দেবে, এমন কাঁটা তখনও সৃষ্টি হয়নি। মেন্ডেলা তাই এসব কাঁটা একে একে সরিয়ে, ক্ষত বিক্ষত শরীর নিয়ে অনেক উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে পিছিয়ে পড়া একটা জাতিকে নিয়ে আসেন আলোর মশালের তলে।

জন্মগতভাবে কালো হওয়ার কারণে যাদেরকে সহ্য করতে হতো সীমাহীন অত্যাচার, মানুষ হয়েও যাদের কাটাতে হতো পশুর চেয়েও হীন জীবন, তাদের জন্য বিলিয়ে দিলিয়েছিলেন নিজের টগবগে যৌবন। এই ম্যান্ডেলাকে আদর করে, ভালোবেসে মাদিবা ডাকবে না তো কাকে ডাকবে বলুন?

১৯১৮ সালের ১৮ জুলাই দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ প্রদেশের একটি সম্ভ্রান্ত গোত্র প্রধানের পরিবারে তার জন্ম। মা তার ডাক নাম রেখেছিলেন রোলিহলাহা, যার অর্থ যে ডাল ভেঙে ফেলে, অর্থাৎ দুষ্টু। এই দুষ্টু ছেলে বড় হয়ে একদিন একটা সমাজকে ভেঙে দেবে, তা হয়তো তার মাও ভাবেননি। বলতে গেলে সোনার চামচ মুখে নিয়েই জন্ম হয় তার। কিন্তু যার কপালে লেপা আছে সংগ্রামের তিলক, তার মুখে সোনার চামচ কি মানায়?

মাত্র নয় বছর বয়সে বাবা হারান ম্যান্ডেলা। নিজের জন্মভূমি ত্যাগ করতে হয় তৎকালীন ঔপনিবেশিক সরকারের চক্ষুশূল হওয়ার কারণে। শুরু হয় সংগ্রামের জীবন। কিন্তু সেই জীবনকেও ম্যান্ডেলা জয় করতে থাকেন সাহস এবং বুদ্ধিমত্তার সাথে। স্কুলে তাই এক শিক্ষিকা তার নামের আগে জুড়ে দেন নেলসন শব্দটি। সেই থেকে রোলিহলাহলা ডালিভুঙ্গা ম্যান্ডেলা হয়ে ওঠেন নেলসন ম্যান্ডেলা।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/18/1563465245164.jpg
তরুণ ম্যান্ডেলা ◢

 

পড়াশোনায় তুমুল মেধাবী ম্যান্ডেলা সারা বিশ্বের কাছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আজন্ম প্রতিবাদী ও সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে আজকে পরিচিতি লাভ করেছেন। তার সেই প্রতিবাদী স্বভাবের শুরুটা শেশব কৈশোর থেকেই। ফোর্ট হেয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে সংগ্রামী জীবনের সঙ্গী টাম্বোর সাথে পরিচয় ঘটে তার। যার সাথে ম্যান্ডেলা সারা জীবন খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীনই ম্যান্ডেলা জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে। প্রথম বর্ষেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ছাত্র সংসদের ডাকা আন্দোলনে অংশ নেন। ফলস্বরূপ বেরিয়ে যেতে হয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সেখান থেকে চলে যান জোহানসবার্গ। একটি খনিতে প্রহরীর কাজ নেন। পরবর্তীতে একটি আইনি সেবাদান প্রতিষ্ঠানের কেরানি হিসেবে চাকরি শুরু করেন। এই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার সময়েই তিনি তার স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। এখানে তার সাথে পরিচয় হয় জো স্লাভো, হ্যারি শোয়ার্জ এবং রুথ ফাস্টের। পরবর্তী সময়ে এদেরকে নিয়েই তিনি তার বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন শুরু করেন।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/18/1563465592154.jpg
যুবক বয়সে ম্যান্ডেলা ◢

 

আন্দোলনের শুরুতে ভারতের মহাত্মা গান্ধির 'অহিংস' মতকে গ্রহণ করেছিলেন ম্যান্ডেলা এবং তার সহযোগীরা। তাই তারা কাউকেই আঘাতের পক্ষপাতি ছিলেন না। এরই মাঝে ১৯৪৮ সালে ক্ষমতায় আসে আফ্রিকানদের দল ন্যাশনাল পার্টি। এই দলটি বর্ণবাদে বিশ্বাসী ছিল। আর ম্যান্ডেলাও একই সময়ে সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন। ধীরে ধীরে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন এগিয়ে যায়। সংলাপ, শান্তি আলোচনা ইত্যাদির মাধ্যমে জনমত তৈরির কাজ চলে। ১৯৫২ সালে তিনি অসহযোগ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। কিন্তু সেই শান্তি বেশি দিন স্থায়ী হয় না। বর্ণবাদী সরকার তাদের প্রতি মারমুখী আচরণ শুরু করে। বর্ণবাদী শ্বেতাঙ্গ সরকার ১৯৫৬ সালের ৫ ডিসেম্বর ম্যান্ডেলাসহ ১৫০ জন বর্ণবাদবিরোধী নেতাকে দেশদ্রোহিতার অপরাধে গ্রেপ্তার করে। কিন্তু পরবর্তীতে তারা নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে মুক্তি পান।

মুক্তি পাবার পর আন্দোলন আরো বেগবান হয়। মানুষ তাদের অধিকারের ব্যাপারে সচেতন হতে শুরু করে। ১৯৬০ সালে শার্পভিলে কৃষ্ণাঙ্গ শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশ গুলি ছুড়তে থাকে। ৬৯ জন নিহত হলে বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন তীব্র হয়ে উঠে। শান্তিপূর্ণ অহিংস আন্দোলন রূপ নেয় সহিংস আন্দোলনে।

এসময় এক বক্তৃতায় নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছিলেন, সরকার যখন নিরস্ত্র এবং প্রতিরোধবিহীন মানুষের ওপর পাশবিক আক্রমণ চালাচ্ছে, তখন সরকারের সঙ্গে শান্তি এবং আলোচনার কথা বলা নিস্ফল। ফলস্বরূপ সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। তারা অহিংস আন্দোলনের পথ থেকে সরে এসে ‘যেমন কুকুর তেমন মুগুর’ পদ্ধতি অবলম্বন করেন। ম্যান্ডেলা পরবর্তীতে স্বীকার করেন যে এই আন্দোলন করতে গিয়ে অনেক সময় অনেক নিরীহ লোককে প্রাণ হারাতে হয়েছে। আর এটিকে কারণ দেখিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ম্যান্ডেলা ও তার দল এএনসিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে তারা ম্যান্ডেলার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।

সহিংস আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে ১৯৬২ সনের ৫ আগস্ট ৪০ বছর বয়সী ম্যান্ডেলাকে গ্রেফতার করা হয়। যার ফলে তার জীবন থেকে হারিয়ে যায় ২৭ টি বছর। তবে জেলে থেকেও ম্যান্ডেলা দমে যাননি। জেলে বসেই তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরশিক্ষণ কর্মসূচির আওতায় পড়াশোনা শুরু করেন এবং আইনে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। 

জেলে থাকাকালীন তিনি প্রায় নানা সময়ে তার প্রিয়জনদের কাছে চিঠি লিখতেন। স্ত্রী, পুত্র, কন্যাসহ অনেকের কাছেই চিঠি পাঠাতেন। জেলে থাকাকালীনই তার মা মারা যান। কিন্তু তাকে শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দেওয়া হয়নি। নির্জন কারাগারে বসে তিনি লেখেন, “তোমাকে আর কোনোদিন দেখতে পাব না! ভাবতেই পারছি না।” এই ক্ষত মুছতে না মুছতেই তার এক ছেলে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর সময় তিনি ম্যান্ডেলার একটি প্যান্ট পরেছিলেন। ম্যান্ডেলা লেখেন, “মৃত্যুর সময় আমার একটি প্যান্ট পরে ছিল সে। সেটা তার বড়ই হওয়ার কথা। তার যথেষ্ট কাপড়চোপড় থাকা সত্ত্বেও আমার কাপড় পরার কোনো কারণ ছিল না। তবু সে পরেছিল। এই যে আবেগ, এটাই আমাকে গভীরভাবে ছুঁয়ে গিয়েছিল। বাড়িতে আমার অনুপস্থিতি, আমার কারাগারে থাকা, সন্তানদের ওপর কী মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব ফেলেছিল; তা আমার মনকে উত্তাল করে দিল।” এমনি দুঃখ কষ্টে তার জীবন কাটতে থাকে নির্জন অন্ধকারে। কিন্তু তবুও তার এ নিয়ে কোন অভিযোগ ছিল না। তিনি বলতেন, “যদি জেলে না যেতাম, তাহলে অনেক কিছু শেখা বাকি থাকত।”

কথায় আছে, আপনি হয়তো একজনকে মেরে ফেলতে পারবেন, কিন্তু তার আদর্শকে কখনো মেরে ফেলতে পারবেন না। এই কথাই যেন প্রতিফলিত ম্যান্ডলার জীবনে। ম্যান্ডেলা জেলে থাকাকালীনই ম্যান্ডেলার পক্ষে সারা বিশ্বব্যাপী জনমত তৈরি হতে থাকে। দীর্ঘ জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ১৯৯০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি মুক্তি দেওয়া হয় তাকে। এরপরে তিনি আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস তথা এএনসির দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ১৯৯৪ সালে ক্ষমতায় আসীন হন। যা ১৯৯৯ পর্যন্ত ব্যাপ্ত ছিল। সেই সময় তিনি সারা বিশ্বের কাছে হয়েছিলেন সমাদৃত, সিক্ত হয়েছিলেন ভালোবাসায়। 

 

 

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/18/1563466238205.jpg

বাংলাদেশে ম্যান্ডেলা ◢

 

আমরা অনেকেই জানিনা নেলসন ম্যান্ডেলা একবার আমাদের বাংলাদেশেই এসেছিলেন। সময়টা ১৯৯৭ সাল। মার্চের ২৬ তারিখ। বাংলাদেশের স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী দিবস। আফ্রিকার রাষ্ট্রপতি নেলসন ম্যান্ডেলা বাংলাদেশে এসেছেন। একই সময়ে এসেছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট ইয়াসির আরাফাত ও তুরস্কের রাষ্ট্রপ্রধান সুলেমান ডেমিরেলের মতো বিশ্বনেতা। বাংলাদেশে এসে তিনি এদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে নিজের বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনকে তুলনা করে দুটি আন্দোলনকেই মানুষের মুক্তির আন্দোলন হিসেবে আখ্যা দেন। বাংলাদেশের অনেক সম্ভাবনার কথা বলছিলেন তিনি। বলেছিলেন, কিছু আন্তরিক উদ্যোগ গ্রহণ করলেই কিন্তু দেশটি পাল্টে যেতে পারে। এজন্য দরকার স্বচ্ছতার ভিত্তিতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। নইলে দেশ মুখ থুবড়ে পড়বে। কারণ, স্বচ্ছতা না থাকলে দায়বদ্ধতাও থাকবে না। তখন দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়বে। তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন শিক্ষা-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সব মানুষের অধিকার নিশ্চিত করার কথাও।

আজকেও আমরা ম্যান্ডেলার কথাগুলোর যৌক্তিকতা গভীরভাবে উপলব্ধি করি। তার এই সামান্য কয়টি কথা থেকেই বোঝা যায় তিনি আসলে কত গভীর এবং কত বিচক্ষণ মাপের রাজনীতিবিদ ছিলেন।

বর্ণিল জীবনে তিনি দুইশ’র বেশি পুরস্কার পেয়েছিলেন। তার মধ্যে রয়েছেন নোবেল পুরস্কার ও ভারতরত্ন পুরস্কারের মতো বড় বড় সব অর্জন।

শেষ জীবনে এসে রোগ ব্যাধি বাসা বাঁধে শরীরে। ২০১৩ সালের ৮ জুন তিনি ফুসফুসে সংক্রমণের কারণে প্রায় দুই মাস হাসপাতালে কাটান। ২১ সেপ্টেম্বর তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ওই বছরের ৫ ডিসেম্বর নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই মহান সংগ্রামী।

নেলসন ম্যান্ডেলাকে একবার জিজ্ঞেস করা হয় তিনি কিভাবে মানুষের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকতে চান? উত্তরে বলেন তিনি বলেন, “আমি চাই আমার সম্পর্কে লোকে এমন কথাই বলুক যে, এখানে এমন এক ব্যক্তি ঘুমিয়ে আছেন, যিনি পৃথিবীতে তার কর্তব্য সম্পাদন করেছেন।”

ম্যান্ডেলার এই ইচ্ছেটাও হয়তো পূরণ হয়েছে আজ।

   

প্রশ্ন আর উত্তর যেন পরস্পরের সাংঘর্ষিক!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রশ্ন থাকে এক আর তার উত্তর হয় ভিন্ন। এমন উত্তরপত্রের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায়ই দেখা যায়। এবার এমনই এক উত্তরপত্রের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে ভাইরাল হয়েছে। যা দেখে রীতিমতো সবাই অবাক! তবে এই ঘটনার জন্ম দেওয়া দেশটি বাংলাদেশ নয়, প্রতিবেশী দেশ ভারতের একটি হিন্দি পরীক্ষায় ঘটেছে এমন কাহিনী।

ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রকাশিত ভিডিওতে পরীক্ষার্থীর এমন উত্তর দেখে শিক্ষককেও হাসতে দেখা যায়। 

ভিডিওটি ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করা হয়েছে @n2154j অ্যাকাউন্টের একটি আইডি থেকে।

ওই ভিডিওতে দেখা যায়, একটি প্রশ্ন ছিল এমন, সংযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ (যৌগিক ব্যঞ্জনবর্ণ) কী? এই প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষার্থীটি একটি খাদ্য রূপক দিয়ে উত্তর দিল: "মাটার পনির এবং সব মিশ্র সবজি একত্রিত একটি খাবার।"

আরেকটি প্রশ্ন ছিল "অতীত কাল কাকে বলে?" এর উত্তরে ওই পরীক্ষার্থি লিখেছে, "যখন অতীত আমাদের অতীতের আকারে আসে, তখন তাকে অতীত কাল বলা হয়।"

ভিডিও অনুযায়ী আরও একটি প্রশ্ন ছিল "বহুবচন কাকে বলে?" এর উত্তরে সে লিখেছে "যে পুত্রবধূ তার শ্বশুরবাড়ির কথা শোনে তাকে বহুবচন বলে।"

শিক্ষার্থীটির এমন উত্তর শুনে হাসিতে ফেটে পড়েন শিক্ষক। এমন উত্তরগুলোকে শিক্ষক ভুল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। যদিও এমন উত্তরের জন্য তাকে পুরোপুরি হতাশ করা হয়নি। তাকে ১০ মার্কের মধ্যে ৫ নম্বর দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষক পরে তার উত্তরপত্রে লিখে দিয়েছিলেন, এই ৫ মার্ক তোমার মস্তিষ্কের জন্য, ছেলে।

ভিডিওটি দেখে সবাইকে হাসির ইমোজি দিতে দেখা যায়। সম্পূর্ণ নম্বর না পাওয়ায় অনেকেই যুক্তি দিয়ে লিখেছেন, ছাত্রটি তার কৌতুক প্রতিভার জন্য পূর্ণ নম্বর পাওয়ার যোগ্য।

তবে এমন ঘটনা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছেন, ছাত্র এবং শিক্ষকের হাতের লেখা সন্দেহজনকভাবে একই রকম।

অন্য এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, "প্রশ্ন এবং উত্তর একই হাতের লেখা"। 

;

ফেনী শহরে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে কৃষ্ণচূড়া



মোস্তাফিজ মুরাদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ফেনী
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

'কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরি কর্ণে-আমি ভুবন ভুলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে' জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই মনোমুগ্ধকর গানে ফুটে উঠেছে কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য। কৃষ্ণচূড়া যেন প্রকৃতিকে দান করেছে লাল আভার অপরূপ সৌন্দর্যের মহিমা। সাথে গ্রীষ্মের উত্তাপে শহরে সৌরভ ছড়াচ্ছে নানা জাতের ফুল। তীব্র তাপদাহের পর কালবৈশাখী, এরপর মাঝারি বৃষ্টির মধ্যে ফুলের আগমন। এতে রঙের উল্লাসে মেতে উঠেছে ফেনী শহরবাসী।

ফেনী শহরের কোর্ট বিল্ডিং, এলজিইডি, পুলিশ লাইন, নবীন চন্দ্র সেন কালচারাল সেন্টার, ফেনী সরকারি কলেজ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ফুটে আছে কৃষ্ণচূড়া। এটি একদিকে প্রকৃতিকে যেমন সাজিয়েছে অপরূপ সৌন্দর্যে, অন্যদিকে এর সৌন্দর্য মুগ্ধ করছে তরুণ-তরুণী, নানা শ্রেণি-পেশার মানুষসহ ফুলপ্রিয় পথচারীদের। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে, সরকারি দফতরসহ স্কুল-কলেজে কৃষ্ণচূড়া গাছের লাল ও উজ্জ্বল সবুজ পাতার সংমিশ্রণ দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছে চারপাশ।


কৃষ্ণচূড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ফুলের ঘ্রাণে মুখরিত হয়ে আছে পুরো শহর। শহরের মূল সড়কের ডিভাইডারে পৌরসভার উদ্যোগে লাগানো হাসনাহেনা, রজনিগন্ধা, গন্ধরাজসহ নানা জাতের ফুল গাছে ফুল ফুটেছে। এটি একদিকে বাড়িয়েছে সৌন্দর্য অন্যদিকে হেঁটে কিংবা রিকশায় চলাচল করলে পাওয়া যায় এসব ফুলের সুঘ্রাণ।

ফেনী শহরের কৃষ্ণচূড়ার অপরূপ সৌন্দর্য দেখে ফুলপ্রিয় পথিকরা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া ফুল প্রকৃতিকে অনন্য সাজে সাজিয়েছে। এই ফুলের সৌন্দর্যের কারণে পথচারীরা একবার হলেও এই ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এর গাছের উপর নজর দিবে। পাশাপাশি তীব্র গরমে অন্যান্য ফুলের সুঘ্রাণে চারপাশ মুখরিত হওয়াতে ক্লান্তিতা কিছুটা হলেও কমছে।


তারা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া ফুলের এই নান্দনিক দৃশ্য দেখতে এর গাছ রোপণ করা জরুরি। রাস্তা প্রশস্তকরণ, ঘর-বাড়ি নির্মাণসহ নানা প্রয়োজনে গাছ কেটে ফেলা হয়। অন্যান্য গাছ রোপণ করার পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া রোপণ করলে একদিকে যেমন সৌন্দর্য বাড়াবে অন্যদিকে পরিবেশ বান্ধব হবে।

সাজিদ হাসান নামের এক পথচারী বলেন, কৃষ্ণচূড়া একদিকে যেমন প্রকৃতিতে অপরুপ সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে, আরেকদিকে গ্লোবাল ওয়ার্মিং কমাবে। সারাদেশে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে, আমার মতে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে এই গাছটিও যুক্ত করা উচিত। তীব্র গরমের পর বৃষ্টি হলো, এরপর শহরে নানা রঙের ফুলের দেখা মিলছে, ফুলের ঘ্রাণে চলাচল করতেই ভালো লাগছে।

ফারজানা ইয়াসমিন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ফুলের সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে। অন্যান্য ফুলের পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া ফুল আমার অনেক ভালো লাগে। আমাদের কলেজে বকুল তলা আছে, ক্যান্টিনের পাশে কৃষ্ণচূড়া গাছ আছে। সুযোগ পেলেই ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করি।

অনিক মোহন নামে একজন বলেন, রিকশায় করে যখন বাসায় ফিরি, শহরের রাস্তার মাঝে ভিডাইভারে লাগানো নানা জাতের ফুলের ঘ্রাণ মনকে আনন্দিত করে। রাতের বেলা শহর যখন নিস্তব্ধ হয়ে যায়, তখন এ ফুলের সৌন্দর্য কয়েকশ’ গুণ বেড়ে যায়।

সড়কের পাশে কৃষ্ণচূড়া লাগানো হলে সৌন্দর্য বাড়বে বলে মনে করেন পথচারী মিনহাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, রাস্তা প্রশস্তকরণের জন্য যে গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে, ওই গাছগুলোর জায়গা কৃষ্ণচূড়ার গাছ লাগালে রাস্তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে।

একই কথা বলেন শহরের ব্যবসায়ী নাদিম আহমেদ। তিনি বলেন, সৌন্দর্য ও পরিবেশের কথা বিবেচনা করে এই গাছ রোপণ করা উচিত আমাদের। তাপমাত্রা যেভাবে বাড়ছে অন্যন্যা গাছ রোপণ করার পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া গাছ রোপণ করার উদ্যোগ নিতে হবে। যেগুলো শহরে আছে তাতেই সৌন্দর্য বেড়ে গিয়েছে কয়েকগুণ, আরও যদি লাগানো যায় ফুলে ফুলে ভরে উঠবে আমাদের শহর।

কৃষ্ণচূড়া মাদাগাস্কারের শুষ্ক পত্রঝরা বৃক্ষের জঙ্গলে পাওয়া যায়। যদিও জঙ্গলে এটি বিলুপ্ত প্রায়, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে এটি জন্মানো সম্ভব হয়েছে। সৌন্দর্যবর্ধন গুণ ছাড়াও, এই গাছ উষ্ণ আবহাওয়ায় ছায়া দিতে বিশেষভাবে উপযুক্ত। কৃষ্ণচূড়া উদ্ভিদ উচ্চতায় কম (সর্বোচ্চ ১২ মিটার) হলেও শাখা-পল্লবে এটি বেশি অঞ্চল ব্যাপী ছড়ায়।

শুষ্ক অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে কৃষ্ণচূড়ার পাতা ঝরে গেলেও, নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে এটি চিরসবুজ থাকে। কৃষ্ণচূড়া ফুলের রং উজ্জ্বল লাল। পত্র ঝরা বৃক্ষ, শীতে গাছের সব পাতা ঝরে যায়। বাংলাদেশে বসন্ত কালে এ ফুল ফোটে। ফুলগুলো বড় চারটি পাপড়ি যুক্ত। পাপড়িগুলো প্রায় ৮ সেন্টিমিটারের মত লম্বা হতে পারে। কৃষ্ণচূড়া জটিল পত্র বিশিষ্ট এবং উজ্জ্বল সবুজ। প্রতিটি পাতা ৩০-৫০ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ২০-৪০ টি উপপত্র বিশিষ্ট। কৃষ্ণচূড়ার জন্মানোর জন্য উষ্ণ বা প্রায়-উষ্ণ আবহাওয়ার দরকার। এই বৃক্ষ শুষ্ক ও লবণাক্ত অবস্থা সহ্য করতে পারে।

জানা যায়, অপরূপ সৌন্দর্য ছড়ানোর পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর পাতা, মূলের বাকল ও ফুল ভেষজ গুণাগুণ সম্পূর্ণ, যা জ্বর ও খুশকি নিরাময়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। ভেষজটি হেমিপ্লেজিয়া, আর্থরাইটিস এবং কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। কৃষ্ণচূড়া গাছের শিকড়, বাকল এবং ফুল সবই পরজীবী সংক্রমণ নিরাময়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।

;

হলুদ আভায় মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে সূর্যমুখী 



শহিদুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ
ছবি: প্রাণের উচ্ছ্বাসে সূর্যমুখী

ছবি: প্রাণের উচ্ছ্বাসে সূর্যমুখী

  • Font increase
  • Font Decrease

মৃদু বাতাসে দোল খাচ্ছে সূর্যমুখী। বাস্তব জীবনের নিস্তব্ধতা ভাঙছে তার হলুদ আভায়। মৌমাছির আলিঙ্গন পেতে ছড়াচ্ছে উষ্ণ মুগ্ধতা। হলুদের কারুকার্যে বিমোহিত হচ্ছে পথিকের মন। লুকায়িত সৌন্দর্য প্রকৃতির মাঝে তুলে ধরে প্রবল আকর্ষণে টানছে দর্শনার্থীদের। সবুজ পাতা ভেদ করা সেই অনিন্দ্য হাসি যেন কৃষকের মুখেরই প্রতিচ্ছবি। সূর্যমুখী ফুল চাষে জনপ্রিয়তা বাড়ছে কৃষকদের মাঝে।

সূর্যমুখী এক ধরনের একবর্ষী ফুলগাছ। সূর্যমুখী গাছ লম্বায় ৩ মিটার (৯ দশমিক ৮ ফুট) হয়ে থাকে। ফুলের ব্যাস ৩০ সেন্টিমিটার (১২ ইঞ্চি) পর্যন্ত হয়। এই ফুল দেখতে কিছুটা সূর্যের মতো এবং সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে বলে এর এরূপ নামকরণ করা হয়েছে। ফুলের বীজ হাঁস-মুরগির খাদ্যরূপে ও তেলের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

জানা যায়, বাংলাদেশে ভোজ্যতেলের উৎস হিসেবে ১৯৭৫ সাল থেকে এ ফুলের চাষ শুরু হলেও কৃষকের মাঝে জনপ্রিয়তা পায় নি বহুদিন। পরে ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। বর্তমানে রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া, নাটোর জেলা, পাবনা, নওগাঁ, দিনাজপুর, গাজীপুর, টাঙ্গাইল প্রভৃতি জেলাতে এর ব্যাপক চাষ হচ্ছে।

সূর্যমুখীর বাঁধভাঙা হাসি আর প্রাণের উচ্ছ্বাস

সোমবার (১২ মে) সকালে সরেজমিনে নওগাঁ সদর উপজেলার মুক্তির মোড় কেন্দ্র শহীদ মিনারের পাশে দেখা যায়, সূর্যমুখী বাতাসে; দুলছে আলোর প্রতিফলনে পাপড়িগুলো যেন চকচকে হলুদ আভা ছড়াচ্ছে। মৌমাছি এক ফুল থেকে অন্যফুলে মধু আহরণে ছুটাছুটি করছে আর এসব দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছে পথচারীরা। এছাড়াও নওগাঁর বেশ কিছু অঞ্চলে চাষ হচ্ছে সূর্যমুখী। একদিকে যেমন ফুলগুলো সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে তেমনি বীজ থেকে ভোজ্য তেল উৎপাদনে ভূমিকা রাখছে সূর্যমুখীর বীজ। সূর্যমুখী গাছ শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। 

প্রতিদিন ভোরে সূর্যমুখী বাগানের সকল গাছ অনেকটা পূর্বদিকে মুখ করে থাকে। যেদিকে সূর্য দেখা দেয় এবং ধীরে ধীরে ওপরে উঠতে থাকে। সূর্যের সাথে সাথে সূর্যমুখীগুলোও ধীরে ধীরে নিজেদের দিক পাল্টাতে থাকে। সূর্য যেদিকে যায় তারাও সেদিকে যায়। সবসময়ই এগুলো সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে। সূর্য যখন পশ্চিম দিকে অস্ত যায় তারাও তখন পশ্চিম দিক বরাবর থাকে। অস্ত যাওয়ার পরে তারা রাতব্যাপী আবার উল্টো দিকে ঘুরে পূর্বমুখী হয়। এভাবে শুকিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের এই চক্র চলতেই থাকে।

সূর্যের সাথে সাথে নিজেদের দিকও পাল্টাতে থাকে সূর্যমুখী

তবে সবার মাঝে একটি প্রশ্ন অনেক সময় ঘুরপাক খায় যে সূর্যমুখী ফুল কেন সূর্যে দিক হয়ে থাকে! সম্প্রতি বিজ্ঞানীদের একটি দল সূর্যমুখীর এই দিক পরিবর্তন সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্যের রহস্য উন্মোচন করেছেন। তাদের গবেষণা থেকে বেরিয়ে আসে সূর্যমুখীরা তাদের নিজস্ব সার্কাডিয়ান চক্রে আবদ্ধ। এই চক্র সচল থাকার কারণে সূর্যমুখীরা সব সময় সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে। গবেষকরা সায়েন্স জার্নালে তাদের গবেষণার বিস্তারিত প্রকাশ করেছেন। সার্কাডিয়ান চক্র বা সার্কাডিয়ান ঘড়িকে অনেক সময় ‘দেহঘড়ি’ নামেও ডাকা হয়। মানুষের মাঝেও এই চক্র বিদ্যমান। যেমন প্রত্যেক মানুষেরই দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম চলে আসে।

পথচারী রায়হান বলেন, ফুল শুভ্রতার প্রতীক ও পবিত্র। ফুলকে যারা ভালোবাসে তাদের মনটাও সুন্দর। সূর্যমুখী ফুল সব ফুলের চেয়ে আলাদা কারন সূর্যের দিক মুখ করে বেশিরভাগ থাকে এ ফুল। বিশেষ করে দুপুর শুরু হলে সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে এ ফুল যা দেখতেও খুব সুন্দর লাগে তাছাড়া এ ফুলের বীজ থেকে তেল হয় যা অনেক স্বাস্থ্যকর।

ক্ষুদে শিক্ষার্থী আফরিন (১০) জানায়, আমি ফুল খুবই ভালোবাসি আর সূর্যমুখী ফুলগুলো হলুদ হবার কারনে আরো বেশি ভালো লাগে। নামটা যেমন সুন্দর তেমনি মুগ্ধতাও ছড়ায়। ফুলগুলো থেকে তেল হয় তাই কোনোভাবেই নষ্ট করা যাবে না। আমরা দূর থেকে দেখেই শান্তি পাই।

সূর্যের সাথেই একাত্মতা সূর্যমুখীর

স্থানীয় বাসিন্দা আরেফিন তুহিন বলেন, স্বল্প পরিসরে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য যারা সূর্যমুখী ফুলের গাছ লাগিয়েছে তারা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। ফুল মানেই সুন্দর সূর্যমুখীও এটিএ ব্যাতিক্রম নয়। মাঝে মাঝে যখন ফুলের দিকে চোখ যায় খুব ভালোলাগা কাজ করে। এ ফুল দেখতে যেমন সুন্দর এটির তেল ও খুব পুষ্টিকর।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে চলতি অর্থবছরে সূর্যমুখী চাষের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ হেক্টর ও অর্জন হয়েছে ৬৫ হেক্টর এবং মোট উৎপাদন হয়েছে ১০০ মেট্রিক টন। 

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বার্তা২৪.কমকে বলেন- সূর্যমুখী একদিকে যেমন শুভ্রতার প্রতীক আবার অন্যদিকে বীজ থেকে তেল উৎপাদন হয় আবার মধুও পাওয়া যায়। বাজারে যে ভৈজ্যতেল গুলো রয়েছে যেমন, সয়াবিন,সরিষা, পাম-ওয়েল ইত্যাদি এগুলোর চেয়েও অনেক বেশি পুষ্টিগুণ আছে সূর্যমুখীর তেলে যা স্বাস্থ্যকর এবং স্বাস্থ্যর জন্য খুবই উপকারী। আমরা বেশি বেশি উৎপাদনে কৃষকদের সব রকম পরামর্শ দিয়ে থাকি।

;

ওই আকাশে লুকিয়ে আছে মা



সহিদুল আলম স্বপন, লেখক জেনেভা সুইজারল্যান্ড
ওই আকাশে লুকিয়ে আছে মা

ওই আকাশে লুকিয়ে আছে মা

  • Font increase
  • Font Decrease

তো ১৯৯৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকের কথা, তখন সুইস কোম্পনী ফাদসা এস এ তে চাকরী করি। হঠাৎ একদিন কোম্পানীর মালিক মশিউয়্যু মিশেল লাসের (বাংলায় জনাব মিশেল ল্যাসার) তার অফিসে ডেকে পাঠালেন।আমিতো ভয়ে দিশেহারা, ভাবলাম ফ্রেন্স ভাষা না জানার কারণে আমার মনে হয় এবার চাকরীটাই গেল। বলে রাখা ভালো, সুইজারল্যান্ডের চারটি সরকারী ভাষার(ফরাসী, সুইস জার্মান, ইতালীয়ান এবং রোমন্স - রোমান নয়)মাঝে জেনেভা ফরাসী ভাষাভাষী।নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে একটা ভ্যানিশিং ক্রিমের পাবলিসিটি ছিল-ম্যানোলা সিবোঁ ভ্যানিশিং ক্রিম নিয়ে এলো ফরাসী সৌরভ। পরে জেনেছি সিবোঁ ফরাসী শব্দ যার অর্থ খুব ভালো (হয়তো বাংলায় বুঝাতে চেয়েছেন সুগন্ধময়)-আর এটাই শুধু আমার ফরাসী ভাষার ভান্ডার।

যাই হোক, ভয়ে ভয়ে তাঁর খাস কামরায় হাজির হলাম।দেখি কামরায় সোফার এককোনে প্যাট্রিক(আমার সুইস সহকর্মী আমার চেয়ে বছর দুয়েক এর ছোট হবে)আর লরেতা মার্টিনি এইচ আর হেড বসে আছে। বুঝতে আর দেরী হলোনা, এখনি বস বলবেন ইউ আর ফায়ার এবং প্যাট্রিককে তোমার সব কাজগুলো বুঝিয়ে দাও।

কোথায় ফায়ার তা না বলে মশিউয়্যু লাসের বললেন মাই ডিয়ার, আগামী সপ্তাহে প্যাট্রিক আর আলম (আমি) তোমরা দুজনে রটারডাম যাচ্ছো ম্যানেজমেন্ট ট্রেনিং এর জন্য। আলম তুমি কাল ভোরে বার্ণ(সুইজারল্যান্ডের রাজধানী)যাবে নেদারল্যান্ডের ভিসা করাতে। লরেতা তোমাকে সব বুঝিয়ে দেবে। বলে রাখা ভালো তখনো আমি সুইস নাগরিক হয়ে উঠিনি, আর মশিউয়্যু মিশেল লাসের ই আমাকে সুইজারল্যান্ডে স্হায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ করে দিয়েছিলেন।

রটারডাম উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের রাষ্ট্র নেদারল্যান্ডসের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর( আমস্টারডামের পরেই)।এটি ইউরোপের বৃহত্তম ও বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর।নেদারল্যান্ডসের দক্ষিণ হল্যান্ড প্রদেশে, উত্তর সাগরের তীরে, রাইন নদীর মোহনায় অবস্থিত এই বন্দর শহরকে প্রায়শই "ইউরোপের প্রবেশদ্বার" নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে।

তো যেই কথা সেই কাজ, সমস্ত আনুষ্ঠিকতা শেষে সপ্তাহান্তে কেএলএম রয়্যাল ডাচ এয়ারলাইন্সে চেপে জেনেভা থেকে আমস্টারডামের শিফল বিমানবন্দরে এসে পৌঁছলাম। আমস্টারডাম শিফল বিমানবন্দর থেকে ট্রেনে রটারডাম সেন্ট্রাল ট্রেন ষ্টেশনে এসে নামলাম। সেখান থেকে টেক্সীকরে সরাসরি রটারডাম ম্যারিয়ট হোটেলে।রটারডাম স্কুল অফ ম্যানেজমেন্ট, ইরাসমাস ইউনিভার্সিটি (আরএসএম) ইউরোপের শীর্ষস্থানীয় বিসনেস স্কুলগুলির মধ্যে একটি, এখানেই আমাদের কোর্স। বাংলাদেশ আর নেদারল্যান্ডসের মাঝে চার পাঁচ ঘন্টার পার্থক্য। প্রতিদিন বাবা -মা সাথে কথা হয়। বাবা আমার জ্ঞানের পাগল। ৬০ বছর বয়সে উনি তাঁর মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। কিন্তু বাবা মা দুজনের কেউ মানতে পারছিলেন না আমি বিদেশে থাকি। দেশে থাকতে মা এর আহাজারীতে বাবা বিভিন্ন কায়দায় বাংলাদেশ মিলিাটারী একাডেমী থেকে আমায় ছাড়িয়ে এনেছিলেন। রাতে ঘুমাতে যাবার আগের মা কে ফোন করে ঘুমাই। বরাবরের মতে ১৮ ই ফেব্রুয়ারি রাতে মার সাথে কথা বলছি, মা আমার প্রাইমেরীর গন্ডি পেরুনো কিন্তু শিক্ষার প্রতি তাঁর পরম শ্রদ্ধা। গান-নাটক সংস্কৃতির পাগল আমি। মা আমার প্রতিদিন ই জিজ্ঞেস করেন কেমন চলছে গান-বাজনা। অনেক গুলো নূতন গানের ক্যাসেট কিনে রেখেছেন তিনি, সুইজারল্যান্ডে ফিরলেই ডাকযোগে পাঠিয়ে দিবেন, আমার প্রিয় কুমিল্লার খদ্দরের হাউয়াই শার্টসহ। আরো কত কথা, শেষ হয়েও হয়না শেষ। মায়ের প্রতিটি কথায় সেকি এক অনুপ্রেরণা। আজ বাংলাদেশে শেষ রোজা। পরদিন ১৯ ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার রোজার ঈদ।

পরদিন ক্লাস নেই, ভেবে রেখেছি সকালে ব্রেকফাস্ট না করে লম্বা একটা ঘুম দিয়ে ফ্রেস হয়ে তারপর সারাদিন ঘুরে বেড়াবো, দেখবো বিশ্বের সবচেয়ে উদ্ভাবনী বন্দর, রটারডাম চিড়িয়াখানা, রিমাস্টারড" ডিজিটাল আর্ট অডিওভিজ্যুয়াল, ইউরোমাস্ট টাওয়ার, কিউব হাউস ইত্যাদি আর রাতে যাবে বাইয়্যাবীচ ক্লাবে নাচতে।

হোটেল রুমের সাইড টেবিলে রাখা ফোনটা সাত সকালেই আজ চিৎকার করে কান্না করে চলেছে, ক্রিং ক্রিং ক্রিং ক্রিং ক্রিং……। ফোনটা যেন পাগল হয়ে গেছে। বিরক্ত হয়েই মিনিট খানেক পর আঁধো বোজা চোখে ফোনটা কানের কাছে নিয়ে বললাম, হোয়াট দ্যা হেল প্যাট্রিক, লেট মি গেট সাম স্লিপ । ফোনের ঐ প্রান্ত থেকে ভেসে এলো ভাইয়া আমি ফরিদ(আমার ছোট বোন পান্নার বর), এক নি:শ্বাসে বলে চলছেন, ভাইয়া আমরা এই মাত্র কবরস্তান থেকে আসলাম, সব কিছুই ঠিক ছিল, দাফন- কাফন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে, কেঁদে আর কি করবেন, আল্লাহর কাছে দোয়া করেন, এইযে আব্বার সাথে কথা বলেন, আম্মাতো কাউকে কষ্ট দেননি, আল্লাহর কাছে আম্মার রুহের মাগফিরাত কামনা করে নামাজ পড়ুন যেন উনাকে আল্লাহ জান্নাতে স্হান করে দেন।চোখের জলে বালিশ ভিজেঁ যাচ্ছে আমি আজো প্রতিনিয়ত গেয়ে চলছি - " সবাই বলে, "ওই আকাশে লুকিয়ে আছে" "খুঁজে দেখ, পাবে দূর নক্ষত্রমাঝে"রাতের তারা, আমায় কি তুই বলতে পারিস কোথায় আছে, কেমন আছে মা? ভোরের তারা, রাতের তারা, মা-কে জানিয়ে দিস অনেক কেঁদেছি আর কাঁদতে পারি না।

;