ইন্ডাস্ট্রি ও ব্যক্তিজীবন নিয়ে নাসিরুদ্দিন শাহ্’র প্রথাবিরোধী যত ভাবনা



যাকওয়ান সাঈদ, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
নাসিরুদ্দিন শাহ্

নাসিরুদ্দিন শাহ্

  • Font increase
  • Font Decrease

নাসিরুদ্দিন শাহ্ একজন বলিউড অভিনেতা। নানাসময়ে তিনি নানামুখী সাহসী বক্তব্যের মধ্যদিয়ে একটি বিতর্কিত অবস্থায় নিজেকে উপস্থাপন করে থাকেন। ফলে তার ব্যাপারে উপমহাদেশের মানুষদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখতে পাওয়া যায়। অনেকের মনে তার জন্য রয়েছে অসামান্য ভালোবাসা, আবার অনেকের কাছেই তিনি ঘৃণার পাত্র।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/20/1563613235548.jpg
তরুণ বয়সে নাসিরুদ্দিন শাহ্ ◢

 

কিছুদিন আগেও এই অভিনেতা ভারতের লোকসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিস্তর আলাপ-আলোচনার পাত্র হয়ে উঠেছিলেন। সেই সময়কালে ভারতের একটি নামকরা দৈনিক পত্রিকার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “মানুষ স্যোশাল মিডিয়া ব্যবহার করে কেন বলতে পারেন? মূলত সে স্ক্রিনে তার নিজের নামটা একটু দেখতে চায়। এটা তাদের কাছে একটা আকর্ষণীয় ব্যাপার। আমি নিজেও স্বপ্ন দেখতাম, অভিনেতা হয়ে নিজের নামটা পর্দায় দেখতে পাব। আসলে যেইসব লোকেদের কাজবাজ নাই, তারাই মূলত স্যোশাল মিডিয়া থেকে এই সুযোগটা নিয়ে থাকে। অন্য লোকদের ব্যাপারে তারাই বিরূপতা তৈরি করতে চায়, ঘৃণা অথবা অশ্লীলতা ছড়ায়, এগুলোই তাদের কাজ।

নাসিরুদ্দিন শাহ্ সর্বদাই চলমান বলিউড ইন্ডাস্ট্রির অর্থহীন সিনেমাসমূহকে প্রশ্নের মুখোমুখি রাখতে চেষ্টা করেছেন। মূলত তাকে, এবং ওম পুরি নামক আরেকজন অভিনেতাকে বলিউডের সবচেয়ে শক্তিশালী নন-কমার্শিয়াল অভিনেতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

কমার্শিয়াল সিনেমার ব্যাপার তিনি মন্তব্য করেছিলেন, “কমার্শিয়াল সিনেমাগুলো একটা বৃহৎ সংখ্যক সনাতনী ধ্যানধারণাকে সমাজে চালু রাখতে সাহায্য করে, যেগুলো আসলে পরিবর্তন হওয়া উচিত। দুঃখজনকভাবে এখানকার টেলিভিশন সিরিজগুলোও এই ধরনের চিরক্ষতিকর বিষয়গুলোর সঙ্গেই জড়িয়ে আছে। এগুলো সেই পুরান আমলের নারীবিদ্বেষী প্রেক্ষাপটগুলোকেই প্রচার করছে। যেমন একজন মহিলা সর্বদাই তার স্বামীর পেছনে পেছনে চলছে, অথবা স্বামীর পায়ের ওপরে শুয়ে আছে, অথবা ‘মেরে তুলসি তেরে আগান কি’ জাতীয় কথা বলে বলে তার স্বামীর অপেক্ষা করছে। এই জাতীয় রাবিশ আর পশ্চাদমুখী পরিবার প্রথাগুলো কোনোভাবেই এই বর্তমান দুনিয়ার সঙ্গে মানানসই না।

কমার্শিয়াল সিনেমার প্রতি এধরনের মনোভাব পোষণ করা ছাড়াও নাসিরুদ্দিন নতুন সিনেমা, অর্থাৎ চিন্তাশীল নতুন চলচ্চিত্রকারদেরকে গুরুত্ব দিতে ভীষণভাবে তৎপর থাকেন। এবং তিনি নিজে ‘ইউটিউব জেনারেশন’-এর চলচ্চিত্রকারদের দ্বারা অভিভূত হতে চান, এমনটাই ব্যক্ত করেন।
এই প্রসঙ্গে তার বক্তব্যটি এমন, “আমি এইসব চলচ্চিত্রকারদের মধ্যে আশা খুঁজে পাই। কেননা তারা চলচ্চিত্র নির্মাণ করছে কোনো প্রকার প্রডিউসারের সঙ্গে বসাবসি ব্যতিরেকে। তারা বাজেট অথবা হলগুলো থেকে কী পরিমাণ টাকা রিটার্ন আসলো, এসব চিন্তা থেকে মুক্ত।

বলিউডের বিরাট বাজেটের সিনেমাগুলোর ব্যাপারে তিনি একপ্রকার হাস্যরসই করে থাকেন। সম্প্রতি কোলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকার সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “লক্ষ করবেন, হয় বলিউডে বিরাট বিরাট বাজেটের ছবিগুলো হচ্ছে, আর নয়তো হচ্ছে স্বল্প বাজেটের ইন্ডিপেন্ডেট ছবি। মাঝামাঝি কিছু নেই। আর বড় ছবিগুলো একের পর এক শুধু ব্যর্থ হচ্ছে। কিন্তু তাতে কি বলিউডের শিক্ষা হচ্ছে? এক ডজন অভিনেতাকে নিয়ে আরো বড় বড় ছবি বানিয়ে যাবে তারা, এন্ড হোপফুলি দে উইল কিপ লুজিং মানি।

নাসিরুদ্দিন শাহ্ পারিবারিক জীবনকেও সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। এবং বর্তমান ভারতের সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতিতে তিনি নিজের পরিবারকে নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেন। তিনি মুসলিম পরিবার থেকে আসলেও তার স্ত্রী একজন হিন্দু পরিবার থেকে আসা মানুষ, কাজেই তার সন্তানদের পক্ষে একটি নির্দিষ্ট ধর্মের পরিচয়ে নিজেদেরকে উপস্থাপন করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
এপ্রসঙ্গে নাসিরুদ্দিন বলেন, “আমি আমার বাচ্চাদেরকে নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকি। কেননা, এই ইতর জনগণ আগামীকালকে যদি তাদেরকে ঘিরে ধরে জিজ্ঞাসা করে, তোমরা হিন্দু নাকি মুসলিম, সেক্ষেত্রে তাদের কোনো উত্তর দেওয়ার থাকবে না।” নাসিরুদ্দিনের ভিভান শাহ এবং ইমাদ শাহ নামে দুইজন পুত্র সন্তান আর হীবা শাহ নামে একজন কন্যা সন্তান রয়েছে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/20/1563613579950.jpg
পরিবারের সদস্যদের সাথে নাসিরুদ্দিন শাহ্ ◢

 

স্ত্রী রত্না পাঠক সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমাদের সম্পর্কটা এক ধরনের কেমিস্ট্র, যা মূলত দুইজন অভিনয়শিল্পীর মধ্যে সুন্দর বিবেচনাবোধ হিসেবে বিরাজ করে, এবং যখন সম্ভব হয় একে অন্যকে সাহায্য করে।

নাসিরুদ্দিন শাহ্ রত্না পাঠকের ব্যাপারে অনেক বেশি কৃতজ্ঞ, তার কিছু কথায় এধরনের অভিব্যক্তি প্রকাশ পায়। যেমন তিনি বলেন, “সে আমাকে চমৎকারভাবে সাহায্য করে, ঠিক ততটা সাহায্য আমিও তাকে করতে পারি না। প্রায় প্রত্যেকটা বিষয়ে আমি তার মতামতের ওপর ভরসা করে চলি, এমনকি আমার সিনেমার কাজগুলোর ক্ষেত্রেও। তার মতামত আমার জন্য বিরাট সুফল বয়ে আনে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/20/1563614014136.jpg
নাসিরুদ্দিন শাহ্ এবং ওম পুরি ◢

 

আজ ২০ জুলাই, এই বরেণ্য অভিনয় শিল্পীর জন্মদিন। নিচে তার বিখ্যাত কয়েকটি উক্তি বা কোটেশন উল্লেখ করা যাক। এর আগে, তার ব্যাপারে আমাদের কিছু বিষয় জেনে নিলে ভালো। ফুটনোট আকার ওই বিষয়গুলো প্রথমে উল্লেখ করা যাচ্ছে—

• সিনেমায় আসার আগে নাসিরুদ্দিন শাহ্ একজন শক্তিশালী থিয়েটার অভিনেতা ছিলেন। ১৯৭৭ সালে এই মর্মে তিনি ‘মটলি প্রডাকশন’ নামে একটি নাট্যদল গড়ে তুলেছিলেন। সেখানে তার সহযোগী ছিলেন অভিনেতা বেঞ্জামিন গিলানি এবং মার্কিন বংশোদ্ভুত অভিনেতা টম অল্টার।

• তার সিনেমা-জীবনের ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল ১৯৭৫ সালে। সিনেমার পর্দায় প্রথম কাজ হিসেবে ‘নিশান্ত’ নামের একটি ছবিতে তিনি খুব ছোট একটি রোল করেছিলেন।

• জীবনের ২০ বছর বয়সেই তিনি প্রথম বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু এই বিয়ে টিকেছিল মাত্র এক বছর। তার প্রথম স্ত্রীর নাম মানারা সিক্রি।

• নাসিরুদ্দিন শাহ্ কখনোই অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে এক পর্দায় অভিনয় করেননি।

• তিনি দিল্লির ‘ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা’ থেকে অভিনয়ের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন।

• এই পর্যন্ত তিনি একশোটিরও বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন।

• ১৯৫০ সালের ২০ জুলাই তিনি ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের বরাবাঁকি নামক একটি স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আলে মোহাম্মদ শাহ, আর মাতার নাম ফাররুখ সুলতান।

• তিনি ১৯৭১ সালে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কলা বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন।

• ভারতীয় চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য তিনি ভারত সরকার কর্তৃক দেশটির চতুর্থ সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘পদ্মশ্রী’ লাভ করেছেন, এর সময়কাল ছিল ১৯৮৭। আর ২০০৩ সালে তিনি ‘পদ্মভূষণ’ সম্মাননাও অর্জন করেন, এটি ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ সম্মাননা।

নাসিরুদ্দিন শাহ্’র বিখ্যাত ২৭টি উক্তি

১. আপনি হাসতে পারা আর কাঁদতে পারার পারদর্শিতার ওপরেই শুধু ভরসা রাখতে পারেন না, আর ভাবতে পারেন না যে এটাই অভিনয়ের একমাত্র নিহিত অর্থ। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আমাদের দেশে কান্নাকেই সর্বদা ভালো অভিনয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

২. ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি এখনো মনে করে, আপনি একজন অভিনেতা নিয়ে আসবেন আর তাতেই একটা ফিল্ম তৈরি হয়ে যাবে। একথাও অনেকাংশে সঠিক বটে, কিন্তু এমন কিছুকে আমি কখনোই সম্মতি দেব না।

৩. আমি পরবর্তীকালে ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছিলাম যে, একজন প্রথাবিরুদ্ধ অভিনেতা তাদের তৃতীয় বা চতুর্থ চয়েজ হিসেবে থাকে। এবং একমাত্র তখনই তাকে কাস্ট করা হয়, যখন তারকা অভিনেতারা সেই পার্টে অভিনয় করতে অনীহা প্রকাশ করে।

৪. মাসালা সিনেমাতে অভিনয় করার জন্য আপনার প্রয়োজন হবে একটা দেখতে-শুনতে ভালো শরীর। আর জানতে হবে কিভাবে পোশাক পরতে হয়, কিভাবে নাচতে হয়, কিভাবে মারামারি করতে হয়, বা কিভাবে হাসি-কান্নার অভিনয় করতে হয়। কিন্তু একজন মানুষ হয়ে ওঠার পক্ষে দরকারি জীবনদর্শন এবং চিন্তাচেতনার সঙ্গে আপনার কোনো বোঝাপড়া করতে হবে না। কেননা মাসালা সিনেমাগুলো এগুলোর কোনোটাই ধারণ করে না।

৫. বলিউডে কিছুই পরিবর্তন হয়নি। সবকিছু এখানে তেমনই আছে, পঞ্চাশ বছর আগেও যেমনটা ছিল। হয়তো ফটোগ্রাফি আর এডিটিংটা ভালো হয়েছে, কিন্তু বিষয় বা সারাংশ সেই সত্তরের দশকে যেমন ছিল, আজও তেমনই ছেলেমানুষি রয়ে গেছে।

৬. এখানে প্রতিভা কিংবা সহজাত ক্ষমতা বলতে কিছু নেই। এখানে যা আছে তা প্রতিভার ঘাটতি বা অভাব। প্রতিভার অভাব পরিলক্ষিত হয় তখন, যখন কেউ তার নির্দিষ্ট স্থানে থাকে না।

৭. আমি কখনোই আমার চুল রঙ করার সিদ্ধান্ত নিইনি। কেননা এতে করে, একজন পুরুষকে মোটেও কমবয়স্ক লাগে না। বরং, আমার মনে হয়, পুরুষের মুখের বয়সচিহ্ণগুলো আরো স্পষ্ট হয়, যখন আপনি চুল রঙ করেন।

৮. সামহাউ, হলিউড ফিল্মগুলো আমার মধ্যে যেভাবে কাজ করে, হিন্দি সিনেমাগুলো মোটেও তেমনটা করে না। সেই পাঁচ বা ছয় বছর বয়সে আমি দেখতে পেয়েছিলাম, মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ধরনেই এই দুই ঘরানার সিনেমার মধ্যে তফাৎ রয়েছে।

৯. স্বতন্ত্র সত্তা তার নিজস্ব পথকেই শুধু গ্রহণ করে। আমার বাবা তার চিন্তানুযায়ী সবচেয়ে উৎকৃষ্ঠ পন্থায় আমাকে গাইড করতে চেয়েছিলেন, এবং এটা কাজ করেনি। আমি আমার চাওয়া পথেই গিয়েছি।

১০. বোম্বের মাটিতে আমার পদার্পণটি খুব ভাগ্যমণ্ডিত ছিল। বোম্বেতে তখনই সবেমাত্র সিরিয়াস সিনেমার গোড়াপত্তন ঘটতে চলেছিল।

১১. মানুষ ভাবে আমি মজা করছি, যখন আমি বলি আমার ফেভারিট অভিনেতারা হলেন শাম্মি কাপুর আর দারা সিং।

১২. ফাইনালি আমি অনুধাবন করেছি যে, দেখতে ভালো হওয়াও গুরুত্বপূর্ণ।

১৩. আমি প্রত্যেকটা প্রজেক্টে যাই সমান উৎসাহ আর সমান আশাবাদ নিয়ে। কিন্তু সেসবের কোনো কোনোটা ফলে, আর কোনো কোনোটা বিফলে।

১৪. আমি মনে করি না, কারো জীবনকে পাল্টে দেওয়ার শক্তি সিনেমার আছে।

১৫. পড়াশোনাকে বাদ দেওয়ার জন্যে অভিনয়কে পেশা হিসেবে বেছে নেবেন না।

১৬. আমি স্কুলে শেক্সপিয়ার পড়াতে চাই। কিন্তু, সমস্যা হলো, যদি আমি আমার পদ্ধতি প্রয়োগ করি তাহলে তারা আমার উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহপ্রবণ হয়ে পড়বে।

১৭. থিয়েটার আপনাকে এমন একটা পৃথিবীর দিকে নিয়ে যাবে যেখানে আপনার কল্পনাশক্তি আরো শাণিত হবে, আপনার অভিমতগুলো আরো শক্তিশালী হবে, আর এভাবে অভিনয়কে উপভোগ করা আপনার পক্ষে আরো সহজ হবে।

১৮. থিয়েটারের সবচেয়ে সুন্দর সংজ্ঞাটা আমি ফেলে এসেছি, সেটা হলো, ‘একজন অভিনেতা, একজন দর্শক।’

১৯, রাজনৈতিকভাবে ত্রুটিপূর্ণ লোকদেরকে আমি পছন্দ করি। এবং পছন্দ করি, যারা খুব যাচ্ছেতাই।

২০. আমি এই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির কোনো কিছুর কাছেই ঋণী না। আমি তাদেরকে নিয়ে আমার ক্যারিয়ার শুরু করিনি। তারা আমার কাছে আসে, যখন তাদের একজন অভিনেতা প্রয়োজন হয়, যে ভালো ভালো বিষয় ডেলিভারি দিতে পারে।

২১. সবাই সন্তুষ্টি বিষয়টা নিয়ে অনেক কথা বলে। এখানে মূলত এমন একটা কিছু আছে, যেটাকে অর্থনৈতিক সন্তুষ্টি বলা যায়।

২২. আমি আমার বাচ্চাদেরকে গাইড করতে গিয়ে এই ভুল করিনি যে, তাদেরকে আমার পছন্দসই পথে চলতে হবে। আমি তাদেরকে তাদের নিজস্ব পথ খুঁজে নেবার স্বাধীনতা দিয়েছিলাম। আমার তাদের প্রতি বিশ্বাস আছে, এবং তারা এটার মূল্য রাখবে।

২৩. আমি সমালোচনাকে সমাদর করি। আমি তাদেরকে পছন্দ করি যারা আমাকে বলে, আমার কাজ তাদের পছন্দ হয়নি এবং কেন পছন্দ হয়নি। কাউকে প্রশংসা করার চাইতে সমালোচনা করাটা অধিক খাটুনির ব্যাপার।

২৪. ব্যর্থতা মানে হলো একজন মানুষ তার কাজ খুঁজে পায়নি। কারণ সে জানে না, তার কী কাজ। বেশিরভাগ অভিনেতার ব্যর্থ হবার পেছনে এটাই কারণ যে, তারা জানে না তাদের কী কাজ।

২৫. এরকম বিশ্বাস করা নিতান্ত বোকামি যে, থিয়েটারে আপনার পারফর্ম করা মানে সেটা একটা বিশেষ ব্যাপ্ত ঘটনা। ভালো অভিনয় মানে ভালো অভিনয়, সেটা মঞ্চে হোক আর সিনেমায় হোক।

২৭. একজন অভিনেতার মধ্যে থাকা নানামুখী আবেগ-অনুভূতির বৈচিত্রকে খুঁজে নিতে পারাই তার কাজ।

   

৯৩ বছর বয়সে বৃদ্ধের অবিশ্বাস্য কর্মকাণ্ড



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বৃদ্ধ জন স্টারব্রুক

বৃদ্ধ জন স্টারব্রুক

  • Font increase
  • Font Decrease

শৈশবে খেলা, কৈশরে পড়ালেখা, যৌবনে চাকরি, মধ্যবয়সে সংসার, বৃদ্ধবয়সে একটা মাথা গোজার ঠাঁই খুঁজে অবসরে সময় কাটিয়ে দেওয়া। কপাল খারাপ থাকলে বিছানাতেই শোয়া বা আধশোয়া থেকে মৃত্যুর দিন গোণা। সাধারণত এভাবেই মানুষের জীবন কেটে যায়। অনেকে আবার মধ্যবয়সের পরেই নানারকম রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। অথবা শরীরকে বিভিন্ন রোগের আবাসস্থল বানিয়ে দুর্বল হয়েই বেঁচে থাকেন। তবে খড়ের গাদায় সূচের মতো দু-একজন থাকে যারা একেবারেই ব্যতিক্রম। তেমনভাবেই আলোচনায় এসেছেন ৯৩ বছরের এক বৃদ্ধ।  তার ব্যতিক্রমী জীবনযাপনের ধারাই আলোড়ন সৃষ্টি করেছে যুসমাজে।     

যুক্তরাজ্যের বাসিন্দা জন স্টারব্রুক। তিনি একজন ওয়াটার পোলো খেলোয়াড়। এটি মূলত পানির মধ্যে বাস্কেটবলের মতো একধরনের খেলা। এইখেলার সাথে কুস্তি খেলারও কিছুটা সাদৃশ্য রয়েছে। জনের বর্তমান বয়স ৯৩ বছর। এই বয়সেও যথেষ্ট সুস্থ এবং সবল তিনি। সমবয়েসীদের যেখানে সোজা হয়ে দাঁড়াতেও ২ জনের সহায়তা লাগে, সেখানে এখনো ম্যারাথনে দৌড়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। পাশাপাশি বেশ দক্ষ সাঁতারুও বটে! ৮০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সাঁতার কাটা অব্যাহত রেখেছেন তিনি।

প্রায় শতাব্দি ছুঁই ছুঁই বৃদ্ধের এমন কারিশমা দেখে চোখ ছানাবড়া হবার উপক্রম। জন মূলত একজন সাঁতারু। পেশাগতভাবে না হলেও অনেক ছোটবেলা থেকেই তিনি সাঁতার কাটেন তিনি। দেশের সম্মানজনক অনেপ্রতিযোগীতায় একাধিক বার চ্যাম্পিয়নের খেতাবও জেতেন। চাকরি করেছেন ‘ব্রিটিশ আর্মি মেডিক্যাল কর্পস’-। সেখানেও সাঁতারের দক্ষতার কারণে তার বেশ সুনাম ছিল।   

ম্যারাথনে দৌড়াচ্ছেন ৯৩ বছরের জন

তবে সাঁতারের পাশাপাশি এখন ম্যারাথেনেও অংশগ্রহণ করেছেন জন। ৫২ টির বেশি ম্যারাথনের দৌড় শেষ করেছেন তিনি। জানালেন এই বয়সেও তার এমন চ্যালেঞ্জিং সব কাজের অভিজ্ঞতা। সুস্থতা ধরে রাখার রহস্যও ফাঁস করলেন সকলের কাছে। ব্রিটিশ নাগরিক জন বন্ধুদের কাছে ‘দ্য লিজেন্ডনামেই পরিচিত। একই নামে তাকে আখ্যায়িত করছে ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলো

জন স্টারব্রুক জানান, তিনি এখনো সপ্তাহের ৬ দিনই জিমে যাতায়াত করেন। বিশেষ কোনো খাদ্যাভাস নেই তার। খাদ্যতালিকায় প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি রাখতে পছন্দ করেন- এই যা। তাছাড়া প্রতিদিন সকালে পোরিজ খান তিনি। তবে তিনি কখনো ধূমপান করেননি। অ্যালকোহলও খুব সীমিত পরিমাণে সেবন করতেন। মূলত এই বয়সেও এটা সবল থাকার পেছনে বংশ পরম্পরায় পাওয়া নিজের জীন আসল কারণ- বিশ্বাস করেন জন।

কারণ যাই হোক, প্রানবন্ত এই বৃদ্ধ বিশ্ববাসীকে অবাক করেছে। তার মতোই দৃঢ় মানসিকতা ধরে রাখার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন যুবক-যুবতীরা।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

;

প্রশ্ন আর উত্তর যেন পরস্পরের সাংঘর্ষিক!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রশ্ন থাকে এক আর তার উত্তর হয় ভিন্ন। এমন উত্তরপত্রের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায়ই দেখা যায়। এবার এমনই এক উত্তরপত্রের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে ভাইরাল হয়েছে। যা দেখে রীতিমতো সবাই অবাক! তবে এই ঘটনার জন্ম দেওয়া দেশটি বাংলাদেশ নয়, প্রতিবেশী দেশ ভারতের একটি হিন্দি পরীক্ষায় ঘটেছে এমন কাহিনী।

ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রকাশিত ভিডিওতে পরীক্ষার্থীর এমন উত্তর দেখে শিক্ষককেও হাসতে দেখা যায়। 

ভিডিওটি ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করা হয়েছে @n2154j অ্যাকাউন্টের একটি আইডি থেকে।

ওই ভিডিওতে দেখা যায়, একটি প্রশ্ন ছিল এমন, সংযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ (যৌগিক ব্যঞ্জনবর্ণ) কী? এই প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষার্থীটি একটি খাদ্য রূপক দিয়ে উত্তর দিল: "মাটার পনির এবং সব মিশ্র সবজি একত্রিত একটি খাবার।"

আরেকটি প্রশ্ন ছিল "অতীত কাল কাকে বলে?" এর উত্তরে ওই পরীক্ষার্থি লিখেছে, "যখন অতীত আমাদের অতীতের আকারে আসে, তখন তাকে অতীত কাল বলা হয়।"

ভিডিও অনুযায়ী আরও একটি প্রশ্ন ছিল "বহুবচন কাকে বলে?" এর উত্তরে সে লিখেছে "যে পুত্রবধূ তার শ্বশুরবাড়ির কথা শোনে তাকে বহুবচন বলে।"

শিক্ষার্থীটির এমন উত্তর শুনে হাসিতে ফেটে পড়েন শিক্ষক। এমন উত্তরগুলোকে শিক্ষক ভুল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। যদিও এমন উত্তরের জন্য তাকে পুরোপুরি হতাশ করা হয়নি। তাকে ১০ মার্কের মধ্যে ৫ নম্বর দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষক পরে তার উত্তরপত্রে লিখে দিয়েছিলেন, এই ৫ মার্ক তোমার মস্তিষ্কের জন্য, ছেলে।

ভিডিওটি দেখে সবাইকে হাসির ইমোজি দিতে দেখা যায়। সম্পূর্ণ নম্বর না পাওয়ায় অনেকেই যুক্তি দিয়ে লিখেছেন, ছাত্রটি তার কৌতুক প্রতিভার জন্য পূর্ণ নম্বর পাওয়ার যোগ্য।

তবে এমন ঘটনা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছেন, ছাত্র এবং শিক্ষকের হাতের লেখা সন্দেহজনকভাবে একই রকম।

অন্য এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, "প্রশ্ন এবং উত্তর একই হাতের লেখা"। 

;

ফেনী শহরে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে কৃষ্ণচূড়া



মোস্তাফিজ মুরাদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ফেনী
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

'কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরি কর্ণে-আমি ভুবন ভুলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে' জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই মনোমুগ্ধকর গানে ফুটে উঠেছে কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য। কৃষ্ণচূড়া যেন প্রকৃতিকে দান করেছে লাল আভার অপরূপ সৌন্দর্যের মহিমা। সাথে গ্রীষ্মের উত্তাপে শহরে সৌরভ ছড়াচ্ছে নানা জাতের ফুল। তীব্র তাপদাহের পর কালবৈশাখী, এরপর মাঝারি বৃষ্টির মধ্যে ফুলের আগমন। এতে রঙের উল্লাসে মেতে উঠেছে ফেনী শহরবাসী।

ফেনী শহরের কোর্ট বিল্ডিং, এলজিইডি, পুলিশ লাইন, নবীন চন্দ্র সেন কালচারাল সেন্টার, ফেনী সরকারি কলেজ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ফুটে আছে কৃষ্ণচূড়া। এটি একদিকে প্রকৃতিকে যেমন সাজিয়েছে অপরূপ সৌন্দর্যে, অন্যদিকে এর সৌন্দর্য মুগ্ধ করছে তরুণ-তরুণী, নানা শ্রেণি-পেশার মানুষসহ ফুলপ্রিয় পথচারীদের। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে, সরকারি দফতরসহ স্কুল-কলেজে কৃষ্ণচূড়া গাছের লাল ও উজ্জ্বল সবুজ পাতার সংমিশ্রণ দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছে চারপাশ।


কৃষ্ণচূড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ফুলের ঘ্রাণে মুখরিত হয়ে আছে পুরো শহর। শহরের মূল সড়কের ডিভাইডারে পৌরসভার উদ্যোগে লাগানো হাসনাহেনা, রজনিগন্ধা, গন্ধরাজসহ নানা জাতের ফুল গাছে ফুল ফুটেছে। এটি একদিকে বাড়িয়েছে সৌন্দর্য অন্যদিকে হেঁটে কিংবা রিকশায় চলাচল করলে পাওয়া যায় এসব ফুলের সুঘ্রাণ।

ফেনী শহরের কৃষ্ণচূড়ার অপরূপ সৌন্দর্য দেখে ফুলপ্রিয় পথিকরা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া ফুল প্রকৃতিকে অনন্য সাজে সাজিয়েছে। এই ফুলের সৌন্দর্যের কারণে পথচারীরা একবার হলেও এই ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এর গাছের উপর নজর দিবে। পাশাপাশি তীব্র গরমে অন্যান্য ফুলের সুঘ্রাণে চারপাশ মুখরিত হওয়াতে ক্লান্তিতা কিছুটা হলেও কমছে।


তারা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া ফুলের এই নান্দনিক দৃশ্য দেখতে এর গাছ রোপণ করা জরুরি। রাস্তা প্রশস্তকরণ, ঘর-বাড়ি নির্মাণসহ নানা প্রয়োজনে গাছ কেটে ফেলা হয়। অন্যান্য গাছ রোপণ করার পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া রোপণ করলে একদিকে যেমন সৌন্দর্য বাড়াবে অন্যদিকে পরিবেশ বান্ধব হবে।

সাজিদ হাসান নামের এক পথচারী বলেন, কৃষ্ণচূড়া একদিকে যেমন প্রকৃতিতে অপরুপ সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে, আরেকদিকে গ্লোবাল ওয়ার্মিং কমাবে। সারাদেশে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে, আমার মতে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে এই গাছটিও যুক্ত করা উচিত। তীব্র গরমের পর বৃষ্টি হলো, এরপর শহরে নানা রঙের ফুলের দেখা মিলছে, ফুলের ঘ্রাণে চলাচল করতেই ভালো লাগছে।

ফারজানা ইয়াসমিন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ফুলের সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে। অন্যান্য ফুলের পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া ফুল আমার অনেক ভালো লাগে। আমাদের কলেজে বকুল তলা আছে, ক্যান্টিনের পাশে কৃষ্ণচূড়া গাছ আছে। সুযোগ পেলেই ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করি।

অনিক মোহন নামে একজন বলেন, রিকশায় করে যখন বাসায় ফিরি, শহরের রাস্তার মাঝে ভিডাইভারে লাগানো নানা জাতের ফুলের ঘ্রাণ মনকে আনন্দিত করে। রাতের বেলা শহর যখন নিস্তব্ধ হয়ে যায়, তখন এ ফুলের সৌন্দর্য কয়েকশ’ গুণ বেড়ে যায়।

সড়কের পাশে কৃষ্ণচূড়া লাগানো হলে সৌন্দর্য বাড়বে বলে মনে করেন পথচারী মিনহাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, রাস্তা প্রশস্তকরণের জন্য যে গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে, ওই গাছগুলোর জায়গা কৃষ্ণচূড়ার গাছ লাগালে রাস্তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে।

একই কথা বলেন শহরের ব্যবসায়ী নাদিম আহমেদ। তিনি বলেন, সৌন্দর্য ও পরিবেশের কথা বিবেচনা করে এই গাছ রোপণ করা উচিত আমাদের। তাপমাত্রা যেভাবে বাড়ছে অন্যন্যা গাছ রোপণ করার পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া গাছ রোপণ করার উদ্যোগ নিতে হবে। যেগুলো শহরে আছে তাতেই সৌন্দর্য বেড়ে গিয়েছে কয়েকগুণ, আরও যদি লাগানো যায় ফুলে ফুলে ভরে উঠবে আমাদের শহর।

কৃষ্ণচূড়া মাদাগাস্কারের শুষ্ক পত্রঝরা বৃক্ষের জঙ্গলে পাওয়া যায়। যদিও জঙ্গলে এটি বিলুপ্ত প্রায়, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে এটি জন্মানো সম্ভব হয়েছে। সৌন্দর্যবর্ধন গুণ ছাড়াও, এই গাছ উষ্ণ আবহাওয়ায় ছায়া দিতে বিশেষভাবে উপযুক্ত। কৃষ্ণচূড়া উদ্ভিদ উচ্চতায় কম (সর্বোচ্চ ১২ মিটার) হলেও শাখা-পল্লবে এটি বেশি অঞ্চল ব্যাপী ছড়ায়।

শুষ্ক অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে কৃষ্ণচূড়ার পাতা ঝরে গেলেও, নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে এটি চিরসবুজ থাকে। কৃষ্ণচূড়া ফুলের রং উজ্জ্বল লাল। পত্র ঝরা বৃক্ষ, শীতে গাছের সব পাতা ঝরে যায়। বাংলাদেশে বসন্ত কালে এ ফুল ফোটে। ফুলগুলো বড় চারটি পাপড়ি যুক্ত। পাপড়িগুলো প্রায় ৮ সেন্টিমিটারের মত লম্বা হতে পারে। কৃষ্ণচূড়া জটিল পত্র বিশিষ্ট এবং উজ্জ্বল সবুজ। প্রতিটি পাতা ৩০-৫০ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ২০-৪০ টি উপপত্র বিশিষ্ট। কৃষ্ণচূড়ার জন্মানোর জন্য উষ্ণ বা প্রায়-উষ্ণ আবহাওয়ার দরকার। এই বৃক্ষ শুষ্ক ও লবণাক্ত অবস্থা সহ্য করতে পারে।

জানা যায়, অপরূপ সৌন্দর্য ছড়ানোর পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর পাতা, মূলের বাকল ও ফুল ভেষজ গুণাগুণ সম্পূর্ণ, যা জ্বর ও খুশকি নিরাময়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। ভেষজটি হেমিপ্লেজিয়া, আর্থরাইটিস এবং কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। কৃষ্ণচূড়া গাছের শিকড়, বাকল এবং ফুল সবই পরজীবী সংক্রমণ নিরাময়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।

;

হলুদ আভায় মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে সূর্যমুখী 



শহিদুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ
ছবি: প্রাণের উচ্ছ্বাসে সূর্যমুখী

ছবি: প্রাণের উচ্ছ্বাসে সূর্যমুখী

  • Font increase
  • Font Decrease

মৃদু বাতাসে দোল খাচ্ছে সূর্যমুখী। বাস্তব জীবনের নিস্তব্ধতা ভাঙছে তার হলুদ আভায়। মৌমাছির আলিঙ্গন পেতে ছড়াচ্ছে উষ্ণ মুগ্ধতা। হলুদের কারুকার্যে বিমোহিত হচ্ছে পথিকের মন। লুকায়িত সৌন্দর্য প্রকৃতির মাঝে তুলে ধরে প্রবল আকর্ষণে টানছে দর্শনার্থীদের। সবুজ পাতা ভেদ করা সেই অনিন্দ্য হাসি যেন কৃষকের মুখেরই প্রতিচ্ছবি। সূর্যমুখী ফুল চাষে জনপ্রিয়তা বাড়ছে কৃষকদের মাঝে।

সূর্যমুখী এক ধরনের একবর্ষী ফুলগাছ। সূর্যমুখী গাছ লম্বায় ৩ মিটার (৯ দশমিক ৮ ফুট) হয়ে থাকে। ফুলের ব্যাস ৩০ সেন্টিমিটার (১২ ইঞ্চি) পর্যন্ত হয়। এই ফুল দেখতে কিছুটা সূর্যের মতো এবং সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে বলে এর এরূপ নামকরণ করা হয়েছে। ফুলের বীজ হাঁস-মুরগির খাদ্যরূপে ও তেলের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

জানা যায়, বাংলাদেশে ভোজ্যতেলের উৎস হিসেবে ১৯৭৫ সাল থেকে এ ফুলের চাষ শুরু হলেও কৃষকের মাঝে জনপ্রিয়তা পায় নি বহুদিন। পরে ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। বর্তমানে রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া, নাটোর জেলা, পাবনা, নওগাঁ, দিনাজপুর, গাজীপুর, টাঙ্গাইল প্রভৃতি জেলাতে এর ব্যাপক চাষ হচ্ছে।

সূর্যমুখীর বাঁধভাঙা হাসি আর প্রাণের উচ্ছ্বাস

সোমবার (১২ মে) সকালে সরেজমিনে নওগাঁ সদর উপজেলার মুক্তির মোড় কেন্দ্র শহীদ মিনারের পাশে দেখা যায়, সূর্যমুখী বাতাসে; দুলছে আলোর প্রতিফলনে পাপড়িগুলো যেন চকচকে হলুদ আভা ছড়াচ্ছে। মৌমাছি এক ফুল থেকে অন্যফুলে মধু আহরণে ছুটাছুটি করছে আর এসব দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছে পথচারীরা। এছাড়াও নওগাঁর বেশ কিছু অঞ্চলে চাষ হচ্ছে সূর্যমুখী। একদিকে যেমন ফুলগুলো সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে তেমনি বীজ থেকে ভোজ্য তেল উৎপাদনে ভূমিকা রাখছে সূর্যমুখীর বীজ। সূর্যমুখী গাছ শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। 

প্রতিদিন ভোরে সূর্যমুখী বাগানের সকল গাছ অনেকটা পূর্বদিকে মুখ করে থাকে। যেদিকে সূর্য দেখা দেয় এবং ধীরে ধীরে ওপরে উঠতে থাকে। সূর্যের সাথে সাথে সূর্যমুখীগুলোও ধীরে ধীরে নিজেদের দিক পাল্টাতে থাকে। সূর্য যেদিকে যায় তারাও সেদিকে যায়। সবসময়ই এগুলো সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে। সূর্য যখন পশ্চিম দিকে অস্ত যায় তারাও তখন পশ্চিম দিক বরাবর থাকে। অস্ত যাওয়ার পরে তারা রাতব্যাপী আবার উল্টো দিকে ঘুরে পূর্বমুখী হয়। এভাবে শুকিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের এই চক্র চলতেই থাকে।

সূর্যের সাথে সাথে নিজেদের দিকও পাল্টাতে থাকে সূর্যমুখী

তবে সবার মাঝে একটি প্রশ্ন অনেক সময় ঘুরপাক খায় যে সূর্যমুখী ফুল কেন সূর্যে দিক হয়ে থাকে! সম্প্রতি বিজ্ঞানীদের একটি দল সূর্যমুখীর এই দিক পরিবর্তন সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্যের রহস্য উন্মোচন করেছেন। তাদের গবেষণা থেকে বেরিয়ে আসে সূর্যমুখীরা তাদের নিজস্ব সার্কাডিয়ান চক্রে আবদ্ধ। এই চক্র সচল থাকার কারণে সূর্যমুখীরা সব সময় সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে। গবেষকরা সায়েন্স জার্নালে তাদের গবেষণার বিস্তারিত প্রকাশ করেছেন। সার্কাডিয়ান চক্র বা সার্কাডিয়ান ঘড়িকে অনেক সময় ‘দেহঘড়ি’ নামেও ডাকা হয়। মানুষের মাঝেও এই চক্র বিদ্যমান। যেমন প্রত্যেক মানুষেরই দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম চলে আসে।

পথচারী রায়হান বলেন, ফুল শুভ্রতার প্রতীক ও পবিত্র। ফুলকে যারা ভালোবাসে তাদের মনটাও সুন্দর। সূর্যমুখী ফুল সব ফুলের চেয়ে আলাদা কারন সূর্যের দিক মুখ করে বেশিরভাগ থাকে এ ফুল। বিশেষ করে দুপুর শুরু হলে সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে এ ফুল যা দেখতেও খুব সুন্দর লাগে তাছাড়া এ ফুলের বীজ থেকে তেল হয় যা অনেক স্বাস্থ্যকর।

ক্ষুদে শিক্ষার্থী আফরিন (১০) জানায়, আমি ফুল খুবই ভালোবাসি আর সূর্যমুখী ফুলগুলো হলুদ হবার কারনে আরো বেশি ভালো লাগে। নামটা যেমন সুন্দর তেমনি মুগ্ধতাও ছড়ায়। ফুলগুলো থেকে তেল হয় তাই কোনোভাবেই নষ্ট করা যাবে না। আমরা দূর থেকে দেখেই শান্তি পাই।

সূর্যের সাথেই একাত্মতা সূর্যমুখীর

স্থানীয় বাসিন্দা আরেফিন তুহিন বলেন, স্বল্প পরিসরে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য যারা সূর্যমুখী ফুলের গাছ লাগিয়েছে তারা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। ফুল মানেই সুন্দর সূর্যমুখীও এটিএ ব্যাতিক্রম নয়। মাঝে মাঝে যখন ফুলের দিকে চোখ যায় খুব ভালোলাগা কাজ করে। এ ফুল দেখতে যেমন সুন্দর এটির তেল ও খুব পুষ্টিকর।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে চলতি অর্থবছরে সূর্যমুখী চাষের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ হেক্টর ও অর্জন হয়েছে ৬৫ হেক্টর এবং মোট উৎপাদন হয়েছে ১০০ মেট্রিক টন। 

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বার্তা২৪.কমকে বলেন- সূর্যমুখী একদিকে যেমন শুভ্রতার প্রতীক আবার অন্যদিকে বীজ থেকে তেল উৎপাদন হয় আবার মধুও পাওয়া যায়। বাজারে যে ভৈজ্যতেল গুলো রয়েছে যেমন, সয়াবিন,সরিষা, পাম-ওয়েল ইত্যাদি এগুলোর চেয়েও অনেক বেশি পুষ্টিগুণ আছে সূর্যমুখীর তেলে যা স্বাস্থ্যকর এবং স্বাস্থ্যর জন্য খুবই উপকারী। আমরা বেশি বেশি উৎপাদনে কৃষকদের সব রকম পরামর্শ দিয়ে থাকি।

;