সাবেক অ্যাক্টরদের বর্ণনায় পর্ন ইন্ডাস্ট্রির কুৎসিত দিক



যাকওয়ান সাঈদ, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

  • Font increase
  • Font Decrease

আমাদের সমাজে তেমন মানুষের সংখ্যাই বেশি যারা মনে করেন, পর্নোগ্রাফি হলো দুর্দান্ত এক বিনোদনমূলক পেশা, যেই পেশাতে কোনো কষ্ট নেই।

পর্নস্টারদের ব্যাপারে সাধারণত মানুষদের ধারণাগুলো এরকম যে, পর্নস্টাররা একেকজন হলেন একেকটি অতৃপ্ত সেক্সগড—সারাদিন যৌনতার মধ্যে থাকলেও যাদের যৌনতার ঘাটতি দেখা দেয় না। যারা দেখতেও দুর্দান্ত হন। হন পারফেক্ট শরীরের অধিকারী। যারা শুধু সেক্স করতে ভালোবাসেন। আর সেক্সকে ভালোবাসেন তাই তারা কাড়ি কাড়ি টাকাও পান।

অনেকে মনে করেন, পর্ন ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করার চাইতে আনন্দের আর কী আছে? সারাদিন তাবৎ বিপরীত লিঙ্গের সুন্দর সুন্দর মানুষদের সঙ্গে সেক্স করা, আর সন্ধ্যাবেলায় টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরা, এর চাইতে আনন্দের জীবন আর কী হতে পারে?

কিন্তু লোকের এই মনে হওয়ার সঙ্গে পর্নস্টার বা পর্নঅভিনেতা-অভিনেত্রীদের মনে হওয়ার বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। পর্ন ইন্ডাস্ট্রির ভিতরগত দশা আদতেই তেমন মধুর কোনো দশা নয়।

বর্তমান পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ পর্ন দেখেই তাদের যৌনশিক্ষার বিষয়টি সম্পন্ন করে থাকলেও, আদতে পর্নোগ্রাফি দেখার বাজে প্রভাবই বেশি। ফিচারের আলোচ্য বিষয় সেটি নয়, পর্নোগ্রাফির বাজে ইফেক্টগলো কী, সে বিষয়ে আমরা পরবর্তীতে আরেকটি ফিচার করব। আমাদের আজকের বিষয়বস্তু, খোদ পর্নস্টাররা পর্ন ইন্ডাস্ট্রি বিষয়ে কী চিন্তা পোষণ করেন

পর্নস্টারদের সুবিধা-অসুবিধার বিচারে পর্ন ইন্ডাস্ট্রিকে বলা হয়ে থাকে সবচাইতে সেলফিশ ইন্ডাস্ট্রি। যেখানে নিজের কথা ছাড়া আর কারো কথা ভাবার কোনো উপায় থাকে না। যেখানে একজনের প্রতি অন্য আরেকজনের যত্নশীল হবার কোনো সুযোগ নেই। যার ফলে, এই ইন্ডাস্ট্রিটির সঙ্গে জড়িত প্রত্যেককেই অনেক স্ট্রেসফুল জীবন অতিবাহিত করতে হয়। যৌনতার মতো একটি মানবীয় বিষয়কে কেন্দ্র করে ইন্ডাস্ট্রিটি গড়ে উঠলেও, বাহ্যত এর পদক্ষেপ ও আচরণসমূহ নিতান্ত রোবটিক হয়ে থাকে। তথা, পর্নস্টাররা তেমনটাই মনে করেন।

নিচে কয়েকজন সাবেক পর্নস্টারের বক্তব্যে তাদের দেখা পর্ন ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে জানা যাবে—

র‌্যান্ডে স্পেয়ার্স

আশির দশকের শুরুতে আমি ক্যালিফোর্নিয়া গেলাম অভিনয় করার উদ্দেশ্যে। সত্যিকারভাবেই আমি খুব ভালো করলাম। আমি একজন ম্যানেজার পেয়ে গেলাম, এবং একজন দালাল। আর সেই সুবাদে প্রথম সাপ্তাহেই একটা ছবিতে কাজ। আমার মনে আছে, আমি নিজেকে তখন বলতে লাগলাম, ‘এটা কোনো ঘটনা? এটা এমন কঠিন কিছু তো না!’

ওয়েল, এরপরেই হঠাৎ হলিউডের স্ক্রিপ্টলেখকরা স্ট্রাইক করে বসল। অর্থাৎ লেখক ধর্মঘট শুরু হলো। সমস্ত হলিউডের সব কাজ বন্ধ হয়ে গেল। তখন অভিনেতা-অভিনেত্রীরা, ডিরেক্টররা, প্রডিউসররা, কস্টিউম ডিজাইনাররা, কেউ কোনো কাজ করতে পারছিল না। সবাই ক্ষুধার্ত হয়ে উঠল, সেইসঙ্গে আমিও।

তখন আমি মডেলিংয়ের কাজ করে অর্থ উপার্জনের সিদ্ধান্ত নিলাম। একদিন একটা মডেলিংয়ের কাজ চলাকালে, একজন নারী মেকাপ আর্টিস্ট আমাকে তার ভিজিটিং কার্ডটা দিলেন, আর বললেন, “আপনি যদি ন্যুড ছবিতে কাজ করতে চান, তাহলে এই নাম্বারে ফোন করবেন। এতে আপনার বেশ আর্থিক ইনকাম হবে।”

আমি তার এই অফার গ্রহণ করলাম। তার প্রতি কৃতজ্ঞতাও জাগল আমার, তাকে থ্যাংকস জানালাম। আমি খুব ভালোভাবেই বুঝেছিলাম, যদি আমি এমন কিছু করি সেক্ষেত্রে আমার ক্যারিয়ারের ধ্বংস সুনিশ্চিত।

কিন্তু একমাস আমি এরকম পেটের চিন্তায় কাটাবার পর, সিদ্ধান্ত নিলাম তাকে ফোনটা করব। ওই সময়টায় আসলে খাবার হিসেবে একটা মটরশুটির প্যাকেট, আর আমার রান্নাঘরের তাকে কিছু আলু, সর্বোপরি আমি ছিলাম ক্ষুধার্ত। তো, আমি ফোনটা করলাম। তারা আমাকে জানাল, একটা নির্দিষ্ট সময়ে তারা একটা নির্দিষ্ট স্থানে থাকবে। পরদিন সকালেই আমি আমার মোটরসাইকেলে চেপে ছুটলাম তাদের কাছে। এবং প্রথম দিনেই আমার জীবনে প্রথম ‘পর্নো’ ছবিতে অভিনয় করলাম।

দিনশেষে আমি ওখান থেকে চারটা একশো ডলারের মচমচে নোট নিয়ে বের হয়ে আসলাম। মোটরসাইকেলে চড়ে বাড়ির দিকে ফিরতে ফিরতে আমি ভাবছিলাম, কত সহজ এইভাবে টাকা কামানো!

আবার পাশাপাশি আমার মাথায় এমন চিন্তাও এলো, আসলে আমি করেছি কী? কোনো না কোনো দিন, কেউ না কেউ, এটা নিশ্চয়ই পেয়ে যাবে। যাই হোক, যতদূর যা বুঝতে পারি। এভাবেই আমার যাত্রা শুরু হলো। পর্ন ইন্ডাস্ট্রিতে আমি হয়ে উঠলাম বিরাট প্রসিদ্ধ আর সুশোভিত একজন পর্নস্টার।

আমার ফোনে সারাক্ষণ রিং বেজেই চলল। অফার আসতে থাকল। টাকার অংকও বৃহৎ থেকে আরো বৃহৎ হতে থাকল।

আমার মায়ের এইসব বিষয়ে কোনো আইডিয়া ছিল না। সে যখন জানল, এটা তাকে ঝড়ের মতো করেই আক্রান্ত করল। সে চূড়ান্ত রকমের দুঃখ পেল, চূড়ান্তভাবে আঘাত লাগল তার মনে।

আমি জানতাম না, কিভাবে ভালোবাসতে হয়। এমনকি আমি জানমতাম না, কোনোদিন আর আমি ভালোবাসতে পারব কিনা। আমি নারীকে অবজেক্ট বা বস্তু আকারে দেখতে শুরু করলাম। ‘মেকিং লাভ’ জাতীয় যেসব অভিনয় আমাকে করতে হতো, সেসবে আমার মধ্যে কোনো অনুভূতি কাজ করত না। আমার মনে হতো মেকিং লাভ? এটা কী ধরনের ব্যাপার! আমি সেক্স করতাম, টাকার জন্য। আমি ছিলাম একজন প্রস্টিটিউট।

দেখেন, একটা পর্যায়ে আমাকে পর্ন ইন্ডাস্ট্রিতে যেতে হতো, কেননা আমাকে নানাধরনের ড্রাগ নিতে হতো। আর আমাকে ড্রাক নিতে হতো, কেননা, পর্ন করার কারণে আমার যন্ত্রণা হতো। অর্থাৎ আমি পর্ন করতে যেতাম ড্রাগ নেওয়ার টাকা জোগাতে, যেটা আমার জন্য ছিল ব্যথানাশক। এবং দীর্ঘ দীর্ঘ সময় এইভাবেই চলল।

পর্নোগ্রাফি তাহলে আমার কী ক্ষতি করল? ক্ষতি করলো হলো, আমি নারীদের ব্যাপারে যা ভাবতাম, বা যেই অনুভূতি লালন করতাম, সেটা পাল্টে দিল। আমি তাদেরকে নিখাদ যৌনবস্তু হিসেবে ভাবতে আরম্ভ করলাম। আমি একটা প্রেমের অথবা কেয়ারিংয়ের সম্পর্ক ধারণ করতে অক্ষম হয়ে গেলাম। আমি ভাবতাম, আমি সক্ষম ছিলাম, কিন্তু ছিলাম না, আমার ভাবনা ছিল ভুল।

একদিন শুটিং শেষে, আমি সেট থেকে বেরিয়ে পড়লাম। সেদিনের মতো আমার কাজে শেষ হয়েছিল। আমি গাড়ি নিয়ে ড্রাইভ করতে লাগলাম, কিছু দূর যাবার পর, দুইটা ব্লক পার হবার পরে, আমি সেখানে গাড়ি থামালাম। এবং আমি কাঁদতে আরম্ভ করলাম। আমি বুঝলাম, এই কঠিন চক্রটি থেকে আমাকে বের হতেই হবে। এবং সেটাই ছিল আমার শেষ পর্নো ছবি। আমি সেখানে আর ফিরে যাইনি। আমি আমার জীবনকে পাল্টে ফেললাম। বলা যায়, আমি জীবন শুরু করলাম আবার।

খেয়াল করেন, যদি আমি পেরে থাকি আমার অন্তর্জগৎ পরিবর্তন করতে, তাহলে যে কারোরই পারার কথা।

ওয়েইন

একজন মানুষের যে সম্ভাবনা বা যে জীবনীশক্তি থাকে, তার সবটাই কেড়ে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট হবে শুধু একটা বিষয়, সেটা হলো পর্ন ইন্ডাস্ট্রিতে তার পদার্পণ। পর্ন ইন্ডাস্ট্রি প্রত্যেকটি স্টাফের আনন্দ কেড়ে নিতে আরম্ভ করে একদম শুরুর দিন থেকে। আর আমার বেলায় এটা এমনভাবে গ্রাস করেছিল যে, আমি দৈত্য বা ডেভিলের মতো হয়ে উঠেছিলাম।

আমি এই খেলার মধ্যে দীর্ঘ সময় থেকেছি। আমি দেখেছি এটা কী ঘটায়, সাংবাদিক থেকে শুরু করে ক্যামেরা ক্রু পর‌্যন্ত, প্রত্যেকের জীবনে।

এর সঙ্গে ব্যবসা অর্থাৎ টাকা ইনকামের মতো নাগরিক একটা বিষয়ের কোনো যোগাযোগ নেই। এটা একটা অন্ধকার পৃথিবী। এটা অধঃপতন। যেসকল মানুষেরা একের পর এক বাজে অভিমত তৈরি করে, যারা পর্ন ইন্ডাস্ট্রির সমর্থন যোগায় এবং এটিকে চালিয়ে নেয়, যারা নিজেদের ব্যথাবেদনা আর সমস্যাবলিকে গদির তলে লুকিয়ে রাখে আর সবচাইতে মন্দ বিকল্পগুলোকে ভবিষ্যৎ সময়ের জন্য তৈরি করতে থাকে, এই পর্ন ইন্ডাস্ট্রি তাদের মাধ্যমেই প্রসার পায়। নিশ্চয়ই, আমিও তাদের একজন।

আমি কয়েক বছর আগে এভিএন পুরস্কার পেয়েছিলাম। আমাকে তখন রেড কার্পেটের উপরে একটি ইন্টারভিউ দিতে রাজি করানো হয়েছিল।

আমার মনে আছে, ভেনিসের একটি ভরতি হলঘরে আমি যখন ইন্টারভিউ দেওয়া জন্য হেঁটে যাচ্ছিলাম, তখন একটা বাচ্চা মেয়ে বিরাট উত্তেজিত ভঙ্গিতে ছুটে আমার কাছে আসলো। মেয়েটি জানাল, কিছুদিন আগেই আমার রিলিজ হওয়া নতুন মুভি থেকে সে আমাকে চিনেছে। আমি খেয়াল করলাম সে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছিল না। তখনই, সে আমাকে তার একটা সফলতার কথা আমাকে জানাল, বলল, ‘ওয়েইন, আমি খুব খুশি, আমি প্রথমবার ইন্টেরেশিয়াল (অনেক জাতির লোকেদের মিলে) গ্যাংব্যাং করেছি।’

মেয়েটির বয়স বড়জোর ১৮ হবে। মাত্রই হাইস্কুল পাশকরা ১৫ বছরের মেয়েদের মতোই তাকে লাগছিল। তার এই সফলতার গল্পটি আমাকে শারীরিকভাবে অসুস্থ বানিয়ে দিল।

সাল আমায়া

আমি ছয় বছর বয়সে তিনবার গণধর্ষণের স্বীকার হয়েছিলাম, পুরুষদের দ্বারা। তারা আমাকে মুখ বন্ধ করে রাখতে বলেছিল, না হয় তারা আমাকে মেরে ফেলবে, এই হুমকি দিয়েছিল। আমি যেই জীবনটার মধ্যে বড় হয়েছি, সেখানে ছিল সেক্স, ড্রাগ আর পার্টির চূড়ান্ত বাহুল্য।

ধর্ষিত হবার আগে আমি যেমন ছিলাম, ধর্ষিত হবার পরে আমি আর তেমন রইলাম না। আট বছর বয়সেই আমি ইন্টারনেটে গে-পর্ন দেখতে আরম্ভ করেছিলাম।

আমার বয়স যখন ১৬ হয়েছিল, তখনই আমার টাকা ইনকামের ব্যাপার তৈরি হয়ে গিয়েছিল। সেসময়ে, আমার দূর সম্পর্কের এক আত্মীয় ছিলেন, তিনি আমাকে কিছু গে-পর্ন ফিল্মমেকারদের কাছাকাছি যেতে সাহায্য করলেন।

তখন আমাকে ডায়েট পিল আর ক্রিস্টাল মেথ খেতে বলা হলো, যাতে আমি শুকাই আর আমাকে দেখতে মেয়েলি লাগে। এতে করে আমার গে-জব আর ট্রান্স-জবগুলো পেতে সহজ হবে।

গে পর্ন-মডেল হওয়া খুব রিস্কি একটা ব্যাপার, এখানে যৌনরোগের আশঙ্কা সবচাইতে বেশি থাকে। তাই এখানে প্রচুর পরিমাণে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। কিন্তু গে-পর্নের শুটিংয়ে ডিরেক্টররা এমনকি কনডমই ব্যবহার করার ব্যাপারে সম্মত হয় না। আর গে মডেলদের কেউই নিশ্চিতভাবেই নিয়মিত যৌনরোগ পরীক্ষা করে না। আমি যেসব গে-পর্নমডেলদের সঙ্গে কাজ করেছি, তাদের ৮০ ভাগেরই এইচআইভি পজেটিভ ছিল।

আমি পৃথিবীর অনেক মহিলা পর্নস্টারের সঙ্গে ফটোশ্যুট করেছি। তাদেরকেও আমার মতো ড্রাগ নিতে হতো। ক্যামেরার পেছনে তাদেরকে আমি মোটেও সুখি দেখিনি।

আমাদের প্রত্যেক পর্নঅভিনেতা-অভিনেত্রীকেই ক্যামেরার সামনে নিজেদের ব্যক্তিগত চেতনা আর চিন্তাকে লুকিয়ে রাখতে হয়। কিন্তু যখন ফিল্মিং শেষ হয় এবং আমরা নিজগৃহে ফিরে যাই, তখন আমরা দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে পড়ি।

অ্যারন

কলেজের শেষ বর্ষের পড়াশোনা চলার সময়েই আমি লস এঞ্জেলেসে চলে আসলাম, কারণ আমার কাছে তখন বাকি ছিল শুধু ইন্টার্নশিপ করবার কিছু টাকা।

যেই টাকাগুলো আমি সরকারি অনুদান, স্কলারশিপ, স্টুডেন্ট লোন থেকে পেয়েছিলাম, সেগুলো থেকে খুব অল্প টাকাই বেঁচেছিল। এই টাকাগুলো দিয়ে আমি বড়জোর নিজের খাবারের খরচটাই সামলাতে পারতাম। এইসব ভেবে আমি লস এঞ্জেলেসে এসে একটা চাকরির সন্ধান করতে শুরু করলাম।

একটা সাইট ছিল, যেখানে পুরুষ সমকামীরা নিজেদের মধ্যে নেটওয়ার্কিং করে থাকে, সেটায় আমি যুক্ত হয়েছিলাম। সেখানেই প্রথমে এক ব্যক্তি আমাকে জানালেন, তিনি একজন পর্নমডেল সংগ্রাহক। তিনি আমাকে তখন বলেছিলেন, তার কাছে যেতে এবং কিছু ছবি তুলতে।

স্বাভাবিক, আমাকে অফার করা হয়েছিল পর্নমডেল হতে। আর সত্যিকার অর্থে তিনি আমাকে বলেছিলেন, ক্যামেরার সামনে আমাকে একা কাজ করলেই হবে। অর্থাৎ কেউ আমার সঙ্গে ক্যামেরায় থাকবে না। যেহেতু একা, তাই বিষয়টা আমার কাছে খুব সহজ টাকা ইনকামের উপায় মনে হয়েছিল।

কিন্তু, পরবর্তীতে ভিডিওগুলো আর আমার একার ভিডিও থাকল না। মূলত পর্নমডেল সংগ্রাহকদের ওটা একটা চাল। তারা খুব ভালো কনভিন্সড করতে জানে।

তিনি আমাকে বুঝিয়ে নিতে পেরেছিলেন, আমি নাকি খুব গ্ল্যামারাস। আমাকে ওইভাবেই ভিডিওতে বেশি মানাবে। অস্বীকার করব না, তার এমন কথায় আমার মনেও হয়েছিল, এটাই সফলতার সবচাইতে সোজা পথ। আর তাছাড়া তখনও তো আমি কোনো সাধারণ অর্থাৎ সামাজিক চাকরির সন্ধান করে উঠতে পারিনি, ফলে টাকার জন্যও আমি বাধ্য ছিলাম ওই ব্যক্তির সবকথা শুনতে।

খেয়াল করুন, সে ওইখানেই থামলো না। একটা পর‌্যায়ে সে আমাকে বলতে লাগলো, তার সঙ্গে সেক্স-ভিডিও তৈরি করতে হবে। তখন আমাকে একজন পর্নমডেল নয়, বরং প্রস্টিটিউট মনে হলো। যথারীতি আমার কিছু করারও থাকল না। আমি বুঝতে পারলাম, জীবনের কঠিন এক ট্র্যাপের শিকার আমি, এবং আমার মুক্তি নেই।

বিশ্বাস করুন, এসবের কিছুই আমি আমার জীবনে আমি প্রত্যাশা করিনি। কেবল ওইসময়টায়, যখন এইসব কিছু ঘটে চলেছিল আমার সঙ্গে, আমি আমার চিন্তা ও সচেতনতাকে ব্ল্যাংক করে রেখেছিলাম। ফলশ্রুতিতে এখন আমি ক্লমেডিয়া (একটি যৌনরোগ) রোগে আক্রান্ত একজন মানুষ।

 

[সাবেক এই পর্নস্টারদের ছবিপ্রকাশ থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে বিরত থাকা হলো]

   

বুদ্ধ পূর্ণিমার তাৎপর্য



অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বিশ্বে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব বুদ্ধ পূর্ণিমা। বুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এক মহান দিন এটি। এই দিনে গৌতম বুদ্ধ পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেন। একই দিনে মহাজ্ঞানী বুদ্ধত্ব এবং বুদ্ধ মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন। এই তিথিকে বলা হয় বৈশাখী পূর্ণিমা, যা আজ বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক ভেসাক ডে হিসেবে পালন করা হয়। বৈশাখ মাসের এই তিথিতে মহামতি গৌতম বুদ্ধের জীবনে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংগঠিত হয়েছিল। ত্রি-স্মৃতিবিজড়িত এ তিথির গুরুত্ব ও তাৎপর্য অত্যন্ত বিশাল।

খ্রিস্টপূর্ব ৬২৩ অব্দে এই দিনে আড়াই হাজার বছর আগে মহামতি গৌতম বুদ্ধ ভারতবর্ষের তৎকালীন কপিলাবস্তু দেবদহ নগরের মধ্যবর্তী লুম্বিনী কাননে মাতা রানী মায়াদেবীর পিতৃগৃহে যাবার পথে শালবৃক্ষের নিচে জন্মগ্রহণ করেন। খ্রিস্টপূর্ব ৫৮৮ অব্দে ৩৫ বছর বয়সে বোধিবৃক্ষমূলে কঠোর সাধনা বলে তিনি বুদ্ধত্ব লাভ করেন। খ্রিস্টপূর্ব ৫৪৩ অব্দে ৮০ বছর বয়সে একই দিনে ৪৫ বছর দুঃখ মুক্তির ধর্ম প্রচার করে কুশীনগরে যুগ্মশাল তরুণমূলে চিরনির্বাসিত হয়ে মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন অর্থাৎ তিনি দুঃখ থেকে মুক্তি লাভ করেছেন। পৃথিবীতে আর জন্মলাভ করবেন না। গৌতম বুদ্ধের পিতার নাম ছিল রাজা শুদ্ধধন ও গৃহী নাম ছিল সিদ্ধার্থ। ২৫২৭ বছর আগে ভারতবর্ষে যখন ধর্মহীনতা মিথ্যা দৃষ্টি সম্পন্ন বিশ্বাস্বে ধর্মে সমাজের শ্রেণি বৈষম্যের চরম দুরবস্থা ও কুসংস্কারে নিমজ্জিত, প্রাণী হত্যায় চরম তুষ্টি ,তখন শান্তি মৈত্রী অহিংস সাম্য ও মানবতার বার্তা নিয়ে মহামতি বুদ্ধের আবির্ভাব ঘটে।

গৌতম বুদ্ধ অহিংস ও মৈত্রীর বাণী প্রচার করেছেন। এই জীবজগৎ অনিত্য দুঃখ অনাত্মাময় প্রাণমাত্রই প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। অস্থায়ী বা অনিত্য কার্যতকারণের অধীন। তিনি জীবনের প্রগাঢ় খাটি চার আর্যসত্য আবিষ্কার করলেন। জগতে দুঃখ আছে, দুঃখের অবশ্যই কারণ আছে, দুঃখের নিবৃত্তি আছে, দুঃখ নিবৃত্তির উপায় আছে। দুঃখ নিবৃত্তির উপায় হলো নির্বান লাভ। এই নির্বান লাভের ৮টি মার্গ আছে। যেমন সম্যক বা সঠিক দৃষ্টি , সম্যক সংকল্প, সম্যক বাক্য, সম্যক কর্ম, সম্যক জীবিকা, সম্যক প্রচেষ্টা, সম্যক স্মৃতি, সম্যক সমাধি। এই পথ পরিক্রমায় শীল সমাধি প্রত্তোয় নির্বাণ লাভের একমাত্র উপায়। সব প্রাণী সুখী হোক, পৃথিবীর সবচেয়ে পরম, মহৎ বাণী তিনি প্রচার করেছেন। শুধু মানুষের নয়, সব প্রাণ ও প্রাণীর প্রতি, প্রেম, ভালোবাসা, অহিংসা, ক্ষমা, মৈত্রী, দয়া, সহনশীলতা, সহমোর্মিতা, সহানুভূতি, মমত্ববোধ, প্রীতি, সাম্য, সম্প্রীতির কথা তিনি বলেছেন।

১৯৯৯ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ৫৪/১১৫ রেজুলেশন এ দিনটিকে আন্তর্জাতিক ভেসাক ডে হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। সেই থেকে এই দিনটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ “ভেসাক ডে” হিসেবে পালন করে আসছে। বুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত পবিত্র এই দিনকে বিভিন্ন নামে পালন করা হয়। বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলংকা, নেপালে বুদ্ধ পূর্ণিমা, লাওসে বিশাখ পূজা, ইন্দোনেশিয়া হারি ওয়াইসাক ডে, মালয়শিয়ায় ওয়েসাক ডে, মায়ানমারে ফুল ডে অব কাসন, সিঙ্গাপুরে হারি ভেসাক ডে নামে পালন করে থাকে আবার কেউ বুদ্ধ জয়ন্তী দিবস হিসেবেও পালন করে থাকে।

জাতিসংঘের মহাসচিব এস্তেনিও গুতেরেজ ভেসাক ডে উপলক্ষে বলেছেন, “On the day of Vesak, Let us celebrate Lord Buddha’s wisdom by taking action for others with compassion and solidarity and by renewing our commitment to build a peaceful world.”

ফিলিস্তিনে আজ চরমভাবে মানবতা বিপন্ন হচ্ছে। অশান্তিময় এই পৃথিবীতে বুদ্ধের মৈত্রী, সংহতি, সাম্য, মানবতা ও শান্তির বাণী বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় আজও প্রাসঙ্গিক এবং খুব প্রয়োজন। বিশ্ব আজ পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখোমুখি। পরিবেশ দূষণ, গ্লোবাল ওয়ার্মিং, জলাবদ্ধতা, বৃক্ষ নিধন, বন উজাড়, জীব বৈচিত্র্য হ্রাস ও জলবায়ু পরিবর্তন এই সবুজ গ্রহের ইতিহাসে নজিরবিহীন। গৌতম বুদ্ধই প্রথম বৃক্ষকে এক ইন্দ্রিয় বিশিষ্ট জীবরূপে আখ্যায়িত করেছেন। বুদ্ধ ছিলেন বিশুদ্ধ পরিবেশবাদী দার্শনিক। পরিবেশ রক্ষা ও সংরক্ষণে তিনি সব সময় সোচ্চার ছিলেন। তাই বুদ্ধের জন্ম বুদ্ধত্ব লাভ ও মহা পরিনির্বাণ বৃক্ষের পদমূলের বিশুদ্ধ পরিবেশ মন্ডিত পরিবেশে সংগঠিত হয়েছিল।

এই পবিত্র দিনে বৌদ্ধরা বিভিন্ন দেশে দেশে সব প্রাণীর সুখ শান্তি কামনায় সমবেত প্রার্থনা করেন। অশান্ত পৃথিবীতে পরিবেশ সংরক্ষণে বুদ্ধের বাণী নীতি ও আদর্শ বিশ্ব মানবতার শিক্ষা, দর্শন, চিন্তা চেতনা ,ভাবনা সুন্দর, শান্ত, সাম্যময় পৃথিবী গড়ার বিকল্প নাই। সব প্রাণী সুখী হোক, দুঃখ থেকে মুক্তি লাভ করুক।

অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া
চিকিৎসক, লেখক, সংগঠক ও গবেষক

;

মহামতি সিদ্ধার্থ গৌতম



প্রদীপ কুমার দত্ত
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি।
ধর্মং শরণং গচ্ছামি।

সিদ্ধার্থ গৌতম খৃষ্টপূর্ব ৫৬৪সালে(এই সাল নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ আছে) কপিলাবস্তুর লুম্বিনীতে (বর্তমানে নেপালের অন্তর্গত) শাক্য রাজা শুদ্ধোধন এর প্রাসাদে তাঁর মহিষী মায়া দেবীর ঔরষে জন্মগ্রহণ করেন। দিনটি ছিল বৈশাখ মাসের পূর্ণিমা তিথি।

তিনি শৈশব থেকেই ছিলেন ভাবুক প্রকৃতির। রাজকার্য তাঁকে আকর্ষণ করতো না। জীবনের গূঢ় রহস্য নিয়ে তিনি চিন্তা করতেন। তিনি লক্ষ্য করলেন সংসারে কর্মই প্রধান। বাকি সবই অনিত্য। তিনি ভাবতেন জরা, ব্যাধি, মৃত্যু থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে। যৌবনের এক পর্যায়ে প্রাসাদে মাতা, পিতা, স্ত্রী ও শিশুপুত্রকে রেখে এক রাতে তিনি বেরিয়ে পড়েন পথে। গ্রহণ করলেন শ্রমণের জীবন।

একসময় তিনি গয়ার নিকট উরুবিল্ব (বর্তমানে ভারতের বিহারের বৌদ্ধগয়া) গ্রামে এক বৃক্ষতলে মোক্ষলাভের উপায় ভাবতে জাগতিক সমস্ত আকর্ষণ ত্যাগ করে ধ্যান করতে বসেন। ক্ষুধা, তৃষ্ণা ইত্যাদি বাহ্যজ্ঞান লুপ্ত অবস্থায় এক বৈশাখী পূর্ণিমায় তিনি আলোকপ্রাপ্ত হন। তিনি লাভ করলেন দিব্যজ্ঞান। এই জ্ঞানই হলো অজ্ঞানতা ও অশিক্ষা, লোভ এবং আকাঙ্খা, রোগ ও দুঃখভোগ এবং পুনর্জন্ম থেকে মুক্তি। সেই মুক্তিলাভের উপায় হলো জীবন যাপনে শুদ্ধাচার।

তাঁর আশি বছরের জীবনের বাকি অংশ তিনি কাটালেন তাঁর মোক্ষলাভের সূত্র এবং লোভ, হিংসা-দ্বেষহীন পরোপকারের জীবন ধারণের জন্য শিষ্য এবং শিষ্যদের মাধ্যমে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে উদ্বুদ্ধ করে। বারানসীর অদূরে সারনাথে প্রথম পাঁচজনকে তিনি শিষ্যত্বে বরণ করেন। এই সংখ্যা ধীরে ধীরে বর্ধিত হতে থাকে এবং প্রচার ছড়িয়ে পড়তে থাকে দিকে দিকে। বৃহৎ এক জনগোষ্ঠীকে আকর্ষণ করতে সক্ষম হয় তাঁর এই প্রচার।প্রথমে গাঙ্গেয় অববাহিকাতে চলে এই প্রচারাভিযান। পরে তা দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে।

এইভাবে শান্তির অমোঘ বাণী প্রচারে বাকি জীবন কাটিয়ে তিনি যখন বুঝলেন তাঁর ধরাধাম ত্যাগের সময় হয়েছে, তখন তিনি তাঁর প্রচার সাথী শিষ্যদের উদ্দেশ্যে শেষ দেশনা প্রদান করেন। সেখানে তিনি তাঁর শিষ্যদের বলেন যে তিনি তাঁদের পথের দিশা দেখিয়ে গেলেন মাত্র। মানুষ মরণশীল।মানব জীবনে দুঃখ,কষ্ট জরা,ব্যাধি অবশ্যম্ভাবী।তাই জীবদ্দশায় উচিৎ সর্বোচ্চ চেষ্টার মাধ্যমে সৃষ্টির সকল জীবের কল্যাণসাধন করা।তাঁদেরকে নিজের আত্মাকে আলোকিত করে নিজেকেই আলোকপ্রাপ্ত হতে হবে।

মল্ল রাজত্বভুক্ত কুশিনগরে তিনি মহাপরিনির্বাণ প্রাপ্ত হন। কি আশ্চর্য! সেই দিনটিও ছিল বৈশাখী পূর্ণিমা। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এই তিন বিশেষ দিনের সমষ্টিকে ভেসাক ডে হিসাবে পালন করা হয়। ভারত থেকে তিব্বত হয়ে চীন, জাপান, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর সহ পুরো দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় বৌদ্ধ ধর্ম একসময় ছড়িয়ে পড়ে। যার বিপুল প্রভাব এখনো বিদ্যমান।

শাক্যমুণি গৌতমবুদ্ধর প্রধানতম শিক্ষা ও প্রার্থনা হলো জগতের সকল প্রাণী সুখী হউক। সিদ্ধার্থ গৌতমের ধর্ম গ্রহণ করে সম্রাট অশোক তা তাঁর রাজত্বের দিকে দিকে ছড়িয়ে দেন। সম্রাট অশোক লুম্বিনীতে তীর্থভ্রমণ করাকালীন একটি স্তম্ভ স্থাপন করেন। সেই স্তম্ভে ব্রাহ্মী লিপিতে শাক্যমুনি বুদ্ধ কথাটি পাওয়া যায়। এর অর্থ করা যায় শাক্যদের মধ্যে তপস্বী ও আলোকপ্রাপ্ত।

মহামতি বুদ্ধের বাণী প্রথম দিকে ছিল শ্রুতি নির্ভর। পরবর্তীতে তা ভিনায়া বা প্রচারকদের (বর্তমানকালের শ্রমন বা ভান্তে) জন্য প্রতিপালনীয় বিধান ও সুত্ত পিতাকা বা বুদ্ধদেবের উপদেশসমূহ তাঁর শিক্ষা হিসাবে লিপিবদ্ধকরণ করা হয়। আরও পরে তাঁর অনুসারীরা অভিধর্ম, জাতক কাহিনী, মহাযান সূত্র ইত্যাদি ধর্মগ্রন্থ প্রকাশ করেন। তার মধ্যে জাতক কাহিনীতে সিদ্ধার্থ গৌতমের পূর্ববর্তী জন্মসমূহের কথা লিপিবদ্ধ আছে। আলোকপ্রাপ্ত হয়ে পুনর্জন্ম থেকে মহামুক্তির আগে তিনি পূর্ব জন্মসমূহের কথা স্মরণ করতে পেরেছিলেন।বেশিরভাগ বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ আদিকালে পালি ভাষায় লিখিত হয়েছিল।

জ্ঞান অন্বেষণকে বৌদ্ধ ধর্ম সর্বোচ্চ মর্যাদা দেয়। বৌদ্ধ যুগেই পৃথিবীর বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় রূপে পরিচিত নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়। আমরা গর্ব বোধ করতে পারি যে আমাদের মাটির সন্তান অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান বৌদ্ধ ধর্মকে তিব্বতে প্রচারে প্রধানতম ভূমিকা রাখেন।তিব্বতে বৌদ্ধ ধর্ম রাজধর্ম হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয় ও সেখান থেকে চীন,কোরিয়া,জাপান সহ এশিয়ার দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে।

ইতিহাসের এক পর্যায়ে ভারতবর্ষের বিশাল এলাকায় বৌদ্ধ ধর্মের প্রাবল্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।সম্রাট অশোকের কন্যা সংঘমিত্রা এই ধর্মকে সিংহল দ্বীপে(বর্তমান শ্রীলঙ্কা) প্রসারিত করেন।আজও পৃথিবীতে বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীরা বিভিন্ন ধারায় তাঁদের মহান শান্তির ধর্মকে পালন ও সংরক্ষণ করে যাচ্ছেন। 

লেখক: প্রাবন্ধিক ও পরিব্রাজক

;

বিশ্ব চা দিবস



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
চা / ছবি: বিং এআই

চা / ছবি: বিং এআই

  • Font increase
  • Font Decrease

কনকনে শীতে কাপছেন। সোয়েটার-চাদর মুড়ে বসলেও গা ভেতর থেকে কাঁপুনি কমছে না। অথবা কাজ করতে করতে মাথা ঝিমঝিম করছে। অস্বস্তি সহ্যও হচ্ছে না, অথচ এই স্বল্প ব্যথায় ঔষধও তো খাওয়া যায় না! কিংবা বাসায় আসা কোনো মেহমান বা বিকেলে বন্ধুদের সাথে আড্ডায় বসেছেন। শুধু মুখে বসে থেকে গল্প করতে কতক্ষণই বা ভালো লাগে? এরকম সব পরিস্থিতি সামাল দিতেই রয়েছে- চা।

আজ ২১ মে বিশ্ব চা দিবস। তথ্য অনুযায়ী ২০০৪ সালে সর্বপ্রথম চায়ের গুরুত্ব বিবেচনা করে একে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা চিন্তা করা হয়। বিশ্ব সামাজিক ফোরাম এই সিদ্ধান্ত নেয় এবং তারপরের বছর ২০০৫ সালে প্রথমবার ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লীতে বিশ্ব চা দিবস উদযাপন করা হয়। পরবর্তীতে ২০০৬ সালে শ্রীলঙ্কায়েএই দিবস পালন করা হয়। ২০১৫ সালে চা দিবসে উদযাপন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে যায়। ২০১৯ সালে জোতিসংঘ কয়েকটি দেশের সম্মিলিত উপস্থিতিতে ২১ , চা দিবসের আয়োজন করে।   

 চা পাতা তোলা / ছবি: বিং এআই

চায়ের জন্ম হয় ঠিক কবে হয়েছিল তার নির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ধারণা করা হয়, আজ থেকে ৫ হাজার বছরেরও আগে সৃষ্টি হয় এই পানীয়। এশিয়ারই বৃহত্তর দেশ চীনে এর জন্ম হয়। তৎকালীন সময়ের পাওয়া জিনিসপত্রে চায়ের অস্তিত্বের প্রমান মেলে। ক্যামেলিয়া সিনেনসিস উদ্ভিদ থেকে উৎপন্ন হয় এই পানীয় তাই চীনের নামের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।  সাধারণ পাহাড়ি অঞ্চলে শক্ত পাথুরে মাটিতে জুমচাষে চা উৎপন্ন করা হয়। আমাদের দেশেও বৃহত্তর সিলেটঅঞ্চল এবং চট্টগ্রামের কিছু অংশে চা পাতা চাষকরা হয়।    

কম-বেশি চা খান না- এমন মানুষ হাতে গুনতে পারা যায়। মূলত উদ্ভিজ এই পানীয় জনপ্রিয় তার অনন্য স্বাদ, ঘ্রাণ এবং উপকারের জন্য। কফি অনেকেই পছন্দ করেন। তবে চিকিৎসকরা অনেককে কফির উপর নিষেধাজ্ঞা দেন। চায়ের ক্ষেত্রে সেই বালাই নেই। তাই চা-কে অন্য সব পানীয়ের মতো শুধু একটি পানীয় হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। বরং একে খাদ্যতালিকার পানির পরে পানীয় হিসেবে এক বিশেষ অংশ হিসেবে মনে করা হয়।  

চাষ করা চা পাতা শুকিয়ে নিয়ে, গরম পানি বা দুধে চিনি ও অনেকক্ষেত্রে মশলা মিশিয়ে শুকনো সেই পাতা দিয়ে বানানো হয় চা। আমাদের দেশ হোক বা বাইরের দেশে, অধিকাংশ মানুষের জীবন ধারার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো এই পানীয়।   

;

অকালে আম পাকে!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
অপরিপক্ক পাকা আম / ছবি: পিক্সাবে

অপরিপক্ক পাকা আম / ছবি: পিক্সাবে

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বৈশাখে তোর রূদ্র ভয়াল,

কেতন ওড়ায় কালবৈশাখী!

জষ্ঠি মাসে বনে বনে

আম কাঠালের হাট বসে কি...’

রবিঠাকুরের কলমে রচিত এ পংক্তি যেন, কেবল কাগজের উপর কালিতে সাজানো কিছু শব্দ নয়। বাংলা বছরের প্রথম ঋতুর সকল বৈশিষ্ট্য খুব অল্প ভাষায় সুসজ্জ্বিত করে গানের রূপে সামনে আনেন বিশ্বকবি।

দিন গুনতে গুনতে বছরের প্রথম মাসটি অনায়াসে কেটে গেল। চলছে জৈষ্ঠ্য মাস। ভয়ংকর কাল বৈশাখী ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হওয়ার আশঙ্কাকে পাশ কাটিয়ে; জৈষ্ঠ্যের পাকা আম, জাম, কাঁঠাল, লিচুই যেন গ্রীষ্মের আসল আনন্দ।  

গ্রীষ্মের পরিপূরক হলো আম। আম পছন্দ নয়, এমন মানুষটি খুঁজে পাওয়া দায়! এজন্যই আমকে বলে ফলের রাজা। ত্যক্ত-বিরক্ত করা গরমেও পাকা টসটসে আমের সুঘ্রাণই যেন আনন্দের স্বস্তি। তবে সে আনন্দেও বালি ঢেলে দেয় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। ভোজন-রসিক মানুষরা সারা বছর অপেক্ষা করে থাকে রসে টসটসে তাজা ফলের স্বাদ আস্বাদনের জন্য। অনেক ভোক্তদের সেই অপেক্ষা বৃথা হয়ে যায় অপরিপক্ক ফলের কারণে।

অনেক ব্যবসায়ী অতিরিক্ত লাভের আশায় রাসায়নিক উপাদান ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহার করে আম পাকানোর চেষ্টা করে। আম যখন কাঁচা অবস্থায় থাকে তখন এর মধ্যে সাইট্রিক এসিড ম্যালিক এসিড, টারটারিক এসিড থাকে। এ কারণে আমের হাইড্রোজেন আয়নের ঋণাত্মক ঘনমাত্রার লগারিদম মান খুব কম হয়, ফলে আম অম্লধর্মী হয়। এছাড়া কাঁচা অবস্থায় আমে উচ্চ ওজনের পেকটিনের মজুদ বেশি থাকে।

অপরিপক্ক পাকা আম

সাধারণত প্রাকৃতিকভাবে পাঁকার সময় এই পেকটিনের ওজন কমতে থাকে। আমের মধ্যকার ভিটামিন ‘সি‘ কালক্রমে বদলে ভিটামিন ‘এ’ তে রূপান্তরিত হয়। একই সঙ্গে ক্লোরোফিল পরিবর্তিত হয়ে গ্লোবুলার ক্রোমোপ্লাস্টে রূপান্তরিত হয়। অ্যান্থোসায়ানিন পিগমেন্ট ফিনাইলপ্রোপানয়েডের সেকেন্ডারি মেটাবোলাইটসের  উপসি্থতি বাড়তে থাকে।(‘বিজ্ঞানচিন্তা’র তথ্যমতে) এই কারণে কাঁচা আমের সবুজ রঙ পরিবর্তন হয়ে লালচে-হলুদাভাব বর্ণ ধারণ করে। এভাবে পাকার ফলে আম হয় সুস্বাদু। আমের মৌ মৌ গন্ধ চারদিকে ছড়িয়ে যায়।

তবে ক্যালসিয়াম কার্বাইড (CaC2)  এর প্রয়োগের কারণে আমের মধ্যে পরিবর্তন আসে। এর মধ্যে থাকা (৮০থেকে৮৫ভাগ) ক্যালসিয়ামের কারণে আমের অম্লত্ব নষ্ট হতে শুরু করে। অম্ল-ক্ষারের প্রশমনের কারণে আমের মধ্যে থাকা ম্যালিক এসিড ও সাইট্রিক এসিডের পরিমাণ কমতে থাকে। তাই কাঁচা অবস্থাতেই আমের রঙ পরিবর্তন হতে শুরু করে।

আমের ভিটামিন বি১ পানিতে দ্রবনীয়। আমের আর্দ্র অংশের সঙ্গে ক্যালসিয়াম কার্বাইড বিক্রিয়া করে অ্যাকটেলিন গ্যাস উৎপন্ন করে। এতে আম অসময়েই পাক শুরু করে। সামগ্রিকভাবে আমের রাসায়নিক পরিবর্তন না ঘটলেও বাহ্যিকভাবে রঙের পরিবর্তনের কারণে দেখলে মনে হয় আম পেকেছে। এই অপরিপক্ক আম খেলে কেবল রুচি ও ভাবমূর্তি নষ্ট হয়, তাই নয়! শরীরের জন্যও অনেক বেশি ক্ষতিকর হতে পারে।

;