ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারির যুগে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ



সাফাত জামিল, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপে ভিএআর নিয়ন্ত্রণ কক্ষ

২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপে ভিএআর নিয়ন্ত্রণ কক্ষ

  • Font increase
  • Font Decrease

দ্বিতীয়ার্ধ্ব শেষে যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিট। ৪-৪ অ্যাগ্রিগ্রেটেড স্কোরলাইনের ম্যাচে অ্যাওয়ে গোলে পিছিয়ে থাকা ম্যানচেস্টার সিটির ত্রাণকর্তা হয়ে আবির্ভাব রাহিম স্টার্লিংয়ের। সার্জিও আগুয়েরোর মাপা পাস জালে জড়িয়েই ভোঁ-দৌড়ে পৌঁছালেন কর্নার ফ্ল্যাগের সামনে। তবে ইউরোপ-সেরার লড়াইয়ে সেমিফাইনালে পৌঁছাতে পারল না তার দল। প্রযুক্তির প্রয়োগ নিশ্চিত করল আগুয়েরোর অফসাইড, তাতে শেষ চারে পা রাখল টটেনহাম হটস্পার।

গেল মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কোয়ার্টার ফাইনালে এই প্রযুক্তির বিতর্কিত প্রয়োগ দুই-দুইবার কপাল পুড়িয়েছে তারকায় ঠাসা ক্লাব ম্যানসিটির। বলা হচ্ছে বর্তমান সময়ের আলোচিত-সমালোচিত ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি বা ভিএআর নিয়ে—মাঠে রেফারিদের ভুল বা বিতর্কিত সিদ্ধান্ত এড়াতেই যার আবিষ্কার এবং ব্যবহার।

ন্যূনতম হস্তক্ষেপ, সর্বোচ্চ কল্যাণ’—এই মূলমন্ত্রে আন্তর্জাতিক ফুটবলে ভিএআর-সংক্রান্ত চূড়ান্ত আইন পাশ হয় ২০১৮ সালে। গোল সিদ্ধান্ত, পেনাল্টি সিদ্ধান্ত, সরাসরি লাল কার্ড, ভুল খেলোয়াড়ের ওপর চাপানো সিদ্ধান্ত বদল—ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেবার মতো এই চারটি ঘটনা পুনর্বিবেচনায় সাহায্য নেওয়া হয় ভিএআরের। ভিডিও অপারেশন রুমে দক্ষ ও অভিজ্ঞ রেফারিদের সমন্বয়ে গড়া ভিএআর টিম মাঠে দায়িত্বরত রেফারির নেওয়া পুনর্বিবেচনাযোগ্য প্রতিটি সিদ্ধান্তই পর্যবেক্ষণ করতে থাকে, আর তাতে কোনো ভুল শনাক্ত না হলে নিজের ইয়ারফোনে সেটি জানতে পারেন ম্যাচ রেফারি। এই ‘সাইলেন্ট চেক’ খেলা চলাকালীন সময়ের কোনো বিলম্ব ঘটায় না।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/27/1564231324737.jpg

◤ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনায় ভিএআর টিমের সাথে যোগাযোগ করেন মূল রেফারি ◢

 

অন্যদিকে ভিএআর-এর হস্তক্ষেপে সময়ক্ষেপণ হয় তখনই, যখন মাঠের সিদ্ধান্তের যথার্থতা সরাসরি বিচারে ব্যর্থ হয় ভিএআর টিম। এসময় মূল রেফারি নিজ কানের দিকে ইঙ্গিত করে জানান দেন চলমান পর্যালোচনার বিষয়টি।

তবে অফসাইড সিদ্ধান্ত অথবা ডি-বক্সের ভেতরের/বাহিরের ফাউল সংক্রান্ত বিষয়গুলো যেমন ভিএআর দ্বারাই নিস্পত্তি সম্ভব, তেমনিভাবে একটি প্রাথমিক ফাউল কল বা লাল কার্ড প্রদর্শনের মতো সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে চূড়ান্ত রায়ের ভার বর্তায় মূল রেফারিরই ওপর। মোটকথা, সব অবস্থাতেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রদানে ভিএআর টিমের পরামর্শ অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা রাখেন মূল রেফারি।

এই ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি প্রযুক্তির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপে। প্রতিটি ম্যাচে, প্রতিটি ভেন্যুতে এই যুগান্তকারী পদ্ধতির পূর্ণ ব্যবহার দেখা যায়নি আগের কোনো প্রতিযোগিতামূলক টুর্নামেন্টে। বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের সর্বমোট ৩৩৫টি ঘটনায় নিশ্চিত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে ব্যবহৃত হয় ভিএআর, ম্যাচপ্রতি গড়ে যার দরকার পড়ে প্রায় ৭ বার। এরমধ্যে মূল রেফারির নেওয়া সিদ্ধান্তে বদল এসেছে মোট ১৪ বার।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/27/1564231412600.png
◤ জার্মানি-দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যকার ম্যাচে ভিএআর নিশ্চিত করে দক্ষিণ কোরিয়ার ২য় গোলটি ◢

 

তবে সমালোচনা ও বিতর্কের ঝড় কম তোলেনি ভিএআর। প্রযুক্তিগত নানা ক্রুটির পাশাপাশি ম্যাচের অতি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোয় এর যথাযথ ও দায়িত্বশীল ব্যবহার নিয়েও বেশ প্রশ্ন উঠেছে। ব্রিটিশ পত্রিকা ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর মতে, স্পষ্টতা ও ধারাবাহিকতার অভাবই এখন পর্যন্ত ভিএআর-এর মূল দুর্বলতার জায়গা। প্রায় একই ধরনের ঘটনায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ভিন্নতা ভিএআর-এর ব্যবহারকে যেমন প্রশ্নবিদ্ধ করেছে, তেমনি স্বচ্ছতার অভাবও ভোগাচ্ছে দলগুলোকে। ভিএআর টিম ও মূল রেফারির মধ্যকার কথোপকথন সবার জন্য উন্মুক্ত রাখার মতো নানা সুপারিশ প্রত্যাখান করেছে ফিফা রেফারি কমিটি। এক ঝটকায় পুরো ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া পেনাল্টি সিদ্ধান্ত কিংবা বারবার স্বাভাবিক ছন্দে বাধাসৃষ্টি ও সময়ক্ষেপণ ম্যাচের সৌন্দর্য ব্যহত করছে কিনা, তা নিয়েও সন্দিহান পণ্ডিত ও বোদ্ধারা।

ক্লাব পর্যায়ে দুই ইউরোপিয়ান টুর্নামেন্ট ও সর্বমোট আঠারটি ঘরোয়া লিগে আরো আগেই পা রেখেছে ভিএআর। প্রথমবারের মতো এই মৌসুমে আলোচিত প্রযুক্তিটির আগমন ঘটছে ইংল্যান্ডের শীর্ষ লীগে। ‘গোললাইন টেকনোলোজি’র পর ভিএআরই হতে যাচ্ছে প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রযুক্তিগত সংযোজন। লিগের প্রধান কার্যনির্বাহী রিচার্ড মাস্টার্সের মতে, নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরও বিতর্কের সম্ভাবনা মেনে নিয়েই এর ব্যবহারে সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত আছেন তারা। সময়ক্ষেপণের মাত্রা কমানোই এই মুহূর্তে মাস্টার্সের মূল লক্ষ্য। এরপরই প্রাধান্য পাচ্ছে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণের বিষয়টি।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/27/1564231471639.jpg

◤ স্টার্লিং-আগুয়েরোর বাঁধভাঙ্গা উদযাপন থামিয়ে দেওয়া সেই অফসাইড সিদ্ধান্ত ◢

 

সিদ্ধান্ত পর্যবেক্ষণকালে মূল রেফারি ও ভিএআর টিমের কথোপকথন ও পদক্ষেপ প্রদর্শিত হবে মাঠের বড় পর্দায়। এক্ষেত্রে পর্দাহীন দুই ভেন্যু ওল্ড ট্রাফোর্ড এবং অ্যানফিল্ডে ব্যবহৃত হবে স্কোরবোর্ড ও পাবলিক অ্যানাউন্সমেন্ট (পিএ)। এছাড়াও সময়ক্ষেপণ ঠেকাতে পর্যবেক্ষণযোগ্য বিষয়গুলোর সর্বোচ্চ একটি মান নির্ধারণের নির্দেশ পেয়েছেন রেফারিরা, যাতে পৌঁছানোর পূর্ব পর্যন্ত তারা যেন ঘন ঘন পিচ-সাইড রিভিউ থেকে বিরত থাকেন এবং খেলার স্বাভাবিক ছন্দ বজায় রাখেন।

তবে ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে ভিএআর-এর স্বাভাবিক ব্যবহারে আসছে পরিবর্তন। অফসাইড পর্যবেক্ষণে প্রিমিয়ার লিগের টিভি রিপ্লে-তে এতদিন ব্যবহার হয়ে আসা থ্রি-ডি লাইনের সাহায্য এখন ভিএআর টিমও নিতে পারবে। এক্ষেত্রে ক্যামেরার সাহায্য নিয়েও নিশ্চিত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া না গেলে মাঠে দায়িত্বরত রেফারির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/27/1564231609215.jpg
◤ এভারটনের গুডিসন পার্কের বড় পর্দায় ভিএআর বার্তা ◢

 

অন্যান্য টুর্নামেন্টগুলোয় সবচেয়ে বেশি বিতর্কের জন্ম দেওয়া পেনাল্টি সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে কিছুটা শিথিলতা রাখছে প্রিমিয়ার লিগ। ফুটবলের নতুন রুলবুক অনুযায়ী পেনাল্টি কিকের সময় গোলরক্ষকের নিজ লাইনের বাইরে বিন্দুমাত্র নড়াচড়ায় পুনরায় পেনাল্টি কিক হবার বিধান থাকলেও প্রিমিয়ার লিগ বলছে, ‘চোখে পড়ার মতো’ নড়াচড়া ছাড়া একজন গোলরক্ষকের স্বাভাবিক পেনাল্টি সেভ তারা বাতিল করবে না।

শুধু মাঠের খেলোয়াড়েরাই নন, ভিএআর-এর ব্যবহারে দর্শকরাও প্রভাবিত হবেন ব্যাপকভাবে। স্পষ্টতই ভাটা পড়বে গোল-পরবর্তী বাঁধভাঙ্গা উদযাপনে, যেখানে পরোক্ষভাবে জায়গা নেবে ভিএআর রিভিউ-এ গোলটাই বাতিল হবার শঙ্কা। এছাড়া রেফারির প্রত্যক্ষ অন্যান্য সিদ্ধান্তগুলোর পুনর্বিবেচনা বড়পর্দায় দেখা গেলেও গোল অনুমোদন/বাতিলের ক্ষেত্রে সেই পর্যালোচনা চলবে সমর্থকদের অজান্তেই।

এর পাশাপাশি মাত্রাতিরিক্ত ও আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে ভিএআর চেকের আহ্বানে হলুদ কার্ড প্রাপ্তির বিধান থাকছে খেলোয়াড়-ম্যানেজার উভয়ের জন্য। রেফারির স্বাভাবিক যোগাযোগ কর্মকাণ্ড ও পর্যবেক্ষণ ব্যাহত করলে যা রূপ নিতে পারে লাল কার্ডের।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/27/1564231674894.jpg
◤ দুই মৌসুম আগে এফএ কাপে নরউইচের বিপক্ষে বহিষ্কৃত হন চেলসির আলভারো মোরাতা ◢

 

এসব কিছু বিশ্লেষণে বলা যায়, ভিএআর-এর আগমনে এই মৌসুমের প্রিমিয়ার লিগে মোট গোলসংখ্যা বাড়ার সম্ভাবনাই জোরালো। তবে এর সদ্ব্যবহারে লিগ আসলেই প্রস্তুত কিনা, তা নিয়ে সন্দিহান সাবেক ও বর্তমান নানা ফুটবল তারকা। ভিএআর-এর ব্যবহার ভুলক্রুটির পাল্লা আরো ভারী করবে বলেই মনে করছেন সাবেক ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও ইংল্যান্ড ফুলব্যাক পল পার্কার। চেলসি উইংব্যাক মার্কোস আলোনসোর কাছে যেমন বিভ্রান্তির আরেক নাম এই ভিএআর। একইভাবে বোর্নমাউথের ক্যালাম উইলসন মনে করেন, প্রিমিয়ার লিগের সবটুকু বিনোদনে জল ঢেলে দেবে এই প্রযুক্তি। পেপ গার্দিওলা, মাউরিসিও পচেত্তিনোরা ভিএআর নিয়ে কথা বলতে বিরক্ত বোধ করলেও এর অন্তর্ভুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন অন্যান্য অনেক কোচ। তবে ভিএআরকে খেলাটির স্বাভাবিক একটি অংশ হিসেবে মনে করতে হলে যে আরো অনেক পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের প্রয়োজন, সে কথা বলাই বাহুল্য।

   

প্রশ্ন আর উত্তর যেন পরস্পরের সাংঘর্ষিক!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রশ্ন থাকে এক আর তার উত্তর হয় ভিন্ন। এমন উত্তরপত্রের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায়ই দেখা যায়। এবার এমনই এক উত্তরপত্রের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে ভাইরাল হয়েছে। যা দেখে রীতিমতো সবাই অবাক! তবে এই ঘটনার জন্ম দেওয়া দেশটি বাংলাদেশ নয়, প্রতিবেশী দেশ ভারতের একটি হিন্দি পরীক্ষায় ঘটেছে এমন কাহিনী।

ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রকাশিত ভিডিওতে পরীক্ষার্থীর এমন উত্তর দেখে শিক্ষককেও হাসতে দেখা যায়। 

ভিডিওটি ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করা হয়েছে @n2154j অ্যাকাউন্টের একটি আইডি থেকে।

ওই ভিডিওতে দেখা যায়, একটি প্রশ্ন ছিল এমন, সংযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ (যৌগিক ব্যঞ্জনবর্ণ) কী? এই প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষার্থীটি একটি খাদ্য রূপক দিয়ে উত্তর দিল: "মাটার পনির এবং সব মিশ্র সবজি একত্রিত একটি খাবার।"

আরেকটি প্রশ্ন ছিল "অতীত কাল কাকে বলে?" এর উত্তরে ওই পরীক্ষার্থি লিখেছে, "যখন অতীত আমাদের অতীতের আকারে আসে, তখন তাকে অতীত কাল বলা হয়।"

ভিডিও অনুযায়ী আরও একটি প্রশ্ন ছিল "বহুবচন কাকে বলে?" এর উত্তরে সে লিখেছে "যে পুত্রবধূ তার শ্বশুরবাড়ির কথা শোনে তাকে বহুবচন বলে।"

শিক্ষার্থীটির এমন উত্তর শুনে হাসিতে ফেটে পড়েন শিক্ষক। এমন উত্তরগুলোকে শিক্ষক ভুল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। যদিও এমন উত্তরের জন্য তাকে পুরোপুরি হতাশ করা হয়নি। তাকে ১০ মার্কের মধ্যে ৫ নম্বর দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষক পরে তার উত্তরপত্রে লিখে দিয়েছিলেন, এই ৫ মার্ক তোমার মস্তিষ্কের জন্য, ছেলে।

ভিডিওটি দেখে সবাইকে হাসির ইমোজি দিতে দেখা যায়। সম্পূর্ণ নম্বর না পাওয়ায় অনেকেই যুক্তি দিয়ে লিখেছেন, ছাত্রটি তার কৌতুক প্রতিভার জন্য পূর্ণ নম্বর পাওয়ার যোগ্য।

তবে এমন ঘটনা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছেন, ছাত্র এবং শিক্ষকের হাতের লেখা সন্দেহজনকভাবে একই রকম।

অন্য এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, "প্রশ্ন এবং উত্তর একই হাতের লেখা"। 

;

ফেনী শহরে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে কৃষ্ণচূড়া



মোস্তাফিজ মুরাদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ফেনী
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

'কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরি কর্ণে-আমি ভুবন ভুলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে' জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই মনোমুগ্ধকর গানে ফুটে উঠেছে কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য। কৃষ্ণচূড়া যেন প্রকৃতিকে দান করেছে লাল আভার অপরূপ সৌন্দর্যের মহিমা। সাথে গ্রীষ্মের উত্তাপে শহরে সৌরভ ছড়াচ্ছে নানা জাতের ফুল। তীব্র তাপদাহের পর কালবৈশাখী, এরপর মাঝারি বৃষ্টির মধ্যে ফুলের আগমন। এতে রঙের উল্লাসে মেতে উঠেছে ফেনী শহরবাসী।

ফেনী শহরের কোর্ট বিল্ডিং, এলজিইডি, পুলিশ লাইন, নবীন চন্দ্র সেন কালচারাল সেন্টার, ফেনী সরকারি কলেজ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ফুটে আছে কৃষ্ণচূড়া। এটি একদিকে প্রকৃতিকে যেমন সাজিয়েছে অপরূপ সৌন্দর্যে, অন্যদিকে এর সৌন্দর্য মুগ্ধ করছে তরুণ-তরুণী, নানা শ্রেণি-পেশার মানুষসহ ফুলপ্রিয় পথচারীদের। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে, সরকারি দফতরসহ স্কুল-কলেজে কৃষ্ণচূড়া গাছের লাল ও উজ্জ্বল সবুজ পাতার সংমিশ্রণ দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছে চারপাশ।


কৃষ্ণচূড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ফুলের ঘ্রাণে মুখরিত হয়ে আছে পুরো শহর। শহরের মূল সড়কের ডিভাইডারে পৌরসভার উদ্যোগে লাগানো হাসনাহেনা, রজনিগন্ধা, গন্ধরাজসহ নানা জাতের ফুল গাছে ফুল ফুটেছে। এটি একদিকে বাড়িয়েছে সৌন্দর্য অন্যদিকে হেঁটে কিংবা রিকশায় চলাচল করলে পাওয়া যায় এসব ফুলের সুঘ্রাণ।

ফেনী শহরের কৃষ্ণচূড়ার অপরূপ সৌন্দর্য দেখে ফুলপ্রিয় পথিকরা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া ফুল প্রকৃতিকে অনন্য সাজে সাজিয়েছে। এই ফুলের সৌন্দর্যের কারণে পথচারীরা একবার হলেও এই ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এর গাছের উপর নজর দিবে। পাশাপাশি তীব্র গরমে অন্যান্য ফুলের সুঘ্রাণে চারপাশ মুখরিত হওয়াতে ক্লান্তিতা কিছুটা হলেও কমছে।


তারা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া ফুলের এই নান্দনিক দৃশ্য দেখতে এর গাছ রোপণ করা জরুরি। রাস্তা প্রশস্তকরণ, ঘর-বাড়ি নির্মাণসহ নানা প্রয়োজনে গাছ কেটে ফেলা হয়। অন্যান্য গাছ রোপণ করার পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া রোপণ করলে একদিকে যেমন সৌন্দর্য বাড়াবে অন্যদিকে পরিবেশ বান্ধব হবে।

সাজিদ হাসান নামের এক পথচারী বলেন, কৃষ্ণচূড়া একদিকে যেমন প্রকৃতিতে অপরুপ সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে, আরেকদিকে গ্লোবাল ওয়ার্মিং কমাবে। সারাদেশে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে, আমার মতে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে এই গাছটিও যুক্ত করা উচিত। তীব্র গরমের পর বৃষ্টি হলো, এরপর শহরে নানা রঙের ফুলের দেখা মিলছে, ফুলের ঘ্রাণে চলাচল করতেই ভালো লাগছে।

ফারজানা ইয়াসমিন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ফুলের সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে। অন্যান্য ফুলের পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া ফুল আমার অনেক ভালো লাগে। আমাদের কলেজে বকুল তলা আছে, ক্যান্টিনের পাশে কৃষ্ণচূড়া গাছ আছে। সুযোগ পেলেই ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করি।

অনিক মোহন নামে একজন বলেন, রিকশায় করে যখন বাসায় ফিরি, শহরের রাস্তার মাঝে ভিডাইভারে লাগানো নানা জাতের ফুলের ঘ্রাণ মনকে আনন্দিত করে। রাতের বেলা শহর যখন নিস্তব্ধ হয়ে যায়, তখন এ ফুলের সৌন্দর্য কয়েকশ’ গুণ বেড়ে যায়।

সড়কের পাশে কৃষ্ণচূড়া লাগানো হলে সৌন্দর্য বাড়বে বলে মনে করেন পথচারী মিনহাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, রাস্তা প্রশস্তকরণের জন্য যে গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে, ওই গাছগুলোর জায়গা কৃষ্ণচূড়ার গাছ লাগালে রাস্তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে।

একই কথা বলেন শহরের ব্যবসায়ী নাদিম আহমেদ। তিনি বলেন, সৌন্দর্য ও পরিবেশের কথা বিবেচনা করে এই গাছ রোপণ করা উচিত আমাদের। তাপমাত্রা যেভাবে বাড়ছে অন্যন্যা গাছ রোপণ করার পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া গাছ রোপণ করার উদ্যোগ নিতে হবে। যেগুলো শহরে আছে তাতেই সৌন্দর্য বেড়ে গিয়েছে কয়েকগুণ, আরও যদি লাগানো যায় ফুলে ফুলে ভরে উঠবে আমাদের শহর।

কৃষ্ণচূড়া মাদাগাস্কারের শুষ্ক পত্রঝরা বৃক্ষের জঙ্গলে পাওয়া যায়। যদিও জঙ্গলে এটি বিলুপ্ত প্রায়, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে এটি জন্মানো সম্ভব হয়েছে। সৌন্দর্যবর্ধন গুণ ছাড়াও, এই গাছ উষ্ণ আবহাওয়ায় ছায়া দিতে বিশেষভাবে উপযুক্ত। কৃষ্ণচূড়া উদ্ভিদ উচ্চতায় কম (সর্বোচ্চ ১২ মিটার) হলেও শাখা-পল্লবে এটি বেশি অঞ্চল ব্যাপী ছড়ায়।

শুষ্ক অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে কৃষ্ণচূড়ার পাতা ঝরে গেলেও, নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে এটি চিরসবুজ থাকে। কৃষ্ণচূড়া ফুলের রং উজ্জ্বল লাল। পত্র ঝরা বৃক্ষ, শীতে গাছের সব পাতা ঝরে যায়। বাংলাদেশে বসন্ত কালে এ ফুল ফোটে। ফুলগুলো বড় চারটি পাপড়ি যুক্ত। পাপড়িগুলো প্রায় ৮ সেন্টিমিটারের মত লম্বা হতে পারে। কৃষ্ণচূড়া জটিল পত্র বিশিষ্ট এবং উজ্জ্বল সবুজ। প্রতিটি পাতা ৩০-৫০ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ২০-৪০ টি উপপত্র বিশিষ্ট। কৃষ্ণচূড়ার জন্মানোর জন্য উষ্ণ বা প্রায়-উষ্ণ আবহাওয়ার দরকার। এই বৃক্ষ শুষ্ক ও লবণাক্ত অবস্থা সহ্য করতে পারে।

জানা যায়, অপরূপ সৌন্দর্য ছড়ানোর পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর পাতা, মূলের বাকল ও ফুল ভেষজ গুণাগুণ সম্পূর্ণ, যা জ্বর ও খুশকি নিরাময়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। ভেষজটি হেমিপ্লেজিয়া, আর্থরাইটিস এবং কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। কৃষ্ণচূড়া গাছের শিকড়, বাকল এবং ফুল সবই পরজীবী সংক্রমণ নিরাময়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।

;

হলুদ আভায় মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে সূর্যমুখী 



শহিদুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ
ছবি: প্রাণের উচ্ছ্বাসে সূর্যমুখী

ছবি: প্রাণের উচ্ছ্বাসে সূর্যমুখী

  • Font increase
  • Font Decrease

মৃদু বাতাসে দোল খাচ্ছে সূর্যমুখী। বাস্তব জীবনের নিস্তব্ধতা ভাঙছে তার হলুদ আভায়। মৌমাছির আলিঙ্গন পেতে ছড়াচ্ছে উষ্ণ মুগ্ধতা। হলুদের কারুকার্যে বিমোহিত হচ্ছে পথিকের মন। লুকায়িত সৌন্দর্য প্রকৃতির মাঝে তুলে ধরে প্রবল আকর্ষণে টানছে দর্শনার্থীদের। সবুজ পাতা ভেদ করা সেই অনিন্দ্য হাসি যেন কৃষকের মুখেরই প্রতিচ্ছবি। সূর্যমুখী ফুল চাষে জনপ্রিয়তা বাড়ছে কৃষকদের মাঝে।

সূর্যমুখী এক ধরনের একবর্ষী ফুলগাছ। সূর্যমুখী গাছ লম্বায় ৩ মিটার (৯ দশমিক ৮ ফুট) হয়ে থাকে। ফুলের ব্যাস ৩০ সেন্টিমিটার (১২ ইঞ্চি) পর্যন্ত হয়। এই ফুল দেখতে কিছুটা সূর্যের মতো এবং সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে বলে এর এরূপ নামকরণ করা হয়েছে। ফুলের বীজ হাঁস-মুরগির খাদ্যরূপে ও তেলের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

জানা যায়, বাংলাদেশে ভোজ্যতেলের উৎস হিসেবে ১৯৭৫ সাল থেকে এ ফুলের চাষ শুরু হলেও কৃষকের মাঝে জনপ্রিয়তা পায় নি বহুদিন। পরে ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। বর্তমানে রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া, নাটোর জেলা, পাবনা, নওগাঁ, দিনাজপুর, গাজীপুর, টাঙ্গাইল প্রভৃতি জেলাতে এর ব্যাপক চাষ হচ্ছে।

সূর্যমুখীর বাঁধভাঙা হাসি আর প্রাণের উচ্ছ্বাস

সোমবার (১২ মে) সকালে সরেজমিনে নওগাঁ সদর উপজেলার মুক্তির মোড় কেন্দ্র শহীদ মিনারের পাশে দেখা যায়, সূর্যমুখী বাতাসে; দুলছে আলোর প্রতিফলনে পাপড়িগুলো যেন চকচকে হলুদ আভা ছড়াচ্ছে। মৌমাছি এক ফুল থেকে অন্যফুলে মধু আহরণে ছুটাছুটি করছে আর এসব দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছে পথচারীরা। এছাড়াও নওগাঁর বেশ কিছু অঞ্চলে চাষ হচ্ছে সূর্যমুখী। একদিকে যেমন ফুলগুলো সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে তেমনি বীজ থেকে ভোজ্য তেল উৎপাদনে ভূমিকা রাখছে সূর্যমুখীর বীজ। সূর্যমুখী গাছ শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। 

প্রতিদিন ভোরে সূর্যমুখী বাগানের সকল গাছ অনেকটা পূর্বদিকে মুখ করে থাকে। যেদিকে সূর্য দেখা দেয় এবং ধীরে ধীরে ওপরে উঠতে থাকে। সূর্যের সাথে সাথে সূর্যমুখীগুলোও ধীরে ধীরে নিজেদের দিক পাল্টাতে থাকে। সূর্য যেদিকে যায় তারাও সেদিকে যায়। সবসময়ই এগুলো সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে। সূর্য যখন পশ্চিম দিকে অস্ত যায় তারাও তখন পশ্চিম দিক বরাবর থাকে। অস্ত যাওয়ার পরে তারা রাতব্যাপী আবার উল্টো দিকে ঘুরে পূর্বমুখী হয়। এভাবে শুকিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের এই চক্র চলতেই থাকে।

সূর্যের সাথে সাথে নিজেদের দিকও পাল্টাতে থাকে সূর্যমুখী

তবে সবার মাঝে একটি প্রশ্ন অনেক সময় ঘুরপাক খায় যে সূর্যমুখী ফুল কেন সূর্যে দিক হয়ে থাকে! সম্প্রতি বিজ্ঞানীদের একটি দল সূর্যমুখীর এই দিক পরিবর্তন সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্যের রহস্য উন্মোচন করেছেন। তাদের গবেষণা থেকে বেরিয়ে আসে সূর্যমুখীরা তাদের নিজস্ব সার্কাডিয়ান চক্রে আবদ্ধ। এই চক্র সচল থাকার কারণে সূর্যমুখীরা সব সময় সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে। গবেষকরা সায়েন্স জার্নালে তাদের গবেষণার বিস্তারিত প্রকাশ করেছেন। সার্কাডিয়ান চক্র বা সার্কাডিয়ান ঘড়িকে অনেক সময় ‘দেহঘড়ি’ নামেও ডাকা হয়। মানুষের মাঝেও এই চক্র বিদ্যমান। যেমন প্রত্যেক মানুষেরই দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম চলে আসে।

পথচারী রায়হান বলেন, ফুল শুভ্রতার প্রতীক ও পবিত্র। ফুলকে যারা ভালোবাসে তাদের মনটাও সুন্দর। সূর্যমুখী ফুল সব ফুলের চেয়ে আলাদা কারন সূর্যের দিক মুখ করে বেশিরভাগ থাকে এ ফুল। বিশেষ করে দুপুর শুরু হলে সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে এ ফুল যা দেখতেও খুব সুন্দর লাগে তাছাড়া এ ফুলের বীজ থেকে তেল হয় যা অনেক স্বাস্থ্যকর।

ক্ষুদে শিক্ষার্থী আফরিন (১০) জানায়, আমি ফুল খুবই ভালোবাসি আর সূর্যমুখী ফুলগুলো হলুদ হবার কারনে আরো বেশি ভালো লাগে। নামটা যেমন সুন্দর তেমনি মুগ্ধতাও ছড়ায়। ফুলগুলো থেকে তেল হয় তাই কোনোভাবেই নষ্ট করা যাবে না। আমরা দূর থেকে দেখেই শান্তি পাই।

সূর্যের সাথেই একাত্মতা সূর্যমুখীর

স্থানীয় বাসিন্দা আরেফিন তুহিন বলেন, স্বল্প পরিসরে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য যারা সূর্যমুখী ফুলের গাছ লাগিয়েছে তারা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। ফুল মানেই সুন্দর সূর্যমুখীও এটিএ ব্যাতিক্রম নয়। মাঝে মাঝে যখন ফুলের দিকে চোখ যায় খুব ভালোলাগা কাজ করে। এ ফুল দেখতে যেমন সুন্দর এটির তেল ও খুব পুষ্টিকর।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে চলতি অর্থবছরে সূর্যমুখী চাষের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ হেক্টর ও অর্জন হয়েছে ৬৫ হেক্টর এবং মোট উৎপাদন হয়েছে ১০০ মেট্রিক টন। 

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বার্তা২৪.কমকে বলেন- সূর্যমুখী একদিকে যেমন শুভ্রতার প্রতীক আবার অন্যদিকে বীজ থেকে তেল উৎপাদন হয় আবার মধুও পাওয়া যায়। বাজারে যে ভৈজ্যতেল গুলো রয়েছে যেমন, সয়াবিন,সরিষা, পাম-ওয়েল ইত্যাদি এগুলোর চেয়েও অনেক বেশি পুষ্টিগুণ আছে সূর্যমুখীর তেলে যা স্বাস্থ্যকর এবং স্বাস্থ্যর জন্য খুবই উপকারী। আমরা বেশি বেশি উৎপাদনে কৃষকদের সব রকম পরামর্শ দিয়ে থাকি।

;

ওই আকাশে লুকিয়ে আছে মা



সহিদুল আলম স্বপন, লেখক জেনেভা সুইজারল্যান্ড
ওই আকাশে লুকিয়ে আছে মা

ওই আকাশে লুকিয়ে আছে মা

  • Font increase
  • Font Decrease

তো ১৯৯৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকের কথা, তখন সুইস কোম্পনী ফাদসা এস এ তে চাকরী করি। হঠাৎ একদিন কোম্পানীর মালিক মশিউয়্যু মিশেল লাসের (বাংলায় জনাব মিশেল ল্যাসার) তার অফিসে ডেকে পাঠালেন।আমিতো ভয়ে দিশেহারা, ভাবলাম ফ্রেন্স ভাষা না জানার কারণে আমার মনে হয় এবার চাকরীটাই গেল। বলে রাখা ভালো, সুইজারল্যান্ডের চারটি সরকারী ভাষার(ফরাসী, সুইস জার্মান, ইতালীয়ান এবং রোমন্স - রোমান নয়)মাঝে জেনেভা ফরাসী ভাষাভাষী।নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে একটা ভ্যানিশিং ক্রিমের পাবলিসিটি ছিল-ম্যানোলা সিবোঁ ভ্যানিশিং ক্রিম নিয়ে এলো ফরাসী সৌরভ। পরে জেনেছি সিবোঁ ফরাসী শব্দ যার অর্থ খুব ভালো (হয়তো বাংলায় বুঝাতে চেয়েছেন সুগন্ধময়)-আর এটাই শুধু আমার ফরাসী ভাষার ভান্ডার।

যাই হোক, ভয়ে ভয়ে তাঁর খাস কামরায় হাজির হলাম।দেখি কামরায় সোফার এককোনে প্যাট্রিক(আমার সুইস সহকর্মী আমার চেয়ে বছর দুয়েক এর ছোট হবে)আর লরেতা মার্টিনি এইচ আর হেড বসে আছে। বুঝতে আর দেরী হলোনা, এখনি বস বলবেন ইউ আর ফায়ার এবং প্যাট্রিককে তোমার সব কাজগুলো বুঝিয়ে দাও।

কোথায় ফায়ার তা না বলে মশিউয়্যু লাসের বললেন মাই ডিয়ার, আগামী সপ্তাহে প্যাট্রিক আর আলম (আমি) তোমরা দুজনে রটারডাম যাচ্ছো ম্যানেজমেন্ট ট্রেনিং এর জন্য। আলম তুমি কাল ভোরে বার্ণ(সুইজারল্যান্ডের রাজধানী)যাবে নেদারল্যান্ডের ভিসা করাতে। লরেতা তোমাকে সব বুঝিয়ে দেবে। বলে রাখা ভালো তখনো আমি সুইস নাগরিক হয়ে উঠিনি, আর মশিউয়্যু মিশেল লাসের ই আমাকে সুইজারল্যান্ডে স্হায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ করে দিয়েছিলেন।

রটারডাম উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের রাষ্ট্র নেদারল্যান্ডসের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর( আমস্টারডামের পরেই)।এটি ইউরোপের বৃহত্তম ও বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর।নেদারল্যান্ডসের দক্ষিণ হল্যান্ড প্রদেশে, উত্তর সাগরের তীরে, রাইন নদীর মোহনায় অবস্থিত এই বন্দর শহরকে প্রায়শই "ইউরোপের প্রবেশদ্বার" নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে।

তো যেই কথা সেই কাজ, সমস্ত আনুষ্ঠিকতা শেষে সপ্তাহান্তে কেএলএম রয়্যাল ডাচ এয়ারলাইন্সে চেপে জেনেভা থেকে আমস্টারডামের শিফল বিমানবন্দরে এসে পৌঁছলাম। আমস্টারডাম শিফল বিমানবন্দর থেকে ট্রেনে রটারডাম সেন্ট্রাল ট্রেন ষ্টেশনে এসে নামলাম। সেখান থেকে টেক্সীকরে সরাসরি রটারডাম ম্যারিয়ট হোটেলে।রটারডাম স্কুল অফ ম্যানেজমেন্ট, ইরাসমাস ইউনিভার্সিটি (আরএসএম) ইউরোপের শীর্ষস্থানীয় বিসনেস স্কুলগুলির মধ্যে একটি, এখানেই আমাদের কোর্স। বাংলাদেশ আর নেদারল্যান্ডসের মাঝে চার পাঁচ ঘন্টার পার্থক্য। প্রতিদিন বাবা -মা সাথে কথা হয়। বাবা আমার জ্ঞানের পাগল। ৬০ বছর বয়সে উনি তাঁর মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। কিন্তু বাবা মা দুজনের কেউ মানতে পারছিলেন না আমি বিদেশে থাকি। দেশে থাকতে মা এর আহাজারীতে বাবা বিভিন্ন কায়দায় বাংলাদেশ মিলিাটারী একাডেমী থেকে আমায় ছাড়িয়ে এনেছিলেন। রাতে ঘুমাতে যাবার আগের মা কে ফোন করে ঘুমাই। বরাবরের মতে ১৮ ই ফেব্রুয়ারি রাতে মার সাথে কথা বলছি, মা আমার প্রাইমেরীর গন্ডি পেরুনো কিন্তু শিক্ষার প্রতি তাঁর পরম শ্রদ্ধা। গান-নাটক সংস্কৃতির পাগল আমি। মা আমার প্রতিদিন ই জিজ্ঞেস করেন কেমন চলছে গান-বাজনা। অনেক গুলো নূতন গানের ক্যাসেট কিনে রেখেছেন তিনি, সুইজারল্যান্ডে ফিরলেই ডাকযোগে পাঠিয়ে দিবেন, আমার প্রিয় কুমিল্লার খদ্দরের হাউয়াই শার্টসহ। আরো কত কথা, শেষ হয়েও হয়না শেষ। মায়ের প্রতিটি কথায় সেকি এক অনুপ্রেরণা। আজ বাংলাদেশে শেষ রোজা। পরদিন ১৯ ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার রোজার ঈদ।

পরদিন ক্লাস নেই, ভেবে রেখেছি সকালে ব্রেকফাস্ট না করে লম্বা একটা ঘুম দিয়ে ফ্রেস হয়ে তারপর সারাদিন ঘুরে বেড়াবো, দেখবো বিশ্বের সবচেয়ে উদ্ভাবনী বন্দর, রটারডাম চিড়িয়াখানা, রিমাস্টারড" ডিজিটাল আর্ট অডিওভিজ্যুয়াল, ইউরোমাস্ট টাওয়ার, কিউব হাউস ইত্যাদি আর রাতে যাবে বাইয়্যাবীচ ক্লাবে নাচতে।

হোটেল রুমের সাইড টেবিলে রাখা ফোনটা সাত সকালেই আজ চিৎকার করে কান্না করে চলেছে, ক্রিং ক্রিং ক্রিং ক্রিং ক্রিং……। ফোনটা যেন পাগল হয়ে গেছে। বিরক্ত হয়েই মিনিট খানেক পর আঁধো বোজা চোখে ফোনটা কানের কাছে নিয়ে বললাম, হোয়াট দ্যা হেল প্যাট্রিক, লেট মি গেট সাম স্লিপ । ফোনের ঐ প্রান্ত থেকে ভেসে এলো ভাইয়া আমি ফরিদ(আমার ছোট বোন পান্নার বর), এক নি:শ্বাসে বলে চলছেন, ভাইয়া আমরা এই মাত্র কবরস্তান থেকে আসলাম, সব কিছুই ঠিক ছিল, দাফন- কাফন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে, কেঁদে আর কি করবেন, আল্লাহর কাছে দোয়া করেন, এইযে আব্বার সাথে কথা বলেন, আম্মাতো কাউকে কষ্ট দেননি, আল্লাহর কাছে আম্মার রুহের মাগফিরাত কামনা করে নামাজ পড়ুন যেন উনাকে আল্লাহ জান্নাতে স্হান করে দেন।চোখের জলে বালিশ ভিজেঁ যাচ্ছে আমি আজো প্রতিনিয়ত গেয়ে চলছি - " সবাই বলে, "ওই আকাশে লুকিয়ে আছে" "খুঁজে দেখ, পাবে দূর নক্ষত্রমাঝে"রাতের তারা, আমায় কি তুই বলতে পারিস কোথায় আছে, কেমন আছে মা? ভোরের তারা, রাতের তারা, মা-কে জানিয়ে দিস অনেক কেঁদেছি আর কাঁদতে পারি না।

;