সাসপেন্স চলচ্চিত্রের গুরু আলফ্রেড হিচকক



শেহজাদ আমান, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
রহস্য, রোমাঞ্চ ও সাসপেন্সে ভরপুর হিচককের  নির্মিত চলচ্চিত্রগুলো

রহস্য, রোমাঞ্চ ও সাসপেন্সে ভরপুর হিচককের নির্মিত চলচ্চিত্রগুলো

  • Font increase
  • Font Decrease

গায়ের লোম দাঁড় করিয়ে দেওয়ার মতো হরর, থ্রিলার বা সাসপেন্স ছবি উপভোগ করতে যারা ভালোবাসেন, তাদের কাছে আলফ্রেড হিচকক নিঃসন্দেহে এক অবিস্মরণীয় নাম। উত্তেজনার নৌকায় ভর করে, রুদ্ধশ্বাসে আজও দর্শক উপভোগ করেন কিংবদন্তি ব্রিটিশ চলচ্চিত্র পরিচালক আলফ্রেড হিচককের নির্মিত চলচ্চিত্রগুলো। আজ ১৩ আগস্ট এই গুণী পরিচালকের ১২০তম জন্মদিবস।

১৮৯৯ সালের এই দিনে ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডনের এক ক্যাথলিক পরিবারে জন্মেছিলেন তিনি। বাবা-মায়ের দ্বিতীয় পুত্র আলফ্রেডের শৈশব-কৈশোরের পড়ালেখা সম্পন্ন হয়েছিল জিসুইত ক্লাসিক স্কুল এবং সেন্ট ইগনাতিয়াস কলেজ ও সালেসিয়ান কলেজে।

মাত্র পাঁচ বছর বয়সে অদ্ভুত ও অনাকাঙ্ক্ষিত অভিজ্ঞতা লাভ করেন তিনি। তার বাবা ছেলের দুষ্টুমির শাস্তি দিতে তাঁকে নিকটবর্তী থানা পুলিশের কাছে পাঠিয়ে দেন, যাতে করে তাঁকে পাঁচ মিনিট বন্দী করে রাখা হয়। আর অল্প বয়সের এরকম অদ্ভুত পরিস্থিতিই হয়তো পরবর্তীকালে তাঁর সিনেমাজুড়ে আতঙ্ক, সাসপেন্স—এ ব্যাপারগুলোকে বেশি আনতে আগ্রহী করে তোলে।

মাত্র ১৫ বছর বয়সে বাবাকে হারানোর পর তিনি লন্ডন কাউন্টি স্কুল অফ ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড নেভিগেশনে যান সেন্ট ইগনাতিয়াস ছেড়ে। শিক্ষাজীবন শেষে তিনি ড্রাফটসম্যান এবং অ্যাডভারটাইজিং ডিজাইনার হিসেবে ক্যাবল কোম্পানি “হেনলি”তে কাজ করেন। সেইসাথে চলতে থাকে তাঁর লেখালেখির কাজও। পরে চলচ্চিত্রকার হলেও এসব লেখা নিঃসন্দেহে তাঁর সৃজনশীল মস্তিষ্ককে জুগিয়েছিল দারুণ শক্তি।

১৯১৯ সালে হেনলি টেলিগ্রাফ প্রতিষ্ঠিত হয় আর তার প্রথম সংকলনে প্রকাশিত হয় তার লেখা “গ্যাস”। গল্পটি ছিল এক অল্পবয়সী নারীকে কেন্দ্র করে। তার পরবর্তী লেখার নাম ছিল “দ্য ওমেন পার্ট”, এটাও একই বছর প্রকাশিত হয় সেই পত্রিকায়। এখানে একজন স্বামী ও তার স্ত্রীর মাঝে সাংঘর্ষিক জীবনের কথা ফুটে উঠে। এছাড়া “সরডিড”, “এন্ড দেয়ার ওয়াজ নো রেইনবো”র মতো লেখাও তিনি লিখেছেন। তার সর্বশেষ লেখা ছিল “ফেডোরা”, যেখানে তিনি বলতে চেয়েছেন তার ভবিষ্যৎ স্ত্রী কেমন হবে তা নিয়ে।

১৯২০ সালের দিকে এসে আলফ্রেড হিচকক আগ্রহী হয়ে ওঠেন ফটোগ্রাফি এবং চলচ্চিত্রের প্রতি। তিনি লন্ডনে ফিল্ম প্রোডাকশনে কাজ করা শুরু করেন। টাইটেল কার্ড ডিজাইনার হিসেবে কিছুদিন কাজ করেন “প্যারামাউন্ট পিকাঁচার”-এর লন্ডন শাখায়। এরপর তিনি কাজ করেন “ইসলিংটন স্টুডিও”তে। সেখানে টাইটেল কার্ড ডিজাইনার হিসেবে কাজ করতে করতে চিত্রপরিচালক হিসেবে আত্নপ্রকাশ করেন তিনি।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/13/1565698423108.jpg
◤ হিচককের পরিচালিত ও মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম সিনেমা “দ্য প্লিজার গার্ডেন” ◢


১৯২২ সালে ‘নাম্বার থার্টিন’ নামে চলচ্চিত্রের কাজ শুরু করেন। কিন্তু তার জীবনের প্রথম চলচ্চিত্রটি অসম্পূর্ণই থেকে যায়। এরপর একের পর এক তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণ করে যান। আর চলচ্চিত্রে তিনি ফুটিয়ে তুলতে থাকেন তার নান্দনিকতা ও চিন্তাভাবনাগুলোকে। ১৯২৫ সালে তিনি নির্মাণ করেন “দ্য প্লেজার গার্ডেন”। এটি ছিল তাঁর মুক্তি পাওয়া প্রথম ছবি। এ চলচ্চিত্রটি ছিল ব্রিটিশ-জার্মান প্রোডাকশনের এবং চলচ্চিত্রটি হয় দারুণ জনপ্রিয়। এরপর হিচকককে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি, এগিয়ে গিয়েছেন সামনে । বিভিন্ন প্রোডাকশনের ব্যানারে একের পর এক চলচ্চিত্র নির্মাণ করে যেতে থাকেন তিনি। ১৯২৭ সালে মুক্তি পায় তার চলচ্চিত্র “দ্য লজার”। “দ্য লেডি ভেনিশেস” (১৯৩৮) ও “জ্যামাইকা ইন” (১৯৩৯)-এর মতো চলচ্চিত্র নির্মাণের পর তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে আটলান্টিকের ওপারে আমেরিকাতেও ।

আলফ্রেড হিচকক ১৯৪০ সালে পুরো পরিবার নিয়ে হলিউডে যান। শুরু হয় তার হলিউডে চলচ্চিত্র জীবন। ডেভিডও সেলঝনিকের প্রযোজনায়, তাঁর পরিচালনায় চলচ্চিত্র “রেবেকা” মুক্তি পায় ১৯৪০ সালে। রেবেকা তখন অস্কারের আসরে বছরের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে পুরস্কার লাভ করে। এরপর হলিউডে মুক্তি পায় তাঁর পরিচালিত একের পর এক ক্ল্যাসিক সব চলচ্চিত্র। এদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, “লাইফবোট” (১৯৪৪), “স্পেলবাউন্ড” (১৯৪৫), “নটোরিয়াস” (১৯৪৬), “রোপ” (১৯৪৮), “স্ট্রেনজার্স অন এ ট্রেইন” (১৯৫১), “ডায়াল এম ফর মার্ডার” (১৯৫৪), “রিয়ার উইন্ডো” (১৯৫৪)।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/13/1565698610155.jpg
◤ হিচককের দর্শকনন্দিত ‘ভার্টিগো’ ছবির একটি দৃশ্য ◢


১৯৫৮ আর ১৯৫৯ সালে মুক্তি পায় তাঁর অত্যন্ত জনপ্রিয় দুটি চলচ্চিত্র যথাক্রমে “ভার্টিগো” আর “নর্থ বাই নর্থওয়েস্ট”। এরপর আসে সেই বিখ্যাত ১৯৬০ সাল। হিচককের ফিল্মোগ্রাফি ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। এসময় মুক্তি পাওয়া “সাইকো” (১৯৬০) চলচ্চিত্রটির ব্যবসায়িক সাফল্য আর দর্শকপ্রিয়তা ছিল চলচ্চিত্র ইতিহাসের অন্যতম মাইলফলক। সম্প্রতি হিচককের সাইকোর সিনেমা নির্মাণের ভিতরের কাহিনী নিয়ে নির্মিত হয়েছে ব্রিটিশ চলচ্চিত্র “হিচকক”, যেখানে অ্যান্থনি হপকিন্স অভিনয় করেছেন হিচককের চরিত্রে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/13/1565698712198.jpg
◤ হিচককের সবচেয়ে আলোচিত ও জনপ্রিয় সিনেমা “সাইকো”র পোস্টার ◢


সাইকোর পর ১৯৬৩ সালে মুক্তি পায় আরেক সাড়াজাগানো চলচ্চিত্র “দ্য বার্ডস”। “ফ্যামিলি প্লট” (১৯৭৬) ছিল তার পরিচালিত সর্বশেষ চলচ্চিত্র। হিচককের ফিল্মোগ্রাফিতে আরেকটি উজ্জ্বলতম অধ্যায় হয়ে আছে ১৯৫৫ সালে প্রচারিত আলফ্রেড হিচকক প্রেজেন্টস। এটি ছিল একটি টিভি শো, যার প্রতিটি পর্বের ব্যাপ্তিকাল ছিল ২৫ মিনিট। ১৯৫৫ সাল থেকে শুরু হওয়া এই সিরিজটি চলে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত।

১৯৭৯ সালের ৭ মার্চ আলফ্রেড হিচকক আমেরিকান ফিল্ম ইন্সটিটিউট লাইফ এচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড পান । অনুষ্ঠানে তিনি একটা কথাই বলেন আর তা হচ্ছে চারজন মানুষের কথা। তারা হচ্ছেন এডিটর, লেখক, তার মেয়ে প্যাট এবং তার স্ত্রী আলমা রিভিলি । যাদের স্নেহ, ভালোবাসা ও উৎসাহ ছাড়া তিনি এতদূর আসতে পারতেন না।

“এন্টারটেইনমেন্ট উইকলি” ম্যাগাজিনে বিশ্বের সেরা একশত চলচ্চিত্রের মধ্যে তার চলচ্চিত্র “সাইকো”, “ভারটিগো”, “নর্থ বাই নর্থওয়েস্ট” ও “নটোরিয়াস” স্থান পায় । এছাড়া ব্রিটেনের বিখ্যাত এম্পায়ার ম্যাগাজিনের “গ্রেটেস্ট ডিরেক্টরস এভার” তালিকায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন হিচকক। আমেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউটের হান্ড্রেড মোস্ট হার্ট পাউন্ডিং মুভিজ তালিকায় ৯টি সিনেমাই হিচককের। যার মধ্যে প্রথম স্থানটি অর্জন করেছে “সাইকো”।

তিনি গোল্ডেন গ্লোব, সিনেমা জাম্পো অ্যাওয়ার্ড, লরিয়াল অ্যাওয়ার্ড, ডিরেক্টরস গিল্ড অফ আমেরিকা অ্যাওয়ার্ড, আমেরিকান ফিল্ম ইন্সটিটিউট অ্যাওয়ার্ড, একাডেমি অ্যাওয়ার্ড-এর সম্মাননাসহ অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন।

সিনেমাজগতকে আলফ্রেড হিচককের দেওয়া সবচেয়ে বড় উপহার ছিল বড় পর্দায় প্রতিটি দৃশ্যকে এমনভাবে ধারণ করা যেন তা দর্শকের মনে সাসপেন্স বা উদ্বেগ সৃষ্টি করে। তাঁর সৃজনশীল ক্যামেরার কাজ ও দৃষ্টিকোণ, এডিটিংয়ের নিত্যনতুন তরিকা তাঁর ছবিগুলোকে করেছে অনন্য। আর হারমান বার্নার্ডের মিউজিক হিচককের সেরা ছবিগুলোকে দিয়েছে ভিন্নমাত্রা। আলফ্রেড হিচকক “অ্যাকাডেমি অব মোশন পিকচার্স”-এর আর্ভিং জি থালবার্গ মেমোরিয়াল পুরস্কার পান। আমেরিকান ফিল্ম ইন্সটিটিউট তাকে “লাইফ অ্যাচিভমেন্ট” সম্মাননায় ভূষিত করে। ১৯৮০ সালে তিনি নাইট উপাধিতে ভূষিত হন।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/13/1565698900855.jpg
◤ সারাজীবন অসংখ্য পুরস্কার পেলেও তাঁকে দেওয়া হয়নি অস্কার। বিষয়টা বেশ বিস্ময়করই! ◢


কিন্তু বিস্ময়কর ব্যাপার হলো তিনি কখনো অস্কার জেতেননি। কী কারণে তাঁকে অস্কারের সম্মান থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, তা নিয়ে অনেক বিতর্কই রয়েছে। তবে, সাসপেন্সপ্রিয় সাধারণ দর্শকেরা মনেই করতে পারেন—অস্কার না দিয়ে তাঁকে বঞ্চিত করা হয়নি, তাঁকে পুরষ্কারটি না দিয়ে বঞ্চিত হয়েছে আসলে অস্কার কর্তৃপক্ষই।

অস্কারের চেয়েও অনেক বড় পুরষ্কার—বিশ্বের আপামর সাসপেন্সপ্রিয় দর্শকের কাছে প্রিয় চলচ্চিত্র নির্মাতা হওয়া—তো তিনি পেয়েছেনই।

লেখাটি শেষ করা যাক মজার একটি তথ্য দিয়ে। যদি হিচককের ভয়ংকর চলচ্চিত্রগুলো দেখতে আপনি ভয় পেয়ে থাকেন, তবে জেনে নিন এই দলে আপনি একা নন। স্বয়ং হিচককই নিজের পরিচালিত ছবিগুলো দেখতে ভয় পেতেন। ১৯৬৩ সালে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমি আমার নিজের ছবি দেখতে ভয় পাই। কখনোই ছবিগুলো দেখতে চাই না। না-জানি মানুষ কিভাবে দেখে আমার ছবি!”

কাজেই, কেউ যদি রোমাঞ্চ ও সাসপেন্সপ্রিয় দর্শক হয় এবং এখনো যদি হিচককের কোনো মুভি না দেখে থাকে, তাহলে অবশ্যই সে স্বাগত হিচককের রোমহর্ষক দুনিয়ায়!

   

৯৩ বছর বয়সে বৃদ্ধের অবিশ্বাস্য কর্মকাণ্ড



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বৃদ্ধ জন স্টারব্রুক

বৃদ্ধ জন স্টারব্রুক

  • Font increase
  • Font Decrease

শৈশবে খেলা, কৈশরে পড়ালেখা, যৌবনে চাকরি, মধ্যবয়সে সংসার, বৃদ্ধবয়সে একটা মাথা গোজার ঠাঁই খুঁজে অবসরে সময় কাটিয়ে দেওয়া। কপাল খারাপ থাকলে বিছানাতেই শোয়া বা আধশোয়া থেকে মৃত্যুর দিন গোণা। সাধারণত এভাবেই মানুষের জীবন কেটে যায়। অনেকে আবার মধ্যবয়সের পরেই নানারকম রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। অথবা শরীরকে বিভিন্ন রোগের আবাসস্থল বানিয়ে দুর্বল হয়েই বেঁচে থাকেন। তবে খড়ের গাদায় সূচের মতো দু-একজন থাকে যারা একেবারেই ব্যতিক্রম। তেমনভাবেই আলোচনায় এসেছেন ৯৩ বছরের এক বৃদ্ধ।  তার ব্যতিক্রমী জীবনযাপনের ধারাই আলোড়ন সৃষ্টি করেছে যুসমাজে।     

যুক্তরাজ্যের বাসিন্দা জন স্টারব্রুক। তিনি একজন ওয়াটার পোলো খেলোয়াড়। এটি মূলত পানির মধ্যে বাস্কেটবলের মতো একধরনের খেলা। এইখেলার সাথে কুস্তি খেলারও কিছুটা সাদৃশ্য রয়েছে। জনের বর্তমান বয়স ৯৩ বছর। এই বয়সেও যথেষ্ট সুস্থ এবং সবল তিনি। সমবয়েসীদের যেখানে সোজা হয়ে দাঁড়াতেও ২ জনের সহায়তা লাগে, সেখানে এখনো ম্যারাথনে দৌড়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। পাশাপাশি বেশ দক্ষ সাঁতারুও বটে! ৮০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সাঁতার কাটা অব্যাহত রেখেছেন তিনি।

প্রায় শতাব্দি ছুঁই ছুঁই বৃদ্ধের এমন কারিশমা দেখে চোখ ছানাবড়া হবার উপক্রম। জন মূলত একজন সাঁতারু। পেশাগতভাবে না হলেও অনেক ছোটবেলা থেকেই তিনি সাঁতার কাটেন তিনি। দেশের সম্মানজনক অনেপ্রতিযোগীতায় একাধিক বার চ্যাম্পিয়নের খেতাবও জেতেন। চাকরি করেছেন ‘ব্রিটিশ আর্মি মেডিক্যাল কর্পস’-। সেখানেও সাঁতারের দক্ষতার কারণে তার বেশ সুনাম ছিল।   

ম্যারাথনে দৌড়াচ্ছেন ৯৩ বছরের জন

তবে সাঁতারের পাশাপাশি এখন ম্যারাথেনেও অংশগ্রহণ করেছেন জন। ৫২ টির বেশি ম্যারাথনের দৌড় শেষ করেছেন তিনি। জানালেন এই বয়সেও তার এমন চ্যালেঞ্জিং সব কাজের অভিজ্ঞতা। সুস্থতা ধরে রাখার রহস্যও ফাঁস করলেন সকলের কাছে। ব্রিটিশ নাগরিক জন বন্ধুদের কাছে ‘দ্য লিজেন্ডনামেই পরিচিত। একই নামে তাকে আখ্যায়িত করছে ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলো

জন স্টারব্রুক জানান, তিনি এখনো সপ্তাহের ৬ দিনই জিমে যাতায়াত করেন। বিশেষ কোনো খাদ্যাভাস নেই তার। খাদ্যতালিকায় প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি রাখতে পছন্দ করেন- এই যা। তাছাড়া প্রতিদিন সকালে পোরিজ খান তিনি। তবে তিনি কখনো ধূমপান করেননি। অ্যালকোহলও খুব সীমিত পরিমাণে সেবন করতেন। মূলত এই বয়সেও এটা সবল থাকার পেছনে বংশ পরম্পরায় পাওয়া নিজের জীন আসল কারণ- বিশ্বাস করেন জন।

কারণ যাই হোক, প্রানবন্ত এই বৃদ্ধ বিশ্ববাসীকে অবাক করেছে। তার মতোই দৃঢ় মানসিকতা ধরে রাখার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন যুবক-যুবতীরা।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

;

প্রশ্ন আর উত্তর যেন পরস্পরের সাংঘর্ষিক!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রশ্ন থাকে এক আর তার উত্তর হয় ভিন্ন। এমন উত্তরপত্রের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায়ই দেখা যায়। এবার এমনই এক উত্তরপত্রের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে ভাইরাল হয়েছে। যা দেখে রীতিমতো সবাই অবাক! তবে এই ঘটনার জন্ম দেওয়া দেশটি বাংলাদেশ নয়, প্রতিবেশী দেশ ভারতের একটি হিন্দি পরীক্ষায় ঘটেছে এমন কাহিনী।

ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রকাশিত ভিডিওতে পরীক্ষার্থীর এমন উত্তর দেখে শিক্ষককেও হাসতে দেখা যায়। 

ভিডিওটি ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করা হয়েছে @n2154j অ্যাকাউন্টের একটি আইডি থেকে।

ওই ভিডিওতে দেখা যায়, একটি প্রশ্ন ছিল এমন, সংযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ (যৌগিক ব্যঞ্জনবর্ণ) কী? এই প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষার্থীটি একটি খাদ্য রূপক দিয়ে উত্তর দিল: "মাটার পনির এবং সব মিশ্র সবজি একত্রিত একটি খাবার।"

আরেকটি প্রশ্ন ছিল "অতীত কাল কাকে বলে?" এর উত্তরে ওই পরীক্ষার্থি লিখেছে, "যখন অতীত আমাদের অতীতের আকারে আসে, তখন তাকে অতীত কাল বলা হয়।"

ভিডিও অনুযায়ী আরও একটি প্রশ্ন ছিল "বহুবচন কাকে বলে?" এর উত্তরে সে লিখেছে "যে পুত্রবধূ তার শ্বশুরবাড়ির কথা শোনে তাকে বহুবচন বলে।"

শিক্ষার্থীটির এমন উত্তর শুনে হাসিতে ফেটে পড়েন শিক্ষক। এমন উত্তরগুলোকে শিক্ষক ভুল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। যদিও এমন উত্তরের জন্য তাকে পুরোপুরি হতাশ করা হয়নি। তাকে ১০ মার্কের মধ্যে ৫ নম্বর দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষক পরে তার উত্তরপত্রে লিখে দিয়েছিলেন, এই ৫ মার্ক তোমার মস্তিষ্কের জন্য, ছেলে।

ভিডিওটি দেখে সবাইকে হাসির ইমোজি দিতে দেখা যায়। সম্পূর্ণ নম্বর না পাওয়ায় অনেকেই যুক্তি দিয়ে লিখেছেন, ছাত্রটি তার কৌতুক প্রতিভার জন্য পূর্ণ নম্বর পাওয়ার যোগ্য।

তবে এমন ঘটনা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছেন, ছাত্র এবং শিক্ষকের হাতের লেখা সন্দেহজনকভাবে একই রকম।

অন্য এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, "প্রশ্ন এবং উত্তর একই হাতের লেখা"। 

;

ফেনী শহরে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে কৃষ্ণচূড়া



মোস্তাফিজ মুরাদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ফেনী
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

'কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরি কর্ণে-আমি ভুবন ভুলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে' জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই মনোমুগ্ধকর গানে ফুটে উঠেছে কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য। কৃষ্ণচূড়া যেন প্রকৃতিকে দান করেছে লাল আভার অপরূপ সৌন্দর্যের মহিমা। সাথে গ্রীষ্মের উত্তাপে শহরে সৌরভ ছড়াচ্ছে নানা জাতের ফুল। তীব্র তাপদাহের পর কালবৈশাখী, এরপর মাঝারি বৃষ্টির মধ্যে ফুলের আগমন। এতে রঙের উল্লাসে মেতে উঠেছে ফেনী শহরবাসী।

ফেনী শহরের কোর্ট বিল্ডিং, এলজিইডি, পুলিশ লাইন, নবীন চন্দ্র সেন কালচারাল সেন্টার, ফেনী সরকারি কলেজ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ফুটে আছে কৃষ্ণচূড়া। এটি একদিকে প্রকৃতিকে যেমন সাজিয়েছে অপরূপ সৌন্দর্যে, অন্যদিকে এর সৌন্দর্য মুগ্ধ করছে তরুণ-তরুণী, নানা শ্রেণি-পেশার মানুষসহ ফুলপ্রিয় পথচারীদের। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে, সরকারি দফতরসহ স্কুল-কলেজে কৃষ্ণচূড়া গাছের লাল ও উজ্জ্বল সবুজ পাতার সংমিশ্রণ দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছে চারপাশ।


কৃষ্ণচূড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ফুলের ঘ্রাণে মুখরিত হয়ে আছে পুরো শহর। শহরের মূল সড়কের ডিভাইডারে পৌরসভার উদ্যোগে লাগানো হাসনাহেনা, রজনিগন্ধা, গন্ধরাজসহ নানা জাতের ফুল গাছে ফুল ফুটেছে। এটি একদিকে বাড়িয়েছে সৌন্দর্য অন্যদিকে হেঁটে কিংবা রিকশায় চলাচল করলে পাওয়া যায় এসব ফুলের সুঘ্রাণ।

ফেনী শহরের কৃষ্ণচূড়ার অপরূপ সৌন্দর্য দেখে ফুলপ্রিয় পথিকরা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া ফুল প্রকৃতিকে অনন্য সাজে সাজিয়েছে। এই ফুলের সৌন্দর্যের কারণে পথচারীরা একবার হলেও এই ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এর গাছের উপর নজর দিবে। পাশাপাশি তীব্র গরমে অন্যান্য ফুলের সুঘ্রাণে চারপাশ মুখরিত হওয়াতে ক্লান্তিতা কিছুটা হলেও কমছে।


তারা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া ফুলের এই নান্দনিক দৃশ্য দেখতে এর গাছ রোপণ করা জরুরি। রাস্তা প্রশস্তকরণ, ঘর-বাড়ি নির্মাণসহ নানা প্রয়োজনে গাছ কেটে ফেলা হয়। অন্যান্য গাছ রোপণ করার পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া রোপণ করলে একদিকে যেমন সৌন্দর্য বাড়াবে অন্যদিকে পরিবেশ বান্ধব হবে।

সাজিদ হাসান নামের এক পথচারী বলেন, কৃষ্ণচূড়া একদিকে যেমন প্রকৃতিতে অপরুপ সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে, আরেকদিকে গ্লোবাল ওয়ার্মিং কমাবে। সারাদেশে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে, আমার মতে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে এই গাছটিও যুক্ত করা উচিত। তীব্র গরমের পর বৃষ্টি হলো, এরপর শহরে নানা রঙের ফুলের দেখা মিলছে, ফুলের ঘ্রাণে চলাচল করতেই ভালো লাগছে।

ফারজানা ইয়াসমিন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ফুলের সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে। অন্যান্য ফুলের পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া ফুল আমার অনেক ভালো লাগে। আমাদের কলেজে বকুল তলা আছে, ক্যান্টিনের পাশে কৃষ্ণচূড়া গাছ আছে। সুযোগ পেলেই ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করি।

অনিক মোহন নামে একজন বলেন, রিকশায় করে যখন বাসায় ফিরি, শহরের রাস্তার মাঝে ভিডাইভারে লাগানো নানা জাতের ফুলের ঘ্রাণ মনকে আনন্দিত করে। রাতের বেলা শহর যখন নিস্তব্ধ হয়ে যায়, তখন এ ফুলের সৌন্দর্য কয়েকশ’ গুণ বেড়ে যায়।

সড়কের পাশে কৃষ্ণচূড়া লাগানো হলে সৌন্দর্য বাড়বে বলে মনে করেন পথচারী মিনহাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, রাস্তা প্রশস্তকরণের জন্য যে গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে, ওই গাছগুলোর জায়গা কৃষ্ণচূড়ার গাছ লাগালে রাস্তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে।

একই কথা বলেন শহরের ব্যবসায়ী নাদিম আহমেদ। তিনি বলেন, সৌন্দর্য ও পরিবেশের কথা বিবেচনা করে এই গাছ রোপণ করা উচিত আমাদের। তাপমাত্রা যেভাবে বাড়ছে অন্যন্যা গাছ রোপণ করার পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া গাছ রোপণ করার উদ্যোগ নিতে হবে। যেগুলো শহরে আছে তাতেই সৌন্দর্য বেড়ে গিয়েছে কয়েকগুণ, আরও যদি লাগানো যায় ফুলে ফুলে ভরে উঠবে আমাদের শহর।

কৃষ্ণচূড়া মাদাগাস্কারের শুষ্ক পত্রঝরা বৃক্ষের জঙ্গলে পাওয়া যায়। যদিও জঙ্গলে এটি বিলুপ্ত প্রায়, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে এটি জন্মানো সম্ভব হয়েছে। সৌন্দর্যবর্ধন গুণ ছাড়াও, এই গাছ উষ্ণ আবহাওয়ায় ছায়া দিতে বিশেষভাবে উপযুক্ত। কৃষ্ণচূড়া উদ্ভিদ উচ্চতায় কম (সর্বোচ্চ ১২ মিটার) হলেও শাখা-পল্লবে এটি বেশি অঞ্চল ব্যাপী ছড়ায়।

শুষ্ক অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে কৃষ্ণচূড়ার পাতা ঝরে গেলেও, নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে এটি চিরসবুজ থাকে। কৃষ্ণচূড়া ফুলের রং উজ্জ্বল লাল। পত্র ঝরা বৃক্ষ, শীতে গাছের সব পাতা ঝরে যায়। বাংলাদেশে বসন্ত কালে এ ফুল ফোটে। ফুলগুলো বড় চারটি পাপড়ি যুক্ত। পাপড়িগুলো প্রায় ৮ সেন্টিমিটারের মত লম্বা হতে পারে। কৃষ্ণচূড়া জটিল পত্র বিশিষ্ট এবং উজ্জ্বল সবুজ। প্রতিটি পাতা ৩০-৫০ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ২০-৪০ টি উপপত্র বিশিষ্ট। কৃষ্ণচূড়ার জন্মানোর জন্য উষ্ণ বা প্রায়-উষ্ণ আবহাওয়ার দরকার। এই বৃক্ষ শুষ্ক ও লবণাক্ত অবস্থা সহ্য করতে পারে।

জানা যায়, অপরূপ সৌন্দর্য ছড়ানোর পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর পাতা, মূলের বাকল ও ফুল ভেষজ গুণাগুণ সম্পূর্ণ, যা জ্বর ও খুশকি নিরাময়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। ভেষজটি হেমিপ্লেজিয়া, আর্থরাইটিস এবং কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। কৃষ্ণচূড়া গাছের শিকড়, বাকল এবং ফুল সবই পরজীবী সংক্রমণ নিরাময়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।

;

হলুদ আভায় মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে সূর্যমুখী 



শহিদুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ
ছবি: প্রাণের উচ্ছ্বাসে সূর্যমুখী

ছবি: প্রাণের উচ্ছ্বাসে সূর্যমুখী

  • Font increase
  • Font Decrease

মৃদু বাতাসে দোল খাচ্ছে সূর্যমুখী। বাস্তব জীবনের নিস্তব্ধতা ভাঙছে তার হলুদ আভায়। মৌমাছির আলিঙ্গন পেতে ছড়াচ্ছে উষ্ণ মুগ্ধতা। হলুদের কারুকার্যে বিমোহিত হচ্ছে পথিকের মন। লুকায়িত সৌন্দর্য প্রকৃতির মাঝে তুলে ধরে প্রবল আকর্ষণে টানছে দর্শনার্থীদের। সবুজ পাতা ভেদ করা সেই অনিন্দ্য হাসি যেন কৃষকের মুখেরই প্রতিচ্ছবি। সূর্যমুখী ফুল চাষে জনপ্রিয়তা বাড়ছে কৃষকদের মাঝে।

সূর্যমুখী এক ধরনের একবর্ষী ফুলগাছ। সূর্যমুখী গাছ লম্বায় ৩ মিটার (৯ দশমিক ৮ ফুট) হয়ে থাকে। ফুলের ব্যাস ৩০ সেন্টিমিটার (১২ ইঞ্চি) পর্যন্ত হয়। এই ফুল দেখতে কিছুটা সূর্যের মতো এবং সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে বলে এর এরূপ নামকরণ করা হয়েছে। ফুলের বীজ হাঁস-মুরগির খাদ্যরূপে ও তেলের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

জানা যায়, বাংলাদেশে ভোজ্যতেলের উৎস হিসেবে ১৯৭৫ সাল থেকে এ ফুলের চাষ শুরু হলেও কৃষকের মাঝে জনপ্রিয়তা পায় নি বহুদিন। পরে ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। বর্তমানে রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া, নাটোর জেলা, পাবনা, নওগাঁ, দিনাজপুর, গাজীপুর, টাঙ্গাইল প্রভৃতি জেলাতে এর ব্যাপক চাষ হচ্ছে।

সূর্যমুখীর বাঁধভাঙা হাসি আর প্রাণের উচ্ছ্বাস

সোমবার (১২ মে) সকালে সরেজমিনে নওগাঁ সদর উপজেলার মুক্তির মোড় কেন্দ্র শহীদ মিনারের পাশে দেখা যায়, সূর্যমুখী বাতাসে; দুলছে আলোর প্রতিফলনে পাপড়িগুলো যেন চকচকে হলুদ আভা ছড়াচ্ছে। মৌমাছি এক ফুল থেকে অন্যফুলে মধু আহরণে ছুটাছুটি করছে আর এসব দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছে পথচারীরা। এছাড়াও নওগাঁর বেশ কিছু অঞ্চলে চাষ হচ্ছে সূর্যমুখী। একদিকে যেমন ফুলগুলো সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে তেমনি বীজ থেকে ভোজ্য তেল উৎপাদনে ভূমিকা রাখছে সূর্যমুখীর বীজ। সূর্যমুখী গাছ শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। 

প্রতিদিন ভোরে সূর্যমুখী বাগানের সকল গাছ অনেকটা পূর্বদিকে মুখ করে থাকে। যেদিকে সূর্য দেখা দেয় এবং ধীরে ধীরে ওপরে উঠতে থাকে। সূর্যের সাথে সাথে সূর্যমুখীগুলোও ধীরে ধীরে নিজেদের দিক পাল্টাতে থাকে। সূর্য যেদিকে যায় তারাও সেদিকে যায়। সবসময়ই এগুলো সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে। সূর্য যখন পশ্চিম দিকে অস্ত যায় তারাও তখন পশ্চিম দিক বরাবর থাকে। অস্ত যাওয়ার পরে তারা রাতব্যাপী আবার উল্টো দিকে ঘুরে পূর্বমুখী হয়। এভাবে শুকিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের এই চক্র চলতেই থাকে।

সূর্যের সাথে সাথে নিজেদের দিকও পাল্টাতে থাকে সূর্যমুখী

তবে সবার মাঝে একটি প্রশ্ন অনেক সময় ঘুরপাক খায় যে সূর্যমুখী ফুল কেন সূর্যে দিক হয়ে থাকে! সম্প্রতি বিজ্ঞানীদের একটি দল সূর্যমুখীর এই দিক পরিবর্তন সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্যের রহস্য উন্মোচন করেছেন। তাদের গবেষণা থেকে বেরিয়ে আসে সূর্যমুখীরা তাদের নিজস্ব সার্কাডিয়ান চক্রে আবদ্ধ। এই চক্র সচল থাকার কারণে সূর্যমুখীরা সব সময় সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে। গবেষকরা সায়েন্স জার্নালে তাদের গবেষণার বিস্তারিত প্রকাশ করেছেন। সার্কাডিয়ান চক্র বা সার্কাডিয়ান ঘড়িকে অনেক সময় ‘দেহঘড়ি’ নামেও ডাকা হয়। মানুষের মাঝেও এই চক্র বিদ্যমান। যেমন প্রত্যেক মানুষেরই দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম চলে আসে।

পথচারী রায়হান বলেন, ফুল শুভ্রতার প্রতীক ও পবিত্র। ফুলকে যারা ভালোবাসে তাদের মনটাও সুন্দর। সূর্যমুখী ফুল সব ফুলের চেয়ে আলাদা কারন সূর্যের দিক মুখ করে বেশিরভাগ থাকে এ ফুল। বিশেষ করে দুপুর শুরু হলে সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে এ ফুল যা দেখতেও খুব সুন্দর লাগে তাছাড়া এ ফুলের বীজ থেকে তেল হয় যা অনেক স্বাস্থ্যকর।

ক্ষুদে শিক্ষার্থী আফরিন (১০) জানায়, আমি ফুল খুবই ভালোবাসি আর সূর্যমুখী ফুলগুলো হলুদ হবার কারনে আরো বেশি ভালো লাগে। নামটা যেমন সুন্দর তেমনি মুগ্ধতাও ছড়ায়। ফুলগুলো থেকে তেল হয় তাই কোনোভাবেই নষ্ট করা যাবে না। আমরা দূর থেকে দেখেই শান্তি পাই।

সূর্যের সাথেই একাত্মতা সূর্যমুখীর

স্থানীয় বাসিন্দা আরেফিন তুহিন বলেন, স্বল্প পরিসরে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য যারা সূর্যমুখী ফুলের গাছ লাগিয়েছে তারা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। ফুল মানেই সুন্দর সূর্যমুখীও এটিএ ব্যাতিক্রম নয়। মাঝে মাঝে যখন ফুলের দিকে চোখ যায় খুব ভালোলাগা কাজ করে। এ ফুল দেখতে যেমন সুন্দর এটির তেল ও খুব পুষ্টিকর।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে চলতি অর্থবছরে সূর্যমুখী চাষের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ হেক্টর ও অর্জন হয়েছে ৬৫ হেক্টর এবং মোট উৎপাদন হয়েছে ১০০ মেট্রিক টন। 

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বার্তা২৪.কমকে বলেন- সূর্যমুখী একদিকে যেমন শুভ্রতার প্রতীক আবার অন্যদিকে বীজ থেকে তেল উৎপাদন হয় আবার মধুও পাওয়া যায়। বাজারে যে ভৈজ্যতেল গুলো রয়েছে যেমন, সয়াবিন,সরিষা, পাম-ওয়েল ইত্যাদি এগুলোর চেয়েও অনেক বেশি পুষ্টিগুণ আছে সূর্যমুখীর তেলে যা স্বাস্থ্যকর এবং স্বাস্থ্যর জন্য খুবই উপকারী। আমরা বেশি বেশি উৎপাদনে কৃষকদের সব রকম পরামর্শ দিয়ে থাকি।

;