ছুটির দিনে ঘুরে আসার মতো ঢাকার আশেপাশে ৫টি গন্তব্য



ফিচার ডেস্ক, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
মধ্যযুগের বাংলার ইতিহাসের ধারক ঐতিহ্যবাহী পানাম নগর

মধ্যযুগের বাংলার ইতিহাসের ধারক ঐতিহ্যবাহী পানাম নগর

  • Font increase
  • Font Decrease

অনেকটাই যান্ত্রিক ও একঘেয়েমিতে ভরা রাজধানী ঢাকার জীবনযাপন থেকে একটু ভিন্নতার ছোঁয়া প্রত্যাশা করে অনেকেই। মুক্ত বাতাসে, প্রকৃতির সান্নিধ্যে বা বৈচিত্রময় কিছুর সাথে খানিকটা সময় কাটিয়ে তারা দূর করতে চান নিত্যদিনের ক্লান্তিকে। আবারও সতেজ ও চাঙ্গা হয়ে ফিরে আসতে চান কর্মক্ষেত্রে। আর তাদের জন্যই রয়েছে ঢাকার আশেপাশে ঘুরে আসা যায়, এমন কিছু চমৎকার জায়গা। ছুটির দিনে এসব জায়গায় দিনে এসেই দিনে ফিরে যাওয়া সম্ভব।
আসুন, পরিচিত হওয়া যাক এমন কিছু স্থানের সাথেঃ

১। মৈনট ঘাট

মিনি কক্সবাজার নামে পরিচিত মৈনট ঘাট অবস্থিত ঢাকার দোহারে। সেখানে পদ্মার জলরাশি, নদীর বুকে ভেসে বেড়ানো অনেক ধরনের নৌকা, নদীর তীরে হেঁটে বেড়ানো লোকেদের দেখলে ক্ষণিকের জন্য আপনার বিভ্রান্তি হতেই পারে যে আপনি পদ্মার পারে নয়, দাঁড়িয়ে আছেন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের তীরে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/30/1567143714901.jpg
অনেকটা কক্সবাজারের ফ্লেভার পাওয়া যেতে পারে মৈনট ঘাটে


মৈনট ঘাট ঘোরার উপযুক্ত সময় হচ্ছে বৃষ্টি অথবা একটু ঠান্ডার সময় এবং অবশ্যই বিকেল বেলা। গ্রীষ্মের সময়ে এখানে বাদামের চাষ হয় এবং ঘাটের একপাশ জুড়ে দেখা যায় বাদামের বিস্তীর্ণ ক্ষেত। আবার বর্ষার সময়ে পুরোটা পদ্মার পানিতে তলিয়ে যায়। সে এক দেখার মতো দৃশ্য। শুকনায় বা শীতের সময়েও এর সৌন্দর্যের কমতি নেই। তখন দেখা যাবে পদ্মা নদীর শান্ত রূপ। একটা সন্ধ্যায় পদ্মা নদীতে সূর্যাস্ত দেখলে পরবর্তী একশোটা সন্ধ্যার কথা মনে থাকবে। ঢাকার আশেপাশে হওয়ার কারণে প্রচুর মানুষ এখানে আসছে, ঘুরছে। স্পিডবোট, ট্রলার বা ছোট্ট নৌকা নিয়ে নদীর বুকে ঘুরে বেড়াচ্ছে অনেকেই। ঘাটের থেকে ট্রলার বা নৌকা নিয়ে সন্ধ্যার সূর্যাস্ত উপভোগ করা এখানকার মূল আকর্ষণ। 

ঢাকা থেকে মৈনট ঘাটে আসার সবচেয়ে সুবিধাজনক উপায়টি হচ্ছে গুলিস্তানের গোলাপ শাহের মাজারের সামনে থেকে সরাসরি মৈনট ঘাটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা বিভিন্ন পরিবহনে চেপে বসা। ৯০ টাকা ভাড়া আর দেড় থেকে আড়াই ঘণ্টার বিনিময়ে আপনি পৌঁছে যাবেন মৈনট ঘাট। ফেরার সময় একই বাসে আবার ঢাকা চলে আসবেন। মৈনট থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে শেষ বাসটি ছেড়ে যায় সন্ধ্যা ৬ টায়।

যারা গাবতলী অথবা সাভারের আশেপাশে থাকেন, তারা হেমায়েতপুর থেকে লোকাল সিএনজিতে সরাসরি নবাবগঞ্জ আসতে পারবেন। ভাড়া ১২০ টাকা।

২। নুহাশ পল্লী

কিংবদন্তি লেখক হুমায়ূন আহমেদের নিজ হাতে গড়া স্বপ্নভুবন ‘নুহাশ পল্লী’। ৪০ বিঘা জমির ওপর গাজীপুরে অবস্থিত এই বাগানবাড়ি, নুহাশ চলচ্চিত্রের শুটিং স্পট ও পারিবারিক বিনোদনকেন্দ্র। সবুজ গাছপালা দিয়ে আবৃত নুহাশপল্লীর সবটুকু। নুহাশপল্লীতে ঢুকে একটু সামনে গিয়ে মাঠ পেরিয়ে বামপাশে শেফালি গাছের ছায়ায় নামাজ ঘর। এর পাশেই পুরনো লিচু বাগান। লিচু বাগানেই চিরনিদ্রায় শায়িত সবার ভালোবাসার হুমায়ূন। এই বাগানের উত্তরে জাম ও দক্ষিণে আম বাগান। এছাড়াও রয়েছে অনেক অনেক প্রজাতির গাছ-গাছালী। রয়েছে সুইমিং পুল ও পুকুর। তবে, সব কিছুর ‍উপরে দর্শনার্থীদের ওপর প্রভাব বিস্তার করবে এর শান্ত-সমাহিত পরিবেশ ও সবুজ শ্যামলীমা।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/30/1567143845541.jpg
দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করবে নুহাশ পল্লীর প্রাকৃতিক পরিবেশ 


খুব সহজেই যাওয়া যায় নুহাশ পল্লী। ঢাকার গুলিস্তান থেকে প্রভাতী বা বনশ্রী বাসে চড়ে প্রথমে পৌঁছতে হবে গাজীপুরের হোতাপাড়ায়। সেখান থেকে টেম্পুতে করে যাওয়া যাবে পল্লীতে। এছাড়া মাইক্রো বাসে করেও দলবেঁধে ঘুরতে যাওয়ার সুযোগ নিতে পারেন অনেকে। তবে, নুহাশ পল্লীতে ঢোকার জন্য ফি দিতে হয়। এই ফি ১২ বছরের উপরের সবার জন্য ২০০ টাকা। 

৩। পানাম নগর

বেশ ব্যতিক্রমধর্মী একটি স্থান এই পানাম নগর। এখানকার পুরনো বাড়িঘর ও স্থাপনাগুলো দেখতে দেখতেই পার হয়ে যায় অনেকটা সময়। বিশ্বের ১০০টি ধ্বংসপ্রায় ঐতিহাসিক স্থানের একটি এই পানাম নগর। ‘ওয়ার্ল্ড মনুমেন্ট ফান্ড’ ২০০৬ সালে একে বিশ্বের ধ্বংসপ্রায় ১০০টি স্থাপনার একটি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে। এই পানামনগর ছিল ঈশাখার আমলে বাংলার রাজধানী। কয়েক শতাব্দী প্রাচীন কিছু ভবন ও স্থাপনা এখানে রয়েছে, যার সাথে জড়িত বাংলার বারো ভুঁইয়াদের ইতিহাস।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/30/1567143893227.jpg
মধ্যযুগের বাংলার ইতিহাসের ধারক ঐতিহ্যবাহী পানাম নগর


এখানেই রয়েছে সোনারগাঁ লোকশিল্প জাদুঘর। এতে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশের অবহেলিত ও নিরক্ষর কারিগরদের হস্তশিল্প, জনজীবনের নিত্য ব্যবহার্য পণ্যসামগ্রী। জাদুঘরের বিভিন্ন গ্যালারিতে রয়েছে কাঠ খোঁদাই, চারুশিল্প, পটচিত্র ও মুখোশ, আদিবাসী জীবনভিত্তিক নিদর্শন, গ্রামীণ লোকজীবনের পরিবেশ, লোকজ বাদ্যযন্ত্র ও পোড়ামাটির নিদর্শন, লোকজ অলঙ্কারসহ বহুকিছু। লোকশিল্প জাদুঘরের প্রবেশ ফি জনপ্রতি ২০টাকা। 

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/30/1567143961621.jpg
সোনারগাঁ লোকশিল্প জাদুঘরে রয়েছে আবহমান বাংলার শিল্পপণ্যের নিদর্শন


পানাম নগরের কাছেই রয়েছে মেঘনা নদী। নদী ওপারে রয়েছে কাশবন। আর নৌকা ভ্রমণ করে সেখান থেকে যেতে পারেন কাছেরই মায়াদ্বীপে। নদীর পার বা চরে বসে সেখানকার নির্মল ও মুক্ত বাতাসে কেটে যাবে আপনার নিত্যদিনের জড়তা ও ক্লান্তি। সচল হবেন নতুন করে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/30/1567144072096.jpg
মায়াদ্বীপের নয়নাভিরাম দৃশ্য ◢


ঢাকার থেকে মাত্র ২৭ কিঃমিঃ দূরে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁতে অবস্থিত পানাম নগর। খুবই সহজ ঢাকা থেকে এখানকার যাতায়াত ব্যবস্থা। ঢাকার গুলিস্তান থেকে ‘মোগরপাড়াগামী’ যে কোনো বাসে চেপে চলে আসতে হবে সোনারগাঁওয়ের মোগারপাড়া। সেখান থেকে টেম্পুতে করে ১৫-২০ মিনিটে চলে আসা যাবে পানামনগরে। একইভাবে, টেম্পুতে করে অল্প সময়ের ভেতরেই আসতে পারবেন লোক ও কারুশিল্প জাদুঘরে। অবশ্য ময়না দ্বীপে যেতে হলে ওখানকার মেঘনার ঘাট থেকে ট্রলারে করে যেতে হবে। 

৪। বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক

ঢাকার আশেপাশে ঘুরে আসার মতো অন্যতম চমৎকার জায়গা এই বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক। বিস্তৃর্ণ শালবনের ভিতর প্রাচীর ঘিরে দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই সাফারি পার্ক। ভেতরে ঢুকতেই রয়েছে সরু পাকা রাস্তা। দুদিকে বিস্তৃত নানা প্রজাতির গাছ। এশিয়ার সর্ববৃহৎ এই সাফারি পার্কটি অনেকটাই গড়ে তোলা হয়েছে থাইল্যান্ডের সাফারি ওয়ার্ল্ডের সাথে সামঞ্জস্য রেখে। চলতে চলতে অনেক ধরনের প্রাণীই সেখানে দেখতে পাবেন। সাফারি পার্কটিতে বন্যপ্রাণীরা বিচরণ করে স্বাভাবিকভাবে। জেব্রা, জিরাফের মতো তৃণভোজী নিরীহ প্রাণী ছাড়াও সেখানে রয়েছে বাঘ, সিংহের মতো মাংসাশী প্রাণীও। তবে, সেখানে ঘুরতে যাওয়া দর্শনার্থীদের ভয়ের কোনো কারণ নেই। দুই ইঞ্চি পুরু স্বচ্ছ কিন্তু শক্ত প্লাস্টিকের দেয়াল দিয়ে এসব প্রাণীকে আলাদা করে রাখা হয়েছে অন্যান্য জায়গা থেকে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/30/1567144136672.jpg
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে গেলে দেখা যাবে এরকম আকর্ষণীয় সব বন্যপ্রাণী


পার্ক সম্পর্কে যে কোনো তথ্য জানার জন্য এখানে প্রথমেই রয়েছে বঙ্গবন্ধু চত্বর, একটি তথ্য ও শিক্ষাকেন্দ্র। এরপর পার্কের গাড়িতে চড়ে ভিতরে প্রবেশ করে দেখতে পারেন বাঘ, সিংহ, ভাল্লুক, আফ্রিকান চিতা, চিত্রা হরিণ, জলহস্তি, নীল গাইসহ আরো অনেক ধরনের বন্যপশু। তবে, সেটা করতে গেলে জনপ্রতি ফি দিতে হবে ২০০টাকা। সাফারি কিংডমে রয়েছে প্রকৃতি বীক্ষণ কেন্দ্র, জিরাফ প্রজনন স্পট ও পেলিক্যান আইল্যান্ড। শুধু তাই নয়, বিশাল জায়গা নিয়ে রাখা হয়েছে পাখিদেরও। ওয়াচ টাওয়ার থেকেও উপভোগ করতে পারবেন সাফারি পার্কের মনোরম ও আকর্ষণীয় দৃশ্য। ওঠার ব্যবস্থা আছে হাতির পিঠেও। 

ঢাকা থেকে গাজীপুরগামী যে কোনো বাসে চড়ে প্রথমে যেতে হবে গাজীপুরে। এরপর টেম্পুজাতীয় যানে করে সেখান থেকে যেতে হবে বাঘের বাজার এলাকায়। সেখান থেকে আরো কিছুদূরে দেখা যাবে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের প্রবেশপথ।

৫। সাদুল্লাপুর গোলাপ বাগান

সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের সাদুল্লাপুর গ্রামটি বর্তমানে পরিচিত ‘গোলাপ গ্রাম’ নামে। এখানে বছরজুড়েই গোলাপের গন্ধে ভরে থাকে সারা গ্রাম। বিস্তীর্ণ গোলাপের বাগান ছাড়াও এখানে রয়েছে রজনীগন্ধা, জারভারা ও গ্লাডিওলাসের বাগান। ঢাকার সিংহভাগ গোলাপের চাহিদা এই গ্রামের উৎপাদন থেকেই মেটানো হয়। এক দিনের অবসরে বেড়িয়ে আসতে পারেন গোলাপের এই রাজ্য থেকে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/30/1567144208723.jpg
আপনার মন ও চোখের প্রশান্তি হিসেবে কাজ করতে পারে এই বিস্তীর্ণ গোলাপের বাগান


হাতে সময় থাকলে ঘুরে আসতে পারেন এখানকার কয়েকটি জমিদারবাড়ি থেকে। এছাড়া বিরুলিয়া ব্রিজের কাছে রয়েছে প্রাচীন ও বিশাল একটি বটগাছ। 

এখানে আসতে হলে প্রথমে, উত্তরার হাউজ বিল্ডিং এলাকায় নর্থ টাওয়ারের কাছ থেকে লেগুনায় করে দিয়াবাড়ি আসতে হবে। সেখান থেকে মেইনরোড ধরে এগিয়ে লোকাল গাড়িতে বিরুলিয়া ব্রিজ পর্যন্ত গিয়ে আরেকটি অটো ভাড়া করে যেতে হবে সাদুল্লাহপুর গোলাপ গ্রামে।

   

বুদ্ধ পূর্ণিমার তাৎপর্য



অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বিশ্বে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব বুদ্ধ পূর্ণিমা। বুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এক মহান দিন এটি। এই দিনে গৌতম বুদ্ধ পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেন। একই দিনে মহাজ্ঞানী বুদ্ধত্ব এবং বুদ্ধ মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন। এই তিথিকে বলা হয় বৈশাখী পূর্ণিমা, যা আজ বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক ভেসাক ডে হিসেবে পালন করা হয়। বৈশাখ মাসের এই তিথিতে মহামতি গৌতম বুদ্ধের জীবনে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংগঠিত হয়েছিল। ত্রি-স্মৃতিবিজড়িত এ তিথির গুরুত্ব ও তাৎপর্য অত্যন্ত বিশাল।

খ্রিস্টপূর্ব ৬২৩ অব্দে এই দিনে আড়াই হাজার বছর আগে মহামতি গৌতম বুদ্ধ ভারতবর্ষের তৎকালীন কপিলাবস্তু দেবদহ নগরের মধ্যবর্তী লুম্বিনী কাননে মাতা রানী মায়াদেবীর পিতৃগৃহে যাবার পথে শালবৃক্ষের নিচে জন্মগ্রহণ করেন। খ্রিস্টপূর্ব ৫৮৮ অব্দে ৩৫ বছর বয়সে বোধিবৃক্ষমূলে কঠোর সাধনা বলে তিনি বুদ্ধত্ব লাভ করেন। খ্রিস্টপূর্ব ৫৪৩ অব্দে ৮০ বছর বয়সে একই দিনে ৪৫ বছর দুঃখ মুক্তির ধর্ম প্রচার করে কুশীনগরে যুগ্মশাল তরুণমূলে চিরনির্বাসিত হয়ে মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন অর্থাৎ তিনি দুঃখ থেকে মুক্তি লাভ করেছেন। পৃথিবীতে আর জন্মলাভ করবেন না। গৌতম বুদ্ধের পিতার নাম ছিল রাজা শুদ্ধধন ও গৃহী নাম ছিল সিদ্ধার্থ। ২৫২৭ বছর আগে ভারতবর্ষে যখন ধর্মহীনতা মিথ্যা দৃষ্টি সম্পন্ন বিশ্বাস্বে ধর্মে সমাজের শ্রেণি বৈষম্যের চরম দুরবস্থা ও কুসংস্কারে নিমজ্জিত, প্রাণী হত্যায় চরম তুষ্টি ,তখন শান্তি মৈত্রী অহিংস সাম্য ও মানবতার বার্তা নিয়ে মহামতি বুদ্ধের আবির্ভাব ঘটে।

গৌতম বুদ্ধ অহিংস ও মৈত্রীর বাণী প্রচার করেছেন। এই জীবজগৎ অনিত্য দুঃখ অনাত্মাময় প্রাণমাত্রই প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। অস্থায়ী বা অনিত্য কার্যতকারণের অধীন। তিনি জীবনের প্রগাঢ় খাটি চার আর্যসত্য আবিষ্কার করলেন। জগতে দুঃখ আছে, দুঃখের অবশ্যই কারণ আছে, দুঃখের নিবৃত্তি আছে, দুঃখ নিবৃত্তির উপায় আছে। দুঃখ নিবৃত্তির উপায় হলো নির্বান লাভ। এই নির্বান লাভের ৮টি মার্গ আছে। যেমন সম্যক বা সঠিক দৃষ্টি , সম্যক সংকল্প, সম্যক বাক্য, সম্যক কর্ম, সম্যক জীবিকা, সম্যক প্রচেষ্টা, সম্যক স্মৃতি, সম্যক সমাধি। এই পথ পরিক্রমায় শীল সমাধি প্রত্তোয় নির্বাণ লাভের একমাত্র উপায়। সব প্রাণী সুখী হোক, পৃথিবীর সবচেয়ে পরম, মহৎ বাণী তিনি প্রচার করেছেন। শুধু মানুষের নয়, সব প্রাণ ও প্রাণীর প্রতি, প্রেম, ভালোবাসা, অহিংসা, ক্ষমা, মৈত্রী, দয়া, সহনশীলতা, সহমোর্মিতা, সহানুভূতি, মমত্ববোধ, প্রীতি, সাম্য, সম্প্রীতির কথা তিনি বলেছেন।

১৯৯৯ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ৫৪/১১৫ রেজুলেশন এ দিনটিকে আন্তর্জাতিক ভেসাক ডে হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। সেই থেকে এই দিনটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ “ভেসাক ডে” হিসেবে পালন করে আসছে। বুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত পবিত্র এই দিনকে বিভিন্ন নামে পালন করা হয়। বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলংকা, নেপালে বুদ্ধ পূর্ণিমা, লাওসে বিশাখ পূজা, ইন্দোনেশিয়া হারি ওয়াইসাক ডে, মালয়শিয়ায় ওয়েসাক ডে, মায়ানমারে ফুল ডে অব কাসন, সিঙ্গাপুরে হারি ভেসাক ডে নামে পালন করে থাকে আবার কেউ বুদ্ধ জয়ন্তী দিবস হিসেবেও পালন করে থাকে।

জাতিসংঘের মহাসচিব এস্তেনিও গুতেরেজ ভেসাক ডে উপলক্ষে বলেছেন, “On the day of Vesak, Let us celebrate Lord Buddha’s wisdom by taking action for others with compassion and solidarity and by renewing our commitment to build a peaceful world.”

ফিলিস্তিনে আজ চরমভাবে মানবতা বিপন্ন হচ্ছে। অশান্তিময় এই পৃথিবীতে বুদ্ধের মৈত্রী, সংহতি, সাম্য, মানবতা ও শান্তির বাণী বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় আজও প্রাসঙ্গিক এবং খুব প্রয়োজন। বিশ্ব আজ পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখোমুখি। পরিবেশ দূষণ, গ্লোবাল ওয়ার্মিং, জলাবদ্ধতা, বৃক্ষ নিধন, বন উজাড়, জীব বৈচিত্র্য হ্রাস ও জলবায়ু পরিবর্তন এই সবুজ গ্রহের ইতিহাসে নজিরবিহীন। গৌতম বুদ্ধই প্রথম বৃক্ষকে এক ইন্দ্রিয় বিশিষ্ট জীবরূপে আখ্যায়িত করেছেন। বুদ্ধ ছিলেন বিশুদ্ধ পরিবেশবাদী দার্শনিক। পরিবেশ রক্ষা ও সংরক্ষণে তিনি সব সময় সোচ্চার ছিলেন। তাই বুদ্ধের জন্ম বুদ্ধত্ব লাভ ও মহা পরিনির্বাণ বৃক্ষের পদমূলের বিশুদ্ধ পরিবেশ মন্ডিত পরিবেশে সংগঠিত হয়েছিল।

এই পবিত্র দিনে বৌদ্ধরা বিভিন্ন দেশে দেশে সব প্রাণীর সুখ শান্তি কামনায় সমবেত প্রার্থনা করেন। অশান্ত পৃথিবীতে পরিবেশ সংরক্ষণে বুদ্ধের বাণী নীতি ও আদর্শ বিশ্ব মানবতার শিক্ষা, দর্শন, চিন্তা চেতনা ,ভাবনা সুন্দর, শান্ত, সাম্যময় পৃথিবী গড়ার বিকল্প নাই। সব প্রাণী সুখী হোক, দুঃখ থেকে মুক্তি লাভ করুক।

অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া
চিকিৎসক, লেখক, সংগঠক ও গবেষক

;

মহামতি সিদ্ধার্থ গৌতম



প্রদীপ কুমার দত্ত
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি।
ধর্মং শরণং গচ্ছামি।

সিদ্ধার্থ গৌতম খৃষ্টপূর্ব ৫৬৪সালে(এই সাল নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ আছে) কপিলাবস্তুর লুম্বিনীতে (বর্তমানে নেপালের অন্তর্গত) শাক্য রাজা শুদ্ধোধন এর প্রাসাদে তাঁর মহিষী মায়া দেবীর ঔরষে জন্মগ্রহণ করেন। দিনটি ছিল বৈশাখ মাসের পূর্ণিমা তিথি।

তিনি শৈশব থেকেই ছিলেন ভাবুক প্রকৃতির। রাজকার্য তাঁকে আকর্ষণ করতো না। জীবনের গূঢ় রহস্য নিয়ে তিনি চিন্তা করতেন। তিনি লক্ষ্য করলেন সংসারে কর্মই প্রধান। বাকি সবই অনিত্য। তিনি ভাবতেন জরা, ব্যাধি, মৃত্যু থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে। যৌবনের এক পর্যায়ে প্রাসাদে মাতা, পিতা, স্ত্রী ও শিশুপুত্রকে রেখে এক রাতে তিনি বেরিয়ে পড়েন পথে। গ্রহণ করলেন শ্রমণের জীবন।

একসময় তিনি গয়ার নিকট উরুবিল্ব (বর্তমানে ভারতের বিহারের বৌদ্ধগয়া) গ্রামে এক বৃক্ষতলে মোক্ষলাভের উপায় ভাবতে জাগতিক সমস্ত আকর্ষণ ত্যাগ করে ধ্যান করতে বসেন। ক্ষুধা, তৃষ্ণা ইত্যাদি বাহ্যজ্ঞান লুপ্ত অবস্থায় এক বৈশাখী পূর্ণিমায় তিনি আলোকপ্রাপ্ত হন। তিনি লাভ করলেন দিব্যজ্ঞান। এই জ্ঞানই হলো অজ্ঞানতা ও অশিক্ষা, লোভ এবং আকাঙ্খা, রোগ ও দুঃখভোগ এবং পুনর্জন্ম থেকে মুক্তি। সেই মুক্তিলাভের উপায় হলো জীবন যাপনে শুদ্ধাচার।

তাঁর আশি বছরের জীবনের বাকি অংশ তিনি কাটালেন তাঁর মোক্ষলাভের সূত্র এবং লোভ, হিংসা-দ্বেষহীন পরোপকারের জীবন ধারণের জন্য শিষ্য এবং শিষ্যদের মাধ্যমে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে উদ্বুদ্ধ করে। বারানসীর অদূরে সারনাথে প্রথম পাঁচজনকে তিনি শিষ্যত্বে বরণ করেন। এই সংখ্যা ধীরে ধীরে বর্ধিত হতে থাকে এবং প্রচার ছড়িয়ে পড়তে থাকে দিকে দিকে। বৃহৎ এক জনগোষ্ঠীকে আকর্ষণ করতে সক্ষম হয় তাঁর এই প্রচার।প্রথমে গাঙ্গেয় অববাহিকাতে চলে এই প্রচারাভিযান। পরে তা দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে।

এইভাবে শান্তির অমোঘ বাণী প্রচারে বাকি জীবন কাটিয়ে তিনি যখন বুঝলেন তাঁর ধরাধাম ত্যাগের সময় হয়েছে, তখন তিনি তাঁর প্রচার সাথী শিষ্যদের উদ্দেশ্যে শেষ দেশনা প্রদান করেন। সেখানে তিনি তাঁর শিষ্যদের বলেন যে তিনি তাঁদের পথের দিশা দেখিয়ে গেলেন মাত্র। মানুষ মরণশীল।মানব জীবনে দুঃখ,কষ্ট জরা,ব্যাধি অবশ্যম্ভাবী।তাই জীবদ্দশায় উচিৎ সর্বোচ্চ চেষ্টার মাধ্যমে সৃষ্টির সকল জীবের কল্যাণসাধন করা।তাঁদেরকে নিজের আত্মাকে আলোকিত করে নিজেকেই আলোকপ্রাপ্ত হতে হবে।

মল্ল রাজত্বভুক্ত কুশিনগরে তিনি মহাপরিনির্বাণ প্রাপ্ত হন। কি আশ্চর্য! সেই দিনটিও ছিল বৈশাখী পূর্ণিমা। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এই তিন বিশেষ দিনের সমষ্টিকে ভেসাক ডে হিসাবে পালন করা হয়। ভারত থেকে তিব্বত হয়ে চীন, জাপান, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর সহ পুরো দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় বৌদ্ধ ধর্ম একসময় ছড়িয়ে পড়ে। যার বিপুল প্রভাব এখনো বিদ্যমান।

শাক্যমুণি গৌতমবুদ্ধর প্রধানতম শিক্ষা ও প্রার্থনা হলো জগতের সকল প্রাণী সুখী হউক। সিদ্ধার্থ গৌতমের ধর্ম গ্রহণ করে সম্রাট অশোক তা তাঁর রাজত্বের দিকে দিকে ছড়িয়ে দেন। সম্রাট অশোক লুম্বিনীতে তীর্থভ্রমণ করাকালীন একটি স্তম্ভ স্থাপন করেন। সেই স্তম্ভে ব্রাহ্মী লিপিতে শাক্যমুনি বুদ্ধ কথাটি পাওয়া যায়। এর অর্থ করা যায় শাক্যদের মধ্যে তপস্বী ও আলোকপ্রাপ্ত।

মহামতি বুদ্ধের বাণী প্রথম দিকে ছিল শ্রুতি নির্ভর। পরবর্তীতে তা ভিনায়া বা প্রচারকদের (বর্তমানকালের শ্রমন বা ভান্তে) জন্য প্রতিপালনীয় বিধান ও সুত্ত পিতাকা বা বুদ্ধদেবের উপদেশসমূহ তাঁর শিক্ষা হিসাবে লিপিবদ্ধকরণ করা হয়। আরও পরে তাঁর অনুসারীরা অভিধর্ম, জাতক কাহিনী, মহাযান সূত্র ইত্যাদি ধর্মগ্রন্থ প্রকাশ করেন। তার মধ্যে জাতক কাহিনীতে সিদ্ধার্থ গৌতমের পূর্ববর্তী জন্মসমূহের কথা লিপিবদ্ধ আছে। আলোকপ্রাপ্ত হয়ে পুনর্জন্ম থেকে মহামুক্তির আগে তিনি পূর্ব জন্মসমূহের কথা স্মরণ করতে পেরেছিলেন।বেশিরভাগ বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ আদিকালে পালি ভাষায় লিখিত হয়েছিল।

জ্ঞান অন্বেষণকে বৌদ্ধ ধর্ম সর্বোচ্চ মর্যাদা দেয়। বৌদ্ধ যুগেই পৃথিবীর বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় রূপে পরিচিত নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়। আমরা গর্ব বোধ করতে পারি যে আমাদের মাটির সন্তান অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান বৌদ্ধ ধর্মকে তিব্বতে প্রচারে প্রধানতম ভূমিকা রাখেন।তিব্বতে বৌদ্ধ ধর্ম রাজধর্ম হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয় ও সেখান থেকে চীন,কোরিয়া,জাপান সহ এশিয়ার দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে।

ইতিহাসের এক পর্যায়ে ভারতবর্ষের বিশাল এলাকায় বৌদ্ধ ধর্মের প্রাবল্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।সম্রাট অশোকের কন্যা সংঘমিত্রা এই ধর্মকে সিংহল দ্বীপে(বর্তমান শ্রীলঙ্কা) প্রসারিত করেন।আজও পৃথিবীতে বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীরা বিভিন্ন ধারায় তাঁদের মহান শান্তির ধর্মকে পালন ও সংরক্ষণ করে যাচ্ছেন। 

লেখক: প্রাবন্ধিক ও পরিব্রাজক

;

বিশ্ব চা দিবস



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
চা / ছবি: বিং এআই

চা / ছবি: বিং এআই

  • Font increase
  • Font Decrease

কনকনে শীতে কাপছেন। সোয়েটার-চাদর মুড়ে বসলেও গা ভেতর থেকে কাঁপুনি কমছে না। অথবা কাজ করতে করতে মাথা ঝিমঝিম করছে। অস্বস্তি সহ্যও হচ্ছে না, অথচ এই স্বল্প ব্যথায় ঔষধও তো খাওয়া যায় না! কিংবা বাসায় আসা কোনো মেহমান বা বিকেলে বন্ধুদের সাথে আড্ডায় বসেছেন। শুধু মুখে বসে থেকে গল্প করতে কতক্ষণই বা ভালো লাগে? এরকম সব পরিস্থিতি সামাল দিতেই রয়েছে- চা।

আজ ২১ মে বিশ্ব চা দিবস। তথ্য অনুযায়ী ২০০৪ সালে সর্বপ্রথম চায়ের গুরুত্ব বিবেচনা করে একে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা চিন্তা করা হয়। বিশ্ব সামাজিক ফোরাম এই সিদ্ধান্ত নেয় এবং তারপরের বছর ২০০৫ সালে প্রথমবার ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লীতে বিশ্ব চা দিবস উদযাপন করা হয়। পরবর্তীতে ২০০৬ সালে শ্রীলঙ্কায়েএই দিবস পালন করা হয়। ২০১৫ সালে চা দিবসে উদযাপন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে যায়। ২০১৯ সালে জোতিসংঘ কয়েকটি দেশের সম্মিলিত উপস্থিতিতে ২১ , চা দিবসের আয়োজন করে।   

 চা পাতা তোলা / ছবি: বিং এআই

চায়ের জন্ম হয় ঠিক কবে হয়েছিল তার নির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ধারণা করা হয়, আজ থেকে ৫ হাজার বছরেরও আগে সৃষ্টি হয় এই পানীয়। এশিয়ারই বৃহত্তর দেশ চীনে এর জন্ম হয়। তৎকালীন সময়ের পাওয়া জিনিসপত্রে চায়ের অস্তিত্বের প্রমান মেলে। ক্যামেলিয়া সিনেনসিস উদ্ভিদ থেকে উৎপন্ন হয় এই পানীয় তাই চীনের নামের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।  সাধারণ পাহাড়ি অঞ্চলে শক্ত পাথুরে মাটিতে জুমচাষে চা উৎপন্ন করা হয়। আমাদের দেশেও বৃহত্তর সিলেটঅঞ্চল এবং চট্টগ্রামের কিছু অংশে চা পাতা চাষকরা হয়।    

কম-বেশি চা খান না- এমন মানুষ হাতে গুনতে পারা যায়। মূলত উদ্ভিজ এই পানীয় জনপ্রিয় তার অনন্য স্বাদ, ঘ্রাণ এবং উপকারের জন্য। কফি অনেকেই পছন্দ করেন। তবে চিকিৎসকরা অনেককে কফির উপর নিষেধাজ্ঞা দেন। চায়ের ক্ষেত্রে সেই বালাই নেই। তাই চা-কে অন্য সব পানীয়ের মতো শুধু একটি পানীয় হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। বরং একে খাদ্যতালিকার পানির পরে পানীয় হিসেবে এক বিশেষ অংশ হিসেবে মনে করা হয়।  

চাষ করা চা পাতা শুকিয়ে নিয়ে, গরম পানি বা দুধে চিনি ও অনেকক্ষেত্রে মশলা মিশিয়ে শুকনো সেই পাতা দিয়ে বানানো হয় চা। আমাদের দেশ হোক বা বাইরের দেশে, অধিকাংশ মানুষের জীবন ধারার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো এই পানীয়।   

;

অকালে আম পাকে!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
অপরিপক্ক পাকা আম / ছবি: পিক্সাবে

অপরিপক্ক পাকা আম / ছবি: পিক্সাবে

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বৈশাখে তোর রূদ্র ভয়াল,

কেতন ওড়ায় কালবৈশাখী!

জষ্ঠি মাসে বনে বনে

আম কাঠালের হাট বসে কি...’

রবিঠাকুরের কলমে রচিত এ পংক্তি যেন, কেবল কাগজের উপর কালিতে সাজানো কিছু শব্দ নয়। বাংলা বছরের প্রথম ঋতুর সকল বৈশিষ্ট্য খুব অল্প ভাষায় সুসজ্জ্বিত করে গানের রূপে সামনে আনেন বিশ্বকবি।

দিন গুনতে গুনতে বছরের প্রথম মাসটি অনায়াসে কেটে গেল। চলছে জৈষ্ঠ্য মাস। ভয়ংকর কাল বৈশাখী ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হওয়ার আশঙ্কাকে পাশ কাটিয়ে; জৈষ্ঠ্যের পাকা আম, জাম, কাঁঠাল, লিচুই যেন গ্রীষ্মের আসল আনন্দ।  

গ্রীষ্মের পরিপূরক হলো আম। আম পছন্দ নয়, এমন মানুষটি খুঁজে পাওয়া দায়! এজন্যই আমকে বলে ফলের রাজা। ত্যক্ত-বিরক্ত করা গরমেও পাকা টসটসে আমের সুঘ্রাণই যেন আনন্দের স্বস্তি। তবে সে আনন্দেও বালি ঢেলে দেয় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। ভোজন-রসিক মানুষরা সারা বছর অপেক্ষা করে থাকে রসে টসটসে তাজা ফলের স্বাদ আস্বাদনের জন্য। অনেক ভোক্তদের সেই অপেক্ষা বৃথা হয়ে যায় অপরিপক্ক ফলের কারণে।

অনেক ব্যবসায়ী অতিরিক্ত লাভের আশায় রাসায়নিক উপাদান ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহার করে আম পাকানোর চেষ্টা করে। আম যখন কাঁচা অবস্থায় থাকে তখন এর মধ্যে সাইট্রিক এসিড ম্যালিক এসিড, টারটারিক এসিড থাকে। এ কারণে আমের হাইড্রোজেন আয়নের ঋণাত্মক ঘনমাত্রার লগারিদম মান খুব কম হয়, ফলে আম অম্লধর্মী হয়। এছাড়া কাঁচা অবস্থায় আমে উচ্চ ওজনের পেকটিনের মজুদ বেশি থাকে।

অপরিপক্ক পাকা আম

সাধারণত প্রাকৃতিকভাবে পাঁকার সময় এই পেকটিনের ওজন কমতে থাকে। আমের মধ্যকার ভিটামিন ‘সি‘ কালক্রমে বদলে ভিটামিন ‘এ’ তে রূপান্তরিত হয়। একই সঙ্গে ক্লোরোফিল পরিবর্তিত হয়ে গ্লোবুলার ক্রোমোপ্লাস্টে রূপান্তরিত হয়। অ্যান্থোসায়ানিন পিগমেন্ট ফিনাইলপ্রোপানয়েডের সেকেন্ডারি মেটাবোলাইটসের  উপসি্থতি বাড়তে থাকে।(‘বিজ্ঞানচিন্তা’র তথ্যমতে) এই কারণে কাঁচা আমের সবুজ রঙ পরিবর্তন হয়ে লালচে-হলুদাভাব বর্ণ ধারণ করে। এভাবে পাকার ফলে আম হয় সুস্বাদু। আমের মৌ মৌ গন্ধ চারদিকে ছড়িয়ে যায়।

তবে ক্যালসিয়াম কার্বাইড (CaC2)  এর প্রয়োগের কারণে আমের মধ্যে পরিবর্তন আসে। এর মধ্যে থাকা (৮০থেকে৮৫ভাগ) ক্যালসিয়ামের কারণে আমের অম্লত্ব নষ্ট হতে শুরু করে। অম্ল-ক্ষারের প্রশমনের কারণে আমের মধ্যে থাকা ম্যালিক এসিড ও সাইট্রিক এসিডের পরিমাণ কমতে থাকে। তাই কাঁচা অবস্থাতেই আমের রঙ পরিবর্তন হতে শুরু করে।

আমের ভিটামিন বি১ পানিতে দ্রবনীয়। আমের আর্দ্র অংশের সঙ্গে ক্যালসিয়াম কার্বাইড বিক্রিয়া করে অ্যাকটেলিন গ্যাস উৎপন্ন করে। এতে আম অসময়েই পাক শুরু করে। সামগ্রিকভাবে আমের রাসায়নিক পরিবর্তন না ঘটলেও বাহ্যিকভাবে রঙের পরিবর্তনের কারণে দেখলে মনে হয় আম পেকেছে। এই অপরিপক্ক আম খেলে কেবল রুচি ও ভাবমূর্তি নষ্ট হয়, তাই নয়! শরীরের জন্যও অনেক বেশি ক্ষতিকর হতে পারে।

;