সরলা দেবী চৌধুরানী : এক প্রাগ্রসর বাঙালি নারী



শেহজাদ আমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
সরলা দেবী চৌধুরানী

সরলা দেবী চৌধুরানী

  • Font increase
  • Font Decrease

ঊনিশ শতক ও বিশ শতকের প্রথমার্ধ্বে বাংলার নারীদের পথচলা ছিল না অতটা মসৃণ। তখন তাদেরকে কোনো কাজে এগিয়ে যেতে সাধারণত নির্ভর করতে হতো পুরুষদের ওপর। পুরুষের সাহচর্য ও পরিচয়ে তৈরি হয়েছিল তাদের পরিচয়। তাদের পরিচয় বলয় স্ত্রী, কন্যা, পুত্রবধূ, নাতনি ইত্যকার পারিবারিক পরিচয়ের উর্ধ্বে যেতে পারেনি। এই পারিবারিক নিরাপত্তার ঘেরাটোপেই একটা সীমিত জায়গা তৈরি করে চলছিল তাদের জীবন। তার কারণ মেয়েদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, তাদের পেশা নিয়ে নারী স্বাধীনতার আন্দোলনরত পুরুষেরাও সেই সময়ে চিন্তা করেনি। তবে, কিছু নারী নিজেরাই এগিয়ে এসে তৈরি করেছিলেন আত্মপরিচয়। নারীদের এই এগিয়ে আসায় অগ্রগণ্য উদাহরণ রেখেছিলেন কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ির কিছু নারী। সেরকমই একজন ছিলেন সরলা দেবী চৌধুরানী।

অভিজাত ঠাকুর পরিবারে জন্মে, প্রতিপালিত হয়েও সেই পারিবারিক সীমারেখার বাইরে গিয়ে নিজের আলাদা পরিচিতি সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন তিনি। নিজেকে ভেঙেচুরে, গড়ে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন। চেহারায়, পোশাকে, ব্যক্তিত্বে এবং নিজের কাজে বাকিদের চেয়ে ছিলেন আলাদা। স্বাধীন জীবিকা ও রাজনীতিতে নিজেকে তিনি ওতপ্রেতভাবে জড়িয়ে দিয়েছিলেন, যেসব ক্ষেত্রে নারীরা তখনও এগিয়ে আসার কথা ভাবেনি। আর সেসবের জন্য কারো স্ত্রী, ভগিনী বা অন্য পরিচয়ের বিশেষ প্রয়োজন তাঁর হয়নি।

বিখ্যাত একটি পরিবারে জন্মেছিলেন তিনি, যেখানে ছিল প্রভাবশালী ও খ্যাতিমান সব পুরুষ। কিন্তু তাঁদের প্রভাবের মাঝেও কিন্তু সরলা নিজের নামটি ইতিহাসে তুলে ধরতে পেরেছেন সফলভাবে। সরলা দেবী ঊনবিংশ ও বিংশ শতকের কালপর্বে সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিশিষ্ট ভূমিকা নিয়েছিলেন। সমাজ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সেই ভূমিকা ও প্রচেষ্টা বেশ বৈপ্লবিক বললে ভুল হবে না।

জন্মেছিলেন মামাবাড়ি জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে আজকের দিনে অথচ আজ থেকে ঠিক ১৪৭ বছর আগে (৯ সেপ্টেম্বর ১৮৭২)। মা স্বর্ণকুমারী ছিলেন সে যুগের সফলতম লেখিকাদের একজন। বাবা জানকীনাথ ঘোষালও ছিলেন স্বাধীন ও মুক্তমনের মানুষ। কৃষ্ণনগরের জয়রামপুরের এক ধনী পরিবারের সন্তান ছিলেন জানকীনাথ। দেবেন্দ্রনাথ তাকে জামাতা হিসেবে পেতে ইচ্ছে প্রকাশ করলে তিনি বাড়ির সম্পূর্ণ অমতে রাজি হয়ে যান। নিজে ব্রাহ্মণ না হয়ে ব্রাহ্মণ বংশে বিয়ে করায় পিতার সম্পত্তি থেকে বঞ্ছিত হতে হয় তাকে। কিছুদিন ব্যবসা করে তিনি তখনকার বড়লোক শ্বশুরের জামাতার মতো বিলেতে গিয়ে ‘বার-অ্যাট-ল’ হয়ে ফেরেন। আইনি পেশায় পসার বাড়লেই, ঠাকুরবাড়ির অন্যান্য জামাতাদের মতো শ্বশুরবাড়িতে না থেকে নিজে বাড়ি বানিয়ে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে আলাদাভাবে বসবাস শুরু করেন। জানকীনাথ জাতীয় কংগ্রেসের সক্রিয় সদস্য ছিলেন এবং মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ‘মহাত্মা’ হবার অনেক আগে, তাঁর প্রাথমিক কলকাতা আবাস পর্বের ঠিকানা ছিল ঘোষাল বাড়ি।

সরলার শৈশব কাটে জোড়াসাঁকোয় মামাবাড়িতে। আরো অনেক মামাত, মাসতুতো ভাই, বোনেদের সাথে মিলে এক উৎকৃষ্ট সাংস্কৃতিক, সাহিত্যিক পরিবেশে। সকলের প্রিয় ‘রবি মামা’ বাড়ির সব সৃষ্টিশীলতার কেন্দ্রবিন্দু। বাড়ি থেকে সম্পাদিত হচ্ছে গোটা তিন-চার পত্রিকা। সেসব সম্পাদনার দায়িত্ব তার দুই মামা, এক মামী ও মায়ের। মেজমামা প্রথম ভারতীয় সিভিলিয়ান সত্যেন্দ্রনাথ ছিলেন নারী স্বাধীনতার অন্যতম পথিকৃৎ। বহির্জগতে মেয়েদের অবাধ বিচরণের স্বপ্ন দেখতেন। মেজমামী জ্ঞানদানন্দিনী সেই স্বপ্ন অনেকটা পূরণ করেছিলেন। মেয়েদের পোশাক ও সাজসজ্জা নিয়ে কাজ করতেন তিনি। চিন্তা করে দেখলে সেই সময়ে ঠাকুরবাড়ির সবচেয়ে সফল মহিলা সরলার জননী স্বর্ণকুমারী। তিনি ছিলেন বিখ্যাত লেখিকা, সাহিত্যের প্রায় সবক্ষেত্রে বিচরণ করেছেন, আত্মমগ্ন হয়ে অক্লান্তভাবে লেখালেখি করেতেন। তাই শিশু সন্তানদের দিকে ফিরে পর্যাপ্ত খেয়াল রাখার সময় ও ইচ্ছে কোনোটাই তাঁর ছিল না। বুক ভরা অভিমান নিয়ে কেটেছিল সরলার ছেলেবেলা। অন্য বাড়ি থেকে আসা তার মামীরা সন্তানদের স্নেহ ভালোবাসায় আঁকড়ে রাখত, কিন্তু তার মা সেসবের ধার দিয়েও যাননি। বাড়িতে দাসিদের দায়িত্বেই ছিল তারা চার ভাইবোন। ঠাকুরবাড়ির রূপের মাপকাঠিতে তিনি ছিলেন অনেকটা পিছিয়ে। একথা নিজেই বলে গিয়েছেন সরলা। তাই কারো নজরে পড়েননি তিনি। প্রথম নজরে পড়লেন তের বছর বয়সে এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিয়ে যখন বেথুন কলেজে ঢুকলেন। ওই পরিবারে মেয়েদের এই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বসার ক্ষেত্রেও তিনি ব্যতিক্রম। এন্ট্রান্সে ইতিহাসে তিনি মেয়েদের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছিলেন। ইতিহাসের প্রশ্নপত্রে মেকলের লেখা ‘লর্ড ক্লাইভ’ বইয়ের ওপর ক্লাইভের বাংলা বিজয় নিয়ে একটা প্রশ্ন এসেছিল। মেকলের বাঙালি চরিত্র বর্ণনায় যে দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছিল তা তুলে ধরে তীব্র প্রতিবাদ করে এ ব্যাপারে তার বিপরীত মতামত সুন্দর যুক্তি ও তথ্য দিয়ে সাজিয়ে উত্তর লিখেছিলেন তিনি। এভাবে ওই বালিকা বয়েসেই স্বাধীন চিন্তার পরিচয় দিয়েছিলেন সরলা। এর পরে বেথুন কলেজ থেকে ইংরেজিতে সাম্মানিক নিয়ে বিএ পাশ করলেন মাত্র আঠার বছর বয়েসে। পেলেন পদ্মাবতী স্বর্ণপদক। মেয়েদের মধ্যে এই পদক তিনিই প্রথম পেয়েছিলেন।

এর পর থেকেই একটু একটু করে নিজেকে মেলে ধরলেন। আর্টস নিয়ে পড়লেন। কলেজে রেগুলার সায়েন্স কোর্সে মেয়েরা পড়ত না। সরলা রোজ ড. মহেন্দ্রলাল সরকারের ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনে সান্ধ্য ফিজিক্স ক্লাসে যাওয়া শুরু করলেন, সঙ্গে অগ্রজ জ্যোৎস্নানাথ ঘোষাল ও মামাত দাদা সুধীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

সরলার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কৃতিত্ব জীবিকা অর্জনের কথা ভাবা। এর আগে মেয়েরা যতই বিলেতে যান, গাড়ি চালান, লেখালেখি করুন আর কঠিন পরীক্ষায় বসার কথা ভাবুন, জীবিকা অর্জনের কথা তাদের চিন্তায় স্থান পেত না তেমনভাবে। ঠাকুরবাড়ির সর্বময় কর্তা দেবেন্দ্রনাথও সরলার স্বাধীন সত্তায় বাধা দিতে পারেননি। দক্ষিণ ভারত ভ্রমণের সময় সরলার সঙ্গে দেখা হয়ে যায় মহীশূরের দেওয়ান নরসিংহ আয়েঙ্গারের। সরলার ব্যক্তিত্ব ও কথাবার্তায় মুগ্ধ হয়ে তিনি তাকে মহীশূরের মহারানী গার্লস কলেজে সুপারিন্টেনডেন্টের পদে আহ্বান জানান। সরলা সাগ্রহে গ্রহণ করেন সেই চাকরি। অতদূরে চাকরি করতে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল ঠাকুরবাড়ির অনেকেই। গ্রাহ্য করেননি কিছু কোনোদিন। যেটা করতে চেয়েছেন, সেটাই করেছেন।

মায়ের সম্পাদিত ‘ভারতী’ পত্রিকার সঙ্গে সরলা ও তাঁর বোন হিরন্ময়ী যুক্ত ছিলেন সেই বালিকা বয়েস থেকে। তারপর এলো পত্রিকা সম্পাদনার দায়িত্ব। ‘ভারতী’ যে শুধুই ঠাকুরবাড়ির পত্রিকা হয়ে থাকেনি এই কৃতিত্ব সরলার। ‘ভারতী’তেই আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের, তাঁর ‘বড়দিদি’ গল্পের মাধ্যমে। লেখকদের পারিশ্রমিক দেবার প্রচলনও তিনি শুরু করেছিলেন। ‘ভারতী’র জন্যে প্রায় জোর করে রবীন্দ্রনাথকে দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছিলেন ‘চিরকুমার সভা’। ‘ভারতী’ তাঁর এতটাই ভালোবাসার জায়গা ছিল যে পরে পাঞ্জাবে চলে গেলেও সম্পাদনা ও পরিচালনের জন্যে তিনি কলকাতায় ছুটে আসতেন।

বাড়ির সব মেয়েদের মতো সরলারও ছোটবেলায় পিয়ানো বাজাতে শিখেছিলেন। পিয়ানোয় তুলতেন চমৎকার সুর। সেইভাবেই মামা রবীন্দ্রনাথের কয়েকটি গানে সুর দেন সরলা। ‘সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে’ গানটার পিয়ানোরূপ দিয়েছিলেন তিনি। খুঁতখুঁতে রবীন্দ্রনাথও খুশি হয়ে ভাগ্নীকে ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’র পিয়ানোরূপ দিতে বলেন।

গান ও সুর সংগ্রহ একটা সময়ে নেশার মতো পেয়ে বসেছিল তাকে। বাংলার বাউল গান এবং মহীশূরে থাকতে দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটকী সুর একটা খাতায় লিখে তিনি রবীন্দ্রনাথকে উপহার দেন এবং তাঁর থেকে রবীন্দ্রনাথ অনেক গানে সুর দিয়েছিলেন। ‘বন্দেমাতরম’-এর সুরও মামা, ভাগ্নী দুজনে মিলে বসিয়েছিলেন। এছাড়াও নানা দেশাত্ববোধক গান সরলা লিখে সুর দিয়েছেন। ১৯০১’র কংগ্রেস অধিবেশনের অনুষ্ঠান তাঁর গান দিয়েই শুরু হয়েছিল। গানের প্রতিভা খুঁজে বেড়াতেন সরলা। অমিয়া ঠাকুর ও ঢাকার রানু সোমকে (প্রতিভা বসু) আবিষ্কার করে রবীন্দ্রনাথের কাছে হাজির করেন তিনিই।

স্বদেশি আন্দোলনের সময় দেশি কাপড় বিক্রির জন্য ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ নামে প্রতিষ্ঠান খুলেছিলেন সরলা। দুস্থ মহিলাদের কাজে লাগিয়ে এখানে তৈরি করা হতো দেশি তাঁতের কাপড়


সরলার কাজের ক্ষেত্র ছিল ব্যাপক, তাই স্বল্প পরিসরে তাকে নিয়ে আলোচনা করাও একটু কঠিন। শিল্প, সাহিত্যের নানা দিকে নারীরা তখন নিজেদের মেলে ধরলেও, সক্রিয় রাজনীতিতে তাদের দেখা যেত না। স্বদেশিয়ানায় উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন সরলা। জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বাঙালি যুবকদের একত্রিত করে শুরু করলেন ‘বীরাষ্টমী’ ব্রত, পরের বছর ‘শিবাজী উৎসব’ ও ‘প্রতাপাদিত্য’ উৎসব। সাহসিকতা ও তেজস্বিতা ছিল তার খুব পছন্দের। স্বদেশি বস্ত্র বিক্রির জন্যে মানিকতলায় খুললেন ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’। এই হস্তশিল্পের কাজে নিয়োগ করলেন দুস্থ বিধবাদের। পরবর্তীকালে দুস্থ বাঙালি নারীদের অর্থ রোজগারের জন্যে তিনি কৃষ্ণভামিনী দাসের প্রতিষ্ঠিত ‘ভারত স্ত্রী মহামণ্ডল’-এর সঙ্গেও বিশেষভাবে যুক্ত হন। তবে, এই স্বদেশি কর্মকাণ্ডকে কেন্দ্র করেই রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে মতবিরোধ সৃষ্টি হয় তাঁর। পরবর্তীকালে রবীন্দ্রনাথের অন্যতম তীব্র সমালোচক হয়ে উঠেছিলেন সরলা। গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলন রবীন্দ্রনাথ যখন সমর্থন করেননি, সরলা তখন ছিলেন ওই আন্দোলনে গান্ধীর ডান হাত। তাই, এর কিছুদিন পরে, সরলার শান্তিনিকেতনে অতিথিরূপে আগমন রবীন্দ্রনাথকে উপহার দিয়েছিল অস্বস্তি।

সরলার কাজে মুগ্ধ হয়েছিলেন স্বামী বিবেকানন্দও। কিছুকাল বিবেকানন্দ ও নিবেদিতার ঘনিষ্ঠ সহযোগী হয়ে উঠেছিলেন সরলা। এর আগে ঠাকুর পরিবারের কেউ দক্ষিণেশ্বর, বেলুড়ের পথ মাড়াননি। কিন্তু, সরলা ছিলেন সব কিছুতেই ব্যতিক্রমী। যা তাকে আকর্ষণ করবে, তিনি তাকেই গ্রহণ করবেন। আবার উৎসাহ হারালেই বর্জন করতে সময় লাগত না। বিবেকানন্দ ও নিবেদিতার বিদেশ সফরে, তাকে আমন্ত্রণ জানান নিবেদিতা। কিন্তু শ্রীরামকৃষ্ণ সম্পর্কে পরিহাসচ্ছলে একটা উক্তি সমাপ্তি ঘটায় এই সম্পর্কের। সরলাও ফিরে তাকাননি।

যে যুগে মেয়েদের ষোল বছর পূর্ণ হবার আগেই বিয়ে হয়ে যেত, সেই সময়ে সরলা বিয়ে করেন তেত্রিশ বছর বয়েসে। তার পাণিপ্রার্থী সংখ্যাও নেহায়েত কম ছিল না। গোপালকৃষ্ণ গোখলে নামের একজন অনুরাগী ছিল তাঁর। লেখক প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে সরলার বিয়ে প্রায় ঠিক হয়েও প্রভাতকুমারের মায়ের আপত্তিতে সেই সম্মন্ধ আর হয়নি। অবশেষে সরলার সঙ্গে বিয়ে হয় পাঞ্জাবের ‘হিন্দুস্থান’ পত্রিকার সম্পাদক ও সমাজকর্মী রামভজ দত্ত চৌধুরীর। এ ছিল আন্তঃপ্রাদেশিক বিবাহ। রামভজকে বর্ণনা করা হয় ‘Ultra Indian nationalist’ হিসেবে। বিয়ের পর, লাহোরে গিয়ে সরলা নিজেকে স্বদেশি আন্দোলনে আরো মেলে ধরেন।

১৯২১-এ অসহযোগ আন্দোলনের সময়ে গান্ধী পাঞ্জাবে এলে সরলা ছিলেন তার পাঞ্জাব-সফরসঙ্গী। শুধু সফরসঙ্গীই নয়, দুজনেই ব্যক্তিগত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন এবং এই সম্পর্ক গান্ধী পরিবার ও আশ্রমে সৃষ্টি করে তীব্র বিতর্ক। এই দাবি স্বয়ং গান্ধীর পৌত্র রাজমোহন গান্ধীর। সরলাদেবীর রূপ, সুরেলা কণ্ঠস্বর, গান বাজনা ও সাহিত্যের প্রতি অসীম জ্ঞান দেখে শুনে গান্ধীজীও তাঁর প্রেমে পড়তে বাধ্য হোন। গান্ধী দাবি করেছিলেন সরলার সঙ্গে তার ‘আধ্যাত্মিক বিয়ে’ হয়ে গেছে।

১৯২৩-এ মুসৌরীতে স্বামীর মৃত্যুর পরে সরলা সপুত্রক কিছুদিন আহমেদাবাদে গান্ধী আশ্রমে বসবাসও করেন। পরে চলে আসেন কলকাতায়। স্বাধীনভাবে কাজের সুযোগ না পেলে কোথাও মন বসাতে পারতেন না সরলা। রাজনৈতিকভাবে প্রথম পর্বে সশস্ত্র আন্দোলনের পূর্ণ সমর্থক সরলা পরে গান্ধীর অহিংস নীতিতে বিশ্বাসী হয়ে ওঠেন। তবে, একসময় আস্থা হারিয়ে ফেলেন অহিংস নীতিতে। রাজনীতিতেই উৎসাহ হারান। মনোযোগ চলে যায় ধর্মচর্চা ও অধ্যাত্ম সাধনার দিকে। বিজয়কৃষ্ণ দেববর্মা নামক এক গুরুর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে দীক্ষা নেন। হয়তো ক্লান্তি, একাকিত্ব ও ব্যক্তিগত জীবনে সম্পর্কের টানাপোড়েন তাঁর মধ্যে সৃষ্টি করেছিল নৈরাজ্য।

প্রবল প্রাণপ্রাচুর্য নিয়ে সবকাজে মেতে ওঠা সরলাকে তাঁর শেষের আট বছর আর মেলানো যায় না।

সারাজীবন অক্লান্তভাবে লেখালেখিও করেছেন তিনি। নিজের পত্রিকা ‘ভারতী’, ‘মাসিক বসুমতী’, ‘প্রবাসী’, ‘মডার্ন রিভিউ’, ‘হিন্দুস্তান’ এবং ‘দেশ’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে বেরিয়েছিল তার আত্মজীবনী ‘জীবনের ঝরাপাতা’। ‘জীবনের ঝরাপাতা’ সাহিত্যিক মহলেও সমাদৃত হয়েছিল।

নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্বের জোরে সমাজে নারীদের প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন তিনি। পরবর্তীকালে, ইন্দিরা গান্ধী থেকে জয়ললিতা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে মায়াবতী পর্যন্ত যারাই রাজনীতি ও সমাজকর্মে সফল হয়েছিলেন, তাদের জন্য প্রেরণাদায়ক নাম হয়ে ছিলেন সরলা দেবী চৌধুরানীর মতো নারীরা।

   

সম্মানসূচক ডি. লিট উপাধি পেল 'বিড়াল'!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে 'ম্যাক্স' নামের একটি বিড়ালকে সম্মানসূচক ‘ডক্টরেট অব লিটারেচার’ বা ডি. লিট উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। দেশটির ভারমন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের স্নাতক অনুষ্ঠানে বিড়ালটিকে এই সম্মানসূচক ডিগ্রি দেওয়া হয়। তবে সেই অনুষ্ঠানে বিড়ালকে আমন্ত্রণ জানানোর নিয়ম না থাকায় উপস্থিত ছিল না ম্যাক্স। 

বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্তৃপক্ষ বলছে, অনুষ্ঠানে বিড়ালটি উপস্থিত ছিল না। তাই বিড়ালের মালিক অ্যাশলে ডোর কাছে খুব শিঘ্রই এই ডিগ্রি পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।   

বন্ধুসুলভ এই বিড়ালটিকে তার ইঁদুর শিকারের দক্ষতা বা অতিরিক্ত ঘুমানোর জন্য নয় বরং তার সহচার্যের জন্যই স্বীকৃতি দিয়েছে।   বিড়ালটিকে এই ডিগ্রিতে ভূষিত করা হয়। ভারমন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটির ক্যাসেলটন ক্যাম্পাস।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সম্মানসূচক ডি. লিট উপাধি পেল 'বিড়াল'!

বিশ্ববিদ্যালয়টি একটি ফেসবুক পোস্টের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ম্যাক্স দ্য ক্যাট, অনেক বছর ধরেই ক্যাসেলটন পরিবারের একজন আদুরে সদস্য। ভারমন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের প্রবেশদ্বারের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া রাস্তায় পাশেই বসবাস করে এক পরিবার। বিড়ালটি সেই পরিবারেরই পোষা।

বিড়ালের মালিক অ্যাশলে ডো বলেন, ‘বিড়ালটি ঠিক করেছে সে ক্যাম্পাসে যাবে। এরপর থেকেই সে কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আড্ডা দিতে শুরু করে। আর শিক্ষার্থীরাও তাকে আদর করতে শুরু করে।’

বিড়ালটি প্রায় চার বছর ধরে ক্যাম্পাসে আসা যাওয়া করছে। বিড়ালটিকে পথের ধারে শুয়ে থাকতে দেখলেই সবাই তার সঙ্গে সেলফি নেয়।

এমনকি সাবেক ছাত্ররাও যখনই ক্যাম্পাসে আসেন তারা তখনই বিড়ালটির খোঁজ নিতে তার মালিক ডো-এর কাছে যান। ডো তাদের কাছে বিড়ালটির মা হিসেবেই বেশি পরিচিত।

;

৯৩ বছর বয়সে বৃদ্ধের অবিশ্বাস্য কর্মকাণ্ড



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বৃদ্ধ জন স্টারব্রুক

বৃদ্ধ জন স্টারব্রুক

  • Font increase
  • Font Decrease

শৈশবে খেলা, কৈশরে পড়ালেখা, যৌবনে চাকরি, মধ্যবয়সে সংসার, বৃদ্ধবয়সে একটা মাথা গোজার ঠাঁই খুঁজে অবসরে সময় কাটিয়ে দেওয়া। কপাল খারাপ থাকলে বিছানাতেই শোয়া বা আধশোয়া থেকে মৃত্যুর দিন গোণা। সাধারণত এভাবেই মানুষের জীবন কেটে যায়। অনেকে আবার মধ্যবয়সের পরেই নানারকম রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। অথবা শরীরকে বিভিন্ন রোগের আবাসস্থল বানিয়ে দুর্বল হয়েই বেঁচে থাকেন। তবে খড়ের গাদায় সূচের মতো দু-একজন থাকে যারা একেবারেই ব্যতিক্রম। তেমনভাবেই আলোচনায় এসেছেন ৯৩ বছরের এক বৃদ্ধ।  তার ব্যতিক্রমী জীবনযাপনের ধারাই আলোড়ন সৃষ্টি করেছে যুসমাজে।     

যুক্তরাজ্যের বাসিন্দা জন স্টারব্রুক। তিনি একজন ওয়াটার পোলো খেলোয়াড়। এটি মূলত পানির মধ্যে বাস্কেটবলের মতো একধরনের খেলা। এইখেলার সাথে কুস্তি খেলারও কিছুটা সাদৃশ্য রয়েছে। জনের বর্তমান বয়স ৯৩ বছর। এই বয়সেও যথেষ্ট সুস্থ এবং সবল তিনি। সমবয়েসীদের যেখানে সোজা হয়ে দাঁড়াতেও ২ জনের সহায়তা লাগে, সেখানে এখনো ম্যারাথনে দৌড়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। পাশাপাশি বেশ দক্ষ সাঁতারুও বটে! ৮০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সাঁতার কাটা অব্যাহত রেখেছেন তিনি।

প্রায় শতাব্দি ছুঁই ছুঁই বৃদ্ধের এমন কারিশমা দেখে চোখ ছানাবড়া হবার উপক্রম। জন মূলত একজন সাঁতারু। পেশাগতভাবে না হলেও অনেক ছোটবেলা থেকেই তিনি সাঁতার কাটেন তিনি। দেশের সম্মানজনক অনেপ্রতিযোগীতায় একাধিক বার চ্যাম্পিয়নের খেতাবও জেতেন। চাকরি করেছেন ‘ব্রিটিশ আর্মি মেডিক্যাল কর্পস’-। সেখানেও সাঁতারের দক্ষতার কারণে তার বেশ সুনাম ছিল।   

ম্যারাথনে দৌড়াচ্ছেন ৯৩ বছরের জন

তবে সাঁতারের পাশাপাশি এখন ম্যারাথেনেও অংশগ্রহণ করেছেন জন। ৫২ টির বেশি ম্যারাথনের দৌড় শেষ করেছেন তিনি। জানালেন এই বয়সেও তার এমন চ্যালেঞ্জিং সব কাজের অভিজ্ঞতা। সুস্থতা ধরে রাখার রহস্যও ফাঁস করলেন সকলের কাছে। ব্রিটিশ নাগরিক জন বন্ধুদের কাছে ‘দ্য লিজেন্ডনামেই পরিচিত। একই নামে তাকে আখ্যায়িত করছে ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলো

জন স্টারব্রুক জানান, তিনি এখনো সপ্তাহের ৬ দিনই জিমে যাতায়াত করেন। বিশেষ কোনো খাদ্যাভাস নেই তার। খাদ্যতালিকায় প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি রাখতে পছন্দ করেন- এই যা। তাছাড়া প্রতিদিন সকালে পোরিজ খান তিনি। তবে তিনি কখনো ধূমপান করেননি। অ্যালকোহলও খুব সীমিত পরিমাণে সেবন করতেন। মূলত এই বয়সেও এটা সবল থাকার পেছনে বংশ পরম্পরায় পাওয়া নিজের জীন আসল কারণ- বিশ্বাস করেন জন।

কারণ যাই হোক, প্রানবন্ত এই বৃদ্ধ বিশ্ববাসীকে অবাক করেছে। তার মতোই দৃঢ় মানসিকতা ধরে রাখার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন যুবক-যুবতীরা।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

;

প্রশ্ন আর উত্তর যেন পরস্পরের সাংঘর্ষিক!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রশ্ন থাকে এক আর তার উত্তর হয় ভিন্ন। এমন উত্তরপত্রের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায়ই দেখা যায়। এবার এমনই এক উত্তরপত্রের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে ভাইরাল হয়েছে। যা দেখে রীতিমতো সবাই অবাক! তবে এই ঘটনার জন্ম দেওয়া দেশটি বাংলাদেশ নয়, প্রতিবেশী দেশ ভারতের একটি হিন্দি পরীক্ষায় ঘটেছে এমন কাহিনী।

ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রকাশিত ভিডিওতে পরীক্ষার্থীর এমন উত্তর দেখে শিক্ষককেও হাসতে দেখা যায়। 

ভিডিওটি ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করা হয়েছে @n2154j অ্যাকাউন্টের একটি আইডি থেকে।

ওই ভিডিওতে দেখা যায়, একটি প্রশ্ন ছিল এমন, সংযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ (যৌগিক ব্যঞ্জনবর্ণ) কী? এই প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষার্থীটি একটি খাদ্য রূপক দিয়ে উত্তর দিল: "মাটার পনির এবং সব মিশ্র সবজি একত্রিত একটি খাবার।"

আরেকটি প্রশ্ন ছিল "অতীত কাল কাকে বলে?" এর উত্তরে ওই পরীক্ষার্থি লিখেছে, "যখন অতীত আমাদের অতীতের আকারে আসে, তখন তাকে অতীত কাল বলা হয়।"

ভিডিও অনুযায়ী আরও একটি প্রশ্ন ছিল "বহুবচন কাকে বলে?" এর উত্তরে সে লিখেছে "যে পুত্রবধূ তার শ্বশুরবাড়ির কথা শোনে তাকে বহুবচন বলে।"

শিক্ষার্থীটির এমন উত্তর শুনে হাসিতে ফেটে পড়েন শিক্ষক। এমন উত্তরগুলোকে শিক্ষক ভুল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। যদিও এমন উত্তরের জন্য তাকে পুরোপুরি হতাশ করা হয়নি। তাকে ১০ মার্কের মধ্যে ৫ নম্বর দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষক পরে তার উত্তরপত্রে লিখে দিয়েছিলেন, এই ৫ মার্ক তোমার মস্তিষ্কের জন্য, ছেলে।

ভিডিওটি দেখে সবাইকে হাসির ইমোজি দিতে দেখা যায়। সম্পূর্ণ নম্বর না পাওয়ায় অনেকেই যুক্তি দিয়ে লিখেছেন, ছাত্রটি তার কৌতুক প্রতিভার জন্য পূর্ণ নম্বর পাওয়ার যোগ্য।

তবে এমন ঘটনা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছেন, ছাত্র এবং শিক্ষকের হাতের লেখা সন্দেহজনকভাবে একই রকম।

অন্য এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, "প্রশ্ন এবং উত্তর একই হাতের লেখা"। 

;

ফেনী শহরে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে কৃষ্ণচূড়া



মোস্তাফিজ মুরাদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ফেনী
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

'কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরি কর্ণে-আমি ভুবন ভুলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে' জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই মনোমুগ্ধকর গানে ফুটে উঠেছে কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য। কৃষ্ণচূড়া যেন প্রকৃতিকে দান করেছে লাল আভার অপরূপ সৌন্দর্যের মহিমা। সাথে গ্রীষ্মের উত্তাপে শহরে সৌরভ ছড়াচ্ছে নানা জাতের ফুল। তীব্র তাপদাহের পর কালবৈশাখী, এরপর মাঝারি বৃষ্টির মধ্যে ফুলের আগমন। এতে রঙের উল্লাসে মেতে উঠেছে ফেনী শহরবাসী।

ফেনী শহরের কোর্ট বিল্ডিং, এলজিইডি, পুলিশ লাইন, নবীন চন্দ্র সেন কালচারাল সেন্টার, ফেনী সরকারি কলেজ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ফুটে আছে কৃষ্ণচূড়া। এটি একদিকে প্রকৃতিকে যেমন সাজিয়েছে অপরূপ সৌন্দর্যে, অন্যদিকে এর সৌন্দর্য মুগ্ধ করছে তরুণ-তরুণী, নানা শ্রেণি-পেশার মানুষসহ ফুলপ্রিয় পথচারীদের। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে, সরকারি দফতরসহ স্কুল-কলেজে কৃষ্ণচূড়া গাছের লাল ও উজ্জ্বল সবুজ পাতার সংমিশ্রণ দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছে চারপাশ।


কৃষ্ণচূড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ফুলের ঘ্রাণে মুখরিত হয়ে আছে পুরো শহর। শহরের মূল সড়কের ডিভাইডারে পৌরসভার উদ্যোগে লাগানো হাসনাহেনা, রজনিগন্ধা, গন্ধরাজসহ নানা জাতের ফুল গাছে ফুল ফুটেছে। এটি একদিকে বাড়িয়েছে সৌন্দর্য অন্যদিকে হেঁটে কিংবা রিকশায় চলাচল করলে পাওয়া যায় এসব ফুলের সুঘ্রাণ।

ফেনী শহরের কৃষ্ণচূড়ার অপরূপ সৌন্দর্য দেখে ফুলপ্রিয় পথিকরা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া ফুল প্রকৃতিকে অনন্য সাজে সাজিয়েছে। এই ফুলের সৌন্দর্যের কারণে পথচারীরা একবার হলেও এই ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এর গাছের উপর নজর দিবে। পাশাপাশি তীব্র গরমে অন্যান্য ফুলের সুঘ্রাণে চারপাশ মুখরিত হওয়াতে ক্লান্তিতা কিছুটা হলেও কমছে।


তারা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া ফুলের এই নান্দনিক দৃশ্য দেখতে এর গাছ রোপণ করা জরুরি। রাস্তা প্রশস্তকরণ, ঘর-বাড়ি নির্মাণসহ নানা প্রয়োজনে গাছ কেটে ফেলা হয়। অন্যান্য গাছ রোপণ করার পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া রোপণ করলে একদিকে যেমন সৌন্দর্য বাড়াবে অন্যদিকে পরিবেশ বান্ধব হবে।

সাজিদ হাসান নামের এক পথচারী বলেন, কৃষ্ণচূড়া একদিকে যেমন প্রকৃতিতে অপরুপ সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে, আরেকদিকে গ্লোবাল ওয়ার্মিং কমাবে। সারাদেশে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে, আমার মতে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে এই গাছটিও যুক্ত করা উচিত। তীব্র গরমের পর বৃষ্টি হলো, এরপর শহরে নানা রঙের ফুলের দেখা মিলছে, ফুলের ঘ্রাণে চলাচল করতেই ভালো লাগছে।

ফারজানা ইয়াসমিন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ফুলের সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে। অন্যান্য ফুলের পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া ফুল আমার অনেক ভালো লাগে। আমাদের কলেজে বকুল তলা আছে, ক্যান্টিনের পাশে কৃষ্ণচূড়া গাছ আছে। সুযোগ পেলেই ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করি।

অনিক মোহন নামে একজন বলেন, রিকশায় করে যখন বাসায় ফিরি, শহরের রাস্তার মাঝে ভিডাইভারে লাগানো নানা জাতের ফুলের ঘ্রাণ মনকে আনন্দিত করে। রাতের বেলা শহর যখন নিস্তব্ধ হয়ে যায়, তখন এ ফুলের সৌন্দর্য কয়েকশ’ গুণ বেড়ে যায়।

সড়কের পাশে কৃষ্ণচূড়া লাগানো হলে সৌন্দর্য বাড়বে বলে মনে করেন পথচারী মিনহাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, রাস্তা প্রশস্তকরণের জন্য যে গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে, ওই গাছগুলোর জায়গা কৃষ্ণচূড়ার গাছ লাগালে রাস্তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে।

একই কথা বলেন শহরের ব্যবসায়ী নাদিম আহমেদ। তিনি বলেন, সৌন্দর্য ও পরিবেশের কথা বিবেচনা করে এই গাছ রোপণ করা উচিত আমাদের। তাপমাত্রা যেভাবে বাড়ছে অন্যন্যা গাছ রোপণ করার পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া গাছ রোপণ করার উদ্যোগ নিতে হবে। যেগুলো শহরে আছে তাতেই সৌন্দর্য বেড়ে গিয়েছে কয়েকগুণ, আরও যদি লাগানো যায় ফুলে ফুলে ভরে উঠবে আমাদের শহর।

কৃষ্ণচূড়া মাদাগাস্কারের শুষ্ক পত্রঝরা বৃক্ষের জঙ্গলে পাওয়া যায়। যদিও জঙ্গলে এটি বিলুপ্ত প্রায়, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে এটি জন্মানো সম্ভব হয়েছে। সৌন্দর্যবর্ধন গুণ ছাড়াও, এই গাছ উষ্ণ আবহাওয়ায় ছায়া দিতে বিশেষভাবে উপযুক্ত। কৃষ্ণচূড়া উদ্ভিদ উচ্চতায় কম (সর্বোচ্চ ১২ মিটার) হলেও শাখা-পল্লবে এটি বেশি অঞ্চল ব্যাপী ছড়ায়।

শুষ্ক অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে কৃষ্ণচূড়ার পাতা ঝরে গেলেও, নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে এটি চিরসবুজ থাকে। কৃষ্ণচূড়া ফুলের রং উজ্জ্বল লাল। পত্র ঝরা বৃক্ষ, শীতে গাছের সব পাতা ঝরে যায়। বাংলাদেশে বসন্ত কালে এ ফুল ফোটে। ফুলগুলো বড় চারটি পাপড়ি যুক্ত। পাপড়িগুলো প্রায় ৮ সেন্টিমিটারের মত লম্বা হতে পারে। কৃষ্ণচূড়া জটিল পত্র বিশিষ্ট এবং উজ্জ্বল সবুজ। প্রতিটি পাতা ৩০-৫০ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ২০-৪০ টি উপপত্র বিশিষ্ট। কৃষ্ণচূড়ার জন্মানোর জন্য উষ্ণ বা প্রায়-উষ্ণ আবহাওয়ার দরকার। এই বৃক্ষ শুষ্ক ও লবণাক্ত অবস্থা সহ্য করতে পারে।

জানা যায়, অপরূপ সৌন্দর্য ছড়ানোর পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর পাতা, মূলের বাকল ও ফুল ভেষজ গুণাগুণ সম্পূর্ণ, যা জ্বর ও খুশকি নিরাময়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। ভেষজটি হেমিপ্লেজিয়া, আর্থরাইটিস এবং কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। কৃষ্ণচূড়া গাছের শিকড়, বাকল এবং ফুল সবই পরজীবী সংক্রমণ নিরাময়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।

;