বিশ্ব পর্যটন দিবসের বিশেষ সাক্ষাৎকার (পর্ব ১)

হাইকমিশনগুলোকে ট্যুরিস্ট পাঠানোর টার্গেট দিতে হবে



মারিয়া রিমা, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
ড. সৈয়দ রাশিদুল হাসান

ড. সৈয়দ রাশিদুল হাসান

  • Font increase
  • Font Decrease

২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ পর্যটন শিল্পের অবস্থান, সমস্যা, সমাধান ও বিবিধ বিষয় নিয়ে ঢাকা ইউনিভার্সিটি ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ডিপার্টমেন্টের সাবেক অধ্যাপক ড. সৈয়দ রাশিদুল হাসান-এর ৩ পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ প্রকাশিত হলো প্রথম পর্ব। বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমের পক্ষে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট মারিয়া রিমা

বার্তাটোয়েন্টিফোর: বাংলাদেশ কি পর্যটনের দেশ? কেন আমরা পর্যটনের দেশ বলব?

ড. সৈয়দ রাশিদুল হাসান: প্রশ্নটা খুব ভালো করেছেন। এমন প্রশ্ন আগে কেউ করেনি। বিষয়টা হচ্ছে কী, কোনো দেশ পর্যটনের হবে কি হবে না এটা কিন্তু বলা মুশকিল। পর্যটন মানে যেখানে আপনার পর্যটনের কোনো প্রোডাক্ট থাকে সেটাকেই আপনি পর্যটনের জন্য গড়ে তুলতে পারেন। বাংলাদেশে পর্যটনের এমন কিছু প্রোডাক্ট আছে যেগুলো আমরা পর্যটনের জন্য উপস্থাপন করতে পারি। সে হিসেবে তো বাংলাদেশ অবশ্যই পর্যটনের দেশ। প্রত্যেকটা দেশের নিজস্ব ভাষা, কৃষ্টি-কালচার এগুলো আছেই। কালচার তো পর্যটনের বড় একটা উপাদান। এছাড়া আমাদের যেসকল প্রাকৃতিক সম্পদ আছে সেগুলো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে থাকলেও আমাদের দেশে একরকম সৌন্দর্য নিয়ে আছে। তারপর ধরেন, আমারদের যে আর্কিওলজিকেল ইমেইজগুলো আছে, অন্যান্য দেশের তুলনায় যদি বলি কম পুরাতনই হলো, তারপরও এটা তো ইনডিড। যেমন ধরেন, পাহাড়পুর। পাহাড়পুর আপনি ইন্ডিয়াতে পাবেন না, পাহাড়পুর আপনি ইন্দোনেশিয়াতেও পাবেন না। এগুলো তো আমাদের পর্যটনের প্রোডাক্ট। সে হিসেবে অবশ্যই আমরা বলব যে, বাংলাদেশ পর্যটনের দেশ।

বার্তাটোয়েন্টিফোর: আপনি সিজনাল পর্যটন নিয়ে বলেন। এ ব্যাপারে জানতে চাই।

ড. সৈয়দ রাশিদুল হাসান: ঋতুভিত্তিক পর্যটন এটা কিন্তু বাংলাদেশে একমাত্র সম্ভব। ইউরোপ যান, বা আমাদের পুবের দেশগুলো যারা আছে, মালয়েশিয়া বলেন, থাইল্যান্ড বলেন এদের কিন্তু এত ঋতুবৈচিত্র নাই। আমাদের ছয়টা ঋতু। ছয়টা ঋতুর মধ্যে সবগুলোর পার্থক্য আমরা বুঝি না, কিন্তু মিনিমাম চারটা ঋতুর পার্থক্য তো বুঝি। যেমন ধরেন, বর্ষাকাল। বর্ষাকালে প্রকৃতির অপরূপ একটা রূপ। কিন্তু বর্ষাকালে আমাদের মুভমেন্ট করা ডিফিকাল্ট হয়ে যায়। শীতের সময় সহজে মুভমেন্ট করা যায়। যার দরুন, আমরা শীতের সময়কে বলি শুধু পর্যটনের ঋতু। বাদবাকিগুলোকে আমরা পর্যটনের ঋতু বলি না। এই না বলাটা আমি বলব অন্যায়। কী বলব, আমাদের গাফিলতিই, আমরা ক্যাপেবেল না। আমাদের বর্ষাকালটায় যে পর্যটন হতে পারত, সে পর্যটনটার কমিউনিকেশান আমরা গড়ে তুলতে পারছি না। তা হলে পরে দেখতেন যে, বর্ষাকালেও লোক আসত। আবার ধরেন, গরমকালকে আমরা পর্যটনের অন্তর্ভুক্ত করতে পারি। গরমকালে আমাদের বিভিন্ন ফল আসে। ম্যাঙ্গো ট্যুরিজম, লিচি ট্যুরিজম, এরকম বিভিন্ন নাম দিয়ে আমরা করতে পারি। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য এটা। আমাদের এই ক্যাপাবিলিটা নাই যে, আমাদের ঋতুগুলোকে কেন্দ্র করে আমরা পর্যটনের প্ল্যানগুলো তৈরি করতে পারি। আর যেজন্য বাংলাদেশকে ঋতুভিত্তিক দেশ বলা হয়। আর সেজন্য আমি বলব যে, পর্যটনের নির্দিষ্ট কোনো ঋতু নেই। সব ঋতুতেই পর্যটন আছে।

বার্তাটোয়েন্টিফোর: শুধু দেশের ভেতর লোকের বেড়ানো যেটাকে আমরা ডোমেস্টিক ট্যুরিজম বলি সেটা কি এই ইন্ডাস্ট্রিকে বাঁচানোর জন্য যথেষ্ট?

ড. সৈয়দ রাশিদুল হাসান: আমরা যদি মাইক্রো লেভেলে দেখি, আমাদের পর্যটন ব্যবসায়ের যে পরিধি আছে, এটা কিন্তু মোটামুটিভাবে ডোমেস্টিক পর্যটক দিয়ে সাসটেইন করানো যেতে পারে।

বার্তাটোয়েন্টিফোর: দেশের মধ্যে একটা সচল অর্থনীতি আর কী!

ড. সৈয়দ রাশিদুল হাসান: হ্যাঁ, রাইট রাইট! কারণ এখানে তো মানি পাম্প আউট হচ্ছে। যে কোনো জায়গায় যান মানি পাম্প আউট হচ্ছে। ওই এলাকার লোকেরা মানি পাচ্ছে। কিন্তু পর্যটনের উদ্দেশ্য তো আরো ব্যাপক। সেটা হচ্ছে, ফরেন এক্সচেঞ্জ আর্ন করতে হবে। ডোমেস্টিক পর্যটক দিয়ে তো ফরেন এক্সচেঞ্জ আর্ন করা যায় না। আমাদের ফাইভ স্টার হোটেল আছে, ফোর স্টার হোটেল আছে। ওখানে তো ডোমেস্টিক পর্যটক থাকে না।

বার্তাটোয়েন্টিফোর: আমাদের দেশে বিদেশি পর্যটক আসে না কেন?

ড. সৈয়দ রাশিদুল হাসান: এটার বহু কারণ আছে। আমি কিছুদিন আগে এমনি ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে একটা গবেষণা করিয়েছিলাম। ওখানে কিছু ইন্টারেস্টিং পয়েন্ট আপনার বেরিয়ে এসেছে। প্রথম যে পয়েন্ট উঠে এসেছে সেটা হচ্ছে, বাংলাদেশের ইমেইজ বাইরে খুব খারাপ। বাংলাদেশ মানেই হচ্ছে খারাপ একটা দেশ।

বার্তাটোয়েন্টিফোর: এটা পলিটিক্যাল ইনস্ট্যাবিলিটির কারণে?

ড. সৈয়দ রাশিদুল হাসান: শুধু পলিটিক্যাল ইনস্ট্যাবিলিটি না। এগুলো হলো, আমাদের দেশে ঝড়, সাইক্লোন, বন্যা যে হয়, আমাদের দেশের মিডিয়া আছে, এবং এর সাথে বাইরে যে মিডিয়া আছে, এই জিনিসগুলোকে তারা এমনভাবে তুলে ধরে, মানুষ মনে করে এই দেশটা খুব গরিব। এইখানে যাওয়া খুব কঠিন। সুতরাং শুধু পলিটিক্যাল ইনস্ট্যাবিলিটি না। পলিটিক্যাল ইনস্ট্যাবিলিটি থাকলে পর্যটন খুব ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ইট ইজ নট ট্রু। পাকিস্তানে দেখেন গোলাগুলি, মারামারি, বোম ফাটানো তো লেগেই আছে। তারপরও পর্যটক যাচ্ছে। আমাদের দেশে পলিটিক্যাল ইনস্ট্যাবিলিটি ডেফিনেটলি নেগেটিভ পয়েন্ট। কিন্তু এটার জন্য যে পর্যটক আসবে না, এমন না। মালদ্বীপে মালেতে প্রচণ্ড বোমা হামলা হলো না? কিন্তু তাতে তো পর্যটক কমে নাই। পর্যটক না আসার কারণ নেগেটিভ ইমেইজ অব বাংলাদেশ। আমরা তো বাইরের দেশে যাই। বাইরে গিয়েও আমরা দেখি। আপনি বিশ্বাস করবেন না, অস্ট্রেলিয়ায় আমরা গেছি, বাংলাদেশ নিয়ে তেমন কেউ শোনেনি। কিন্তু পরে বলল যে, “রেগুলার ফাইটিং অ্যান্ড ফাইটিং”। জাপানে অদ্ভুত কথা শুনেছি। যদিও আমি নিজে শুনিনি, জাপানে যারা বাংলাদেশি আছে তারা আমাকে বলল যে, “স্যার, আপনি বিশ্বাস করবেন! জাপানে এখনো কিছু কিছু লোক আমাদের জিজ্ঞাসা করে, “তোমাদের দেশে নাকি কন্যা সন্তান হলে তাকে পাহাড়ে রেখে আসো?” কেউ কেউ আবার বলে, “বাংলাদেশে কোনো বিল্ডিং আছে নাকি? ওদের তো স্কাইস্কেপ বিল্ডিং সব।” তো বাংলাদেশ যে গরিব দেশ এত বড় বিল্ডিং আছে নাকি? এই নেগেটিভ ইমেইজ আপনার খুব ক্ষতি করেছে। বিদেশি পর্যটক আনার জন্য আমাদের ইমেইজ ঠিক করতে হবে।

বার্তাটোয়েন্টিফোর: ইমেইজ ঠিক করা কিভাবে সম্ভব মনে করছেন?

ড. সৈয়দ রাশিদুল হাসান: এটা এক কথায় তো বলা সম্ভব নয়। আমি এক্সাম্পল দিই। বাইরের দেশে ইন্ডিয়ার যত অ্যাম্বাসেডর আছে এরা যদি কোথাও যায় তারা প্রতি বক্তৃতা দেয়ার পর একটা কথা অবশ্যই বলবে, “ইন্ডিয়া ইজ অ্যা বিউটিফুল কান্ট্রি, আই পার্সোনালি ইনভাইট ইউ টু ভিজিট ইন্ডিয়া।” বুঝলেন তো! গভঃমেন্টের ইন্টিগ্রেটেড এফোর্ট দিতে হবে। প্রত্যেকটা হাই কমিশন আছে বা অ্যাম্বাসেডররা যারা আছে, তাদেরকে একদম টার্গেট দিয়ে দিতে হবে যে, তুমি ওখানে দুই বছর বা তিন বছর থাকবা। এই দুই বা তিন বছরে এত হাজার টুরিস্টকে তোমার বাংলাদেশে পাঠাতে হবে। বাংলাদেশের ইমেইজটা ডেভেলপ করার জন্য গভঃমেন্টকেই কাজ করতে হবে।
আরেকটা হচ্ছে, ফ্যামিলিয়ারাইজেশন ট্রিপ। ফ্যামিলিয়ারাইজেশন ট্রিপ হচ্ছে ধরেন, ইন্দোনেশিয়ায় আমরা বেড়াতে যাই। ইন্দোনেশিয়া সম্পর্কে কে আমাদের ফ্যামিলিয়ারাইজ করেছে? এখানে আমাদের ট্যুর অপারেটর যারা আছে তারা। ইন্দোনেশিয়ায় ট্যুর অপারেটর যারা আছে, ইন্দোনেশিয়ার মিডিয়ার লোক যারা অথবা ইন্দোনেশিয়ার জার্নালিস্ট যারা আছে, আমি ইন্দোনেশিয়া বলছি, যে কোনো কান্ট্রি হতে পারে। তাদেরকে গ্রুপ করে গভঃমেন্টের পয়সায় বেড়াতে নিয়ে আসেন। তাদেরকে আমাদের ভালো ভালো যে জিনিসগুলো আছে তা দেখাবেন, আপ্যায়ন করবেন। শুধু একটাই কন্ডিশন, তোমরা ১৫জন লোক আছো, ৫জন ট্যুর অপারেটর, ৫জন সাংবাদিক, ৫জন মিডিয়ার লোক। তোমরা প্রত্যেকে অন্তত ২টা করে আর্টিক্যাল হোক, ডকুমেন্টারি হোক, ছবি পোস্টার হোক বানিয়ে তোমাদের দেশে আমাদের দেশ সম্পর্কে মিডিয়াতে প্রচার করবে। তাদের ট্যুর অপারেটরকে বলে দিতে হবে, তোমরা আমাদের দেশে লোক পাঠাও। এই ফ্যামিলিয়ারাইজেশন ট্রিপটা দরকারি। ইনভেস্টমেন্ট থাকতে হবে। কোটি কোটি টাকা বিভিন্ন খাতে ইনভেস্ট তো আমরা করছিই। এখানে না হয় আমরা ২ কোটি টাকা ইনভেস্ট করলাম, ক্ষতি কী? বিবিসি, সিএনএন, জিওগ্রাফিক চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দিবেন আর লোকজন আমাদের দেশে আসবে এরকম না কিন্তু। আমাদের দরকার এখন কমিউনিকেশন নট প্রমোশন। বাংলাদেশে ব্যাড ইমেইজ যেটা হয়েছে এটা কেন হয়েছে? কিভাবে হয়েছে? এটাকে ভালো করার চেষ্টা করুন বাই কমিউনিকেশন। সুতরাং ইট ইজ দ্য স্টেইজ অব কমিউনিকেশন নট প্রমোশান।

বার্তাটোয়েন্টিফোর: পর্যটনমুখী দেশ হিসেবে স্টাবলিশ করতে হলে আমাদের কী করা উচিত?

ড. সৈয়দ রাশিদুল হাসান: ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপ করতে হবে। আপনাকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে আসলাম, আপনার খাবারের ব্যবস্থা করতে পারলাম না, মুভমেন্টের ব্যবস্থা করতে পারলাম না, তা তো হবে না। আমাদের দেশে কয়টা ফাইভ স্টার হোটেল আছে? প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁর একজন জিএম ছিল জাপানি। তাকে আমি জিজ্ঞেস করলাম, জাপানি পর্যটক কেন বাংলাদেশে আসে না। অনেক আগের কথা। তখন জাপানিরা বাংলাদেশে তেমন আসত না। সে বলল, “দেখেন, জাপানি পর্যটকরা হলো বয়স্ক, তো তারা প্রথমেই যেটা চায় তা হলো একজন জাপানি এন্টারপ্রেটর। তোমাদের দেশে এগুলার বড় অভাব। তারপর হচ্ছে, তাদের একটা নিজস্ব লাইফস্টাইল আছে। সেই লাইফস্টাইল অনুযায়ী যেভাবে ওরা চলে, যেভাবে ওরা খায়, সেভাবে তোমাদের এখানে কেউ সাপ্লাই দিতে পারে না।” তো আমরা এসব সুযোগ সুবিধা পর্যটকদের দিতে পারছি না। আমরা কী বলি? কক্সবাজার আমাদের লঙ্গেস্ট সি বিচ। তো লঙ্গেস্ট সি বিচ দেখার কী আছে? আমাদের আগে টার্গেট ঠিক করতে হবে। পর্যটন মানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যেই আটকা পড়ে আছি আমরা।

ইন্ডিয়াতে সেভেন সিস্টার্স নিয়ে একটা সেমিনার হয়েছিল সেখানে পেপারস জমা দিয়েছিলাম আমি। এই যে সেভেন সিস্টার্সে এত লোক এদের মধ্যে যারা অসুস্থ হয়ে পড়ছে তাদের দ্বারা চেন্নাই গিয়ে ট্রিটমেন্ট করানো সম্ভব না। তাদের জন্য আমরা যদি এই বেল্টেই সিলেট, কুমিল্লা, কিশোরগঞ্জে এসকল বেল্টে বিশ্বমানের আমরা ৪/৫টা হসপিটাল করি ওদের রোগীরাই এসে দেখবে যে, আমাদের বিশ্বমানের সেবা আছে। একটা রোগীর পক্ষে ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশে আসা যতটা সহজ, ত্রিপুরা থেকে চেন্নাই, বোম্বে যাওয়া এতটা সহজ না। আপনি বিশ্বমানের হসপিটাল গড়ে তোলেন। দেখেন আমাদের মেডিক্যাল ট্যুরিজম কত আগায়ে যায়। আমাদের প্ল্যানগুলো করতে হবে, আমাদের টার্গেট কী সেটা আমরা ঠিক করতে পারি না।

বার্তাটোয়েন্টিফোর: বাংলাদেশে পর্যটন ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা কেমন আপনি মনে করেন?

ড. সৈয়দ রাশিদুল হাসান: পর্যটন ইন্ডাস্ট্রি আমাদের যেটা আছে সেটা সম্পূর্ণভাবে বলতে গেলে বেসরকারি পর্যায়ে। আমাদের কাছে স্ট্যাটিস্টিকস্ কিছু ডেটা আছে, সেখানে আমরা বলি, পর্যটনে সরাসরি ১৩ লক্ষ লোক প্রায় কর্মরত আছে। এই ১৩ লক্ষ লোক কোথায়? ট্রান্সপোর্টের লোক এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। যদিও ট্রান্সপোর্ট পর্যটনের একটা অংশ। কিন্তু ট্রান্সপোর্ট তো এমনিতেই চলবে। সুতরাং ট্রান্সপোর্টকে পর্যটনের সাথে আমরা ধরছি না। সর্বত্র রেস্টুরেন্ট ছড়িয়ে আছে। এগুলো তো ডাইরেক্টলি পর্যটনের সাথে সম্পর্কিত না। কিন্তু রেস্টুরেন্টে হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ কর্মী যারা আছে তারাও এর মধ্যে। আমি বলতে চাই, প্রথমে একটা ডেস্টিনেশান ঠিক করতে হবে। ডেস্টিনেশানের মধ্যে যে রেস্টুরেন্টগুলো পড়ে, যে রেস্টুরেন্টগুলো পর্যটকদের কারণেই মেইনলি চলছে। এরকম যদি হয় তখন সেই রেস্টুরেন্টগুলোতে যারা কাজ করছে তখন আমি বলব, তারা ডাইরেক্টলি পর্যটন শিল্পে আছে। আমাদের ডেস্টিনেশান অনুযায়ী রেস্টুরেন্ট আছে, ডেস্টিনেশান অনুযায়ী বাস আছে সেসব ধরে নিয়ে আমরা বলি, ১৩ লক্ষ কর্মী আছে, কিন্তু আসলে এটা আরো কম। আমাদের ডেডিকেটেড ইউনিটস, স্টাব্লিশমেন্ট থাকতে হবে। আমাদের কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন হচ্ছে। আগে চিটাগং পর্যন্ত ছিল। আমরা যদি একটা বগি বলে দিই যে, ‘স্ট্রিক্টলি ফর দ্য টুরিস্ট’ ট্যুরের কাগজপত্র দেখাবে তার জন্য। এরকমভাবে আমরা যদি খুলনার সুন্দরবনের জন্য করে দিই, সিলেটের জন্য করে দিই। তাহলে আমরা বলব, এই ট্রান্সপোর্টের একটা বড় অংশ পর্যটন ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে জড়িত। আমাদের কক্সবাজারে যে বাসগুলো যায়, এগুলো রেগুলার বাস। ইট ইজ নট এক্সক্লুসিভলি ফর দ্য টুরিস্টস। আবার বহু টুরিস্ট বাসে লেখা থাকে। তখন আমরা বলব যে, ট্রান্সপোর্টেশানের বড় অবদান আছে।

বার্তাটোয়েন্টিফোর: দেশের ট্যুর অপারেটররা কিছু ডোমেস্টিক ট্যুর আর কিছু আউট বাউন্ড ট্যুর? ইন বাউন্ড ট্যুর তো নাই। ইন বাউন্ড ট্যুরের জন্য কী পদক্ষেপ নেয়া যায়?

ড. সৈয়দ রাশিদুল হাসান: দেশে পাঁচশোরও বেশি এই ট্যুর অপারেটর আছে। বেশিরভাগই নড়বড়ে অবস্থায় আছে। অন্য ব্যবসা করে টরে ধরেন টিকেট বিক্রি করে। আর যেগুলো আছে তার মধ্যে ম্যাক্সিমামই করে ডোমেস্টিক ট্যুরিজম। আরেকটা যেটা করে আউট বাউন্ড ট্যুরিজম। ওটাকেই হাইলাইট করা কারণ ওইখান থেকে ইনকাম বেশি হয়। তারা ধরেন এইদিকে কক্সবাজারে করল আর কিছু ইন্ডিয়াতে করল বা অন্য কোনো দেশে। তাদের ব্যবসাটা নট ট্যুরিজম ওরিয়েন্টেড ইট ইজ রেদার প্রফিট ওরিয়েন্টেড। ট্যুরিজম ওরিয়েন্টেড যদি গভঃমেন্ট এমন কোনো নিয়ম করত, হ্যাঁ, তোমাকে আমি পারমিশন দিলাম, তুমি ইনিশিয়াল স্টেজে না হলেও বছর ২/৩ বছরে অন্তত পক্ষে ৩০০/৪০০ টুরিস্ট বিদেশ থেকে নিয়ে আসতে হবে। না হয় তোমার লাইসেন্স ক্যান্সেল করে দিব। আমাদের আইনগুলো এখন খুব স্ট্রিক্ট হতে হবে।

বার্তাটোয়েন্টিফোর: দেশের ট্যুরিজম সেক্টরের উন্নতিতে ট্যুরিজম বোর্ড(BTB) আছে পর্যটন কর্পোরেশন(BPC), মন্ত্রণালয় আসলে কেমন ভূমিকা রাখে? আমাদের চোখে এ ব্যাপারে সরকার উদাসীন, কেন?

ড. সৈয়দ রাশিদুল হাসান: এগুলো নিয়ে আমরা বারবার বলেছি। আমাদের ট্যুরিজম মিনিস্ট্রিকে সিভিল এভিয়েশনের সাথে যুক্ত করে রেখেছে। যা আপনার বাজেট হয়, এইবার কত হলো সাড়ে ৩ হাজার কোটির কম। এর মধ্যে কী আছে? বিমানবন্দর বানানো, প্লেন কেনা। তাহলে ম্যাক্সিমাম তো চলে গেল এভিয়েশানে, আমার পর্যটনের জন্য আপনি কয় টাকা রাখলেন? ৬০/৭০ বা ১০০ কোটি টাকা দিয়ে ট্যুরিজমের কী উন্নতি করবেন? BTB আর BPC তে যত লোক আছে, এদের বেতন দিতেই তো এই টাকা চলে যায়। যে কোনো দেশে ট্যুরিজম যখন ডেভেলপ করে, মালদ্বীপে বলেন, শ্রীলঙ্কায় বলেন, এবং আমাদের পাশের দেশ ইন্ডিয়া। এরা পর্যটন ডেভেলপের জন্য আলাদা বাজেটই রাখে। শুধুমাত্র ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্টের জন্য কোটি কোটি টাকা বাজেট রাখে। এবং সেখানে একদম প্রমোশন থেকে শুরু করে ইনফ্রাসট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট সবকিছু আছে। আরেকটা কথা সবসময় আমি যেটা বলি, মন্ত্রণালয় বলেন, BTB আর BPC বলেন, সব পরিচালিত হয় আমলা দ্বারা। আমলাদের কাজই হচ্ছে এক মিনিস্ট্রি হতে আরেক মিনিস্ট্রিতে ঘুরে বেড়ানো। তারা হচ্ছে “জ্যাক অব অল ট্রেডস, মাস্টার অব নান।” তাদের ট্যুরিজম সম্পর্কে যে বেসিক নলেজ সেটিই নাই। তো এই লোকগুলারে দিয়ে আপনি কিভাবে কাজগুলো করাবেন। সুতরাং এরকম একটা প্রস্তাব আমি দিয়েছিলাম, যেটা আমি ইন্ডিয়াতে দেখেছি। যেহেতু আমলারা এরকম ঘোরাফেরা করবেই, তো কনটিনিউটি রাখার জন্য মন্ত্রণালয়ে একটা সেল করা উচিত। যেটার নাম হবে ‘রিসার্চ সেল’। কোথাও সেমিনার হচ্ছে, কোথাও একটা অনুষ্ঠান হচ্ছে, তারা যাবে। কোথাও পর্যটনের সিম্পোজিয়াম হচ্ছে, একটা প্রোগ্রাম হচ্ছে, সেমিনার হচ্ছে সেখানে তারা যাবে। গিয়ে সেখানে পর্যটনের এক্সপার্ট যারা আছে তারা কী বলছে নোট ডাউন করবে। তারপর তারা সেলে গিয়ে প্ল্যানিং করবে। সেলের এই লোকগুলোকে পার্মানেন্টলি মিনিস্ট্রিতে থাকে, এক মন্ত্রী চলে গেল, এক সেক্রেটারি চলে গেল, নতুন যেই এলো সেলের এরা বলতে পারল আমরা এই প্ল্যানিংটা করেছি। তাহলে কনটিনিউটিটা থাকে। আমরা আশা করেছিলাম BTB টা ভালো কিছু করবে। কিন্তু না। একদম কিছুই না।

● দ্বিতীয় পর্ব পড়তে ক্লিক করুন এখানে

   

৫০ বছর আগে মহাকাশ থেকে তোলা পৃথিবীর ছবি আজও শ্রেষ্ঠ



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সালটা ১৯৬৮। বিশ্বব্যাপী মানুষ মেতে উঠেছিল বড়দিনের আনন্দে। তখনো জানতো না, বড়দিন উপলক্ষে তারা একটি বিশেষ উপহার পেতে চলেছে। পৃথিবী থেকে আমরা হরহামেশাই চাঁদ দেখি। অমাবস্যা-পূর্ণিমা, এমনকি পক্ষের মাঝামাঝি সময়ের বদৌলতে নানা দৃষ্টিকোণে নানা আকারের চাঁদ দেখতে পাই। তবে চাঁদ থেকে পৃথিবী দেখতে কেমন? এরকমটা হয়তো অনেকেই ভাবেন।

নাসার মহাকাশচারীরা অ্যাপোলো ৪ এ করে তখন চাঁদের চারপাশে টহল দিচ্ছে। সেখান থেকে তারা চাঁদের বাসকারীদের দৃষ্টিতে পৃথিবী কেমন হবে তার এক নমুনা জোগাড় করেন। ক্রিসমাসের কিছুদিন আগে ক্রুরা চাঁদকে প্রদক্ষিণ করার সময় ব্যারেন লুনার হরিজোন থেকে একটি ছবি তোলে। সেখানে সুদূর মহাকাশ থেকে পৃথিবীর একটি সুন্দর দৃশ্য ধারণ করা হয়। চমৎকার সেই রঙিন ছবিটি সবকিছু পরিবর্তন করতে চলেছিল।

ছবিটি তুলেছিলেন মার্কিন নভোচারী বিল অ্যান্ডার্স এবং জিম লাভেল। ছবিটি ধারণ করার পর মহাকাশ বিজ্ঞানীরা অবাক হয়ে যান। অর্ধ শতাব্দী পার হয়ে যাওয়ার পরও এটিকে প্রকৃতির সবচেয়ে আইকনিক ছবি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ, এটিই মহাকাশ থেকে তোলা প্রথম রঙিন এবং উচ্চ রেজুলেশনের ছবি।

১৯৭০ সালে পরিবেশ সচেতনতা এবং এই ব্যাপারে সক্রিয়তা বাড়ানোর উদ্দেশে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে পৃথিবী দিবস প্রচারিত হওয়ার কারণে ছবিটিকে বিশেষ কৃতিত্ব দেওয়া হয়।

যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মাইকেল প্রিচার্ড ছবিটিকে নিখুঁত দাবি করেন। তিনি বলেন, এই ছবিটি পৃথিবীর এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছিল, যা আগে কোনো ছবি করতে পারেনি। প্রকাণ্ড মহাবিশ্বে পৃথিবীর অস্তিত্ব কতটা ক্ষুদ্র গ্রহ, তা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ছবিটি।

১৯৬০ সালের পরই পৃথিবী নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে শুরু করে। ষাটের দশকের শেষভাগে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মানুষ অনুধাবন করে পৃথিবীকে আজীবন একইভাবে ব্যবহার করা যাবে না। গ্রহের প্রতি আমাদের আরও অনুরাগী হতে হবে। সেই উদ্দেশে ১৯৬৯, ‘৭০ ও ‘৭১ সালে ‘ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ’, মার্কিন প্রতিষ্ঠান ‘এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি’ এবং ‘গ্রিনপিস’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই ছবিটি প্রকাশের ১৮ মাস পর ২০ মিলিয়ন মার্কিন নাগরিক পৃথিবী রক্ষার আন্দোলনে রাস্তায় নামে।

পৃথিবী রক্ষা করার জন্য মানুষদের উৎসাহিত করার বেলায় ছবিটি অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। এখনো অবদি মহাকাশ থেকে পৃথিবীর পাঠানো ছবিগুলোর মধ্যে ১৯৬৮ সালে বড়দিনের আগে তোলা সেই ছবিটিকে শ্রেষ্ঠ বিবেচনা করা হয়।

;

মাঝরাতে আইসক্রিম, পিৎজা খাওয়া নিষিদ্ধ করল মিলান!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: স্কাই নিউজ

ছবি: স্কাই নিউজ

  • Font increase
  • Font Decrease

আইসক্রিম, পিৎজা অনেকের কাছেই ভীষণ পছন্দের খাবার। তবে ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে মাঝরাতে এসব মুখরোচক খাবার ও পানীয় খাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। ইতালিতে জেলাটিনের তৈরি আইসক্রিম খুব বিখ্যাত। এজন্য ইতালিতে 'জেলাটো সংস্কৃতি' নামে একটা কালচার গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি ইতালির মিলানের বাসিন্দাদের জন্য একটি নতুন আইন প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবেদন- স্কাই নিউজ।

মিলানে বসবাসকারীদের অধিকাংশই মাঝরাতে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করে আইসক্রিম, পিৎজা, ফাষ্টফুড জাতীয় খাবার ও পানীয় পান করে থাকে। এতে করে সেখানকার এলাকাবাসীদের রাতের ঘুম বিঘ্নিত হয়। নতুন প্রস্তাবিত আইনে শহরবাসীর রাতের ঘুম নির্বিঘ্ন করতে মধ্যরাতের পর পিৎজা ও পানীয়সহ সব ধরনের টেকওয়ে খাবার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তবে মধ্যরাতের পর আইসক্রিম নিষিদ্ধ করার চেষ্টা এবারই প্রথম নয়। ২০১৩ সালে, তৎকালীন মেয়র গিউলিয়ানো পিসাপিয়া অনুরূপ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু 'অকুপাই জেলাটো' আন্দোলনসহ তীব্র প্রতিক্রিয়ার পরে তিনি এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।

এরপর আবারও মিলানে এ আইনটি প্রস্তাব করেছেন ডেপুটি মেয়র মার্কো গ্রানেল্লি। দেশটির ১২টি জেলা এই প্রস্তাবের আওতাভুক্ত হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে মিলানের মেয়র গ্রানেল্লি বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সামাজিকতা ও বিনোদন এবং বাসিন্দাদের শান্তি ও প্রশান্তির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা।

প্রস্তাবটি নিম্নলিখিত এলাকাগুলোতে প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ: নোলো, লাজারেটো, মেলজো, ইসোলা, সারপি, ভায়া সিজারিয়ানো, আরকো ডেলা পেস, কোমো-গাইআউলেন্টি, পোর্টা গ্যারিবল্ডি, ব্রেরা, টিসিনিজ এবং দারসেনা-নাভিগলি।

জানা যায়, প্রস্তাবটি মে মাসের মাঝামাঝি থেকে কার্যকর থাকবে এবং নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। এটি প্রতিদিন রাত ১২.৩০ টায় এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং সরকারী ছুটির দিনে রাত ১.৩০ টা থেকে প্রয়োগ করা হবে। তবে এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে নাগরিকদের মে মাসের শুরু পর্যন্ত আপিল করার এবং আইন পরিবর্তনের পরামর্শ দেওয়ার সময় রয়েছে।

 

 

 

;

অস্ট্রেলিয়ায় নিখোঁজ কুকুর ফিরলো যুক্তরাজ্যের মালিকের কাছে



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

অস্ট্রেলিয়ায় ঘুরতে এসে নিখোঁজ হয় যুক্তরাজ্যের এক দম্পতির পালিত কুকুর। যুক্তরাজ্যে আসার ১৭ দিন পর মিলো নামের কুকুরটিকে ফিরে পেয়েছেন জেসন হোয়াটনাল নিক রোল্যান্ডস দম্পতি।

হোয়াটনাল এবং তার সঙ্গী নিক সম্প্রতি তাদের কুকুর মিলোকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া পরিদর্শনে যান। তারা যখন সোয়ানসিতে বাড়িতে যাচ্ছিলেন তখন মেলবোর্ন বিমানবন্দরে তার হ্যান্ডলার থেকে কুকুরটি পালিয়ে যায়।

সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী কুকুরটিকে অবশেষে মেলবোর্নের শহরতলিতে ১৭ দিন পর খুঁজে পাওয়া যায়।


হোয়াটনাল স্কাই নিউজকে বলেন, ‘মিলোকে ফিরে পাওয়াটা খুবই আশ্চর্যজনক ছিল আমার জন্য। যখন আমি আমার প্রিয় মিলোর (কুকুর) সাথে পুনরায় মিলিত হয়েছিলাম, তখন আমি কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম। আমার কান্না দেখে অন্যরাও কেঁদেছিল। এটি সত্যিই আবেগপ্রবণ ছিল।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অন্য প্রান্তে থেকে মিলোর কথা চিন্তা করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। আমরা জানতাম না মিলো কোথায় আছে। এটি বেশ হতাশাজনক ছিল আমাদের জন্য, কিছুটা আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম। তাকে ফিরে পাবো ভাবিনি।

মিলোকে পাওয়ার জন্য সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছিলাম, তখন স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে সাহায্য আসে, তারা মিলোর সন্ধান দেয়। মিলোকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের ধন্যবাদ।

;

আমার হাতের পাখা যেন তাদের আরাম দিচ্ছে!



মৃত্যুঞ্জয় রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

  • Font increase
  • Font Decrease

আবু বক্কর (৬২)। বয়সের ভারে অসুস্থ হয়ে তিনি এখন পাকা বিক্রেতা। প্রচণ্ড তাপদাহে মানুষ যখন ঠান্ডা বাতাসের প্রশান্তি খুঁজছে, তখন তিনি গ্রামে গ্রামে গিয়ে তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন।

আবু বক্কর বার্তা২৪.কমকে বলেন, স্ত্রীসহ ছয় মেয়ে নিয়ে আমার সংসার। তবে মেয়েদের বিয়ে দিতে পেরেছি। কিন্তু বয়সের ভারে ঠিকই আমরা একা থেকে গেলাম। শেষ বয়সে গ্রামে গ্রামে তালপাতা পাখা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। শুধু সংসার না, এই টাকায় আমার পায়ের শিরার ব্যথার ওষুধও কিনতে হয়। একবেলা ওষুধ না খেলে চলতে পারি না।

এদিকে, পুরনো ব্যবসার ঋণের বোঝা আর অন্যদিকে অসুস্থ হয়ে ওষুধসহ সংসারের খরচ। শেষ বয়সে তালপাতার পাখাই আমার একমাত্র জীবনসঙ্গী বলেন আবু বক্কর।

তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন আবু বক্কর, ছবি- বার্তা২৪.কম

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার কলাগাছি গ্রামের কবিগানের অনুষ্ঠানে সরেজমিন দেখা যায়, একপাশে তালপাতার পাখা বিক্রি করতে ব্যস্ত ছোট্ট পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ। এই গরমে যখন তার ঘরে থাকার কথা, তখন সে নানা-নানীর সঙ্গে এসে তালপাতার পাখা বিক্রি করছে। কবিগানে বসে থাকা সব শ্রোতার কাছে গিয়ে বলছে, পাখা লাগবে, পাখা! কথা বলতে চাইলেও এ পাশ ওপাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে, ক্রেতার কাছে।

এক ফাঁকে তাকে কাছে পেয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়, এই বয়সে পাখা বিক্রি করছো কেন! এ প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে মাহমুদুল্লাহ বলে, প্রচণ্ড গরমে স্কুল ছুটি। তাই, নানা-নানীর সঙ্গে চলে এসেছি মেলায় পাখা বিক্রি করতে। মানুষজন আমার কাছ থেকে যেন বেশি পাখা কেনে (ক্রয়), তাই আমি মেলায় তাদের সঙ্গে এসেছি।

অনেক উৎসাহের সঙ্গে সে বলে, গরমে আমার হাতের পাখায় যেন তাদের আরাম দিচ্ছে! মেলা হলে আমি সেখানে চলে যাই পাখা বিক্রি করতে। ঘোরাঘুরিও হয় আর টাকা ইনকামও হয়। টাকার জন্য বের হয়ে পড়েছি। আমরা পাখা বিক্রি করে পেট চালাই। নানা-নানী বুড়ো হয়ে গেছে। তাই, আমি সঙ্গে এসে তাদের কষ্টটাকে একটু ভাগাভাগি করে নিচ্ছি।

যেখানে প্রচণ্ড তাপে মানুষজন নাজেহাল, সেখানে ছোট্ট মাহমুদুল্লাহ ছুটে চলেছে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পাখা বিক্রি করতে। ছোট্ট শিশু হলেও গরম যেন তার কাছে কিছু না, পেটের তাগিদে!

আরেক পাখা বিক্রেতা তালা উপজেলার হরিণখোলা গ্রামের বাসিন্দা ভদ্রকান্ত সরকার (৭০)। ১২-১৪ বছর ধরে এই পেশায় আছেন তিনি।

চলছে তালপাতার পাখার বিকিকিনি, ছবি- বার্তা২৪.কম

শেষ বয়সে পাখা কেন বিক্রি করছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে ভদ্রকান্ত বলেন, চাল কিনে খেতে হয়। খুব কষ্টের সংসার! ছেলে-মেয়ে আছে। তারা তাদের মতো কাজ করে খায়। মা বাবার বয়স হয়ে গেলে ছেলে আর আমাদের থাকে না। আমরা বৃদ্ধ বয়সে কেমন আছি, সেটা জানার সুযোগ তাদের থাকে না। শেষজীবনটা এভাবে পাখা বিক্রি করে কাটিয়ে দেবো। কী আর করবো! কপালে যা আছে, শেষপর্যন্ত তাই হবে। কপালে ছিল, এমন বৃদ্ধ বয়সে গ্রামে গ্রামে পাখা বিক্রি করতে হবে!

;