‘আমার সারাটা দিন, মেঘলা আকাশ, বৃষ্টি, তোমাকে দিলাম’



ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ পহেলা আষাঢ়। শুরু হলো জলমগ্ন মেঘ ও বৃষ্টির ঋতু বর্ষার । এমন মায়াবী দিনে মানুষ প্রিয়ার হাতে বরাভয়ের হাত রেখে বলতে চায়: ‘আমার সারাটা দিন, মেঘলা আকাশ, বৃষ্টি – তোমাকে দিলাম।’ কিন্তু গান, কবিতা, সাহিত্যের মতো বর্ষা নিয়ে এতোটা রোমান্টিক কি আজকাল বাস্তবিকই হওয়া সম্ভব হয়?

আকাশ জুড়ে মেঘের মেলা আর বৃষ্টির নিক্কন এখন সামাজিক জীবনে বিড়ম্বনার সমার্থক হয়েই এসেছে। সাহিত্যের ‘বর্ষাদূত’ হাল আমলে ‘ভীতিরদূত’ও বটে। বর্ষা বর্তমানে এন্তার সমস্যার নামান্তর। যদিও আবহমান বাঙালি জীবনে ঋতুচক্রে বর্ষার গুরুত্ব অনেক। বর্ষায় বাংলার প্রকৃতি অবগাহন করবে সজীব বারিধারায়। কাব্য কথায় এসেছে, ‘আষাঢ়স্য’ প্রথম দিনেই নাকি কদম বনে হলদে-সাদা মঞ্জুরীর উচ্ছ্বাস বইতে শুরু করে। বাংলা প্রকৃতিতে দৃশ্যমান হতে থাকে স্নিগ্ধতার অন্যরকম আবেশ। হাল আমলে সে আবেশ পর্যবসিত হয়েছে বিড়ম্বনায়।

বর্ষা নিয়ে কবিতায় বলা হয়েছে, “মেঘে আঁধার হল দেখে/ ডাকতেছিল শ্যামল দুটি গাই,/ শ্যামা মেয়ে ব্যস্ত ব্যাকুল পদে/ কুটির হতে ত্রস্ত এল তাই।/আকাশ-পানে হানি যুগল ভুরু/শুনলে বারেক মেঘের গুরুগুরু।/ কালো? তা সে যতই কালো হোক,/ দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।” কবি যে বর্ষাকে মানবীর চিত্রকল্পে ‘কালো হরিণ-চোখ’-এর মায়াময়তায় অংকিত করেছেন, সে বর্ষা এখন চোখ রাঙাচ্ছে নিরাপদ জীবনকে। অতলে তলিয়ে নিয়ে জমা-পানিতে। আমরা সেই পানিকে যথাযথভাবে গ্রহণ ও ব্যবহারের পথ রাখি নি বলেই জীবন নামের পানি হয়েছে কষ্টের কারণ।

প্রচলিত একটি বাংলা জারি গানে আছে: “আইলোরে আষাঢ় মাস /লাগাইলো চারা গাছ/গাছে গাছে ঝগড়া করে/মূল্য বেশি কার?” বর্ষণসিক্ত পরিবেশ বৃক্ষরোপণের উপযুক্ত সময় হিসেবেই বিবেচ্য স্মরণাতীতকাল থেকেই। সারাদেশে বৃক্ষমেলার আয়োজন হয়ে থাকে এ মাসেই। কিন্তু এ কাজটিও আমরা ঠিক ঠিক করছি না। পাহাড়ের গাছ এবং খোদ পাহাড়টিকেই কেটে ফেলছি। ভূমিধ্বস আর পাহাড়ধ্বসে মরছে তাই অসংখ্য মানুষ।

বঙ্গাব্দের অন্যান্য মাসের মতো বর্ষার দুইটি মাস আষাঢ় ও শ্রাবণের নামকরণও হয়েছে তারার নামে। সে তারার নামে মাসগুলো. অথৈ পানি তাদের বৈভব। যে নবধারা জলে- ‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল’সহ নিসর্গ চেতনা প্রতিটি প্রকৃতি প্রেমিক মনকেই আলোড়িত করার কথা থাকলেও পরিস্থিকিতে আমরা উপভোগের জায়গা থেকে নিয়ে গিয়েছি বিপদের জায়গায়। ‘কালো হরিণ-চোখ’ কিংবা কদম, শাপলা, পদ্ম, চালতা, কেতকী ফুল ফোটার বর্ষার দেখার উপায় নেই জলে আবদ্ধ বিপন্ন নাগরিকের।

অথচ একমাত্র ‘কবি শেখর’ কালিদাসই বর্ষা ঋতুকে নিয়ে কমপক্ষে ত্রিশটি কবিতা লিখেছেন। ‘ছন্দের জাদুকর’ খ্যাত কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের বর্ষাকেন্দ্রিক কবিতাগুলো হলো ‘বর্ষা’, ‘ইলশে গুঁড়ি’ ও ‘বর্ষা নিমন্ত্রণ’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বর্ষাপ্রীতি রীতিমতো প্রবাদতুল্য। এছাড়া আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, পল্লী কবি জসীমউদদীন, শক্তিমান কবি মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা প্রমুখ কবি বর্ষাকে তাদের সাহিত্যকর্মে উপস্থাপন করেছেন বিভিন্ন আঙ্গিকে।

চিত্রশিল্পীরাও বর্ষাকে ক্যানভাসে আঁকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। পটুয়া কামরুল হাসানের ‘বৃষ্টির দিনে খেয়া ঘাট’ শীর্ষক চিত্রকর্মটি আজো অনন্য হিসেবে স্বীকৃত। ফলের সমাহার এ মাসে এসেও লক্ষণীয়। আম, জাম, কাঁঠাল, আনারস, লুকলুকি, জামরুল, লিচু, লটকন - আরও কতো দেশীয় ফল! বিপন্ন নগর জীবনের আক্রান্ত নাগরিকদের পক্ষে বর্ষার নান্দনিক রূপের মতো ফুল-ফলে আমোদিত হওয়াও সম্ভব হয় না। কারণ আমরা প্রকৃতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে বন্ধুতুল্য-প্রকৃতিকেই শত্রুতে রূপান্তরিত করেছি।

কিভাবে সম্ভব হবে বর্ষার নানা উৎসব উপভোগ করা? যখন জীবনকেই বর্ষার ছন্দময় সময়ে আমরা আক্রান্ত ও বিপদগ্রন্ত দেখতে পাচ্ছি। অথচ বর্ষার আরেক পরিচয় উৎসবের জন্য সুবিদিত। বিশেষ করে ‘বারো মাসে তেরো পার্বণ’, পালনকারীদের কাছে বড়ই আরাধ্য এ ঋতু। কে না জানে এ মাসে রথযাত্রা উৎসব হয়। হিন্দু শাস্ত্র মতে, পুরীর জগন্নাথের স্মরণে এই উৎসব টেনে নিয়ে যায় এবং স্নান করিয়ে ফিরিয়ে আনে। এই প্রত্যাবর্তনই ‘উল্টো-রথযাত্রা’নামে পরিচিত।

এ উপলক্ষে বসে মেলা। গ্রামবাংলায় তো মেলা মানে সার্বজনীন আনন্দ জোয়ার। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থা (বিসিক) সর্বশেষ ১৩৯০ বঙ্গাব্দে প্রণীত ‘বাংলাদেশের মেলা’ গ্রন্থে ৬৮টি বর্ষাকালীন মেলার কথা বর্ণিত হয়েছে। এগুলোর মাত্র ১৬টি ছাড়া বাকি ৫২টিই রথযাত্রা কেন্দ্রিক। রথযাত্রা কিংবা উল্টো-রথযাত্রা মেলা সর্বাধিক সংখ্যক বসে ময়মনসিংহ জেলায়, যার সংখ্যা ১৫টি। এছাড়া বসে জামালপুর, কুষ্টিয়া, মানিকগঞ্জ, পাবনা, যশোর, রাজশাহী, ফরিদপুর জেলায়। তবে ঢাকার ধামরাই ও মানিকগঞ্জের রথযাত্রা উৎসবের খ্যাতি দেশজোড়া।

অতএব অফুরন্ত আনন্দ ও উৎসবের বর্ষা উপকারী হলেও ক্রমে ক্রমে আমাদের ব্যবহারিক জীবনের ভুল পদক্ষেপ ও প্রকৃতিবিরোধী অনাচারের কারণে বর্ষার অপকারী নানা দিকও আমাদেরকে অক্টোপাসের মতো চারদিক থেকে ঘিরে ধরেছে। সজল বর্ষা প্রকৃতিতে ফুরফুরে আমেজ আনলেও নদীগুলোতে পানি প্রবাহ বেড়ে, শহরে-নগরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে জনজীবনকে বিপন্ন করে তুলছে। এর দায় বর্ষার না আমাদের? এই পরিস্থিরি জন্য দায়ি কে? প্রকৃতি? নাকি প্রকৃতি বিনাশী মানুষ?

বিদিত যে, বর্ষা পানির সাথে পলি বয়ে এনে সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা হিসাবে বাংলাদেশকে বিনির্মিত করেছে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে। বর্ষা ঋতুই প্রাণপ্রবাহ জাগিয়েছে সবুজাভ বাংলাদেশের। তাই প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ বর্ষাকে বলেছেন- ‘ধ্যানমগ্ন বাউল, সুখের বাঁশি’। বিদায়ী গ্রীষ্মের পুরোটা জুড়েই যখন ছিল দাবদাহের দাপট, তখন বর্ষাই আনে ‘বরিষ ধরা মাঝে শান্তিরও বারি।’ যখন ‘শুষ্ক হৃদয় লয়ে আছে দাঁড়ায়ে/ঊর্ধ্বমুখে নরনারী।’ বর্ষায় মানুষের প্রাণ জুড়ায়। প্রকৃতি আবার জেগে উঠে।

কিন্তু জলবায়ুগত পরিবর্তনের প্রভাবে এবং আমাদের প্রকৃতি ও পরিবেশ-বিরুদ্ধ নানা (অপ)পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশের ঋতু বৈচিত্র্য চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে; ঋতুর ইতিবাচক দিকের চেয়ে নেতিবাচক ও ক্ষতিকর দিকগুলোই বড় হয়ে উঠছে। বর্ষা হয়েছে ‘কারো জন্য পৌষ মাস, কারো জন্য সর্বনাশ’।

তথাপি বর্ষায়, বিশেষ করে ছুতোর সম্প্রদায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। রাতদিন কাজ করছে। কাঠের তক্তা ‘রান্দা’ দিচ্ছে, ‘পাতাম’ ঠুকে নৌকা বানাচ্ছে। গলুইওয়ালা নৌকা, কোষা, ডিঙ্গি নৌকা। পানিতে নয়, জলমগ্ন রাস্তাতেও চলছে সেই নৌকা। বর্ষার নতুন পানি পেয়ে সোনা ব্যাঙের দল সমস্বরে গেয়ে উঠছে ‘গ্যাঁকো-গ্যাঁকো’, মাছ শিকারে নামছে পেশাজীবী, সৌখিন মানুষ। উৎফুল্ল ময়ূরের মতোই চিন্তাশীল-ভাবুকেরা মনের পেখম তুলে অনির্বচনীয় অভিব্যক্তি প্রকাশ করছে।

অনেকেই আনুষ্ঠানিকতায় বর্ষাকে বরণ করেন। অনেকেই, বিশেষত, সর্ব-সাধারণ নগরজীবনে বর্ষার কুপ্রভাব, প্রকোপ ও পানিবন্দিত্ব কাটাতে লড়াই করেন। বর্ষামঙ্গল যেন বাস্তবতা ছেড়ে চলেছে স্মৃতি ও কল্পনার রাজ্যে। অঝোর বৃষ্টিতে বাংলাদেশের নাগরিক সমাজ যেন আকণ্ঠ নিমজ্জিত হয়েছে চরম দুর্ভোগে।

বর্ষার কষ্টগুলোকে দমন করে নিসর্গময় অনিন্দ্য দিন আর রাত্রিকেই ফিরিয়ে আনতে হবে। ব্যক্তিগত ও সামাজিক প্রচেষ্টায় নগর জীবনে এমন আনন্দময় বর্ষা আনতে হবে, যার সারাটা দিন ও বৃষ্টির বিন্দু বিন্দু ফোটাগুলো নিশ্চিন্তে প্রিয়তমের হাতে তুলে দিয়ে মন খুলে বলা যায়: ‘আমার সারাটা দিন, মেঘলা আকাশ, বৃষ্টি – তোমাকে দিলাম।’

কিংবা বৃষ্টির চিত্রকল্পে খুঁজে পাওয়া যায় প্রিয়জনের নস্টালজিক ইমেজ: 'তোমার শহরে বৃষ্টি এখন, আমার শহরে রোদ/

তোমার দু'চোখে ঝরছে অঝোরে আমার জীবনবোধ'। আসলেই, বর্ষা হলো বাঙালির প্রেম ও প্রকৃতিচেতনার চিরায়ত ধ্বনিমাখা অবিরাম জীবনবোধ।

   

সম্মানসূচক ডি. লিট উপাধি পেল 'বিড়াল'!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে 'ম্যাক্স' নামের একটি বিড়ালকে সম্মানসূচক ‘ডক্টরেট অব লিটারেচার’ বা ডি. লিট উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। দেশটির ভারমন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের স্নাতক অনুষ্ঠানে বিড়ালটিকে এই সম্মানসূচক ডিগ্রি দেওয়া হয়। তবে সেই অনুষ্ঠানে বিড়ালকে আমন্ত্রণ জানানোর নিয়ম না থাকায় উপস্থিত ছিল না ম্যাক্স। 

বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্তৃপক্ষ বলছে, অনুষ্ঠানে বিড়ালটি উপস্থিত ছিল না। তাই বিড়ালের মালিক অ্যাশলে ডোর কাছে খুব শিঘ্রই এই ডিগ্রি পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।   

বন্ধুসুলভ এই বিড়ালটিকে তার ইঁদুর শিকারের দক্ষতা বা অতিরিক্ত ঘুমানোর জন্য নয় বরং তার সহচার্যের জন্যই স্বীকৃতি দিয়েছে।   বিড়ালটিকে এই ডিগ্রিতে ভূষিত করা হয়। ভারমন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটির ক্যাসেলটন ক্যাম্পাস।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সম্মানসূচক ডি. লিট উপাধি পেল 'বিড়াল'!

বিশ্ববিদ্যালয়টি একটি ফেসবুক পোস্টের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ম্যাক্স দ্য ক্যাট, অনেক বছর ধরেই ক্যাসেলটন পরিবারের একজন আদুরে সদস্য। ভারমন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের প্রবেশদ্বারের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া রাস্তায় পাশেই বসবাস করে এক পরিবার। বিড়ালটি সেই পরিবারেরই পোষা।

বিড়ালের মালিক অ্যাশলে ডো বলেন, ‘বিড়ালটি ঠিক করেছে সে ক্যাম্পাসে যাবে। এরপর থেকেই সে কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আড্ডা দিতে শুরু করে। আর শিক্ষার্থীরাও তাকে আদর করতে শুরু করে।’

বিড়ালটি প্রায় চার বছর ধরে ক্যাম্পাসে আসা যাওয়া করছে। বিড়ালটিকে পথের ধারে শুয়ে থাকতে দেখলেই সবাই তার সঙ্গে সেলফি নেয়।

এমনকি সাবেক ছাত্ররাও যখনই ক্যাম্পাসে আসেন তারা তখনই বিড়ালটির খোঁজ নিতে তার মালিক ডো-এর কাছে যান। ডো তাদের কাছে বিড়ালটির মা হিসেবেই বেশি পরিচিত।

;

৯৩ বছর বয়সে বৃদ্ধের অবিশ্বাস্য কর্মকাণ্ড



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বৃদ্ধ জন স্টারব্রুক

বৃদ্ধ জন স্টারব্রুক

  • Font increase
  • Font Decrease

শৈশবে খেলা, কৈশরে পড়ালেখা, যৌবনে চাকরি, মধ্যবয়সে সংসার, বৃদ্ধবয়সে একটা মাথা গোজার ঠাঁই খুঁজে অবসরে সময় কাটিয়ে দেওয়া। কপাল খারাপ থাকলে বিছানাতেই শোয়া বা আধশোয়া থেকে মৃত্যুর দিন গোণা। সাধারণত এভাবেই মানুষের জীবন কেটে যায়। অনেকে আবার মধ্যবয়সের পরেই নানারকম রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। অথবা শরীরকে বিভিন্ন রোগের আবাসস্থল বানিয়ে দুর্বল হয়েই বেঁচে থাকেন। তবে খড়ের গাদায় সূচের মতো দু-একজন থাকে যারা একেবারেই ব্যতিক্রম। তেমনভাবেই আলোচনায় এসেছেন ৯৩ বছরের এক বৃদ্ধ।  তার ব্যতিক্রমী জীবনযাপনের ধারাই আলোড়ন সৃষ্টি করেছে যুসমাজে।     

যুক্তরাজ্যের বাসিন্দা জন স্টারব্রুক। তিনি একজন ওয়াটার পোলো খেলোয়াড়। এটি মূলত পানির মধ্যে বাস্কেটবলের মতো একধরনের খেলা। এইখেলার সাথে কুস্তি খেলারও কিছুটা সাদৃশ্য রয়েছে। জনের বর্তমান বয়স ৯৩ বছর। এই বয়সেও যথেষ্ট সুস্থ এবং সবল তিনি। সমবয়েসীদের যেখানে সোজা হয়ে দাঁড়াতেও ২ জনের সহায়তা লাগে, সেখানে এখনো ম্যারাথনে দৌড়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। পাশাপাশি বেশ দক্ষ সাঁতারুও বটে! ৮০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সাঁতার কাটা অব্যাহত রেখেছেন তিনি।

প্রায় শতাব্দি ছুঁই ছুঁই বৃদ্ধের এমন কারিশমা দেখে চোখ ছানাবড়া হবার উপক্রম। জন মূলত একজন সাঁতারু। পেশাগতভাবে না হলেও অনেক ছোটবেলা থেকেই তিনি সাঁতার কাটেন তিনি। দেশের সম্মানজনক অনেপ্রতিযোগীতায় একাধিক বার চ্যাম্পিয়নের খেতাবও জেতেন। চাকরি করেছেন ‘ব্রিটিশ আর্মি মেডিক্যাল কর্পস’-। সেখানেও সাঁতারের দক্ষতার কারণে তার বেশ সুনাম ছিল।   

ম্যারাথনে দৌড়াচ্ছেন ৯৩ বছরের জন

তবে সাঁতারের পাশাপাশি এখন ম্যারাথেনেও অংশগ্রহণ করেছেন জন। ৫২ টির বেশি ম্যারাথনের দৌড় শেষ করেছেন তিনি। জানালেন এই বয়সেও তার এমন চ্যালেঞ্জিং সব কাজের অভিজ্ঞতা। সুস্থতা ধরে রাখার রহস্যও ফাঁস করলেন সকলের কাছে। ব্রিটিশ নাগরিক জন বন্ধুদের কাছে ‘দ্য লিজেন্ডনামেই পরিচিত। একই নামে তাকে আখ্যায়িত করছে ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলো

জন স্টারব্রুক জানান, তিনি এখনো সপ্তাহের ৬ দিনই জিমে যাতায়াত করেন। বিশেষ কোনো খাদ্যাভাস নেই তার। খাদ্যতালিকায় প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি রাখতে পছন্দ করেন- এই যা। তাছাড়া প্রতিদিন সকালে পোরিজ খান তিনি। তবে তিনি কখনো ধূমপান করেননি। অ্যালকোহলও খুব সীমিত পরিমাণে সেবন করতেন। মূলত এই বয়সেও এটা সবল থাকার পেছনে বংশ পরম্পরায় পাওয়া নিজের জীন আসল কারণ- বিশ্বাস করেন জন।

কারণ যাই হোক, প্রানবন্ত এই বৃদ্ধ বিশ্ববাসীকে অবাক করেছে। তার মতোই দৃঢ় মানসিকতা ধরে রাখার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন যুবক-যুবতীরা।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

;

প্রশ্ন আর উত্তর যেন পরস্পরের সাংঘর্ষিক!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রশ্ন থাকে এক আর তার উত্তর হয় ভিন্ন। এমন উত্তরপত্রের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায়ই দেখা যায়। এবার এমনই এক উত্তরপত্রের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে ভাইরাল হয়েছে। যা দেখে রীতিমতো সবাই অবাক! তবে এই ঘটনার জন্ম দেওয়া দেশটি বাংলাদেশ নয়, প্রতিবেশী দেশ ভারতের একটি হিন্দি পরীক্ষায় ঘটেছে এমন কাহিনী।

ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রকাশিত ভিডিওতে পরীক্ষার্থীর এমন উত্তর দেখে শিক্ষককেও হাসতে দেখা যায়। 

ভিডিওটি ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করা হয়েছে @n2154j অ্যাকাউন্টের একটি আইডি থেকে।

ওই ভিডিওতে দেখা যায়, একটি প্রশ্ন ছিল এমন, সংযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ (যৌগিক ব্যঞ্জনবর্ণ) কী? এই প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষার্থীটি একটি খাদ্য রূপক দিয়ে উত্তর দিল: "মাটার পনির এবং সব মিশ্র সবজি একত্রিত একটি খাবার।"

আরেকটি প্রশ্ন ছিল "অতীত কাল কাকে বলে?" এর উত্তরে ওই পরীক্ষার্থি লিখেছে, "যখন অতীত আমাদের অতীতের আকারে আসে, তখন তাকে অতীত কাল বলা হয়।"

ভিডিও অনুযায়ী আরও একটি প্রশ্ন ছিল "বহুবচন কাকে বলে?" এর উত্তরে সে লিখেছে "যে পুত্রবধূ তার শ্বশুরবাড়ির কথা শোনে তাকে বহুবচন বলে।"

শিক্ষার্থীটির এমন উত্তর শুনে হাসিতে ফেটে পড়েন শিক্ষক। এমন উত্তরগুলোকে শিক্ষক ভুল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। যদিও এমন উত্তরের জন্য তাকে পুরোপুরি হতাশ করা হয়নি। তাকে ১০ মার্কের মধ্যে ৫ নম্বর দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষক পরে তার উত্তরপত্রে লিখে দিয়েছিলেন, এই ৫ মার্ক তোমার মস্তিষ্কের জন্য, ছেলে।

ভিডিওটি দেখে সবাইকে হাসির ইমোজি দিতে দেখা যায়। সম্পূর্ণ নম্বর না পাওয়ায় অনেকেই যুক্তি দিয়ে লিখেছেন, ছাত্রটি তার কৌতুক প্রতিভার জন্য পূর্ণ নম্বর পাওয়ার যোগ্য।

তবে এমন ঘটনা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছেন, ছাত্র এবং শিক্ষকের হাতের লেখা সন্দেহজনকভাবে একই রকম।

অন্য এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, "প্রশ্ন এবং উত্তর একই হাতের লেখা"। 

;

ফেনী শহরে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে কৃষ্ণচূড়া



মোস্তাফিজ মুরাদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ফেনী
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

'কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরি কর্ণে-আমি ভুবন ভুলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে' জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই মনোমুগ্ধকর গানে ফুটে উঠেছে কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য। কৃষ্ণচূড়া যেন প্রকৃতিকে দান করেছে লাল আভার অপরূপ সৌন্দর্যের মহিমা। সাথে গ্রীষ্মের উত্তাপে শহরে সৌরভ ছড়াচ্ছে নানা জাতের ফুল। তীব্র তাপদাহের পর কালবৈশাখী, এরপর মাঝারি বৃষ্টির মধ্যে ফুলের আগমন। এতে রঙের উল্লাসে মেতে উঠেছে ফেনী শহরবাসী।

ফেনী শহরের কোর্ট বিল্ডিং, এলজিইডি, পুলিশ লাইন, নবীন চন্দ্র সেন কালচারাল সেন্টার, ফেনী সরকারি কলেজ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ফুটে আছে কৃষ্ণচূড়া। এটি একদিকে প্রকৃতিকে যেমন সাজিয়েছে অপরূপ সৌন্দর্যে, অন্যদিকে এর সৌন্দর্য মুগ্ধ করছে তরুণ-তরুণী, নানা শ্রেণি-পেশার মানুষসহ ফুলপ্রিয় পথচারীদের। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে, সরকারি দফতরসহ স্কুল-কলেজে কৃষ্ণচূড়া গাছের লাল ও উজ্জ্বল সবুজ পাতার সংমিশ্রণ দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছে চারপাশ।


কৃষ্ণচূড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ফুলের ঘ্রাণে মুখরিত হয়ে আছে পুরো শহর। শহরের মূল সড়কের ডিভাইডারে পৌরসভার উদ্যোগে লাগানো হাসনাহেনা, রজনিগন্ধা, গন্ধরাজসহ নানা জাতের ফুল গাছে ফুল ফুটেছে। এটি একদিকে বাড়িয়েছে সৌন্দর্য অন্যদিকে হেঁটে কিংবা রিকশায় চলাচল করলে পাওয়া যায় এসব ফুলের সুঘ্রাণ।

ফেনী শহরের কৃষ্ণচূড়ার অপরূপ সৌন্দর্য দেখে ফুলপ্রিয় পথিকরা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া ফুল প্রকৃতিকে অনন্য সাজে সাজিয়েছে। এই ফুলের সৌন্দর্যের কারণে পথচারীরা একবার হলেও এই ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এর গাছের উপর নজর দিবে। পাশাপাশি তীব্র গরমে অন্যান্য ফুলের সুঘ্রাণে চারপাশ মুখরিত হওয়াতে ক্লান্তিতা কিছুটা হলেও কমছে।


তারা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া ফুলের এই নান্দনিক দৃশ্য দেখতে এর গাছ রোপণ করা জরুরি। রাস্তা প্রশস্তকরণ, ঘর-বাড়ি নির্মাণসহ নানা প্রয়োজনে গাছ কেটে ফেলা হয়। অন্যান্য গাছ রোপণ করার পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া রোপণ করলে একদিকে যেমন সৌন্দর্য বাড়াবে অন্যদিকে পরিবেশ বান্ধব হবে।

সাজিদ হাসান নামের এক পথচারী বলেন, কৃষ্ণচূড়া একদিকে যেমন প্রকৃতিতে অপরুপ সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে, আরেকদিকে গ্লোবাল ওয়ার্মিং কমাবে। সারাদেশে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে, আমার মতে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে এই গাছটিও যুক্ত করা উচিত। তীব্র গরমের পর বৃষ্টি হলো, এরপর শহরে নানা রঙের ফুলের দেখা মিলছে, ফুলের ঘ্রাণে চলাচল করতেই ভালো লাগছে।

ফারজানা ইয়াসমিন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ফুলের সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে। অন্যান্য ফুলের পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া ফুল আমার অনেক ভালো লাগে। আমাদের কলেজে বকুল তলা আছে, ক্যান্টিনের পাশে কৃষ্ণচূড়া গাছ আছে। সুযোগ পেলেই ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করি।

অনিক মোহন নামে একজন বলেন, রিকশায় করে যখন বাসায় ফিরি, শহরের রাস্তার মাঝে ভিডাইভারে লাগানো নানা জাতের ফুলের ঘ্রাণ মনকে আনন্দিত করে। রাতের বেলা শহর যখন নিস্তব্ধ হয়ে যায়, তখন এ ফুলের সৌন্দর্য কয়েকশ’ গুণ বেড়ে যায়।

সড়কের পাশে কৃষ্ণচূড়া লাগানো হলে সৌন্দর্য বাড়বে বলে মনে করেন পথচারী মিনহাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, রাস্তা প্রশস্তকরণের জন্য যে গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে, ওই গাছগুলোর জায়গা কৃষ্ণচূড়ার গাছ লাগালে রাস্তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে।

একই কথা বলেন শহরের ব্যবসায়ী নাদিম আহমেদ। তিনি বলেন, সৌন্দর্য ও পরিবেশের কথা বিবেচনা করে এই গাছ রোপণ করা উচিত আমাদের। তাপমাত্রা যেভাবে বাড়ছে অন্যন্যা গাছ রোপণ করার পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া গাছ রোপণ করার উদ্যোগ নিতে হবে। যেগুলো শহরে আছে তাতেই সৌন্দর্য বেড়ে গিয়েছে কয়েকগুণ, আরও যদি লাগানো যায় ফুলে ফুলে ভরে উঠবে আমাদের শহর।

কৃষ্ণচূড়া মাদাগাস্কারের শুষ্ক পত্রঝরা বৃক্ষের জঙ্গলে পাওয়া যায়। যদিও জঙ্গলে এটি বিলুপ্ত প্রায়, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে এটি জন্মানো সম্ভব হয়েছে। সৌন্দর্যবর্ধন গুণ ছাড়াও, এই গাছ উষ্ণ আবহাওয়ায় ছায়া দিতে বিশেষভাবে উপযুক্ত। কৃষ্ণচূড়া উদ্ভিদ উচ্চতায় কম (সর্বোচ্চ ১২ মিটার) হলেও শাখা-পল্লবে এটি বেশি অঞ্চল ব্যাপী ছড়ায়।

শুষ্ক অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে কৃষ্ণচূড়ার পাতা ঝরে গেলেও, নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে এটি চিরসবুজ থাকে। কৃষ্ণচূড়া ফুলের রং উজ্জ্বল লাল। পত্র ঝরা বৃক্ষ, শীতে গাছের সব পাতা ঝরে যায়। বাংলাদেশে বসন্ত কালে এ ফুল ফোটে। ফুলগুলো বড় চারটি পাপড়ি যুক্ত। পাপড়িগুলো প্রায় ৮ সেন্টিমিটারের মত লম্বা হতে পারে। কৃষ্ণচূড়া জটিল পত্র বিশিষ্ট এবং উজ্জ্বল সবুজ। প্রতিটি পাতা ৩০-৫০ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ২০-৪০ টি উপপত্র বিশিষ্ট। কৃষ্ণচূড়ার জন্মানোর জন্য উষ্ণ বা প্রায়-উষ্ণ আবহাওয়ার দরকার। এই বৃক্ষ শুষ্ক ও লবণাক্ত অবস্থা সহ্য করতে পারে।

জানা যায়, অপরূপ সৌন্দর্য ছড়ানোর পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর পাতা, মূলের বাকল ও ফুল ভেষজ গুণাগুণ সম্পূর্ণ, যা জ্বর ও খুশকি নিরাময়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। ভেষজটি হেমিপ্লেজিয়া, আর্থরাইটিস এবং কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। কৃষ্ণচূড়া গাছের শিকড়, বাকল এবং ফুল সবই পরজীবী সংক্রমণ নিরাময়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।

;