রুশ বিপ্লবের ভালোমন্দ, জার্মান সংযোগ ও ইহুদি ভদ্রলোক



ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
বিপ্লবের স্মৃতিময় লাল সমাবেশ এখন অতীত , ছবি: সংগৃহীত

বিপ্লবের স্মৃতিময় লাল সমাবেশ এখন অতীত , ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রুশ বিপ্লবের স্মরণে মস্কোর রেড স্কোয়ারের ঐতিহাসিক লাল সমাবেশের ঘটনা এখন ইতিহাসের অংশ। সোভিয়েত ব্লকের দেশগুলোতে লাল বিপ্লবের স্মরণে আবেগঘন অনুষ্ঠানের আয়োজন অতীতের নভেম্বর মাসে বিশ্বকে আলোড়িত করতো। প্রতি বছর রুশ বিপ্লব বা অক্টোবর বিপ্লবের কথা মনে করে নভেম্বরের ৭ তারিখে দুনিয়ার কমিউনিস্টরা দেশে দেশে একত্রিত হতেন।

অক্টোবর বিপ্লব বলা হলেও পরবর্তী ক্যালেন্ডারে দিনটি আসতো নভেম্বরের ৭ তারিখ আর কমিউনিস্ট জনতা উদ্বেলিত হতেন ১৯১৭ সালে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের গৌরবের দীপ্তিতে। কিন্তু সেই বিপ্লব নিয়ে এখন উচ্চারিত হচ্ছে নানা প্রশ্ন। উদ্ধার হচ্ছে নতুন নতুন তথ্য।

স্নায়ুযুদ্ধের অবসানের আগে, বিশ্ব যখন দ্বিমেরুতে বিভক্ত ছিল, তখন একদিকে ছিল পুঁজিবাদী বিশ্ব আর অন্যদিকে সমাজতান্ত্রিক দুনিয়া। সেই বাম জমানায় দেশে দেশে, পাড়ায় পাড়ায় শহিদ স্তম্ভ ছিল রাজনৈতিক সংস্কৃতির একটি আবশ্যিক অংশ। সেখানে টকটকে লাল পতাকা উত্তোলন করে, মহামতি লেনিন বা কমরেড স্ট্যালিনের ছবিতে মাল্যদান করে এই মহান বিপ্লবের স্মরণ করা হত। সকলে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে শহিদ স্মরণে জীবনমরণ রক্তঋণ শোধ করার প্রতিজ্ঞা নিতেন।

দেশে দেশে বামনেতৃবৃন্দ পৃথিবীর ইতিহাস বদলে দেওয়া এই বিপ্লবের মহান গাঁথা শোনাতেন। নেতারা যাকে বলতেন ‘মহান অক্টোবর বিপ্লব’, তা এখন নতুন গবেষণার পর অন্য রকম অবয়বে দেখা যাচ্ছে।

এখন সবাই জানেন যে, ‘কোল্ড ওয়্যার’ বা স্নায়ুযুদ্ধের অবসানের পর দ্বিমেরুর পৃথিবী হয়েছে আমেরিকার নেতৃত্বাধীন এককেন্দ্রিক পৃথিবী। পৃথিবীতে এখন সমাজতান্ত্রিক ব্লক বলে কিছু নেই। খোদ সোভিয়েত ইউনিয়ন লুপ্ত এবং রাশিয়ায় সমাজতন্ত্র তিরোহিত। পাশের পশ্চিমবঙ্গে বাম দলগুলোর শ্রেণিসংগ্রামের বহর এবং রাজনৈতিক ক্ষমতা কম হয়ে যাওয়ায় সেখানেও নভেম্বর বিপ্লবের স্মরণে অনুষ্ঠান নামমাত্র পর্যায়ে পৌঁছেছে।

বিপ্লব ছিল সশস্ত্র

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাপী ২০১৭ সালে বিপ্লবের শতবর্ষেও অনুষ্ঠান হয়েছে অতি সামান্যই। যারা মার্কসবাস, লেনিনবাদের জন্য জীবনের সুখ বর্জন করে সমাজের জন্য কাজ করেছেন তাঁদের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেও সমাজ তাদেরকে ভুলে গেছে। তাদেরকে ইতিহাসের পাতায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। নভেম্বর বিপ্লবের স্মৃতি কিছু মানুষের ভক্তিপূর্ণ ভাবের জগতে বিরাজমান প্রপঞ্চে পরিণত হয়েছে। আর সামাজিক গবেষকদের কাছে সেই বিপ্লবের নেপথ্যের নানা অসঙ্গতির কথা ও কাহিনী ধরা পড়ছে।

ইতিহাসের পাতায় তাকালে এখনো শিহরণ জাগায় ১৯১৭ সাল। সেই সময়ে জারের শাসনের অধীনে ছিল রাশিয়া। তখন সেখানে জুলিয়ান ক্যালেন্ডার মানা হত। সেই হিসাবে সময়টা ছিল অক্টোবর মাস। কিন্তু এর পর সারা পৃথিবীতেই গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার মানা শুরু হল। সেই হিসাবে রুশ বিপ্লব আসলে ১৯১৭ নভেম্বর মাসে হয়েছিল।

অক্টোবর বিপ্লবকে সমাজতন্ত্রের বিজয় বলে দেখানো হলেও সেটা এখন গবেষকরা মানছেন না। তারা জানাচ্ছেন যে, এই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাশিয়ায় জারের শাসনের সমাপ্তি হয়েছিলো, এই ধারনাটি সম্পূর্ণ ভুল। কারণ ১৯১৭ সালে ফেব্রুয়ারি মাসেই জার ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন। সেন্ট পিটার্সবার্গের সেই অভ্যুত্থানের পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাশিয়াকে পরিচালনার জন্য ‘দুমা’ মানে সংসদ গঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী কিয়েরেনস্কির নেতৃত্বে একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা রাশিয়াতে ধীরে ধীরে দানা বাঁধছিল।

কিন্তু আসল ঘটনা ঘটলো আরও পরে। ১৯১৭ সালের ৭ নভেম্বর রাতে লেনিনের নেতৃত্বে বলশেভিকরা সেন্ট পিটার্সবার্গে উইন্টার প্যালেস দখল করেছিলো। সেখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতিনিধিরা ছিলেন। মাঝ রাতে তাঁদেরকেই এক এক করে হত্যা করে বলশেভিক কর্মী এবং তাদের সাথে আসা বিদ্রোহী সৈন্যরা। গণতান্ত্রিক শাসনে বিরাট ছেদ দেখা দেয় সমাজতান্ত্রিক বলশেভিকদের উত্থানে।

ঘটনার ক্লাইমেক্সের শীর্ষ সময়ে, পরের দিন ৮ নভেম্বর ভ্লাদিমির ইলিচ উলিওনভ (লেনিন) আত্মপ্রকাশ করেন। ‘অল রাশিয়ান কংগ্রেস অফ সোভিয়েতস’-এর দায়িত্ব গ্রহণ করলেন তিনি। বলশেভিকরা প্রথমে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে তাঁরা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত সংসদকে সম্মান দেবেন। কিন্তু নির্বাচনে তাঁদের জেতার কোনও সম্ভাবনা ছিল না। তাই সেই পথ বর্জন করা হলো। গবেষকরা দাবি করেন, ‘অক্টোবর বিপ্লবে গণতন্ত্রকে প্রথমেই হত্যা করা হয়।’

বিপ্লবের পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে সাম্প্রতিক বহু গবেষণায় দেখানো হয় যে, তখন একটি পর একটি রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ হল, বলশেভিক নয় এমন সবকটি সংবাদপত্র বন্ধ করে দেওয়া হল। বিরোধীদের গুপ্ত পুলিশের মাধ্যমে হত্যা করা হতে থাকল। সেই গুপ্ত পুলিশের নাম দেওয়া হল ‘চেকা’। প্রতি বিপ্লবীদের গ্রেফতার আর হত্যা করার অবাধ অধিকার দেওয়া হল এই চেকা বাহিনীকে। কোনও হিসেব ছাড়াই মুদ্রা বাজারে ছাড়া হল। ফলে অস্বাভাবিক ভাবে মূল্যবৃদ্ধি হয়ে গেল। ১৯১৮ সালের শুরুতে এক পাউন্ডের বিনিময় মূল্য ছিল ৪৫ রুবল।

বিপ্লবীদের মিছিল

বিপ্লবের আবেদনে জনগণের সহমর্মিতার বদলে ছিল বলপ্রয়োগের নানা ঘটনা। অস্থির পরিস্থিতিতে শহরের লোকেদের আর সেনাবাহিনীকে খাওয়ানোর জন্য খাদ্যশস্য চাই। কিন্তু কৃষকরা খাবার দিতে নারাজ। প্রতিদিন রুবলের দাম কমছে। আর নিত্যনতুন রুবল দিয়ে কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে নতুন সরকার গ্রাম থেকে খাদ্যশস্য লুণ্ঠন করার জন্য সেনা পাঠালেন। হাজারে হাজারে অনিচ্ছুক কৃষকের রক্তে ভেজা শস্য শহরে পৌঁছালো, এমনই তথ্য দিচ্ছেন হাল-আমলের গবেষকরা।

১৯১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে প্রকৃত অর্থে ‘লাল সন্ত্রাস’ শুরু হল, এমন দাবিও করছেন অনেক অনুসন্ধানী গবেষক। বলা হচ্ছে, লেনিন চেকাকে বিরোধীদের গণহত্যার আদেশ দিয়েছিলেন। আগের জামানার আধিকারিক ও সম্পন্ন গৃহস্থদেরও রাষ্ট্রীয় স্বার্থে হত্যার অধিকার দেওয়া হলো। এই পর্যায়ে প্রায় ১ লক্ষ চল্লিশ হাজার মানুষের প্রাণ গেল অক্টোবর বিপ্লবের প্রাথমিক দিনগুলোতেই।

ক্ষমতার লড়াইয়ে লিপ্ত সাদা রঙের প্রতীকে মেনশেভিকরা জার্মানদের সঙ্গে যুদ্ধ করছিল। কিন্তু লাল প্রতীকের বলশেভিকরা ক্ষমতায় আসার পরেই শ্বেতবাহিনীর সঙ্গে লোহিতবাহিনীর ভয়ানক যুদ্ধ শুরু হল। তাই যুদ্ধবিরতির ভরসা দিয়ে লেনিন ক্ষমতায় এলেন। কিন্তু নভেম্বর বিপ্লবের পরে হয়েছিল তার ঠিক উল্টোটাই। সমগ্র দেশটাই এক গৃহযুদ্ধের মুখোমুখি হয়ে গেল। শ্বেত বাহিনীকে সাহায্য করেছিল ইংরেজরা, তবে যুদ্ধে জিতেছিল ‘রেড আর্মি’।

কিন্তু এই জয় মানবসভ্যতার ইতিহাসে নিষ্ঠুরতম সমরনীতি ছিল। রেড আর্মির পিছনে মেশিনগান রাখা ছিল। যুদ্ধ ছেড়ে পালিয়ে আসা সৈন্যের যথাযথ ব্যবস্থা করার জন্য। হাজার হাজার রুশবাসীর প্রাণের বিনিময়ে রেড আর্মি জিতে গেল এবং সম্পন্ন হলো সমাজতান্ত্রিক অক্টোবর বিপ্লব। বিপ্লবের যে মহান চিত্র পাওয়া যায় সমাজতান্ত্রিক নথিতে, এখন সেগুলোর বিপরীত ভাষ্যও বের হচ্ছে।

শতবর্ষ পরে গবেষকদের বিচারে নভেম্বর বা অক্টোবর বিপ্লব নিয়ে নানা মত প্রকাশিত হচ্ছে। কোনও কোনও গবেষক দাবি করেন, অক্টোবর বিপ্লব শ্রমজীবী মানুষের মুক্তির আন্দোলন ছিল না। বরং জার্মানির কাইজারের কূটনৈতিক জয় ছিল।

১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের বিপ্লবে সেন্ট পিটার্সবার্গে প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক ধর্মঘট করেছিলেন। যার ফলে মেনশেভিকরা একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা স্থাপন করেছিলেন। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার সবচেয়ে বড় ভুল করে ফেলল জুলাই মাসে। জার্মানির সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করে। জার্মানির সম্রাট বলশেভিকদের কাজে লাগিয়েছিলেন। লেনিন ক্ষমতা লাভের জন্য সেই সুযোগ নিয়েছিলেন। যুদ্ধ বন্ধ করতেই হবে, এই ছিল তাঁর স্লোগান। যে কোনও মূল্যে যুদ্ধ বন্ধ করো। লেনিন এই প্রসঙ্গে সহযোগী ক্রোৎস্কিকে বলেছিলেন, ‘যদি যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য মেয়েদের পেটিকোট পরিধান করে জার্মানি যেতে হয় তো সেভাবেই যাওয়া উচিত।’

জার্মান সম্রাট দ্বিতীয় উইলিয়ামের এই সাফল্য পেতে আজকের হিসাবে প্রায় ৬০ লক্ষ মার্কিন ডলার খরচ হয়েছিল। এই বিষয়ে জার্মানির বিদেশমন্ত্রী রিচার্ড ভর্ন কোলম্যান পরে বর্ণনা করেছিলেন যে কী ভাবে ‘জার্মান গোল্ড’ নভেম্বর বিপ্লবের মূল চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছিল।

জার্মানির এই সহযোগিতার মূলে ছিলেন এক রুশ বংশোদ্ভূত ইহুদি ভদ্রলোক। তিনি ইজরায়েল লাজারোভিচ গিলফান্দ। বড়লোকের উচ্ছৃঙ্খল ছেলে, সব সময়ে মহিলা পরিবৃত হয়ে থাকতে ভাল বাসতেন আর কমিউনিজম ছিল তাঁর ‘স্টাইল স্টেটমেন্ট’। ১৯০৫ সালের ২২ জানুয়ারি জারের প্রশাসন সেন্ট পিটার্সবার্গে এক নারকীয় ঘটনা ঘটায়। ২০০ জন প্রতিবাদী শ্রমিক পুলিশের গুলিতে মারা যান। এই ঘটনা গিলফান্দ, ক্রোৎস্কির মতো বহু যুবকের বিপ্লবের জন্য মন তৈরি করার কারণ ছিল।

কিছু দিনের মধ্যেই এঁরা গ্রেফতার হন। গিলফান্দ সাইবেরিয়ার জেল থেকে পালিয়ে যান রক্ষীকে ঘুষ দিয়ে। বিপ্লবীদের কাছে গিলফান্দের নাম আলেকজান্ডার পারভাস বলে পরিচিত ছিল। তাই জেল পালিয়ে ইউরোপের কোথাও হারিয়ে যাওয়াটা গিলফান্দের কাছে কোনও সমস্যা হয়নি।

এহেন ইহুদি ইজরায়েল লাজারেভিচ তাঁর বিপ্লবী জীবন শেষ করে কনস্ট্যানটিনোপলে গিয়ে রীতিমতো বুর্জোয়া ব্যবসায়ী হয়ে যান। ক্রোৎস্কি তাঁর এই অধঃপতনে বিরক্ত হয়ে ‘অবিচুয়ারি ফর আ লিভিং ফ্রেন্ড’ নামে একটি বই লেখেন। গিলফান্দের চোরাচালানের ব্যবসা আরও ফুলেফেঁপে উঠতে থাকে। আর এক কাণ্ড করলেন ভদ্রলোক, ম্যাক্সিম গোর্কির ২ লক্ষ ৩০ হাজারের মতো জার্মান গোল্ড মার্ক আত্মসাৎ করেছিলেন। এই রকম 'এক মহান বিপ্লবী'ই শেষপর্যন্ত জার্মানি থেকে সোনা আনার ব্যবস্থা করেছিলেন বিপ্লব ঘটানোর জন্য।

মেনসেভিকদের ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের সাফল্যের পরেই বিদেশে আত্মগোপনকারী লেনিন রাশিয়ায় ঢুকতে পেরেছিলেন। একজন জার্মান সেনা অফিসার বিদেশ মন্ত্রককে লিখলেন, ‘লেনিনের রাশিয়ায় প্রবেশ আমাদের সাফল্য, উনি আপনাদের ইচ্ছেমতোই কাজ করছেন।’ শুরু হল, ‘প্রুশিয়ান বেয়োনেট’ আর ‘রাশিয়ান প্রলেতারিয়ান’ সখ্য। জার্মান সম্রাটের চোখে তখন জার্মানি, অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির কেন্দ্রীয় শক্তি হওয়ার স্বপ্ন, যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্যর্থ হয়েছিল।

এইসব স্বপ্নের অনুসারে গিলফান্দ মাত্র ২৩ পাতার বিপ্লবের রোডম্যাপ তৈরি করে জার্মান কর্তৃপক্ষকে দিয়েছিলেন। বিদেশের সাহায্য রুশ অভ্যুত্থানকে সফল করবেই, তার পর সরকার উল্টে দেওয়ার প্রশ্ন। কর্তৃপক্ষ রাজি হয়েছিলেন, রুশ বিপ্লবের জন্য প্রাথমিক ভাবে মঞ্জুর হয়েছিল ২ মিলিয়ন মার্ক।

কিন্তু জার্মান গোল্ড রাশিয়ায় যাবে কী ভাবে? সেখানেও ভরসা গিলফান্দ। চোরাচালানের ব্যবসায় তাঁর হাতযশ ছিল। পূর্ব দিকের রাস্তা যুদ্ধের জন্য তখন বন্ধ। তাই সুইজারল্যান্ড আর ফিনল্যান্ডের দুর্গম সীমান্ত দিয়ে রাশিয়ায় ঢুকে গেল জার্মান গোল্ড। জার্মান সম্রাটের আশীর্বাদে শুরু হয়ে গেল ‘দুনিয়া কাঁপানো দশদিন’ নামে পরিচিতি সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব।

আজকের তথ্য প্রযুক্তির যুগে এই সবের সত্যাসত্য বিচার করা খুব কঠিন কাজ নয়। অনেক গবেষক এই সব বিষয়ে তথ্যনিষ্ঠ বই লিখেছেন, বিশ্বখ্যাত জার্নালে গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন। পৃথিবীর যে কোনও প্রান্ত থেকে প্রকাশিত কোনও আকর গ্রন্থ অর্ডার দিয়ে আনতে আজকাল সাত দিনের বেশি সময় লাগে না। ইন্টারনেটে সেসব পড়ে নেওয়াও সম্ভব অতি সহজেই।

ফলে রুশ বিপ্লবের সঠিক মূল্যায়নও আজ কঠিন কাজ নয়। তথ্য ভাণ্ডারের সামনে বিপ্লবের আবেগে অন্ধ হয়ে লাল অতীতে মোহাক্রান্ত হওয়ারও দরকার নেই। বরং ইতিহাসের পাতা থেকে ইতিহাসের সবগুলো তথ্য, উপাত্ত সামনে নিয়ে আসাই সঠিক ঘটনা জানার জন্য জরুরি। তাতে মানুষের আবেগ আর প্রকৃত বাস্তবতার মধ্যে একটি সমন্বয় সাধন হতে পারে। এ যাবত প্রকাশিত ও প্রচলিত ভাষ্যগুলোর সত্যাসত্যও পরীক্ষা করে দেখা এখন আর কঠিন কোনও কাজ নয়।

সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পেছনে জার্মান সংযোগ আর ইহুদি ভদ্রলোকের অংশগ্রহণের তথ্যের ভিত্তিতে দুনিয়া কাঁপানো সমাজতান্ত্রিক বৈপ্লবিক ঘটনা সম্পর্কে যে নতুন বিন্যাস ও ভাষ্য তৈরি হয়েছে, তা ইতিহাসের স্পর্শকাতর উপাদান। নানামুখী তথ্য-উপাত্তের নিরিখে সময় সময় ইতিহাসের মূল্যায়ন ও পুনঃমূল্যায়ন এভাবেই চলতে থাকে। আজ যা সত্যি, কাল তা পরিণত হয় মিথ্যায়। সমাজতান্ত্রিক অক্টোবর বিপ্লব সম্পর্কে আর কি কি ঐতিহাসিক তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায় এবং কেমন ধরনের নতুন আখ্যান তৈরি হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

   

৪ লাখ বছর আগে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

  • Font increase
  • Font Decrease

৪ লাখ বছর আগে রাশিয়ার সাইবেরিয়া থেকে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু হয়েছিল বলে নতুন এক গবেষণা থেকে জানা গেছে। এখান থেকে যাত্রা শুরু করে এই গোত্রের মানুষ পরে উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায়।

নতুন এক গবেষণা জানাচ্ছে, সাইবেরিয়ায় নতুন একটি এলাকার সন্ধান পাওয়া গেছে, যেখানে ৪ লাখ ১৭ হাজার বছর আগে হোমিনিনস (Hominins) গোত্রের মানুষের উপস্থিতি ছিল। এই গোত্রের মানুষ ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বাস করতেন। সেখান থেকে তারা উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায় বলে জানিয়েছেন চেক প্রজাতন্ত্রের এক গবেষক।

১৬ এপ্রিল চেক অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের গবেষক জন জেনসেন এক সংবাদ সম্মেলন করে নতুন এ তথ্য প্রকাশ করেন। গবেষণাবিষয়ক সংবাদ সাময়িকী নিউ সায়েন্সটিস্ট এ বিষয়ে একটি খবর প্রকাশ করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে জন জেনসেন বলেন, আমরা আগে যে ধারণা করতাম, তারও আগে থেকে হোমিনিনস গোত্রের মানুষ সাইবেরিয়ার ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বসবাস করতেন। ৪ লাখ ১৭ বছর আগে থেকেই তারা এই এলাকায় বসবাস করতে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের অবস্থান ছিল উত্তর অক্ষাংশে।

তিনি বলেন, আরেকটি আদিম গোত্রের মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়, যারা আর্কটিক অঞ্চলে বাস করতেন। ৪৫ হাজার বছর আগে তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

 

;

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা



মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

  • Font increase
  • Font Decrease

উদাল, সোনালি হলুদ সৌন্দর্যে মুগ্ধতা ছড়ানো মাঝারি সাইজের বৃক্ষ। পত্রঝরা উদাম শরীরে পুরো গাছজুড়ে শুধুই সোনালি হলদে রঙের ফুল। বসন্তে হলদে পাপড়ি ঝরে রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা। প্রকৃতির এক অপর সৌন্দর্য উদাল বৃক্ষ ও তার ফুল।

উদাল আমাদের দেশীয় উদ্ভিদ। এদের প্রিয় আবাস পাহাড়ি এলাকা হলেও আগে সারাদেশেই কমবেশি দেখা যেত। নির্বিচারে গাছ উজাড় হতে থাকায় অন্য গাছের সাথে এ দেশী গাছটিও বিপন্ন। ঢাকার মিরপুর জাতীয় উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন, বাংলা একাডেমি, ঢাকার রমনা পার্ক, ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র তীরের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্কসহ সমতলের অনেক স্থানে উদাল দেখা যায়। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশেষ করে বান্দরবান ও কক্সবাজারের মিশ্র চিরসবুজ বন এবং গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের পাতাঝরা শালবনের স্যাঁতসেঁতে জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে উদাল গাছ দেখা যায়।


উদালের বৈজ্ঞানিক নাম স্টারকুলিয়া ভেলোসা। ইংরেজিতে এটিতে হেয়ারি স্টারকুলিয়া বা এলিফ্যান্ট রোপ ট্রি নামে ডাকা হয়। এ গাছের বাকল থেকে এক প্রকার উন্নতমানের তন্তু পাওয়া যায়। এ তন্তু দিয়ে হাতি বেঁধে রাখার দড়ি বানানো হতো বলেও ইংরেজিতে এমন নামকরণ। আমাদের দেশে স্থানীয়ভাবে এটি চান্দুল নামেও পরিচিত। এই উদ্ভিদ মগ ও মারমাদের কাছে ফিউ বান, গারোদের কাছে উমাক এবং ম্রোদের কাছে নাম সিং নামে পরিচিত।

উদাল ২০ মিটার বা ততোধিক লম্বা হয়। এদের বাকল সাদাটে রঙের। এদের পাতার বোঁটা লম্বা, ফলক বড় ও পাতা খাঁজকাটা, পাতার প্রশাখার আগায় পাতা ঘনবদ্ধ। ফুলগুলি সোনালি হলুদ রঙের, ফুলের ভেতর বেগুনি। এর ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকলেও পাকলে গাঢ় লাল রঙের হয়। বীজের রং কালো। বীজ স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালীর প্রিয় খাবার। তবে মানুষও এর ফল খেয়ে থাকে। বাকল থেকে আঁশ পাওয়া যায়। এ আঁশ দিয়ে দড়ি তৈরি হয়। কাঠ বাদামি রঙের, সাধারণত নরম ও হালকা হয়। এই গাছের কাঠ দিয়ে চায়ের বাক্স বানানো হয়।

উদাল ফল খাচ্ছে ইরাবতী কাঠবিড়ালি। ছবি: তবিবুর রহমান

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বার্তা২৪.কম-কে জানান, এ গাছ দেশের বন-জঙ্গলে প্রচুর হতো। এ গাছের পাতার বোঁটা দিয়ে শরবত বানানো হয়। উঁচু গাছ থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা কষ্টসাধ্য হওয়ায় বড় বড় গাছ কেটে ফেলা হয়। এরপর এর গোড়া থেকে অনেক নতুন নতুন ডালপালা গজালে সেখান থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা হয়। এছাড়াও উদাল গাছ থেকে স্বচ্ছ আঠা পাওয়া যায়। যা দিয়ে কনফেকশনারিসহ নানাবিধ কাজে ব্যবহার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, এ উদ্ভিদ বর্তমানে বিপন্ন প্রজাতির। গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ তিনশ উদাল গাছের চারা বিভিন্ন স্কুল কলেজে বিতরণ করেছে। এবারও প্রায় পাঁচশ চারা বিতরণ করা হবে।


ড. জসীম বলেন, উদলের বাকলের শরবত খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। ফুলের বৃন্ত ছেঁচে জলের সঙ্গে চিনি দিয়ে শরবত করে খেলে প্রস্রাবের সমস্যা ও বাতের ব্যথা দূর হয়। তবে খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

রাঙ্গামাটি বনবিভাগের এসিএফ তবিবুর রহমান জানান, উদালের বীজের স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালির খুব প্রিয়। তবে এ বীজ মানুষও খেয়ে থাকে।

তিনি আরও জানান, ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের তফসিল ৪ অনুযায়ী উদালকে বাংলাদেশের ‘মহাবিপন্ন’ প্রজাতির তালিকাভুক্ত উদ্ভিদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

;

বরিশালের শত বছরের ঐতিহ্যের স্মারক শীতলপাটি



এস এল টি তুহিন, করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরিশাল
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের পাটিকররা তাদের নিপুণ হাতের তৈরি শীতলপাটির জন্য বিখ্যাত।

উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের কাজলাকাঠী গ্রাম, রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঠালিয়া, রাজাপুর গ্রাম ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো তৈরি হয়, ঐতিহ্যের অনন্য স্মারক দেশ বিখ্যাত শীতলপাটি।

এই উপজেলায় এখন এক হাজারের বেশি পরিবার শীতলপাটি তৈরি করে সংসার চালাচ্ছে।

উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া গ্রামে প্রবেশ করে যতদূর দু’চোখ যায়, দেখা মেলে পাইত্রাগাছের বাগান। গ্রামীণ সড়কের দুই পাশে দেখা মেলে বড় বড় পাইত্রা বা মোর্তাগাছের ঝোপ। বাড়ির আঙিনা, পরিত্যক্ত ফসলি জমি, পুকুর পাড়, সব জায়গাতেই বর্ষজীবী উদ্ভিদ তরতাজা পাইত্রাগাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গ্রামীণ জনপদের আভিজাত্যের স্মারক শীতলপাটি তৈরি হয়, এই পাইত্রাগাছের বেতি দিয়ে।

জানা গেছে, এসব গ্রামে পাইত্রাগাছের আবাদ হয়ে আসছে শত শত বছর ধরে। পাটিকরদের পূর্বপুরুষেরা যে পেশায় নিয়োজিত ছিলেন, আজও সেই পেশা ধরে রেখেছেন বাকেরগঞ্জের পাটিকররা।

এখনো এই সব গ্রামে ‘পাটিকর’ পেশায় টিকে আছে প্রায় এক হাজার পরিবার। আর তাদের সবার পেশাই শীতলপাটি বুনন। ফলে, উপজেলার এসব গ্রাম এখন ‘পাটিকর গ্রাম’ নামে পরিচিত।

সরেজমিন দেখা যায়, কাঁঠালিয়া, রাজাপুর ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো গ্রামীণ সড়ক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই ছোট ছোট টিনশেড ও আধাপাকা ঘরগুলোর বারান্দায় নারী-পুরুষ ও শিশুরা মিলে নানান রঙের শীতলপাটি বুনতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কাঁঠালিয়া গ্রামের সবিতা রানীর পরিবারের সবাই মিলে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটান শীতলপাটি তৈরি করতে। একটু সামনে এগুতেই কথা হয়, প্রিয়লাল পাটিকরের সঙ্গে।

তিনি বলেন, পরিবারের পাঁচ সদস্য মিলে একটি পাটি তৈরি করতে কয়েকদিন চলে যায়। প্রতিজনের দৈনিক মজুরি ১০০ টাকা করেও আসে না। তারপরেও কিছু করার নেই। বাপ-দাদার পেশা হিসেবে এখনো শীতল পাটি বুনে যাচ্ছি। একদিকে, এখন গরম বেড়েছে, অপরদিকে, বৈশাখ মাস চলছে। দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বৈশাখী মেলায় শীতলপাটির চাহিদা থাকে। তাই, পাইকাররা এসে আমাদের এলাকা থেকে পাটি কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করেন।

স্থানীয় পাটিকররা জানান, এখানকার তৈরি শীতলপাটি আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু প্লাস্টিক পাটির কারণে বাজারে শীতলপাটির চাহিদা কমে গেছে। সে কারণে সরকারিভাবে বিদেশে শীতলপাটি রফতানির কোনো ব্যবস্থা করা হলে পাটিকরদের জীবন-জীবিকা ভালো চলতো।

পাশাপাশি শীতলপাটি টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তারা। নয়ত এই পেশায় টিকে থাকা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।

এ বিষয়ে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, উপজেলা প্রশাসন, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাসহ জাইকা সংস্থার মাধ্যমে উপজেলার পাটিকরদের মধ্যে বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ প্রদান অব্যাহত রয়েছে। ফলে, নতুন নতুন ডিজাইনের শীতলপাটি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি আমরা তাদের সরকারি বিভিন্ন রকম সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

;

মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক

মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক

  • Font increase
  • Font Decrease

বর্তমান পৃথিবী প্লাস্টিকময়। ছোট বড় থকে প্রায় সবরকম কাজে প্লাস্টিকের ব্যবহারের আধিক্য। তবে এই প্লাস্টিক অজৈব পদার্থে তৈরি হওয়ার কারণে সহজে পচনশীল নয়। বিভিন্ন স্থানে জমে থাকার কারণে এসব পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।  শুধু পরিবেশ নয়, হার্ট, মগজ, সব জায়গাতেই নাকি ঢুকে রয়েছে প্লাস্টিক। সম্প্রতি এক গবেষণায় এমনটাই জানা গিয়েছে। শুধু তাই নয়, হার্টের নানা রোগ, মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধার পিছনেও এই প্লাস্টিকগুলির অবদান রয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

সময়ের বিবর্তনে প্লাস্টিক বিভিন্ন আঘাতের কারণে ক্ষয় হয়ে ক্ষুদ্র আকার ধারণ করে। ৫ মিলিমিটারের চেয়ে ছোট আকারের প্লাস্টিককে মাইক্রোপ্লাস্টিক বলে। দিন দিন পরিবেশে মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ বেড়ে চলেছে। ইতোমধ্যে সমুদ্রে বিপুল পরিমাণে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ সৃষ্টি করেছে। পরিবেশের বিভিন্ন প্রাণী তাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে দিন দিন এই মাইক্রোপ্লাস্টিকের আধিপত্য বেড়েই চলেছে। এমনকি মানব শরীরেও মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে। এক গবেষণায় মস্তিস্কে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে।

ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে নিউ ম্যাক্সিকোর এনভয়রনমেন্টাল হেলথ পারসপেক্টিভ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয় খাদ্য, পানি এমনকি বায়ুর মাধ্যমেও শরীরে প্রবেশ করে। এসব ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা আমাদের স্নায়ুবিক নানান অনুভূতির উপরেও মাইক্রো প্লাস্টিক প্রভাব ফেলে।

রক্ত প্রবাহের কারণে তা শরীরের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করে বেড়ায়। শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোতে তা জমা থেকে স্বাভাবিক কাজকর্মে বাধা প্রদান করে। বৃক্ক, লিভার, হৃদপিণ্ডের রক্তনালি ছাড়াও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় মস্তিষ্ক। মাইক্রোপ্লাস্টিক এসব অঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। 

ডাক্তার ইয়াতিন সাগভেকার বলেন দৈনন্দিন নানা কাজের মধ্যেই শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রবেশ করে। তবে পারে তা ত্বক, প্রশ্বাসের বায়ু বা ইনজেশনের মাধ্যমে।     

তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র ২০ মাইক্রোমিটারের চেয়ে ছোট মাইক্রোপ্লাস্টিক শরীরে প্রবেশ করতে পারার কথা। এছাড়া ১০ মাইক্রোমিটার আকারের গুলো মস্তিষ্কের সুক্ষ্ম কোষের ঝিল্লির অতিক্রম করতে সক্ষম হওয়া উচিত।

প্লাস্টিক পরিবেশ্ম প্রানি এমনকি মানুষের জন্যও অনেক ক্ষতিকর। তাই সকলের উচিত যতটা সম্ভব প্লাস্টিক বর্জন করা। পাশাপাশি প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি জিনিসের ব্যবহার বাড়ানো।

;