শীতে ঘুরে আসুন নীলাদ্রি লেক



ওসমান জাফর, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

শীতকাল মানে বেরিয়ে পড়ার হিড়িক, শীতকাল মানে বেড়িয়ে আসার হিড়িক। মন আনচান করে দূরে কোথাও ঘুরে আসি, যার অনাবিল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য জাগতিক ক্লান্তি মুছে দিয়ে মনকে করবে চাঙ্গা। জীবনকে করবে আরো উৎফুল্লময় ও বিচিত্র সব অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ। তো, এ শীতে ঘুরে আসতে পারেন—নীলাদ্রি।

নীলাদ্রি কী ও কোথায়
সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার টেকেরহাদে নীলাদ্রি লেক অবস্থিত। প্রকৃত নাম শহীদ সিরাজ লেক, যদিও লোকে নীলাদ্রি নামে চেনে। নীলাদ্রি লেক মূলত চুনাপাথরের পরিত্যক্ত লাইমস্টোন লেক। নীল স্বচ্ছ জলের চোখ জুড়ানো সৌন্দর্যের কারণে এটি ‘নীলাদ্রি’ নামে পরিচিত।

নীলাদ্রি লেকে কেন যাবেন
নীলাদ্রি লেককে অনেক পর্যটক ‘বাঙলার কাশ্মির’ বলে অভিহিত করে। নীলাদ্রি লেক হচ্ছে অনেকগুলো টিলা, পাহাড়ের সমারোহ যার একপাশে রয়েছে নীল জলের স্বচ্ছ লেক, আবার স্বচ্ছ জলের মাঝখানেও রয়েছে ছোট ছোট ঢিলা। অদূরে ভারত সীমান্তে সুউচ্চ সুবিশাল সবুজ পাহাড়। স্বর্গীয় সৌন্দর্যের সুরমা যেন। যেখান থেকে ভেসে আসছে পাহাড়ের ওপর জন্মানো গাছের পাতার সাথে হাওয়ার মিতালি সুরসঙ্গীত। নীলাদ্রি লেকের জলে অবগাহন করামাত্র আপনি ভুলে যাবেন ভ্রমণ ও জাগতিক ক্লান্তিসকল। মনে হবে, সারাদিন এখানেই জলে অবগাহন করি। তবে মনে রাখবেন, বেশিক্ষণ জলে অবগাহন করলে সর্দি লেগে যেতে পারে। পাহাড়-টিলা আর লেকের স্বচ্ছ জলের প্রাকৃতিক দৃশ্য আপনার প্রাণে আনবে অনাবিল শান্তির মৌসুম।

নীলাদ্রি বা শহীদ সিরাজ লেক

নীলাদ্রি লেকে যেতে শুকনো মৌসুমে আপনাকে উঠতে হবে বাইকে। যাওয়ার পথে আপনি অনুভব করবেন গ্রামীণ পরিবেশ ও সংস্কৃতির স্বাদ। মাটির রাস্তার দুপাশে সারি সারি সবুজ গাছ-গাছালি। রাস্তার অদূরে সুবিশাল সবুজ পাহাড় চোখ জুড়াবে আপনার। রাস্তার পাশে সুবিশাল বিস্তীর্ণ মাঠে পাকা ধান কাটা হয়ে গেছে, কোথাও কাটা হচ্ছে, কোথাও বা এখনো কাটা হয়নি। পাকা ধানের ওপর মুক্তোর মতোন শিশির বিন্দু। তাতে চিকচিক করছে শীতের নরোম রোদ্দুর।

কৃষকেরা আঁটিবাঁধা ধান মাথায় করে নিয়ে যাচ্ছে। ঘোড়ার গাড়িতে করে নিয়ে যাচ্ছে ধানের বস্তা, ধানের আঁটি, খড়। মহিষের গাড়িও দেখতে পাবেন। হলুদ পাকা ধানের মাঠে ঝাঁকে ঝাঁকে মহিষ, গরুর পাল, ছাগলের পাল। যেতে যাত্রা বিরতি দিতে হবে। কারণ সময় লাগবে প্রায় চার ঘণ্টা। মহেষখোলায় যাত্রাবিরতি নিয়ে সস্তায় কমলা খেতে পারেন কিংবা এককাপ চা।

নীলাদ্রি লেকে ঘুরে বেড়ানোর জন্য আপনি নৌকা পাবেন। জলে অবগাহনের সময় পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের পাহাড়ের ওপর জন্মানো কলাপাতার সাথে বাতাসের সম্মিলিত সুরসঙ্গীত শুনতে পাবেন। জলে নামার আগে চাইলে শীতের নরোম রোদ পোহাতে পারেন। নীলাদ্রি লেকের পাশে রয়েছে সিমেন্টের তৈরি বসার জায়গা। সেখানে বসেও সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। পাশেই রয়েছে চায়ের টঙ দোকান। এক কাপ চায়ে চুমুক দিতে দিতে উপভোগ করতে পারেন অপার্থিক সৌন্দর্য। জলের তেষ্টা পেলে ধারেকাছেই কিনতে পাবেন ডাব।

বিস্তীর্ণ মাঠে পাকা ধান

নীলাদ্রির পাশে রয়েছে রেল স্টেশনের পুরানো জংধরা ইঞ্জিন-বগি, যা দিয়ে একসময় পাথর নেওয়া হতো। এখানে দাঁড়িয়ে আপনি চাইলে ছবিও তুলে নিতে পারেন। অবশ্য ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলার জন্য দক্ষ ফটোগ্রাফার সেখানে পাওয়া যায়। ফটো প্রতি ৩ থেকে ৫ টাকা। নীলাদ্রি গেলে আপনি চাইলে টাঙ্গুয়ার হাওড়, যাদুকাটা নদী, শিমুল বাগানও দেখে আসতে পারেন। এক ঢিলে চার পাখির মামলা। তবে হাতে বেশি সময় নিয়ে যেতে হবে। যাতে সব ঘুরে আসা যায়। সেজন্য সকাল সকাল পৌঁছলেই ভালো হয়।

চাইলে ট্রলারে চেপেও নীলাদ্রি যেতে পারবেন। সেক্ষেত্রে ট্রলারেই রাত্রিযাপন করতে হবে। ট্রলারে থাকা-খাওয়া ও পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা আছে। শীতের রাতে জোৎস্ন্যার আলো নদীর জলে স্বর্গীয় সৌন্দর্য সৃষ্টি হয়। নদীর জলের ওপর কুয়াশার চাদর ভেসে আসছে, চারপাশ কুয়াশায় ঘিরে আছে—এ এক মোহনীয় দৃশ্য। তবে, ট্রলারে করে গেলে একইসাথে টাঙ্গুয়ার হাওড় আর নীলাদ্রি দুটোই দেখতে পারবেন।

নীলাদ্রি লেকে কিভাবে যাবেন
রুট প্ল্যান–১
প্রতিদিন ঢাকার সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে মামুন ও শ্যামলী পরিবহনের বাস সরাসরি সুনামগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় এবং মহাখালী থেকে ছেড়ে যায় এনা পরিবহনের বাস। নন-এসি বাসে জনপ্রতি টিকেটের মূল্য ৫৫০ টাকা আর সুনামগঞ্জ পৌঁছাতে প্রায় ছয় ঘণ্টা সময় লাগে। সুনামগঞ্জ শহরের নতুন ব্রিজ এলাকা থেকে টেকেরঘাট যাবার জন্য মোটর সাইকেল ভাড়া পাবেন। রিজার্ভ নিলে মোটরসাইকেল ভাড়া পড়বে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত। যাত্রা পথে যাদুকাটা নদী পার হওয়ার সময় জনপ্রতি ৫ টাকা এবং মোটর সাইকেলের জন্য ১০ টাকা ভাড়া দিতে হবে।

সুনামগঞ্জ থেকে মোটর সাইকেলে লাউড়ের গড় পর্যন্ত আসতে ভাড়া লাগবে ২০০ টাকা। সেখান থেকে যাদুকাটা নদী পার হয়ে বারিক্কা টিলা থেকে ১২০ টাকা ভাড়ায় টেকেরঘাট যাবার মোটর সাইকেল পাবেন। উল্লেখ্য, মোটরসাইকেল রিজার্ভ কিংবা ভাড়ার ক্ষেত্রে দুইজন ধরা হয়েছে।

নীলাদ্রি লেকে বাইকে যাওয়ার পথ

রুট প্ল্যান-২
ঢাকা থেকে হাওর এক্সপ্রেস নামক একটি আন্তঃনগর ট্রেন রাত ১১টায় যাত্রা করে সকালবেলা মোহনগঞ্জ পৌঁছায়। এই ট্রেনে ২০০ টাকা ভাড়ার মধ্যেও আপনি যেতে পারবেন। মোহনগঞ্জ নেমে সেখান থেকে যেতে হবে মধ্যনগর, সময় লাগবে ১ ঘণ্টা। মধ্যনগর (পিপরা কান্দা ঘাট) থেকে বর্ষাকালে ট্রলার, স্পিডবোট বা নৌকা দিয়ে টেকেরঘাট যাওয়া যায়। আবার নেত্রকোনা থেকেও সরাসরি নৌকা বা ট্রলার ভাড়া করে টেকেরঘাট যাওয়া যায়। তবে শীতকালে নেত্রকোনা থেকে টেকেরঘাট যেতে মোটরসাইকেল ব্যবহৃত হয়।

রুট প্ল্যান-৩
বর্ষাকালে আপনি ভিন্ন পথেও যেতে পারবেন। সুনামগঞ্জ থেকে টাঙ্গুয়ার হাওর হয়ে টেকেরঘাট যেতে পারবেন নৌকায়। সুনামগঞ্জ নেমে সুরমা নদীর উপর নির্মিত বড় ব্রিজের কাছে লেগুনা/ সিএনজি/ বাইক করে তাহিরপুরে সহজেই যাওয়া যায়। তাহিরপুরে নৌকা ঘাট থেকে সাইজ এবং সামর্থ্য অনুযায়ী নৌকা ভাড়া করে নিন। টাঙ্গুয়ার হাওর দেখে টেকেরঘাট যাবেন—এই বলে নৌকা ভাড়া করুন।

ভ্রমণ পরিকল্পনা
নীলাদ্রী লেক, যাদুকাটা নদী, শিমুল বাগান, বারেক টিলা এবং টাঙ্গুয়ার হাওরের দূরত্ব কাছাকাছি হওয়ায় আপনি চাইলে সময় ভাগ করে পছন্দের জায়গাগুলো দেখে ফেলতে পারবেন। সাধারণত বর্ষাকালে টাঙ্গুয়ার হাওরে ভ্রমণ বেশি উপভোগ্য তাই বর্ষাকালে টাঙ্গুয়ার হাওরসহ নীলাদ্রী লেক, যাদুকাটা নদী, শিমুল বাগান, বারেক টিলা ভ্রমণ করতে ভ্রমণ গাইডের টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণ পরিকল্পনা দেখে নিতে পারেন।

প্রাণ জুড়াবে আচমকা পাহাড়-টিলা

এছাড়া শুকনা মৌসুমে কিংবা একদিনে নীলাদ্রী লেক, যাদুকাটা নদী, শিমুল বাগান, বারেক টিলা দেখতে চাইলে সুনামগঞ্জ শহর থেকে মোটর বাইক রিজার্ভ নিয়ে বারেক টিলা, যাদুকাটা নদী, শিমুল বাগান হয়ে নীলাদ্রী লেক ঘুরে আবার সুনামগঞ্জ ফিরে আসতে পারবেন। এক্ষেত্রে সিজনভেদে মোটরবাইক ভাড়া লাগবে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা এবং প্রতিটি বাইকে দুইজন ভ্রমণ করতে পারবেন।

কোথায় থাকবেন
বড়ছড়া বাজারে পাবেন বেশ কয়েকটি গেস্ট হাউজ। এই সব গেস্ট হাউজে ২০০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে রুম পাবেন। তাহিরপুর বাজারেও থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। নীলাদ্রি লেকের কাছে বছরাতে নীলাদ্রি আবাসিক গেস্ট হাউজ রয়েছে। সেখানে ৪০০ টাকায় এক রুম পাওয়া যায়। এছাড়া, পুরাতন চুনা পাথরের কারখানার গেস্ট হাউজেও রাত কাটাতে পারবেন।

লেকের পাশে বেঞ্চিতে বসার ব্যবস্থা

কোথায় খাবেন
নীলাদ্রির কাছে জয়বাংলা বাজারে অল্প টাকায় ভালো মানের খাবারের হোটেল পাবেন। মাছভর্তা, হরেক রকম হাওড়ের মাছের তরকারি, হাঁসের মাংস সচরাচর অল্প টাকায় মেলে। শামীম মিয়ার ভাতের হোটেল সেখানকার নামকরা ভাতের হোটেল। বারিক্কা টিলাতেও সাধারণ মানের দেশিয় খাবারের হোটেল রয়েছে। এছাড়া বড়ছড়া বাজার কিংবা যাদুকাটার পাশের টেকেরঘাটের ছোট বাজারে খাবার জন্য মোটামুটি মানের হোটেল পাবেন। 


আরো পড়ুন ➥ হেমন্তের অল্প শীতে ঘুরে আসুন শ্রীমঙ্গল

   

৫০ বছর আগে মহাকাশ থেকে তোলা পৃথিবীর ছবি আজও শ্রেষ্ঠ



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সালটা ১৯৬৮। বিশ্বব্যাপী মানুষ মেতে উঠেছিল বড়দিনের আনন্দে। তখনো জানতো না, বড়দিন উপলক্ষে তারা একটি বিশেষ উপহার পেতে চলেছে। পৃথিবী থেকে আমরা হরহামেশাই চাঁদ দেখি। অমাবস্যা-পূর্ণিমা, এমনকি পক্ষের মাঝামাঝি সময়ের বদৌলতে নানা দৃষ্টিকোণে নানা আকারের চাঁদ দেখতে পাই। তবে চাঁদ থেকে পৃথিবী দেখতে কেমন? এরকমটা হয়তো অনেকেই ভাবেন।

নাসার মহাকাশচারীরা অ্যাপোলো ৪ এ করে তখন চাঁদের চারপাশে টহল দিচ্ছে। সেখান থেকে তারা চাঁদের বাসকারীদের দৃষ্টিতে পৃথিবী কেমন হবে তার এক নমুনা জোগাড় করেন। ক্রিসমাসের কিছুদিন আগে ক্রুরা চাঁদকে প্রদক্ষিণ করার সময় ব্যারেন লুনার হরিজোন থেকে একটি ছবি তোলে। সেখানে সুদূর মহাকাশ থেকে পৃথিবীর একটি সুন্দর দৃশ্য ধারণ করা হয়। চমৎকার সেই রঙিন ছবিটি সবকিছু পরিবর্তন করতে চলেছিল।

ছবিটি তুলেছিলেন মার্কিন নভোচারী বিল অ্যান্ডার্স এবং জিম লাভেল। ছবিটি ধারণ করার পর মহাকাশ বিজ্ঞানীরা অবাক হয়ে যান। অর্ধ শতাব্দী পার হয়ে যাওয়ার পরও এটিকে প্রকৃতির সবচেয়ে আইকনিক ছবি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ, এটিই মহাকাশ থেকে তোলা প্রথম রঙিন এবং উচ্চ রেজুলেশনের ছবি।

১৯৭০ সালে পরিবেশ সচেতনতা এবং এই ব্যাপারে সক্রিয়তা বাড়ানোর উদ্দেশে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে পৃথিবী দিবস প্রচারিত হওয়ার কারণে ছবিটিকে বিশেষ কৃতিত্ব দেওয়া হয়।

যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মাইকেল প্রিচার্ড ছবিটিকে নিখুঁত দাবি করেন। তিনি বলেন, এই ছবিটি পৃথিবীর এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছিল, যা আগে কোনো ছবি করতে পারেনি। প্রকাণ্ড মহাবিশ্বে পৃথিবীর অস্তিত্ব কতটা ক্ষুদ্র গ্রহ, তা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ছবিটি।

১৯৬০ সালের পরই পৃথিবী নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে শুরু করে। ষাটের দশকের শেষভাগে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মানুষ অনুধাবন করে পৃথিবীকে আজীবন একইভাবে ব্যবহার করা যাবে না। গ্রহের প্রতি আমাদের আরও অনুরাগী হতে হবে। সেই উদ্দেশে ১৯৬৯, ‘৭০ ও ‘৭১ সালে ‘ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ’, মার্কিন প্রতিষ্ঠান ‘এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি’ এবং ‘গ্রিনপিস’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই ছবিটি প্রকাশের ১৮ মাস পর ২০ মিলিয়ন মার্কিন নাগরিক পৃথিবী রক্ষার আন্দোলনে রাস্তায় নামে।

পৃথিবী রক্ষা করার জন্য মানুষদের উৎসাহিত করার বেলায় ছবিটি অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। এখনো অবদি মহাকাশ থেকে পৃথিবীর পাঠানো ছবিগুলোর মধ্যে ১৯৬৮ সালে বড়দিনের আগে তোলা সেই ছবিটিকে শ্রেষ্ঠ বিবেচনা করা হয়।

;

মাঝরাতে আইসক্রিম, পিৎজা খাওয়া নিষিদ্ধ করল মিলান!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: স্কাই নিউজ

ছবি: স্কাই নিউজ

  • Font increase
  • Font Decrease

আইসক্রিম, পিৎজা অনেকের কাছেই ভীষণ পছন্দের খাবার। তবে ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে মাঝরাতে এসব মুখরোচক খাবার ও পানীয় খাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। ইতালিতে জেলাটিনের তৈরি আইসক্রিম খুব বিখ্যাত। এজন্য ইতালিতে 'জেলাটো সংস্কৃতি' নামে একটা কালচার গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি ইতালির মিলানের বাসিন্দাদের জন্য একটি নতুন আইন প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবেদন- স্কাই নিউজ।

মিলানে বসবাসকারীদের অধিকাংশই মাঝরাতে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করে আইসক্রিম, পিৎজা, ফাষ্টফুড জাতীয় খাবার ও পানীয় পান করে থাকে। এতে করে সেখানকার এলাকাবাসীদের রাতের ঘুম বিঘ্নিত হয়। নতুন প্রস্তাবিত আইনে শহরবাসীর রাতের ঘুম নির্বিঘ্ন করতে মধ্যরাতের পর পিৎজা ও পানীয়সহ সব ধরনের টেকওয়ে খাবার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তবে মধ্যরাতের পর আইসক্রিম নিষিদ্ধ করার চেষ্টা এবারই প্রথম নয়। ২০১৩ সালে, তৎকালীন মেয়র গিউলিয়ানো পিসাপিয়া অনুরূপ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু 'অকুপাই জেলাটো' আন্দোলনসহ তীব্র প্রতিক্রিয়ার পরে তিনি এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।

এরপর আবারও মিলানে এ আইনটি প্রস্তাব করেছেন ডেপুটি মেয়র মার্কো গ্রানেল্লি। দেশটির ১২টি জেলা এই প্রস্তাবের আওতাভুক্ত হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে মিলানের মেয়র গ্রানেল্লি বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সামাজিকতা ও বিনোদন এবং বাসিন্দাদের শান্তি ও প্রশান্তির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা।

প্রস্তাবটি নিম্নলিখিত এলাকাগুলোতে প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ: নোলো, লাজারেটো, মেলজো, ইসোলা, সারপি, ভায়া সিজারিয়ানো, আরকো ডেলা পেস, কোমো-গাইআউলেন্টি, পোর্টা গ্যারিবল্ডি, ব্রেরা, টিসিনিজ এবং দারসেনা-নাভিগলি।

জানা যায়, প্রস্তাবটি মে মাসের মাঝামাঝি থেকে কার্যকর থাকবে এবং নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। এটি প্রতিদিন রাত ১২.৩০ টায় এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং সরকারী ছুটির দিনে রাত ১.৩০ টা থেকে প্রয়োগ করা হবে। তবে এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে নাগরিকদের মে মাসের শুরু পর্যন্ত আপিল করার এবং আইন পরিবর্তনের পরামর্শ দেওয়ার সময় রয়েছে।

 

 

 

;

অস্ট্রেলিয়ায় নিখোঁজ কুকুর ফিরলো যুক্তরাজ্যের মালিকের কাছে



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

অস্ট্রেলিয়ায় ঘুরতে এসে নিখোঁজ হয় যুক্তরাজ্যের এক দম্পতির পালিত কুকুর। যুক্তরাজ্যে আসার ১৭ দিন পর মিলো নামের কুকুরটিকে ফিরে পেয়েছেন জেসন হোয়াটনাল নিক রোল্যান্ডস দম্পতি।

হোয়াটনাল এবং তার সঙ্গী নিক সম্প্রতি তাদের কুকুর মিলোকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া পরিদর্শনে যান। তারা যখন সোয়ানসিতে বাড়িতে যাচ্ছিলেন তখন মেলবোর্ন বিমানবন্দরে তার হ্যান্ডলার থেকে কুকুরটি পালিয়ে যায়।

সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী কুকুরটিকে অবশেষে মেলবোর্নের শহরতলিতে ১৭ দিন পর খুঁজে পাওয়া যায়।


হোয়াটনাল স্কাই নিউজকে বলেন, ‘মিলোকে ফিরে পাওয়াটা খুবই আশ্চর্যজনক ছিল আমার জন্য। যখন আমি আমার প্রিয় মিলোর (কুকুর) সাথে পুনরায় মিলিত হয়েছিলাম, তখন আমি কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম। আমার কান্না দেখে অন্যরাও কেঁদেছিল। এটি সত্যিই আবেগপ্রবণ ছিল।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অন্য প্রান্তে থেকে মিলোর কথা চিন্তা করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। আমরা জানতাম না মিলো কোথায় আছে। এটি বেশ হতাশাজনক ছিল আমাদের জন্য, কিছুটা আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম। তাকে ফিরে পাবো ভাবিনি।

মিলোকে পাওয়ার জন্য সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছিলাম, তখন স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে সাহায্য আসে, তারা মিলোর সন্ধান দেয়। মিলোকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের ধন্যবাদ।

;

আমার হাতের পাখা যেন তাদের আরাম দিচ্ছে!



মৃত্যুঞ্জয় রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

  • Font increase
  • Font Decrease

আবু বক্কর (৬২)। বয়সের ভারে অসুস্থ হয়ে তিনি এখন পাকা বিক্রেতা। প্রচণ্ড তাপদাহে মানুষ যখন ঠান্ডা বাতাসের প্রশান্তি খুঁজছে, তখন তিনি গ্রামে গ্রামে গিয়ে তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন।

আবু বক্কর বার্তা২৪.কমকে বলেন, স্ত্রীসহ ছয় মেয়ে নিয়ে আমার সংসার। তবে মেয়েদের বিয়ে দিতে পেরেছি। কিন্তু বয়সের ভারে ঠিকই আমরা একা থেকে গেলাম। শেষ বয়সে গ্রামে গ্রামে তালপাতা পাখা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। শুধু সংসার না, এই টাকায় আমার পায়ের শিরার ব্যথার ওষুধও কিনতে হয়। একবেলা ওষুধ না খেলে চলতে পারি না।

এদিকে, পুরনো ব্যবসার ঋণের বোঝা আর অন্যদিকে অসুস্থ হয়ে ওষুধসহ সংসারের খরচ। শেষ বয়সে তালপাতার পাখাই আমার একমাত্র জীবনসঙ্গী বলেন আবু বক্কর।

তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন আবু বক্কর, ছবি- বার্তা২৪.কম

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার কলাগাছি গ্রামের কবিগানের অনুষ্ঠানে সরেজমিন দেখা যায়, একপাশে তালপাতার পাখা বিক্রি করতে ব্যস্ত ছোট্ট পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ। এই গরমে যখন তার ঘরে থাকার কথা, তখন সে নানা-নানীর সঙ্গে এসে তালপাতার পাখা বিক্রি করছে। কবিগানে বসে থাকা সব শ্রোতার কাছে গিয়ে বলছে, পাখা লাগবে, পাখা! কথা বলতে চাইলেও এ পাশ ওপাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে, ক্রেতার কাছে।

এক ফাঁকে তাকে কাছে পেয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়, এই বয়সে পাখা বিক্রি করছো কেন! এ প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে মাহমুদুল্লাহ বলে, প্রচণ্ড গরমে স্কুল ছুটি। তাই, নানা-নানীর সঙ্গে চলে এসেছি মেলায় পাখা বিক্রি করতে। মানুষজন আমার কাছ থেকে যেন বেশি পাখা কেনে (ক্রয়), তাই আমি মেলায় তাদের সঙ্গে এসেছি।

অনেক উৎসাহের সঙ্গে সে বলে, গরমে আমার হাতের পাখায় যেন তাদের আরাম দিচ্ছে! মেলা হলে আমি সেখানে চলে যাই পাখা বিক্রি করতে। ঘোরাঘুরিও হয় আর টাকা ইনকামও হয়। টাকার জন্য বের হয়ে পড়েছি। আমরা পাখা বিক্রি করে পেট চালাই। নানা-নানী বুড়ো হয়ে গেছে। তাই, আমি সঙ্গে এসে তাদের কষ্টটাকে একটু ভাগাভাগি করে নিচ্ছি।

যেখানে প্রচণ্ড তাপে মানুষজন নাজেহাল, সেখানে ছোট্ট মাহমুদুল্লাহ ছুটে চলেছে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পাখা বিক্রি করতে। ছোট্ট শিশু হলেও গরম যেন তার কাছে কিছু না, পেটের তাগিদে!

আরেক পাখা বিক্রেতা তালা উপজেলার হরিণখোলা গ্রামের বাসিন্দা ভদ্রকান্ত সরকার (৭০)। ১২-১৪ বছর ধরে এই পেশায় আছেন তিনি।

চলছে তালপাতার পাখার বিকিকিনি, ছবি- বার্তা২৪.কম

শেষ বয়সে পাখা কেন বিক্রি করছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে ভদ্রকান্ত বলেন, চাল কিনে খেতে হয়। খুব কষ্টের সংসার! ছেলে-মেয়ে আছে। তারা তাদের মতো কাজ করে খায়। মা বাবার বয়স হয়ে গেলে ছেলে আর আমাদের থাকে না। আমরা বৃদ্ধ বয়সে কেমন আছি, সেটা জানার সুযোগ তাদের থাকে না। শেষজীবনটা এভাবে পাখা বিক্রি করে কাটিয়ে দেবো। কী আর করবো! কপালে যা আছে, শেষপর্যন্ত তাই হবে। কপালে ছিল, এমন বৃদ্ধ বয়সে গ্রামে গ্রামে পাখা বিক্রি করতে হবে!

;