নিছক আগাছা নয় শ্বেতদ্রোণ
গ্রামের দুরন্ত ছেলেমেয়েরা শ্বেতদ্রোণ দেখেছে অথচ ফুল ছিঁড়ে এর মধু খায়নি এমন খুঁজে পাওয়া কঠিন। রাস্তার ধারে, পতিত জমিতে বা ফসলের ক্ষেতে আগাছা হিসাবে জন্মালেও শ্বেতদ্রোণ নিছক আগাছা নয়। এর রয়েছে বহু ওষুধি গুণাগুণ। শাক হিসাবেও এর কচি পাতা ও ডগা খাওয়া হয়।
শ্বেতদ্রোণকে স্থানীয়ভাবে বহু নামে ডাকা হয়। স্থানভেদে এটিকে দণ্ডকলস, দল কলস, ধুবরি, দোর কলস, কান শিশা, কাউন শিশা, ধুরপ শাক, ডোঁরপি নামে ডাকা হয়। সংস্কৃত ভাষায় এটিকে দণ্ডকলস বলে। লামিয়েসী পরিবারের এ উদ্ভিদটির বৈজ্ঞানিক নাম Leucas aspera.
শ্বেতদ্রোণ ভারত, বাংলাদেশ, ফিলিপাইনসহ মরিশাসের সমতল ভূমিতে পাওয়া যায়। এটি শাক হিসাবে ততটা জনপ্রিয় নয়। জ্বালানি হিসাবেও এর তেমন কোন মূল্য নাই। ফলে সবার অলক্ষ্যে এখনও ভালোভাবে টিকে আছে উদ্ভিদটি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বার্তা২৪.কমকে বলেন, শ্বেতদ্রোণ একটি বর্ষজীবি বিরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ। এটি ২০-৪০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এর কাণ্ড নরম, সবুজ, ক্ষুদ্র রোমশ ও চার কোনাবিশিষ্ট। পাতা সরল গাঢ় সবুজ রঙের। পত্রবৃন্ত ছোট, পাতার বোঁটায় দুটি পত্রিকা থাকে। পাতা লম্বায় চার থেকে সাত সেন্টিমিটার লম্বা ও ১ সেন্টিমিটার চওড়া হয়ে থাকে। পাতা গভীর শিরাযুক্ত, কিনারা অসমান ও নরম কাঁটাযুক্ত।
তিনি বলেন, সারাবছরই উদ্ভিদটি দেখতে পাওয়া যায়। এর শেকড় মাটির ৪/৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত গভীরে যায়। গাছ ধরে টান দিলে মাটি থেকে সহজেই উঠে আসে। শুষ্ক মৌসুমে এটি বেশি দেখা যায়। পুষ্প বিন্যাস কাণ্ডবেষ্টক। ফুল সাদা, জিহ্বাকৃতির, গন্ধহীন তবে এর গোড়ায় মধু থাকে। মধু খেতে পিঁপড়ারা ভিড় জমায়। দলগুলো অসমানভাবে দুইভাবে বিভক্ত। ফল খুব ছোট ও কালো। বীজ থেকে এরা বংশ বিস্তার করে।
ড. জসীম বলেন, দণ্ডকলস পথের ধারে জন্মালেও নিছক আগাছা নয়। তুলসি গোত্রীয় অন্যান্য উদ্ভিদের মতো এটিও ভেষজ গুণসম্পন্ন। এর কচি পাতা শাক হিসাবে খাওয়া যায়। শিশুদের সর্দি-কাশি ও ঠাণ্ডায় এর কচি পাতা ব্যবহৃত হয়। ভারতের ত্রিপুরা ও আসামে এর কচি পাতা শাক হিসাবে খাওয়া হয়। এছাড়াও এ উদ্ভিদটির পাতার ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করার ক্ষমতা আছে। বাত রোগের ওষুধ হিসাবে ও বিভিন্ন চর্মরোগের ওষুধ হিসাবে এর পাতা ব্যবহৃত হয়।