জনস্বাস্থ্য না অর্থনীতি



সাইফুল হাসান
অলঙ্করণ: আনিসুজ্জামান সোহেল

অলঙ্করণ: আনিসুজ্জামান সোহেল

  • Font increase
  • Font Decrease

করোনাভাইরাস থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হচ্ছে ঘরবন্দী থাকা। সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব মেনে চলা। এবং ততদিন পর্যন্ত, যতদিন করোনার প্রকোপ না কমে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থারও একই পরামর্শ। এ অবস্থায় সরকার জনগণকে ঘরে থাকার আহবান জানাচ্ছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বেরুতে নিরুৎসাহিত করছে। জনস্বাস্থ্যের গুরুত্ব বিবেচনায়, অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও দীর্ঘ লকডাউনে। অফিস-আদালত, কলকারখানা, পরিবহন, সুপার মার্কেট, রেস্তোরাঁ, জনগসামগম, সব বন্ধ।

ভাইরাসটি বাংলাদেশেও ভীষণ আতংক ছড়িয়েছে। করোনায় ইতোমধ্যেই বিশ্বে ২ লাখের বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। আক্রান্ত প্রায় ত্রিশ লাখের বেশি। আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। করোনার আক্রমণে বিশ্ব তছনছ। অর্থনীতি স্থবির। সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। উন্নত-অনুন্নত সব দেশের সরকারের অবস্থা শোচনীয়; রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দুঅর্থেই।

জীবন বাঁচাতে ঘরে থাকতে হবে। জীবিকার জন্য লকডাউন তুলে নিতে হবে। এই হচ্ছে বাস্তবতা। অনেকদেশেই লকডাউন তুলে নিতে সরকারের ওপর তীব্র চাপ রয়েছে। অ্যামেরিকায় বিক্ষোভ পর্যন্ত হয়েছে। বাংলাদেশেও লকডাউন তুলে নেবার দাবি জোরালো হচ্ছে। সরকারের পক্ষেও দীর্ঘদিন কোটি কোটি মানুষকে খাওয়ানো কঠিন। সত্যি বলতে সেই সামর্থ্যও বাংলাদেশের নেই।

তাহলে উপায়? যাদের ঘরে খাবার আছে, চাকরি বা অর্থের নিশ্চয়তা আছে তারা লকডাউন চালিয়ে যাবার পক্ষে। কিন্তু শ্রমিক, পরজীবী, বস্তিবাসি এবং সঞ্চয় শেষ এমন মানুষের জন্য লকডাউন মানা কঠিন। ঢাকার রাস্তায় এখনই অভাবী-অনাহারী মানুষের ভিড়। কোথাও কোথাও খাবারের দাবিতে বিক্ষোভও হয়েছে। ঘটেছে ত্রাণের ট্রাক লুটের ঘটনাও। অস্বাভাবিক এই পরিস্থিতি সরকার ও জনগণ উভয়ের জন্যই অস্বস্তির এবং কঠিন।

লকডাউন তোলার যুক্তি হচ্ছে, করোনায় মৃত্যু হার কম। তাই সব বন্ধ রেখে অর্থনীতি বিপর্যস্ত করা অর্থহীন। লকডাউন দীর্ঘায়িত হলে করোনায় না মরলেও, মানুষ ক্ষুধায় মরবে। অন্যপক্ষের যুক্তি, মানুষের জন্য অর্থনীতি। মানুষ না বাঁচলে অর্থনীতি দিয়ে কী হবে? সুতরাং করোনা নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত লকডাউন চালিয়ে যাওয়া উচিত। এ মুহূর্তে, দেশের সামনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে জনস্বাস্থ্য না অর্থনীতি?

এ প্রশ্নের সহজ কোনো মীমাংসা নেই। সম্প্রতি অ্যামেরকিার, ন্যাশনাল ইন্সটিউট অব হেলথ মেরিল্যান্ডের প্রোগাম লিডার আনন্দলাল রায় এবং লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সের অর্থনীতির অধ্যাপক মৈত্রীশ ঘটক আনন্দবাজার পত্রিকায় লেখা তাদের একটি যৌথ নিবন্ধে বলছেন, “জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতি বিকল্প নয়, তবে অন্যতম সহযোগী। করোনাভাইরাস গোটা বিশ্বের স্বাস্থ্যের সংকট। যতদিন না স্বাস্থ্যের সংকট কাটবে, মন থেকে ভয় দূর হবে, ততদিন অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে না। জনস্বাস্থ্য এবং অর্থনীতিকে আলাদা করা যায় না বলেই কোনটা আগে এর উত্তর খুঁজে লাভ নেই।”

জনস্বাস্থ্যের সাথে জীবন ও মৃত্যু সম্পর্কিত। জনস্বাস্থ্য ঝুঁকিগ্রস্ত হলে সমাজে আতংক ও গুজব ছড়ায়। অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়। এতে সবচেয়ে ক্ষতি হয় দরিদ্র মানুষের। তাই জনস্বাস্থ্য সবসময় সরকারের সর্বোচ্চ মনোযোগ দাবি করে। একইসাথে লকডাউন সৃষ্ট অর্থনৈতিক ক্ষতি, ক্ষুধার্তের আহাজারি, প্রনোদনার দাবি এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয় সরকারের পক্ষে।

সবচেয়ে ভালো হতো, যদি জনস্বাস্থ্যের সাথে ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক মডেল থাকত। দুনিয়াজুড়ে অভিযোগ উঠছে, জনস্বাস্থ্যকে অবহেলার কারণেই বিশ্ব আজকে ‘জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতি’ উভয়ক্ষেত্রেই করুণ পরিণতি দেখছে। বাজারভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কংকাল বেরিয়ে এসেছে করোনার আঘাতে। শুধুমাত্র রাষ্ট্রনায়কদের উদাসীনতায় করোনা এতটা প্রাণঘাতী হয়েছে। আরো কত মানুষের প্রাণ নেবে তা ভবিষ্যত বলবে। তবে প্রতিষেধক আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত যে বিশ্বকে ভোগাবে সেটা স্পষ্ট।

যে কারণে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্বকে সতর্ক করে বলছে, এই ভাইরাস এখনো অচেনা। প্রতিষেধকও নেই। তাই নিয়ম না মানলে এই শত্রুই ভবিষ্যতে বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

অন্যদিকে জাতিসংঘের আশংকা, চলমান অতিমারির জেরে বিশ্বজুড়ে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা দ্বিগুণ হতে পারে। বিশ্ব খাদ্য সহায়তা কর্মসূচীর মুখ্য অর্থনীতিবিদ আরিফ হুসেইন ইঙ্গিত দিয়েছেন, “এ বছর ১৩ কোটি লোক খাদ্য ঝুঁকিতে আছে। এখনই ব্যবস্থা নেওয়া না হলে বিশ্বে প্রায় ২৭ কোটি মানুষকে অভুক্ত থাকতে হতে পারে।” এর বেশিরভাগই যে দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকায় তা বুঝতে বিশেষজ্ঞ হওয়া লাগে না। ফলে জাতিসংঘ জোর দিচ্ছে, নাগরিকদের সুস্থ রেখে কিভাবে অর্থনীতিকে সচল করা যায়, তার ওপর। বিশেষ করে ভাবতে বলছে, ‘দিন-আনি-দিন-খাই’ মানুষদের কথা।

প্রশ্ন হচ্ছে, কতদিনে করোনা বাগে আসবে? লকডাউনেই বা কতদিন চালানো যাবে? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ধারণা, করোনা পরিস্থিতি প্রলম্বিত হবে। এবং ২০২১ সালের আগে এর ভ্যাকসিন পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এমন পরিস্থিতিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক অভিজিত বিনায়ক বন্দোপাধ্যায় বলছেন, অ্যামেরিকা-ইউরোপ বা কোনো দেশের পক্ষেই দীর্ঘদিন লকডাউন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। ফলে সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ শুরু করতে হবে। এতে কিছু ভুল হবে। কিছু মানুষের জীবনও বিপন্ন হবে। ভুলগুলো মেনে নিতে হবে। এ নিয়ে বসে থাকলে চলবে না।

তবে লকডাউনের সময়টাকে কাজে লাগাতে হবে। এ সময় সরকারের প্রধান কর্তব্য হচ্ছে গরিব, কর্মচ্যূত, বাস্তচ্যূত মানুষ এবং ছোট-মাঝারি-বড় ব্যবসায়ীদের আর্থিক প্রনোদনার ব্যবস্থা করা। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। কিন্তু গরিব-ধনী কারো হাহাকার থামেনি। বিভিন্ন খাত থেকে আরো প্রণোদনার দাবি উঠছে। কিন্তু এত অর্থের যোগান কিভাবে হবে? অভিজিত বিনায়ক বন্দোপাধ্যায়ের সমাধান হচ্ছে, যত বেশি সম্ভব প্রণোদনা দিতে হবে। প্রয়োজনে টাকা ছাপিয়ে দিতে হবে। যেটা অ্যামেরিকা-ইউরোপের দেশগুলো করছে। তাঁর মতে, মানুষ হাতে টাকা পেলে, কিছু কেনাকাটা করতে পারবে। এতে অন্তত অভ্যন্তরীণ চাহিদাটা ধরে রাখা যাবে। সম্প্রতি ‘ব্র্যাক-৭১ টেলিভিশন’ যৌথভাবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “টাকা ছাপানো নিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর ভয় হচ্ছে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যেতে পারে। এবং তারা বুঝতে পারছে না ঠিক কত টাকা ছাপাতে হবে। এটা এত ভাবার সময় নয়। এখন নানা মেকানিজম/ প্রাযুক্তিক প্লাটফর্মের মাধ্যমে সহজেই টাকা পাঠানো যায়। এতে যদি কিছু অপচয়ও হয়, সেদিকে না তাকিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।”

করোনায় আক্রান্ত মানুষদের খুঁজে বের করতে প্রচুর পরীক্ষার প্রয়োজন। সেদিক দিয়ে বিশ্বে পেছনের সারিতে বাংলাদেশ। সময়ের সাথে সাথে সরকার পরীক্ষা বাড়িয়েছে। দুঃশ্চিন্তার বিষয় হচ্ছে, সংক্রমণ এবং সংক্রমিতের সংখ্যাও বাড়ছে। এবং অন্যান্য দেশের তুলনায় এখানে সুস্থ হবার হার কম। যে কারণে সরকার পঞ্চমবারের মতো লকডাউনের মেয়াদ বাড়িয়েছে। কিন্তু মানুষকে ঘরে রাখা যাচ্ছে না। এরপরও লকডাউন মানুষ যতটুকু মানছে তার সুফল পাচ্ছে দেশ।

দেশে করোনায় আক্রান্ত প্রথম রোগী পাবার ৫০ দিন পেরিয়েছে। সংক্রমণ এই সময়ে সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছানোর কথা। যদিও ব্যাপকমাত্রায় পরীক্ষার অভাবে, দেশে করোনার সংক্রমন ঠিক কোন পর্যায়ে তা বোঝা যাচ্ছে না। তাই পরীক্ষার সংখ্যা ব্যাপক মাত্রায় বাড়াতে হবে। দিনে ন্যূনতম ১০/১৫ হাজার পরীক্ষা হলেও, হয়তো দেশের করোনা পরিস্থিতির একটা চিত্র পাওয়া যাবে।

মানুষ লকডাউন মানতে চাইছে না বলে, অনেকেই ‘সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট’ তত্ত্ব হাজির করছেন। কিন্তু এতে হাসপাতালগুলোর ওপরে যে চাপ তৈরি হবে তা সামলানোর ক্ষমতা কি বাংলাদেশের আছে? এখনই হাসপাতালগুলোর যে অবস্থা, তাতে রোগীর সংখ্যা কয়েক হাজার বা লাখ হলে কী হবে? কল্পনা করতেও ভয় হয়। অবশ্য ডিনায়াল মোডে (ভালো অবস্থানে আছি) থাকলে ভিন্ন আলোচনা।

এ অবস্থায় জনস্বাস্থ্য রক্ষা এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধার দুটোই সরকারের জন্য অতীব জরুরি। এবং জনস্বাস্থ্যকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে অর্থনীতিতে ফিরতে হবে। সেক্ষেত্রে সবার আগে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে জিততেই হবে বা করোনাকে বাগে আনতে হবে। এটা ঠিক লকডাউনে অর্থনৈতিক ক্ষতি অপূরণীয়। কিন্তু করোনা পুনরায় ফিরে এলে এবং লকডাউনের প্রয়োজন হলে, তখনকার ক্ষতি হবে বর্তমানের চেয়ে অনেকগুণ বেশি। এই বাস্তবতায়, বেশি বেশি পরীক্ষা, বিচ্ছিন্নকরণ এবং করোনার সাথে সহাবস্থানই নেওয়াটাই শ্রেষ্ঠ কৌশল হবে। ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে এলেই কেবল ধীরে ধীরে আর্থিকখাতের দরজাগুলো খোলা যেতে পারে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে, জনস্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিয়ে লকডাউন আরো কিছুদিন চালানো উচিত। এতে গরিবের কষ্ট বাড়বে। মানুষ অস্থির হবে। এবং সরকারের ওপর চাপ বাড়বে। ঈদে ব্যবসা হবে না। হাহাকার বাড়বে। বিনিময়ে করোনার ঝুঁকি কাটিয়ে উঠতে পারলে অনেক জীবন রক্ষা হবে। দেশ লাভবান হবে। মানুষ বাঁচলে, আবার ঈদ আসবে। ব্যবসা করা যাবে। এবং দিনরাত খেটে আর্থিক ক্ষতিও কাটিয়ে ওঠা যাবে। কোনো কারণে অ্যামেরিকা-ইতালির মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে, আফসোসের সীমা থাকবে না।

   

অস্ট্রেলিয়ায় নিখোঁজ কুকুর ফিরলো যুক্তরাজ্যের মালিকের কাছে



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

অস্ট্রেলিয়ায় ঘুরতে এসে নিখোঁজ হয় যুক্তরাজ্যের এক দম্পতির পালিত কুকুর। যুক্তরাজ্যে আসার ১৭ দিন পর মিলো নামের কুকুরটিকে ফিরে পেয়েছেন জেসন হোয়াটনাল নিক রোল্যান্ডস দম্পতি।

হোয়াটনাল এবং তার সঙ্গী নিক সম্প্রতি তাদের কুকুর মিলোকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া পরিদর্শনে যান। তারা যখন সোয়ানসিতে বাড়িতে যাচ্ছিলেন তখন মেলবোর্ন বিমানবন্দরে তার হ্যান্ডলার থেকে কুকুরটি পালিয়ে যায়।

সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী কুকুরটিকে অবশেষে মেলবোর্নের শহরতলিতে ১৭ দিন পর খুঁজে পাওয়া যায়।


হোয়াটনাল স্কাই নিউজকে বলেন, ‘মিলোকে ফিরে পাওয়াটা খুবই আশ্চর্যজনক ছিল আমার জন্য। যখন আমি আমার প্রিয় মিলোর (কুকুর) সাথে পুনরায় মিলিত হয়েছিলাম, তখন আমি কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম। আমার কান্না দেখে অন্যরাও কেঁদেছিল। এটি সত্যিই আবেগপ্রবণ ছিল।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অন্য প্রান্তে থেকে মিলোর কথা চিন্তা করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। আমরা জানতাম না মিলো কোথায় আছে। এটি বেশ হতাশাজনক ছিল আমাদের জন্য, কিছুটা আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম। তাকে ফিরে পাবো ভাবিনি।

মিলোকে পাওয়ার জন্য সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছিলাম, তখন স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে সাহায্য আসে, তারা মিলোর সন্ধান দেয়। মিলোকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের ধন্যবাদ।

;

আমার হাতের পাখা যেন তাদের আরাম দিচ্ছে!



মৃত্যুঞ্জয় রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

  • Font increase
  • Font Decrease

আবু বক্কর (৬২)। বয়সের ভারে অসুস্থ হয়ে তিনি এখন পাকা বিক্রেতা। প্রচণ্ড তাপদাহে মানুষ যখন ঠান্ডা বাতাসের প্রশান্তি খুঁজছে, তখন তিনি গ্রামে গ্রামে গিয়ে তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন।

আবু বক্কর বার্তা২৪.কমকে বলেন, স্ত্রীসহ ছয় মেয়ে নিয়ে আমার সংসার। তবে মেয়েদের বিয়ে দিতে পেরেছি। কিন্তু বয়সের ভারে ঠিকই আমরা একা থেকে গেলাম। শেষ বয়সে গ্রামে গ্রামে তালপাতা পাখা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। শুধু সংসার না, এই টাকায় আমার পায়ের শিরার ব্যথার ওষুধও কিনতে হয়। একবেলা ওষুধ না খেলে চলতে পারি না।

এদিকে, পুরনো ব্যবসার ঋণের বোঝা আর অন্যদিকে অসুস্থ হয়ে ওষুধসহ সংসারের খরচ। শেষ বয়সে তালপাতার পাখাই আমার একমাত্র জীবনসঙ্গী বলেন আবু বক্কর।

তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন আবু বক্কর, ছবি- বার্তা২৪.কম

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার কলাগাছি গ্রামের কবিগানের অনুষ্ঠানে সরেজমিন দেখা যায়, একপাশে তালপাতার পাখা বিক্রি করতে ব্যস্ত ছোট্ট পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ। এই গরমে যখন তার ঘরে থাকার কথা, তখন সে নানা-নানীর সঙ্গে এসে তালপাতার পাখা বিক্রি করছে। কবিগানে বসে থাকা সব শ্রোতার কাছে গিয়ে বলছে, পাখা লাগবে, পাখা! কথা বলতে চাইলেও এ পাশ ওপাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে, ক্রেতার কাছে।

এক ফাঁকে তাকে কাছে পেয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়, এই বয়সে পাখা বিক্রি করছো কেন! এ প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে মাহমুদুল্লাহ বলে, প্রচণ্ড গরমে স্কুল ছুটি। তাই, নানা-নানীর সঙ্গে চলে এসেছি মেলায় পাখা বিক্রি করতে। মানুষজন আমার কাছ থেকে যেন বেশি পাখা কেনে (ক্রয়), তাই আমি মেলায় তাদের সঙ্গে এসেছি।

অনেক উৎসাহের সঙ্গে সে বলে, গরমে আমার হাতের পাখায় যেন তাদের আরাম দিচ্ছে! মেলা হলে আমি সেখানে চলে যাই পাখা বিক্রি করতে। ঘোরাঘুরিও হয় আর টাকা ইনকামও হয়। টাকার জন্য বের হয়ে পড়েছি। আমরা পাখা বিক্রি করে পেট চালাই। নানা-নানী বুড়ো হয়ে গেছে। তাই, আমি সঙ্গে এসে তাদের কষ্টটাকে একটু ভাগাভাগি করে নিচ্ছি।

যেখানে প্রচণ্ড তাপে মানুষজন নাজেহাল, সেখানে ছোট্ট মাহমুদুল্লাহ ছুটে চলেছে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পাখা বিক্রি করতে। ছোট্ট শিশু হলেও গরম যেন তার কাছে কিছু না, পেটের তাগিদে!

আরেক পাখা বিক্রেতা তালা উপজেলার হরিণখোলা গ্রামের বাসিন্দা ভদ্রকান্ত সরকার (৭০)। ১২-১৪ বছর ধরে এই পেশায় আছেন তিনি।

চলছে তালপাতার পাখার বিকিকিনি, ছবি- বার্তা২৪.কম

শেষ বয়সে পাখা কেন বিক্রি করছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে ভদ্রকান্ত বলেন, চাল কিনে খেতে হয়। খুব কষ্টের সংসার! ছেলে-মেয়ে আছে। তারা তাদের মতো কাজ করে খায়। মা বাবার বয়স হয়ে গেলে ছেলে আর আমাদের থাকে না। আমরা বৃদ্ধ বয়সে কেমন আছি, সেটা জানার সুযোগ তাদের থাকে না। শেষজীবনটা এভাবে পাখা বিক্রি করে কাটিয়ে দেবো। কী আর করবো! কপালে যা আছে, শেষপর্যন্ত তাই হবে। কপালে ছিল, এমন বৃদ্ধ বয়সে গ্রামে গ্রামে পাখা বিক্রি করতে হবে!

;

৪ লাখ বছর আগে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

  • Font increase
  • Font Decrease

৪ লাখ বছর আগে রাশিয়ার সাইবেরিয়া থেকে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু হয়েছিল বলে নতুন এক গবেষণা থেকে জানা গেছে। এখান থেকে যাত্রা শুরু করে এই গোত্রের মানুষ পরে উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায়।

নতুন এক গবেষণা জানাচ্ছে, সাইবেরিয়ায় নতুন একটি এলাকার সন্ধান পাওয়া গেছে, যেখানে ৪ লাখ ১৭ হাজার বছর আগে হোমিনিনস (Hominins) গোত্রের মানুষের উপস্থিতি ছিল। এই গোত্রের মানুষ ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বাস করতেন। সেখান থেকে তারা উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায় বলে জানিয়েছেন চেক প্রজাতন্ত্রের এক গবেষক।

১৬ এপ্রিল চেক অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের গবেষক জন জেনসেন এক সংবাদ সম্মেলন করে নতুন এ তথ্য প্রকাশ করেন। গবেষণাবিষয়ক সংবাদ সাময়িকী নিউ সায়েন্সটিস্ট এ বিষয়ে একটি খবর প্রকাশ করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে জন জেনসেন বলেন, আমরা আগে যে ধারণা করতাম, তারও আগে থেকে হোমিনিনস গোত্রের মানুষ সাইবেরিয়ার ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বসবাস করতেন। ৪ লাখ ১৭ বছর আগে থেকেই তারা এই এলাকায় বসবাস করতে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের অবস্থান ছিল উত্তর অক্ষাংশে।

তিনি বলেন, আরেকটি আদিম গোত্রের মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়, যারা আর্কটিক অঞ্চলে বাস করতেন। ৪৫ হাজার বছর আগে তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

 

;

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা



মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

  • Font increase
  • Font Decrease

উদাল, সোনালি হলুদ সৌন্দর্যে মুগ্ধতা ছড়ানো মাঝারি সাইজের বৃক্ষ। পত্রঝরা উদাম শরীরে পুরো গাছজুড়ে শুধুই সোনালি হলদে রঙের ফুল। বসন্তে হলদে পাপড়ি ঝরে রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা। প্রকৃতির এক অপর সৌন্দর্য উদাল বৃক্ষ ও তার ফুল।

উদাল আমাদের দেশীয় উদ্ভিদ। এদের প্রিয় আবাস পাহাড়ি এলাকা হলেও আগে সারাদেশেই কমবেশি দেখা যেত। নির্বিচারে গাছ উজাড় হতে থাকায় অন্য গাছের সাথে এ দেশী গাছটিও বিপন্ন। ঢাকার মিরপুর জাতীয় উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন, বাংলা একাডেমি, ঢাকার রমনা পার্ক, ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র তীরের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্কসহ সমতলের অনেক স্থানে উদাল দেখা যায়। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশেষ করে বান্দরবান ও কক্সবাজারের মিশ্র চিরসবুজ বন এবং গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের পাতাঝরা শালবনের স্যাঁতসেঁতে জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে উদাল গাছ দেখা যায়।


উদালের বৈজ্ঞানিক নাম স্টারকুলিয়া ভেলোসা। ইংরেজিতে এটিতে হেয়ারি স্টারকুলিয়া বা এলিফ্যান্ট রোপ ট্রি নামে ডাকা হয়। এ গাছের বাকল থেকে এক প্রকার উন্নতমানের তন্তু পাওয়া যায়। এ তন্তু দিয়ে হাতি বেঁধে রাখার দড়ি বানানো হতো বলেও ইংরেজিতে এমন নামকরণ। আমাদের দেশে স্থানীয়ভাবে এটি চান্দুল নামেও পরিচিত। এই উদ্ভিদ মগ ও মারমাদের কাছে ফিউ বান, গারোদের কাছে উমাক এবং ম্রোদের কাছে নাম সিং নামে পরিচিত।

উদাল ২০ মিটার বা ততোধিক লম্বা হয়। এদের বাকল সাদাটে রঙের। এদের পাতার বোঁটা লম্বা, ফলক বড় ও পাতা খাঁজকাটা, পাতার প্রশাখার আগায় পাতা ঘনবদ্ধ। ফুলগুলি সোনালি হলুদ রঙের, ফুলের ভেতর বেগুনি। এর ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকলেও পাকলে গাঢ় লাল রঙের হয়। বীজের রং কালো। বীজ স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালীর প্রিয় খাবার। তবে মানুষও এর ফল খেয়ে থাকে। বাকল থেকে আঁশ পাওয়া যায়। এ আঁশ দিয়ে দড়ি তৈরি হয়। কাঠ বাদামি রঙের, সাধারণত নরম ও হালকা হয়। এই গাছের কাঠ দিয়ে চায়ের বাক্স বানানো হয়।

উদাল ফল খাচ্ছে ইরাবতী কাঠবিড়ালি। ছবি: তবিবুর রহমান

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বার্তা২৪.কম-কে জানান, এ গাছ দেশের বন-জঙ্গলে প্রচুর হতো। এ গাছের পাতার বোঁটা দিয়ে শরবত বানানো হয়। উঁচু গাছ থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা কষ্টসাধ্য হওয়ায় বড় বড় গাছ কেটে ফেলা হয়। এরপর এর গোড়া থেকে অনেক নতুন নতুন ডালপালা গজালে সেখান থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা হয়। এছাড়াও উদাল গাছ থেকে স্বচ্ছ আঠা পাওয়া যায়। যা দিয়ে কনফেকশনারিসহ নানাবিধ কাজে ব্যবহার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, এ উদ্ভিদ বর্তমানে বিপন্ন প্রজাতির। গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ তিনশ উদাল গাছের চারা বিভিন্ন স্কুল কলেজে বিতরণ করেছে। এবারও প্রায় পাঁচশ চারা বিতরণ করা হবে।


ড. জসীম বলেন, উদলের বাকলের শরবত খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। ফুলের বৃন্ত ছেঁচে জলের সঙ্গে চিনি দিয়ে শরবত করে খেলে প্রস্রাবের সমস্যা ও বাতের ব্যথা দূর হয়। তবে খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

রাঙ্গামাটি বনবিভাগের এসিএফ তবিবুর রহমান জানান, উদালের বীজের স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালির খুব প্রিয়। তবে এ বীজ মানুষও খেয়ে থাকে।

তিনি আরও জানান, ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের তফসিল ৪ অনুযায়ী উদালকে বাংলাদেশের ‘মহাবিপন্ন’ প্রজাতির তালিকাভুক্ত উদ্ভিদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

;