ইউক্রেন যুদ্ধে যুদ্ধবিরতিতে রাজি পুতিন, তবে
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে রাজি। তবে ইউক্রেন বা পাশ্চাত্য দেশগুলি যদি যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চায়, তাহলে তাতেও রাজি তিনি।
পুতিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক ব্যক্তিত্বের বরাত দিয়ে বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ কথা জানায়। তারা এটাও জানিয়েছেন, সম্প্রতি ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে এগিয়ে থাকার প্রেক্ষাপটে যুদ্ধবিরতিতে যেতে রাজি আছেন পুতিন।
শুক্রবার (২৪ মে) বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
রয়টার্সের সঙ্গে রাশিয়ার তিন শীর্ষ ব্যক্তিত্ব এটাও স্মরণ করে দিয়ে বলেছেন, যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে যুদ্ধ যতদিনই গড়াক না কেন, তা চালিয়ে যেতে আপত্তি নেই পুতিনের। ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধ করতে যুদ্ধবিরতিতে রাজি আছেন পুতিন।
মোট পাঁচজনের সঙ্গে কথা বলেছে রয়টার্স। এর মধ্যে একজন যুদ্ধে রাশিয়ার অগ্রগতির প্রেক্ষাপটে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এবিষয়ে পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ক্রেমলিন প্রধান বার বার বলেছেন, রাশিয়া সব সময় আলোচনার দরজা খুলে রেখেছে। তিনি বলেন, পুতিন তার উদ্দেশ্য অর্জনের সব কিছু করতে রাজি। তিনি ‘গৃহযুদ্ধ’ চান না।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী কোনো মন্তব্য করেননি।
গত সপ্তাহে রাশিয়ার অর্থনীতিবিদ, রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে পাশ্চাত্যের কয়েকজন সামরিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকের সঙ্গে দেশের যুদ্ধ জয়ে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে কথা বলতে দেখা গেছে।
উত্তর গাজায় তুমুল যুদ্ধ, রাফাহতে অগ্রসর হচ্ছে ইসরায়েলি ট্যাংক
গাজার বাসিন্দা এবং চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, গাজায় আক্রমণ তীব্রতর করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। রয়টার্স জানিয়েছে, গাজার উত্তরে জাবালিয়াতে প্রচণ্ড লড়াইয়ের খবর পাওয়া গেছে।
চিকিৎসকরা শুক্রবার (২৪ মে) বলেছেন, ‘জাবালিয়ায় ঘরবাড়িতে হামলার সময় কমপক্ষে পাঁচজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এবং আরও অনেকে ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়েছে। তবে, বোমা হামলার তীব্রতার কারণে এই অঞ্চলে পৌঁছানো যায়নি।’
এদিকে মিশরের সীমান্তবর্তী দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ’র বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি ট্যাঙ্কগুলো পূর্ব দিকের জেনিনা জেলায় আরও অগ্রসর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে বিস্ফোরণের শব্দ এবং ধোঁয়া উঠতে দেখা যাচ্ছে।
অন্যদিকে ইসরায়েল বলেছে, তাদের বাহিনী যুদ্ধের কয়েক মাস আগে গাজার আটটি ঐতিহাসিক শরণার্থী শিবিরের মধ্যে সবচেয়ে বড় শিবির জাবালিয়া পরিষ্কার করছে।
বাসিন্দারা বলেন, শুক্রবার ট্যাঙ্কগুলো স্থানীয় বাজার ধ্বংস করেছে এবং বুলডোজারগুলো জাবালিয়ার সরু গলির দোকানগুলো ভেঙে দিয়েছে।
হামাসের সশস্ত্র শাখা বলেছে, তাদের যোদ্ধারা সেখানে তিনটি ট্যাংক ধ্বংস করেছে।
উল্লেখ্য, ফিলিস্তিনী সংগঠন হামাস গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে আকস্মিক বড়ো ধরনের হামলা চালায়। এ সময়ে তারা প্রায় এক হাজার ১৭০ ইসরায়েলিকে হত্যা এবং ২৫০ জনকে জিম্মি করে।
এখনও হামাসের কাছে ১২৪ জন জিম্মি হিসেবে আটক রয়েছে বলে ধারণা করছে ইসরায়েল।
হামাসের হামলার পরে গাজায় প্রতিশোধমূলক পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েল, যা এখনও চলছে। গাজায় ইসরায়েলের অব্যাহত এ হামলায় ৩৫ হাজার ৭০৯ ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
চাদের প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নিলেন মাহামাত ইদ্রিস ডেবি
উত্তর-মধ্য আফ্রিকার দেশ চাদে সামরিক শাসন চলাকালীন অন্তর্বর্তীকালীন নেতা হিসাবে তিন বছর দায়িত্ব পালনের পর শপথ নিয়েছেন দেশটির নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাহামাত ইদ্রিস ডেবি।
চলতি সপ্তাহে সাকসেস মাসরা এই পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার পরপরই কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করে যে, দেশটির প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণ করবেন আল্লামায়ে হালিনা।
আল জাজিরা জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (২৩ মে) রাজধানী এন'জামেনায় একটি অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় ডেবি বলেন, ‘আমার ভাই ও বোনরা, যারা আমাকে বেছে নেননি, আমি আপনাদের ইচ্ছাকে সম্মান করি, যা আমাদের গণতন্ত্রের প্রাণশক্তি জোগাতে অবদান রাখে।’
উল্লেখ্য, ডেবি গত ৬ মে’র নির্বাচনে ৬১ শতাংশ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তবে, আন্তর্জাতিক এনজিওগুলো বলেছে. ওই নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য নয়।
বিদ্রোহীরা তার বাবা ইদ্রিস ডেবিকে হত্যা করার পর ২০২১ সালের এপ্রিলে তাকে দেশটির অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করা হয়।
ডেবিকে ফ্রান্সের আশীর্বাদপুষ্ট নেতা হিসাবেই গণ্য করা হয়। যে কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সাবেক উপনিবেশ মালি, বুরকিনা ফাসো এবং নাইজার থেকে ফরাসি বাহিনী অপসারণ করা হলেও বর্তমানে চাদে এখনো ফ্রান্সের এক হাজার সেনা রয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ডেবি’র বৃহস্পতিবার শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে আফ্রিকার অন্যতম দরিদ্র দেশ চাদে তিন বছরের সামরিক শাসনের সমাপ্তি হলো।
রাফায় ইসরায়েলের হামলা বন্ধের নির্দেশ আন্তর্জাতিক আদালতের
গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে চলমান হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধে ফিলিস্তিনের রাফাতে দখলদার ইসরায়েলের চলমান হামলা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে)। শুধু তাই নয়, ইসরায়েলি সৈন্যদের ওই এলাকা ছেড়ে দেওয়ার জন্যও বলা হয়েছে।
শুক্রবার (২৪ মে) হেগ ভিত্তিক জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত ইসরায়েলকে এ নির্দেশ দেন। কাতার ভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
রায়ে আইসিজের প্রধান বিচারপতি নওয়াফ সালাম বলেন, “রাফাতে তাৎক্ষণিকভাবে ইসরায়েলের হামলা বন্ধ করতে হবে। ওই এলাকায় ঘিরে এমন কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না যাতে অঞ্চলের বাসিন্দারা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।”
তিনি জানান, রাফায় মানবিক পরিস্থিতি বিপর্যয়কর। তাই যত দ্রুত সম্ভব সেখানে ইসরায়েলি সৈন্যদের হামলা বন্ধ করতে হবে।
আদালতের বিচারকরা বলেছেন, ইসরায়েল গাজার বাসিন্দাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে যেসব প্রতিশ্রতি দিয়েছে এবং রাফা থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে যে প্রক্রিয়া ব্যবহার করছে সেটিতে তারা সন্তুষ্ট নন।
এর আগে রাফাতে ইসরায়েলের হামলা বন্ধের দাবি নিয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের দারস্থ হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। দেশটি দাবি করে, গাজায় ইসরায়েল গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েল। এ কারণে সেখানে হামলা বন্ধ করতে হবে।
দক্ষিণ আফ্রিকা আবেদনে বলেছে, রাফাহ শহরসহ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলিদের সামরিক অভিযান বন্ধে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।
এই আবেদনের বিষয়ে আজ রায় দিয়েছে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ এ আদালত। তবে এ রায় দিতে পারলেও রায় কার্যকর করানোর ক্ষমতা নেই আইসিজের। এর আগে ইউক্রেনে আগ্রাসন বন্ধের জন্য রাশিয়াকে নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। কিন্তু রাশিয়া তা মানেনি।
এর আগে সোমবার ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টের (আইসিসি) শীর্ষ প্রসিকিউটর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং হামাসের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার আহ্বান জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, চলতি মাসে ইসরায়েল দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরে আক্রমণ শুরু করে। এতে প্রাণ হারান অসংখ্য ফিলিস্তিনি নাগরিক। আহতের সংখ্যাও কম নয়। এ অবস্থায় ওই এলাকা ছেড়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন বাসিন্দারা।