যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে কৃষ্ণাঙ্গ কিশোরী নিহত
আন্তর্জাতিক
যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও অঙ্গরাজ্যে পুলিশের গুলিতে ১৬ বছর বয়সী এক কৃষ্ণাঙ্গ কিশোরী নিহত হয়েছে। তবে পুলিশের দাবি কিশোরীটি ছুরিকাঘাতের চেষ্টা করলে তা প্রতিহত করতে গিয়ে গুলি চালাতে বাধ্য হয়েছে তারা।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) বিকেলে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
বিজ্ঞাপন
এঘটনায় কলম্বাসের মেয়র অ্যান্ড্রু গিন্থার টুইটারে লিখেছেন, দুঃখজনকভাবে আজ এক কিশোরী প্রাণ হারিয়েছে। আমরা এখনও বিস্তারিত সব কিছু জানি না। এ বিষয়ে আরও তথ্য পাওয়া মাত্র আমরা তা জানাব।
তবে. কলম্বাস পুলিশ ঘটনাস্থলের বডিক্যাম ভিডিও প্রকাশ করেছে। তাদের দাবি, ওই কিশোরী দুইজনকে ছুরিকাঘাত করার চেষ্টা করছিলো। তখন একজন পুলিশ কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তিনি ওই কিশোরীকে লক্ষ্য করে কয়েকবার গুলি করেন। এরপরে মেয়েটি পার্ক করা একটি গাড়ির পাশে মাটিতে পড়ে যায়। ভিডিওতে মরদেহের পাশে একটি ছুরি পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
বিজ্ঞাপন
এঘটনায় দেশটির কর্মকর্তারা স্থানীয় বাসিন্দাদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছে, আমরা এ ঘটনা তদন্ত করছি।
এদিকে এরইমধ্যে বিক্ষুব্ধ জনতা ঘটনাস্থলে জড়ো হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
মার্কিন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জড়িত কর্মকর্তাকে বেতনভোগ প্রশাসনিক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। তবে এখনও নাম প্রকাশ করা হয়নি ওই পুলিশ কর্মকর্তার।
লেবাননভিত্তিক সশস্ত্র ইসলামি গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে যেতে সম্মত হয়েছে ইসরায়েল। ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের চাপে মুখে অবশেষে যুদ্ধবিরতিতে একমত হয়েছে ইসরায়েল। সব ঠিক থাকলে শিগগরই লেবাননে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেবে ইসরায়েল।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) টাইমস অব ইসরায়েলের বরাত দিয়ে বার্তাসংস্থা সিএনএন জানায়, মঙ্গলবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হিজবুল্লাহর সঙ্গে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়ার নির্দেশ দেবেন। পরে পরিস্থিতি সাপেক্ষে এই মেয়াদ আরও বৃদ্ধি করা হবে ।
তবে হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধ যে শেষ হয়ে যাচ্ছে এমনটা না বলে মনে করছেন ইসরায়েলি কর্মকর্তারা।
ইসরায়েলি এক কর্মকর্তা বলেন, 'আমরা জানি না এই যুদ্ধবিরতি কতদিন স্থায়ী হবে। এক মাস হতে পারে, এক বছরও হতে পারে।'
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা বিয়ষক মুখপাত্র জন কিরবি সোমবার এক ব্রিফিংয়ে বলেন, সবকিছু ঘটার আগে এ ব্যাপারে নিশ্চিতভাবে কিছু বলার সুযোগ নেই, তবে আমরা একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির কাছাকাছি রয়েছি।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের দপ্তর থেকে দেওয়া বিবৃতিতেও প্রায় একই তথ্য জানানো হয়।
এদিকে গত ১৮ নভেম্বর ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটে দেওয়া এক বক্তৃতায় নেতানিয়াহু জানান, লেবাননে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব গ্রহণ করা হলেও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণে অভিযান চালিয়ে যাবে ইসরায়েলি বাহিনী।
বক্তৃতায় নেতানিয়াহু বলেন, 'কাগজে কী (প্রস্তাব) থাকবে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ না। কাগজে (যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব) সই করা হলেও আমাদের (ইসরায়েল) উত্তরে আক্রমণ চালিয়ে যেতে হবে। যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হলেও সেটা মানার নিশ্চয়তা দিতে পারছি না।'
ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করার কোনো ষড়যন্ত্র সফল হবে না। আমাদের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৫ এবং ২৬ সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেয়, ওয়াকফ সম্পত্তি এই সুরক্ষার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। ওয়াকফ রক্ষা করা শুধু আইনগত অধিকার নয় বরং একটি ধর্মীয় কর্তব্য।
সম্প্রতি বিহারের রাজধানী পাটনায় ‘সংবিধান রক্ষা এবং জাতীয় সংহতি সম্মেলনে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সভাপতি সাইয়্যেদ আরশাদ মাদানি এসব কথা বলেন।
এ সময় তিনি সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মনিরপেক্ষ সংগঠনগুলোর প্রতি আহ্বান জানান এবং সংবিধান ও আইনের শাসন সমুন্নত রাখার গুরুত্বের ওপর জোর দেন।
প্রস্তাবিত ওয়াকফ সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কবার্তা উচ্চারণ করে তিনি বিহার এবং অন্ধ্রপ্রদেশের সরকারকে এই বিলে সমর্থনের কথা বিবেচনার জন্য সমালোচনা করে বলেছেন, এ ধরনের কাজ হবে ‘মুসলিমদের পিঠে ছুরি মারার’ সাদৃশ্য।
পাটনার বাপু সভাঘর অডিটোরিয়ামে দেওয়া বক্তৃতায়, সাইয়্যেদ আরশাদ মাদানি এই দুই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের তাদের অবস্থান পুনর্বিবেচনার জন্য অনুরোধ করেন এবং জোর দিয়ে বলেন, ‘রাজনৈতিক সুবিধার জন্য বিলটিকে সমর্থন করা মুসলিম ভোটারদের বিশ্বাসের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা হবে। এমন দ্বৈত রাজনীতি আমাদের কাছে ভোট চাওয়া এবং তারপর আমাদের বিরুদ্ধে সেই ক্ষমতা ব্যবহার- চলতে পারে না।’
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাম্প্রতিক বিবৃতিতে হতাশা প্রকাশ করে সাইয়্যেদ মাদানি বলেন, প্রধানমন্ত্রী যদি দাবি করেন- সংবিধানে ওয়াকফের কোনো উল্লেখ নেই, তাহলে আগামীকাল তিনি নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাতকে অসাংবিধানিক বলবেন এবং এগুলো নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানাবেন?
সাইয়্যেদ মাদানি বলেন, ওয়াকফ সংশোধনী বিল- ২০২৪ ওয়াকফ সম্পত্তি ধ্বংস এবং বরাদ্দের পথ প্রশস্ত করতে পারে। তিনি ঘোষণা করেন, জমিয়ত অন্যান্য সংখ্যালঘু এবং ন্যায়প্রিয় নাগরিকদের সহযোগিতায় আইনের কাঠামোর মধ্যে বিলের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী আন্দোলন শুরু করবে।
দেশে বিভেদমূলক বক্তব্যের উত্থানের নিন্দা করে মাওলানা মাদানি আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মাসহ রাজনৈতিক নেতাদের বিদ্বেষ ছড়ানোর জন্য সমালোচনা করেন। মুসলমানদের বারবার ‘অনুপ্রবেশকারী’ বলে হিমন্ত শর্মা নিরলসভাবে বিষ ছড়াচ্ছেন। তার ঘৃণাভরা রাজনীতি ঝাড়খণ্ডের জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে, যেখানে হিন্দু, মুসলিম এবং খ্রিস্টানরা তার বিভাজনমূলক এজেন্ডা নিভানোর জন্য একত্রিত হয়েছে।
ভারতে অসহিষ্ণুতার পরিবেশ সৃষ্টির জন্য প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেও দায়ী করেছেন মাওলানা মাদানি। তার মতে, যখন দেশের শীর্ষ নেতারা মুসলিমদের সম্পর্কে দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করেন, তখন তা অন্যদের বিষ ছড়াতে উৎসাহিত করেন।
মাওলানা মাদানি সম্প্রীতি ও ধর্মীয় সহনশীলতা বৃদ্ধিতে জমিয়তের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বিভাজনমূলক রাজনীতির বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, যদি ন্যায়বিচার এবং আইনের শাসনকে ক্ষুণ্ন করা হয়, তাহলে দেশের সামাজিক কাঠামো ভেঙে পড়বে, যা সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং সংখ্যালঘু উভয় সম্প্রদায়ের জন্যই অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হবে।
রফিক উখিয়া শরণার্থী শিবিরে বসবাসকারী এক রোহিঙ্গা যুবক। ২০১৭ সালে নিজ দেশ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়।
৩২ বছর বয়সী রফিকের মতো আরও হাজার হাজার রোহিঙ্গা যুবক মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য ও আশপাশের বিভিন্ন রাজ্যে চলমান সংঘাতে ‘মাতৃভূমির টানে’ লড়াই করছেন। তারা সেখানে গিয়ে কয়েক দিন যুদ্ধ করে আবার ফিরে আসছেন শরণার্থী শিবিরে।
‘আমাদের জমি ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য লড়াই করতে হবে’-মিয়ানমার যুদ্ধে অংশ নিয়ে বাংলাদেশে ফিরে এমনটাই বলেছেন রফিক।
রোহিঙ্গা, মিয়ানমারের উত্তর রাখাইনে বসবাসকারী এক অবাঞ্চিত রাষ্ট্রবিহীন জনগোষ্ঠীর নাম। মিয়ানমারের সরকার, সেনাবাহিনী, আর উগ্র বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের নির্যাতন-নিপীড়ন থেকে বাঁচতে ২০১৬ সালে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। পরবর্তীতে ২০২১ সাল থেকে মিয়ানমার জান্তা সরকার ও জাতিগত বিদ্রোহীদের একটি দীর্ঘমেয়াদী বিদ্রোহ বিস্তার লাভ করে৷ বর্তমানে বিদ্রোহীদের আক্রমণে দিশেহারা দেশটির জান্তা সরকার। আর এই বিদ্রোহীদের সঙ্গে নিজেদের আধিকার আদায়ে যোগ দিয়েছে রোহিঙ্গারা।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স এমন ১৮ জন রোহিঙ্গা যুবকের সঙ্গে কথা বলেছেন যারা বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরের অভ্যন্তরে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর উত্থানের বর্ণনা দিয়েছে। এবং বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা বিদ্রোহী, মানবাধিকার কর্মী এবং বাংলাদেশের কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলেছেন।
তারা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিভিন্ন সহায়তাকারী সংস্থাগুলোর করা রিপোর্ট নিয়েও কথা বলেছেন।
এছাড়াও রয়টার্স রোহিঙ্গা এবং আরাকান সেনাবাহিনীর মধ্যে ব্যর্থ আলোচনা, অর্থ ও নাগরিকত্বের দলিল, রোহিঙ্গা যোদ্ধাদের জান্তা কর্তৃক প্ররোচিত করা এমনকি বাংলাদেশের কিছু কর্মকর্তার সহযোগিতার বিষয়েও সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রকাশ করছে।
বার্তা সংস্থাটি জানিয়েছে, এরই মধ্যে সশস্ত্র গ্রুপটিতে যোগ দিয়েছেন তিন থেকে পাঁচ হাজার রোহিঙ্গা।
যদিও সহযোগিতার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার কোন মন্তব্য করেনি, তবে রয়টার্সকে দেওয়া এক বিবৃতিতে রোহিঙ্গা যোদ্ধাদের প্ররোচনার কথা অস্বীকার করেছে মিয়ানমার জান্তা সরকার। সাহায্যের আবেদনের ভিত্তিতে মুসলিমদের (রোহিঙ্গা) নিজস্ব গ্রাম এবং অঞ্চলগুলো রক্ষা করতে প্রাথমিক সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক শাহাব এনাম খান বলেছেন, ‘কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোতে দুটি বড় রোহিঙ্গা জঙ্গি গোষ্ঠী- রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) এবং আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) এর ব্যাপক সমর্থন রয়েছে বলে মনে হচ্ছে না।’
কিন্তু একটি নিরাপত্তা সূত্রের তথ্যমতে, শিবিরে এবং এর আশেপাশে প্রশিক্ষিত রোহিঙ্গা যোদ্ধা এবং অস্ত্রের উত্থানকে একটি টাইম বোমা বলে বিবেচনা করে বাংলাদেশ। সহিংসতা প্রবণ শরণার্থী শিবিরে প্রতি বছর প্রায় ৩০ হাজার শিশু চরম দারিদ্র্যের মধ্যে জন্ম নেয়।
শাহাব এনাম খান মনে করেন, শরণার্থীদের দারিদ্র্য কাজে লাগিয়ে তাদের জঙ্গি কার্যকলাপ এবং অন্যান্য় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডেও ঠেলে দেয়া হতে পারে। তার মতে, ‘এটি তখন অঞ্চলের অন্য দেশগুলোতেও ছড়িয়ে পড়বে।’
মংডুর জন্য লড়াই
বর্ষার মাঝামাঝি সময়ে নৌকায় চড়ে শরণার্থী শিবিরের কাছাকাছি এলাকা থেকে পশ্চিম মিয়ানমারের মংডু শহরে যান রোহিঙ্গা বিদ্রোহী আবু আফনা। তিনি জানিয়েছেন, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীই তার থাকার ব্যবস্থা এবং অস্ত্র সরবরাহ করেছিল। সমুদ্রতীরবর্তী শহরটি নিয়ন্ত্রণে নেয়ার জন্য আরাকান আর্মির সঙ্গে লড়াই করছে সেনাবাহিনী। সেখানে অনেকক্ষেত্রে জান্তা সৈন্যদের সঙ্গে একই ঘরে থাকার ব্যবস্থা করা হয় রোহিঙ্গাদের।
আফনা বলেন, ‘যখন আমি জান্তার সাথে থাকতাম, আমি অনুভব করতাম যে আমি সেই লোকদের পাশে দাঁড়িয়ে আছি যারা আমাদের মা-বোনদের ধর্ষণ ও হত্যা করেছে।’
তবে মূলত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাখাইন জাতি আরাকান আর্মিকে সমর্থন করে। রাখাইনদের অনেকে রোহিঙ্গাদের নির্মূলে সেনাবাহিনীকেও সমর্থন দিয়েছিল।
চলতি বছর রয়টার্সের আরেকটি প্রতিবেদনে জানানো হয়েছিল, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের অবশিষ্ট বসতিগুলোর একটি পুড়িয়ে দিয়েছে আরাকান আর্মি।এরপরই আরএসও এবং সেনাবাহিনী যুদ্ধক্ষেত্রে পরস্পরকে সহায়তা করার সমঝোতায় পৌঁছায়।
আবু আফনা বলেন, ‘আমাদের প্রধান শত্রু মিয়ানমার সরকার নয়, রাখাইন সম্প্রদায়।’
রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে যোদ্ধা হয়ে ফিরেছে
বাংলাদেশের শরণার্থী শিবির থেকে হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে লড়াই করার জন্য নিয়োগ করা হয়েছে। আফনার দেয়ার তথ্যমতে, সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গাদের অস্ত্র, প্রশিক্ষণ এবং নগদ অর্থ প্রদান করেছে। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব প্রত্যয়নের কার্ডও দিয়েছে সেনাবাহিনী। রোহিঙ্গাদের জন্য এটি একটি বড় প্রলোভন। মিয়ানমারে বহু প্রজন্ম ধরে বসবাস করা সত্ত্বেও রোহিঙ্গারা দীর্ঘদিন ধরে দেশটির নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত। বাংলাদেশেও রোহিঙ্গাদের শরণার্থী শিবিরেই সীমাবদ্ধ থাকতে হয়, বাইরে আনুষ্ঠানিক কর্মসংস্থানে তাদের কোনো সুযোগ নেই।
আবু আফনা বলেছেন, ‘আমরা টাকার জন্য যাইনি। আমরা কার্ড আর জাতীয়তা চেয়েছিলাম।’
জুনে রয়টার্সের দেখা একটি এইড এজেন্সির ব্রিফিং অনুসারে, আর্থিক প্রলোভনের সাথে মিথ্যে প্রতিশ্রুতি, হুমকি এবং জবরদস্তি করে প্রায় ২ হাজার লোককে শরণার্থী শিবির থেকে নিয়োগ করেছে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী।
সংস্থাটির নাম প্রকাশ না করার শর্তে রয়টার্সকে এই ব্রিফিং দেখতে দেয়া হয়েছে।
জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা এবং দুই রোহিঙ্গা যোদ্ধার মতে, যাদের যুদ্ধে আনা হয়েছিল তাদের অনেককে জোর করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, যার মধ্যে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুও রয়েছে।
অর্থ সংকটে থাকা বাংলাদেশে নতুন করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার ব্যাপারে অনিচ্ছা বাড়ছে। বিষয়টির সাথে সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তি বলেছেন, বাংলাদেশের কিছু কর্মকর্তা বিশ্বাস করেন যে সশস্ত্র সংগ্রামই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার একমাত্র উপায়। তারা আরও বিশ্বাস করেন যে একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে সমর্থন করলে ঢাকা আরও সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে।
বাংলাদেশের অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার মো. জেনারেল মো. মঞ্জুর কাদের ক্যাম্প পরিদর্শন করে রয়টার্সকে বলেছেন, ‘বাংলাদেশ সরকারের উচিত রোহিঙ্গাদের তাদের সশস্ত্র সংগ্রামে সমর্থন করা। এতে জান্তা এবং আরাকান আর্মিকে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনার জন্য চাপ সৃষ্টি হবে এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন সহজ হবে।’
কাদের জানিয়েছেন, ‘পূর্ববর্তী বাংলাদেশ সরকারের (আওয়ামী লীগ সরকার) শাসনামলে কিছু গোয়েন্দা কর্মকর্তা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন করেছিলেন কিন্তু সামগ্রিক নির্দেশনা না থাকায় তা সমন্বিত উপায়ে হয়নি।’
আবু আফনা বলেন, ‘এই বছরের শুরুতে কয়েক ডজন রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা মংডু উদ্দেশ্যে যাওয়ার জন্য একটি জেটিতে নিয়ে গিয়ে নৌকায় করে সীমান্তের ওপারে পাঠিয়েছিল।’ আবু আফনার দাবি সেও এই গ্রুপের অংশ ছিল।
তখন বাংলাদেশি এক কর্মকর্তা তাদের বলেছিলেন, ‘এটা আপনার দেশ, আপনারা যান এবং সেটাকে পুনরুদ্ধার করুন।’
‘আমরা ভয়ের মধ্যে বেঁচে আছি’
মে মাসে স্ত্রী এবং চার সন্তানকে নিয়ে মংডু থেকে পালিয়ে আসা শরিয়ত উল্লাহ নামে এক রোহিঙ্গা শরণার্থী নিয়মিত রেশনের জন্য লড়াইয়ের বর্ণনা দিয়েছেন রয়টার্সকে।
মিয়ানমারে তিনি ধান ও চিংড়ি চাষ করতেন। তিনি জানান, সংঘাতের মধ্যে তার পরিবারের নিরাপত্তা নিয়েই সবচেয়ে উদ্বিগ্ন তিনি। তিনি বলেন, ‘এখানে আমাদের কিছুই নেই। আমরা আতঙ্কের মধ্যে বাস করি।’
রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা ভারী অস্ত্রে সজ্জিত এবং তারা আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে বেশ কঠিন লড়াই করেছিল। অন্যদিকে মংডুর এই যুদ্ধ ছয় মাস অতিবাহিত হয়েছে । যেখানে আরাকান আর্মির আক্রমণ ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে।
পরিস্থিতি সম্পর্কে জ্ঞান থাকা একজন বাংলাদেশী কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আরাকান আর্মি ভেবেছিল খুব শীঘ্রই তারা জয়ী হবে কিন্তু রোহিঙ্গাদের অংশগ্রহণের কারণে মংডুতে তারা ভুল প্রমাণিত হয়েছে।’
চলতি বছরের শুরুর দিকে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা এবং আরাকান আর্মির মধ্যে আলোচনার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু কিন্তু সে আলোচনা ভেস্তে গেছে বলে মনে করেন জেনারেল কাদের এবং মধ্যস্থতার সঙ্গে যুক্ত এক ব্যক্তি।
এদিকে রোহিঙ্গা শিবিরে আরাকান আর্মির সহিংসতার কৌশল দেখে ঢাকা ক্রমশ হতাশ হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট দুই কর্মকর্তা জানিয়েছেন। আরাকান আর্মির এ সহিংসতা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের রাখাইনে প্রত্যাবাসনের প্রচেষ্টাকে জটিল করে তুলছে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনে রাজি নয় আরাকান আর্মি। তারা রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বসতি স্থাপনের বিরোধিতা করেছে।
অন্যদিকে কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোতে আরএসও এবং আরসা প্রভাব বিস্তারের জন্য নিজেদের মধ্যে লড়াই করছে। সংঘাতের ফলে সাধারণ বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে, মানবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
মানবাধিকার গোষ্ঠী ফোর্টিফায় রাইটসের পরিচালক জন কুইনলি বলেছেন, ‘২০১৭ সালে শিবিরগুলো প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সহিংসতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে ছিল। সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো এই বছর কমপক্ষে ৬০ জনকে হত্যা করেছে। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে তারা অপহরণ ও নির্যাতন করে এবং হুমকির মাধ্যমে হয়রানি করার চেষ্টা করে।’
এদিকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য আন্তর্জাতিক তহবিল ফুরিয়ে আসছে বলেও সতর্কতা রয়েছে। নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের পরিচালক ওয়েন্ডি ম্যাকক্যান্স বাংলাদেশকে সতর্ক করে বলেছেন, ‘শরণার্থী শিবিরের জন্য আন্তর্জাতিক তহবিল ১০ বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। শরণার্থীদের জীবিকার সুযোগ না দিলে অনেকে, বিশেষ করে তরুণরা, জীবিকার সুযোগ পাওয়ার জন্য বিভিন্ন সংগঠিত দলে জড়িয়ে পড়তে পারেন।’
ইসরায়েল-হিযবুল্লাহর মধ্যে রাতভর হামলা পাল্টা হামলা হয়েছে। ইসায়েল দক্ষিণ বৈরুতে হিজবুল্লাহর ঘাটিতে আঘাত হেনেছে। এরপর পাল্টা হামলায় ২৫০টি রকেট হামলা করেছে হিজবুল্লাহ।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ বৈরুতে ইসরায়েলের হামলার প্রতিক্রিয়ায় তেল আবিবের উদ্দেশ্যে ২৫০টি রকেট হামলা চালিয়েছে হিজবুল্লাহ। এর মধ্যে কিছু রকেট ধ্বংস করতে পারলেও অধিকাংশই তেল আবিবে আঘাত হেনেছে। ফলে ইসরায়েলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
হিজবুল্লাহ তারদের বিবৃতিতে বলেছে, দক্ষিণ ইসরায়েলে অবস্থিত আশদোদ নৌ ঘাটি লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়েছে।
এদিকে, এই হামলার জন্য ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, লাখ লাখ ইসরায়েলী হিজবুল্লাহর রকেট হামলার শিকার হয়েছে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী থেকে বলা হয়েছে, ইসরায়েলে সর্বোচ্চ রকেট হামলার মধ্যে এটি একটি। এর আগে ২৪ সেপ্টেম্বর লেবানন থেকে ৩৫০টি রকেট হামলা হয়েছিল ইসরায়েলের উদ্দেশ্যে।