নয়া আতঙ্ক 'ব্ল্যাক ফাঙ্গাস' থেকে সাবধান!
প্রবল বৈশ্বিক মহামারি করোনার মৃত্যু ও আক্রান্তের মিছিলের মধ্যেই নাজেহাল ভারত 'ব্ল্যাক ফাঙ্গাস'কেও মহামারি বলে ঘোষণা করেছে। করোনা আবহে মানুষের মনে আতঙ্ক ছড়িয়েছে এই নতুন ও ভয়াবহ বিপদ। ইতিমধ্যেই ব্ল্যাক ফাঙ্গাস (Black Fungus) সম্পর্কে নানা তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে, যা নিয়ে আতঙ্ক ও বিভ্রান্তি বাড়ছে আর বিশেষজ্ঞরা জারি করেছেন নানা সতর্কতামূলক তথ্য।
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস (Black Fungus) নিয়ে ঘোরতর আতঙ্কের পটভূমিতে দিল্লির 'অল ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্স'-এইমস'র চিকিৎসক অনয় গুপ্ত জানিয়েছেন, 'ব্ল্যাক ফাঙ্গাস Black Fungus) মোটেও ছোঁয়াচে নয়। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলেই এই সংক্রমণ দেখা দিতে পারে'। তিনি আরও জানান, এটি পশুদের থেকেও মানুষের দেহে ছড়াতে পারে না। দেহের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা করে গেলে এই সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। দীর্ঘ দিন ধরে স্টেরয়েড নিলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে আর তখনই বাড়ে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি।
অক্সিজেন সরবরাহের সময় বা হিউমিডিফায়ারের (বাতাসে জলীয় বাষ্প নিয়ন্ত্রণের যন্ত্র) মাধ্যমে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণ (Black Fungus) ছড়াচ্ছে বলে নেটমাধ্যমে যে প্রচার চলছে, তাকেও ‘ভিত্তিহীন’ বলেছেন তিনি।
গবেষণায় বেশ কয়েকজন রোগীর ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, কোভিড আক্রান্ত হওয়ার পর তাদের শরীরে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস (Black Fungus) নামক ছত্রাকের সংক্রমণ দেখা দিচ্ছে। এইমস-এর ডিরেক্টর রণদীপ গুলেরিয়া জানান, সাধারণত খাবার, মাটি এবং বাতাস থেকেই এই সংক্রমণ মানুষের শরীরে ছড়ায়। করোনা (Covid) আক্রান্তদের দেহে স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার ফলে তাদের সহজেই এই সংক্রমণের শিকার হয়ে পড়েন। তা ছাড়া রক্তে চিনির মাত্রা যদি নিয়ন্ত্রণে না থাকলে বা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি স্টেরয়েড নিলে ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ সংক্রমণের সম্ভাবনা বাড়ে। মূলত নাক ও চোখের মাধ্যমেই এই সংক্রমণ শরীরে প্রবেশ করে।
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস (Black Fungus) বা মিউকোরমায়কোসিস একটি বিরল ফাঙ্গাল সংক্রমণ (rare fungal infection)৷ এটি কোভিড রোগীর শরীরে ধরা পড়লে চুয়ান্ন শতাংশ মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা৷ ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য দফতর থেকে জানা গিয়েছে, কোভিড সংক্রমণ থেকে রোগী সুস্থ হয়ে উঠলেও তার রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কমে যায়। তখনই এই জাতীয় ছত্রাক শরীরে বাসা বাঁধে। যে সব রোগীকে দীর্ঘদিন আইসিইউ-তে রেখে চিকিৎসা করা হয়েছে এবং যাদের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবিটিস রয়েছে, তাদের শরীরের এই জাতীয় সংক্রমণ বেশি দেখা যাচ্ছে।
ভারতে বিশেষ পরিস্থিতিতে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস মহামারির রূপ নিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মূলত দুটি কারণের ভারতে এই বিপদ ছড়িয়ে পড়েছে। ভারতে করোনায় মৃত্যু ব্যাপক হারে বাড়তে থাকায় একপর্যায়ে মৃতদেহের সৎকারের প্রথাগত স্থানে সংকুলান হচ্ছিল না। একপর্যায়ে তাই পোড়ো জায়গাগুলো সৎকারের জন্য বেছে নেওয়া হয়। যখন এমনটা করা হলো তাতে ঝুঁকি বেড়ে গেল। এসব অপরিচ্ছন্ন স্থান থেকে জীবাণু ছড়ানোর আশঙ্কাকে বাদ দেওয়া যায় না।
তাছাড়া, ভারতে যারা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হয়েছে, তাদের একটা বড় অংশেরই অক্সিজেন বেশি নেওয়ার কথা জানা গেছে। এবার ভারতে শিল্পের অক্সিজেন ব্যবহার করা হয়েছে। এখানকার অক্সিজেন সিলিন্ডার যত্রতত্র পড়ে থাকে। ধরা যাক, কোনো সিলিন্ডারের গায়ে এটি লেগে আছে। হাসপাতালে এটি নিয়ে আসার পর যারা এর রক্ষণাবেক্ষণ করছেন, তাদের হাতে এটি লেগে যাচ্ছে। সেটি রোগীর মধ্যে চলে যেতে পারে। আবার সিলিন্ডারের যেখান থেকে অক্সিজেন বেরোচ্ছে, সেখানে যদি ছত্রাক লেগে থাকে তবে ক্যাথেটার লাগিয়ে যদি রোগীকে তা দেওয়া হয়, তবে তা সরাসরি ফুসফুসে চলে যাবে। তখন এটি ভয়াবহ সমস্যা সৃষ্টি করছে।
ফলে অক্সিজেন সিলিন্ডারগুলোকে জীবাণুমুক্ত করার বিষয়টি এখন বেশি করে ভাবতে হচ্ছে। হাসপাতালে আসার আগে ও পরে সিলিন্ডার জীবাণুমুক্ত করতে হবে। প্রয়োজনে মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে নির্দেশ দিতে হবে।’
কাদের ঝুঁকি বেশি, সে সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের অভিমত হলো, যে মানুষগুলোর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা অনেক কম, তারা এতে আক্রান্ত হতে পারে। ক্যানসার, এইডসে আক্রান্ত রোগিদের এতে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। ডায়াবেটিস, ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ার পর রেডিও থেরাপি বা কেমোথেরাপি নিচ্ছে, তারা খুব ঝুঁকিতে আছে। বংশ বা জন্মগতভাবে কেউ কেউ কম প্রতিরোধক্ষমতার অধিকারী। ঝুঁকি তাদেরও আছে। তাদের জন্য বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, যাতে করে প্রকৃতি থেকে জীবাণু না আসে। যেসব রোগী স্টেরয়েড পেয়েছে, তাদের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কম থাকে। তাদেরও সাবধানে থাকতে হবে।
যেহেতু এটি প্রকৃতিতে বসবাস করে, তাই যেকোনো সময় এটি ছড়াতে পারে। এটি যেকোনো সময়েই আমাদের সংস্পর্শে আসতে পারে। আমাদের স্বাভাবিক প্রতিরোধক্ষমতার বলেই এটি আক্রমণ করলেও কিছু হয় না। ব্ল্যাক ফাঙ্গাস চোখ ও নাক দিয়ে প্রবেশ করতে পারে। চোখ থেকে আবার মস্তিষ্কে চলে যেতে পারে। এটা প্রাণঘাতী। আর সাইনাসের জায়গাটি ফাঁপা। সেখানে সংক্রমণ ব্যাপক আকারে হতে পারে এবং সেখান থেকে বেড়ে যেতে পারে। ফলে করোনার পাশাপাশি ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণের বিষয়েও চূড়ান্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন।