তালেবান সরকারের ১৪ সদস্য জাতিসংঘের কালো তালিকায়
মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দের নেতৃত্বে আফগানিস্তানে সদ্যঘোষিত তালেবান সরকারের সদস্যদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তালেবান সরকারের ৩৩ সদস্যের নতুন মন্ত্রিসভার ১৪ জন সদস্যই জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের কালোতালিকাভুক্ত।
কাবুল দখলের তিন সপ্তাহ পর মঙ্গলবার (০৮ সেপ্টেম্বর) কট্টরপন্থী হিসেবে পরিচিত ব্যক্তিদের নিয়ে আফগানিস্তানের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষণা করেছে তালেবান। সরকারে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তালেবানের কয়েকজন বর্ষীয়ান নেতা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের কালোতালিকাভুক্ত ।
মঙ্গলবার ৫ সদস্য বিশিষ্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ঘোষণা করেছে তালেবান। সরকারের প্রধান হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তালেবান বাহিনীর শীর্ষ ধর্মীয় নেতা হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা। অন্যান্য নির্বাহী সদস্যের মধ্যে রয়েছেন- মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ (প্রধানমন্ত্রী), সিরাজউদ্দিন হাক্কানি (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী), আব্দুল গনি বারাদার (উপ প্রধানমন্ত্রী), এবং মোহাম্মদ ইয়াকুব (প্রতিরক্ষামন্ত্রী)।
এই নির্বাহী সদস্যদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ জাতিসংঘের কালো তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী; এবং অপর সদস্য ও নতুন সরকারের বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিরাজউদ্দিন হাক্কানি মার্কিন গোয়েন্দাসংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকাভুক্ত আসামি।
হাক্কানির মাথার দাম ৫০ লাখ ডলার ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এফবিআইয়ের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় মঙ্গলবারও তার নাম দেখা গেছে।
সিরাজউদ্দিন হাক্কানি যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় নাম রয়েছে, যার মাথার মূল্য ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি দেশটির ভারপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং তার চাচা খলিল হাক্কানি আমেরিকার মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গি। তিনি শরণার্থী বিষয়ক মন্ত্রী।
ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোল্লা ইয়াকুব, ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোল্লা আমির খান মুত্তাকি এবং তার ডেপুটি শের মোহাম্মদ আব্বাস স্টানিকজাই এরা সবাই তালিকাভুক্ত, যা তালেবান নিষেধাজ্ঞা কমিটি নামেও পরিচিত।
তালেবান মন্ত্রিসভার পাঁচজন সদস্য গুয়ানতানামো বে-তে দীর্ঘদিন বন্দী ছিলেন। এরা সাবেক তালেবান সরকারে উচ্চ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
তাদের মধ্যে রয়েছেন মোল্লা মোহাম্মদ ফাজিল (উপ -প্রতিরক্ষামন্ত্রী), খায়রুল্লাহ খায়রখোয়া (তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী), মোল্লা নূরুল্লাহ নূরী (সীমান্ত ও উপজাতীয় বিষয়ক মন্ত্রী) এবং মোল্লা আবদুল হক ওয়াসিক (গোয়েন্দা পরিচালক)। গোষ্ঠীর পঞ্চম সদস্য মোহাম্মদ নবী ওমারিও প্রশাসনে রয়েছেন কারণ তিনি সম্প্রতি পূর্ব খোস্ত প্রদেশের গভর্নর হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের এক মুখপাত্র তালেবানের নতুন সরকার নিয়ে বলেন, তাঁরা আফগানিস্তানের নতুন সরকারে থাকা ব্যক্তিদের সম্পর্কে অবগত। সরকারে তালেবান ও তাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা থাকলেও কোনো নারী নেই। তালেবান সরকারের কয়েক সদস্যের নানা সংশ্লিষ্টতা ও অতীত কর্মকাণ্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন।
ওই মুখপাত্র আরও বলেন, নতুন সরকারকে তালেবান তত্ত্বাবধায়ক সরকার বলছে। বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের মাথায় আছে। তারপরও তারা তালেবানকে তাদের কাজের মাধ্যমে মূল্যায়ন করবে, তাদের কথায় নয়। আমরা আমাদের প্রত্যাশা স্পষ্ট করেছি। আফগানিস্তানের জনগণের একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার পাওয়া উচিত।