উত্তাল ফ্রান্সে ৪৯২ ভবনে ভাঙচুর, ২০০০ গাড়িতে আগুন

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বিক্ষোভ থেকে দুই হাজারেরও বেশি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়। ছবি: সংগৃহীত

বিক্ষোভ থেকে দুই হাজারেরও বেশি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়। ছবি: সংগৃহীত

এক কিশোর পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস ও এর আশপাশের শহরগুলোতে সংঘাত মারাত্মক রূপ নিয়েছে। গত ২৭ জুন রাত থেকে শুরু হওয়া সংঘাতে এখন পর্যন্ত প্রায় পাঁচ শ বাড়িঘরে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। পোড়ানো হয়েছে দুই সহস্রাধিক গাড়ি। শুধু বৃহস্পতিবার রাতেই বিভিন্ন স্থানের সহিংসতা থেকে ৮৭৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

শুক্রবার জরুরি সংকটকালীন বৈঠকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাখোঁ ক্ষয়ক্ষতির তথ্য তুলে ধরেন। তিনি জানান, চার দিন তিন রাত ধরে চলা সংঘাতে ৪৯২টি ভবনে ভাঙচুর চালিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। দুই হাজারেরও বেশি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। প্রায় চার হাজার স্থানে ধরানো হয়েছে আগুন।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বৃহস্পতিবার রাতভর বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা থামাতে গিয়ে ২৪৯ পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৮৭৫ জনকে, যাদের অর্ধেকই কিশোর-কিশোরী।

সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সংকট নিরসনে মন্ত্রিসভার সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বৈঠকে বসার আগে প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁ এক বিবৃতি দিয়েছেন। এতে তিনি সহিংসতা থেকে কিশোর-তরুণদের দূরে রাখতে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী এলিজাবেথ বোর্নে চলমান সহিংসতাকে ‘অসহনীয় ও অমার্জনীয়’ উল্লেখ করে বলেছেন, আইন-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় সরকার সব ধরনের ‘বিকল্প’ পর্যালোচনা করছে।

গত মঙ্গলবার সকালে প্যারিসের উপকণ্ঠ ন্যান্তেরে এলাকায় নাহেল এম নামে ১৭ বছরের ওই কিশোরকে পুলিশ গুলি করে মারার ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ছড়ানোর পর থেকেই অগ্নিগর্ভ হয়ে পড়েছে ফ্রান্সের শহরগুলো। অভিযোগ উঠেছে, ট্রাফিক আইন ভাঙার অভিযোগে গাড়িতে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ (একেবারে সামনে) থেকে তাকে গুলি করেছেন পুলিশের এক কর্মকর্তা।

সংবাদমাধ্যম বলছে, হলুদ রঙের মার্সিডিজ চালিয়ে যাওয়ার সময় তল্লাশি চৌকিতে নাহেলের গাড়ি থামান দুই পুলিশ কর্মকর্তা। ওই সময়ই বাকবিতণ্ডার জেরে নাহেলকে গুলি করা হয়।

পুলিশ তখন দাবি করে, ওই কিশোরের গাড়ি থামানোর পর সে পুলিশ সদস্যদের ওপর গাড়ি চালিয়ে দিতে চাইলে এক কর্মকর্তা আত্মরক্ষার্থে গুলি করেন। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে এ দাবির ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। ফুটেজে দেখা যায়, দুজন পুলিশ সদস্য গাড়িটির জানালায় ঝুঁকে আছেন এবং হাতের আগ্নেয়াস্ত্র চালকের দিকে তাক করা।

একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘গুলি তোমার মাথা ফুঁড়ে বের হবে...’। সেসময় স্টার্ট দিয়ে গাড়িটা চলতে শুরু করতেই পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে চালককে লক্ষ্য করে চলে গুলি। কয়েক মিটার এগিয়েই একটি খুঁটিতে সজোরে ধাক্কা খায় গাড়িটি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় নাহেলের।

ভিডিও ফুটেজটি ছড়িয়ে পড়ার পর মঙ্গলবার বিকেল থেকেই আন্দোলন শুরু হয় ফ্রান্সের রাজপথে। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, পুলিশকে গাড়িচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছিল, এমন কিছুই ফুটেজে ধরা পড়েনি। নাহেলকে কেন গুলি করে মারা হলো?

মঙ্গলবার ও বুধবার রাতে বিক্ষোভ থেকে বিভিন্ন শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও পুলিশ স্টেশনে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অর্ধশত পুলিশ সদস্য আহত হন। পোড়ানো হয় কয়েক ডজন গাড়ি।

এই সহিংসতার ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার বিকেলে ওই কিশোরের মা মোনিয়া ননতেরের নেতৃত্বে প্যারিসের পাশের শহরে রাজপথে বিক্ষোভ শুরু হয়। পুলিশ তাদের নিবৃত্ত করতে চাইলে সহিংসতা আরও ব্যাপক আকার নেয়। নিহত কিশোরের মায়ের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভে অংশ নেন হাজার হাজার মানুষ।

পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত ৯টা থেকে প্যারিসের বাস ও ট্রেন সেবা বন্ধের ঘোষণা দেন অঞ্চলের প্রধান ভালেরি পেক্রিস। অন্যদিকে প্যারিসের চেয়েও পরিস্থিতি নাজুক হওয়ায় ইয়ে-দে-ফ্রান্স অঞ্চলের শহর ক্লামার্তে বৃহস্পতিবার কারফিউ জারি করা হয়। সোমবার পর্যন্ত এই কারফিউ জারি থাকবে। প্রতিদিন রাত ৯টা থেকে পরদিন ভোর ৬টা পর্যন্ত কার্যকর থাকবে এই বিশেষ প্রশাসনিক অবস্থা।

লিলে ও ট্যুরসের মতো আরও অনেক শহরে বাস-ট্রেন সেবা বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়। কিছু শহরে বিক্ষোভ-সমাগমেও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।

যদিও ঘটনার পরপরই ৩৮ বছরের অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাকে হেফাজতে নেয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে।

সরকারি কৌঁসুলি এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ইচ্ছেকৃত হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে এবং তাকে বিস্তর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে।