বিতর্কিত দ্বীপ রক্ষায় মহড়া শুরু করেছে ইরান
সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) নিজেদের বলে দাবি করে এমন তিনটি বিতর্কিত দ্বীপ রক্ষার প্রস্তুতির অংশ হিসাবে সামরিক মহড়া শুরু করেছে ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ড কর্পস (আইআরজিসি)।
তেহরানের অভিজাত এই বাহিনী আজ বুধবার সকালের দিকে ওই অঘোষিত মহড়া পরিচালনা করে বলে জানিয়েছে আল-জাজিরা।
১৯৭১ সালে কৌশলগত হরমুজ প্রণালীর মুখে অবস্থিত তিনটি দ্বীপে রাজকীয় নৌবাহিনী প্রেরণ করে সেগুলো দখলে নেন ইরানের তৎকালীন শাহ।
তখন ব্রিটিশরা তাদের বাহিনীকে আজকের সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে প্রত্যাহার করে নেয়।
আমিরাতের নেতারা অন্যান্য আরব রাষ্ট্রের সমর্থনে তখন থেকেই দাবি করে আসছেন যে, ইরানের দখলে থাকা ওই দ্বীপগুলো তাদেরই।
এদিকে, ওই দ্বীপগুলোতে আমিরাতের মালিকানা বিষয়ক আলোচনার সকল প্রস্তাব বরাবরই প্রত্যাখ্যান করে এসেছে ইরান।
গত জুলাই মাসে উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের (জিসিসি) সঙ্গে রাশিয়ার যৌথ বিবৃতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে তেহরানে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছিল ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ওই বিবৃতিতে দ্বীপগুলোর উপর ইরানের অধিকারকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল।
তেহরানের আরেক কৌশলগত মিত্র চীন গত ডিসেম্বরে একই ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিল।
তখন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং জিসিসির সঙ্গে একটি যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছিলেন, যা আন্তর্জাতিকভাবে দ্বীপগুলোর মালিকানার ক্ষেত্রে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দাবিকে সমর্থন করেছিল।
এর ফলে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তেহরানে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূতকেও তলব করে ওই পদক্ষেপের প্রতিবাদ জানায়।
আইআরজিসি দ্বীপগুলোকে রক্ষা করার প্রস্তুতি হিসাবে আজ বুধবার বিমান, জাহাজ, ক্ষেপণাস্ত্র এবং সামরিক যানসহ মহড়া শুরু করেছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় মিডিয়া ইরনা জানিয়েছে, আইআরজিসি নৌবাহিনীতে প্রথমবারের মতো ৬০০ কিলোমিটার পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সজ্জিত একটি নতুন জাহাজ অন্তর্ভূক্ত করেছে। এ ছাড়াও দ্বীপগুলোতে ১২০ কিলোমিটার পাল্লার ফাথ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং গাদির ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা হয়েছে।
মহড়ার চিত্রে দ্বীপগুলোতে মোতায়েন বিপুল সংখ্যক নিরাপত্তা কর্মী, ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং বিমান বিধ্বংসী অস্ত্রশস্ত্র দেখা গেছে।
ইরনা আরও জানিয়েছে, আইআরজিসি দ্বীপগুলোকে রক্ষা করার জন্য ড্রোন এবং রিমোটনিয়ন্ত্রিত জাহাজও মোতায়েন করেছে।
আইআরজিসি নৌবাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফ আলিরেজা তাংসিরি বলেন, ‘পারস্য উপসাগরের দ্বীপপুঞ্জে ইসলামি ইরানের সম্মান রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য।’
মহড়া শুরু উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে আইআরজিসি কমান্ডার-ইন-চিফ ড.হোসেইন সালামি ইরানের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, তেহরান এবং তার আরব প্রতিবেশীরা তাদের নিজস্ব আঞ্চলিক জলসীমা রক্ষা করতে সম্পূর্ণ সক্ষম এবং বিদেশীদের উপস্থিতির প্রয়োজন নেই।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জড়ো হওয়া সেনাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত আপনার আঙুল ট্রিগারে থাকবে, ততক্ষণ আমাদের জনগণ শান্ত থাকবে এবং আমাদের এলাকা নিরাপদ থাকবে।’