ব্রিটিশ মিউজিয়ামের চুরি হওয়া সংগ্রহ উদ্ধার শুরু

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ব্রিটিশ মিউজিয়াম। ছবি : সংগৃহীত

ব্রিটিশ মিউজিয়াম। ছবি : সংগৃহীত

ব্রিটিশ মিউজিয়াম থেকে চুরি হওয়া প্রায় দুই হাজার জিনিসপত্রের উদ্ধার কাজ শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে কিছু জিনিস উদ্ধার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ব্রিটিশ মিউজিয়ামের চেয়ারম্যান জর্জ ওসবোর্ন।

চুরির ঘটনা স্বীকার করে সাবেক এই চ্যান্সেলর বলেন, ‘এসব ঘটনা মিউজিয়ামের খ্যাতিকে নষ্ট করেছে। আমরা এই জগাখিচুড়ি অবস্থার অবসান করতে যাচ্ছি।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে চুরির ঘটনা প্রথমবারের মতো সামনে আসার পরে আমরা সতর্ক হয়েছি। অন্যথায়, আরও জিনিস চুরি হতে পারত।’

এসব চুরির কাজে জড়িত থাকার সন্দেহে জাদুঘরের একজন কর্মীকে বরখাস্তও করা হয়েছে। ২০২১ সালের তদন্তকে ভুলভাবে পরিচালনা করার কথা স্বীকার করে শীঘ্রই জাদুঘরের পরিচালক হার্টউইগ ফিশার পদত্যাগ করবেন বলে জানা গেছে। শুক্রবার (২৫ আগস্ট) ফিশারের পদত্যাগের খবর জানানো হয়।

বিজ্ঞাপন

যুক্তরাজ্যের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের একটি এই ব্রিটিশ মিউজিয়াম। এই মাসের শুরুতে জাদুঘরের বেশ কিছু সংগ্রহ নিখোঁজ ও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর প্রকাশিত হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি চাপের মুখে পড়েছে।

জাদুঘর কর্তৃপক্ষ জানায়, খ্রিস্টপূর্ব ১৫ শতক থেকে খ্রিস্টাব্দ ১৯ শতকের জিনিসগুলো প্রাথমিকভাবে একাডেমিক এবং গবেষণার উদ্দেশ্যে রাখা হয়েছিল।

২০২১ সালের জুনে জাদুঘরের চেয়ারম্যান হিসাবে নিযুক্ত হওয়া ওসবোর্ন বিবিসি রেডিও-ফোরের শনিবারের (২৬ আগস্ট) অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে চুরি হওয়া জিনিসের উদ্ধার কাজ শুরু করেছি। আমরা বিশ্বাস করি দীর্ঘ সময় ধরে চুরির ঘটনা ঘটছে এবং স্পষ্টতই তাদের প্রতিরোধ করার জন্য আগে থেকেই কাজ করা দরকার ছিল।’

১৭৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্রিটিশ মিউজিয়াম প্রায় ৮ মিলিয়ন সংগ্রহ প্রদর্শনের স্থান। কিন্তু, ২০১৯ সাল পর্যন্ত মাত্র আশি হাজার সংগ্রহ জনসাধারণের প্রদর্শনের জন্য ছিল। বাকিগুলো সংরক্ষিত রাখা হয়েছে।

ওসবোর্ন বলেন, ‘সমস্ত সংগ্রহ সঠিকভাবে তালিকাভুক্ত ও নিবন্ধিত’ নয়। তাই তালিকার বাইরের জিনিসগুলো সরানোর একটি বড় সুযোগ রয়েছে। যা অনুপস্থিত তা সঠিকভাবে পুনরুদ্ধার করার জন্য একটি ফরেনসিক টিম গঠন করা হয়েছে। এসব ঘটনা অবশ্যই ব্রিটিশ মিউজিয়ামের খ্যাতিকে নিমজ্জিত করছে। এটা সুস্পষ্ট একটি বিবৃতি এবং আমি এর পক্ষ থেকে ক্ষমা চাইছি।’

কেন ২০২১ সালে উত্থাপিত ঘটনাগুলোকে গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হয়নি জানতে চাইলে ওসবোর্ন বলেন, ‘আমি ভাবতে পারিনি যে সর্ষের ভেতরে ভূত ছিল। এটি সম্ভাব্য নিশ্চিত যে, কিছু সিনিয়র কর্মী এসব ঘটনার সাথে জড়িত।’

২০১৬ সাল থেকে পরিচালকের পদে থাকা ফিশার শুক্রবার নিশ্চিত করেছেন যে, নতুন কাউকে নিযুক্ত করলেই তিনি তার দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন। এর আগে ২০২৪ সালেও তার পদত্যাগ করার কথা ছিল।

এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, এটি স্পষ্ট যে ২০২১ সালে ব্রিটিশ জাদুঘর বর্তমানে আবির্ভূত সমস্যাটির প্রতিক্রিয়ায় ব্যাপকভাবে সাড়া দেয়নি। সেই ব্যর্থতার দায় শেষ পর্যন্ত পরিচালককে নিতে হচ্ছে।

সংগ্রহের নিখোঁজ কেলেঙ্কারি বিশ্বজুড়ে ব্রিটিশ মিউজিয়ামের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

গ্রীক প্রত্নতাত্ত্বিক ডেসপোইনা কাউতসুম্বা এই সপ্তাহে বিবিসিকে বলেন, লন্ডনে পার্থেনন ভাস্কর্যগুলো নিরাপদ নয়। গ্রিস সরকার দীর্ঘদিন ধরে এলগিন মার্বেল নামে পরিচিত প্রাচীন সংগ্রহগুলো গ্রিসে ফেরত দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছে।

জাদুঘর বিষয়ক সর্বদলীয় সংসদ গ্রুপের কনজারভেটিভ চেয়ারম্যান টিম লফটন এমপি বলেন, ব্রিটিশ মিউজিয়াম এখন আর তার বিশাল সংগ্রহের বিশ্বস্ত অভিভাবক নয়। প্রত্নতাত্ত্বিক জিনিসগুলোকে তাদের মূল দেশে ফেরত দেওয়ার আহ্বানকে সুবিধাবাদী আচরণ বলে আখ্যায়িত করে তিনি বিবিসি নিউজ কালচার এবং মিডিয়া সম্পাদক কেটি রেজালকে বলেন, অন্যান্য দেশের উচিত হারানো জিনিসগুলো পুনরুদ্ধারে সহায়তা করা।

ওসবোর্ন বিবিসিকে বলেন, ‘ব্রিটিশ মিউজিয়াম বিশ্বজুড়ে গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রহগুলোকে একত্রিত করতে বিশাল ভূমিকা পালন করে। এই স্থান আমাদের মধ্যকার মিল, পার্থক্য, অতীত ইতিহাসকে স্মরণ করিয়ে দেয়।’