ভয় দূর করতে ফুকুশিমার মাছ খেলেন কিশিদা
জাপানের বিকল ওকুমা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিতর্কিত পানি ছাড়ার পরে তেজস্ক্রিয়তার ভয় দূর করতে বুধবার (৩০ আগস্ট) ফুকুশিমার উপকূল থেকে ধরা মাছ খেয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা।
ফুকুশিমা থেকে ধরা মাছ খাওয়া নিরাপদ প্রমাণ করার জন্য কিশিদার মাছ খাওয়ার দৃশ্য ভিডিও ধারণ করা হয়েছিল।
এনডিটিভি জানিয়েছে, ফুকুশিমা দাইচি পারমাণবিক প্ল্যান্ট থেকে পেরিশোধন করা তেজস্ক্রিয় পানি নিষ্কাশনের পরে উদ্বেগ তৈরি হওয়ায় জাপানের প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে।
ওই ভিডিওতে কিশিদা এবং তিনজন কর্মকর্তাকে তেজস্ক্রিয়তার বিষয়ে উরদ্বগ কমানোর প্রয়াসে ফুকুশিমার মাছ খেতে দেখা গেছে।
মাছ খাওয়ার সময় কিশিদা বলেন, ‘এটি খুব ভাল।’ এরপর তিনি দর্শকদের তার দেশকে সমর্থন করার জন্য নিরাপদ এবং সুস্বাদু জাপানি সামুদ্রিক মাছ উপভোগ করার আহ্বান জানান৷
ভিডিও ক্লিপটিতে আরও দেখানো হয়েছে যে, জাপানের নেতারা ফুকুশিমা অঞ্চলের সাশিমি, সিদ্ধ শুকরের মাংস, ফল, চাল এবং শাক-সবজি উপভোগ করছেন।
এর আগে, চীনের আপত্তিকে পাশ কাটিয়ে সুনামিবিধ্বস্ত ফুকুশিমা পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের তেজস্ক্রিয় পানি প্রশান্ত মহাসাগরে নিষ্কাশন শুরু করে জাপান।
এবিসি নিউজ জানিয়েছে, ফুকুশিমা পরমাণুকেন্দ্রের পরিচালনা সংস্থা টেপকো জানিয়েছে, গত ২৪ আগস্ট সকালে পরিশোধন করা ওই পানির একাংশ সমুদ্রে ফেলা হয়েছে। পাম্পের সাহায্যে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে বলে জানিয়েছে টোকিও। প্রায় ২০ মিনিট পরে প্রথম পর্যায় সম্পন্ন করার উদ্দেশ্যে দ্বিতীয় পাম্পকেও সক্রিয় করা হয়।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) গত জুলাই মাসে জানিয়েছিল, ফুকুশিমা পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের তেজস্ক্রিয় পানি জাপান যতখানি পরিশোধন করতে পেরেছে, তা সন্তোষজনক।
এ সংক্রান্ত রিপোর্ট জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিয়ো কিশিদার হাতে তুলে দিয়ে ওই তেজস্ক্রিয় পানি প্রশান্ত মহাসাগরে ফেলার ছাড়পত্রও দেয় তারা।
কিন্তু, ওই সময়ই চীনের পক্ষ থেকে তীব্র আপত্তি জানিয়ে বলা হয়, ‘আইএইএ রিপোর্ট সাগরে বর্জ্য পানি ফেলার ছাড়পত্র হতে পারে না।’
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে ভূমিকম্প এবং সুনামির জেরে বিধ্বস্ত হয়েছিল ফুকুশিমা পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র। তারপরে সেখানকার সিল করা যে ধাতব টিউবে জ্বালানি ইউরেনিয়াম থাকে, সেই টিউব বা রডগুলোকে ঠান্ডা করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল পানি।
প্রায় ১,০০০টি বিশেষ ধাতব কন্টেইনারে ভরে রাখা সেই পানিই ৩০ থেকে ৪০ বছর ধরে ধাপে ধাপে সাগরে ফেলতে চায় জাপান। তার আগে ওই পানি পরিশোধন করে যথাসম্ভব তেজস্ক্রিয়তামুক্ত করা হয়েছে বলে আইএইএ-এর কাছে দাবি জানানো হয়েছিল।
আইএইএ-এর প্রতিনিধিদল তাদের রিপোর্টে বলেছে, তারা পরীক্ষা করে দেখেছেন, ওই পানিতে এখনও যতটুকু তেজস্ক্রিয়তা রয়েছে, তা পরিবেশের জন্য তেমন ক্ষতিকর নয়।
আইএইএ-এর প্রধান রাফায়েল গ্রোসি জুলাই মাসে জানিয়েছিলেন, পানি ছাড়ার সময় ফুকুশিমা বিদ্যুৎকেন্দ্রে তাদের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন। চীনের পাশাপাশি জাপানের বন্ধু দক্ষিণ কোরিয়াও এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এমনকি, বিরোধিতা এসেছে জাপানের মৎস্যজীবীদের একাংশের পক্ষ থেকেও।