ন্যাটোর ছায়াযুদ্ধে এগিয়ে রাশিয়া!

  • আসমা ইসলাম, নিউজরুম এডিটর, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে আধুনিক রণাঙ্গনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ ঘটতে দেখা গেছে গত দেড় বছর ধরে। শক্তিশালী রাশিয়ার সঙ্গে মূলত ন্যাটোর সহায়তায় টিকে আছে ইউক্রেন। একদিকে রাশিয়ার অভিযোজন ক্ষমতা অন্যদিকে ন্যাটোর একের পর এক ব্যর্থ উদ্যোগ এগিয়ে রেখেছে রাশিয়াকে।

গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের ঘোষণা দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আজ পর্যন্ত টানা ৫৭১ দিনের মতো দেশ দুইটির সংঘাত চলমান। আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ওপর কঠোর নজরদারি এবং আধুনিক যুদ্ধকৗশল ও অস্ত্র ব্যবহারে প্রভাবশালী নেতৃত্ব রাশিয়াকে এগিয়ে রেখেছে। অন্যদিকে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার ও হুমকির ওপর বেশি গুরুত্বারোপ করা ন্যাটো সোয়াম বা একাধিক ড্রোনের একসঙ্গে হওয়া হামলাকে প্রতিহত করার ক্ষমতাও হারাতে বসেছে।

বিজ্ঞাপন

আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞায় থেকেও রাশিয়া আকাশপথের যুদ্ধকৌশলকে প্রতিনিয়ত উন্নত করছে। সম্প্রতি উত্তর কোরিয়ার নেতা কিমের সঙ্গে বৈঠক করেছেন পুতিন। রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমা বিরোধী এবং পারমাণবিক শক্তিধর উত্তর কোরিয়ার একজোট হওয়া ইউক্রেনের জন্য বিশেষ ভালো খবর নয়। যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো মনে করে রাশিয়া যুদ্ধের আধুনিক পদ্ধতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারবে না। কিন্তু তাদের এই ধারণা ভেঙে দিয়ে রাশিয়া তৈরি করছে কার্যকরী নতুন প্রজন্মের অস্ত্র। আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণের এ যুদ্ধ থামার আপাতত কোন লক্ষণ নেই।

রাশিয়া বনাম ন্যাটো: এ ছায়াযুদ্ধে কে এগিয়ে?

বিজ্ঞাপন

মহাকাশে থাকা স্যাটেলাইটগুলোর ক্ষমতা বিবেচনায়ও দুর্বল ন্যাটো। চীন ও রাশিয়ার বিধ্বংসী মিসাইলের কাছে ন্যাটোর হার মানার সম্ভাবনা তাই অনেক বেশি। তাদের কাছে সংরক্ষিত ড্রোন লক্ষ্যবস্তু শনাক্তকরণে নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকা পালন করছে। এর ফলে স্থানীয় নজরদারি ও অংশীদারিত্ব বাড়ানোর ক্ষেত্রে রাশিয়া এগিয়ে থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাশিয়ার কাছে আছে ওরল্যান ড্রোন যা শুধু লক্ষ্যবস্তু শনাক্তকরণই করে না, প্রতিপক্ষ যুদ্ধযানের ইলেকট্রনিকস কার্যক্রমও নষ্ট করে দেয়। এসব অত্যাধুনিক সরঞ্জামকে টেক্কা দিতে অনেকটাই নড়বড়ে ন্যাটো।

আসন্ন জাতিসংঘের ৭৮তম সাধারণ পরিষদের বৈঠক উপলক্ষে এই সপ্তাহে নিউইয়র্ক পৌঁছাবেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ মোকাবিলায় এবং রাশিয়ার আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মার্কিন সহায়তার বৃদ্ধির জন্য বাইডেনের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি সংবাদসংস্থা। ইতিমধ্যেই ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীকে যুক্তরাষ্ট্র প্রচুর আর্থিক এবং অস্ত্র সহায়তা প্রদান করেছে। রাশিয়া যেখানে ড্রোন কিংবা হিমার্স মিসাইল, অথবা অত্যাধুনিক অস্ত্র সবকিছুকেই প্রতিহত করতে সক্ষম হচ্ছে সেখানে ন্যাটো এই সহায়তা কতদিন চালিয়ে যেতে পারবে এবং চালিয়ে গেলেও তা কতটুক কার্যকর হবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।

কিম-পুতিন বন্ধুত্ব: আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতির টানাপোড়েন

সম্প্রতি কিমের রাশিয়া সফরের কূটনৈতিক আলোচনায় পারমাণবিক সহায়তার দিকটি বেশি উঠে আসছে। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীন রাশিয়ার আধিপত্য বজায় রাখা এবং আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানোর ক্ষেত্রে এটি প্রভাবশালী ভূমিকা রাখবে। ঘটনাটি এই অঞ্চলে পশ্চিমাদের প্রভাব বিস্তারের আকাঙ্ক্ষাকে ক্ষীণ করবে। অপরদিকে বাণিজ্যিক স্বার্থে জড়িত দেশগুলোও রাশিয়ার বিরোধিতা করবে না। কিমের সঙ্গে গড়ে উঠা এ বন্ধুত্ব ন্যাটোর অবস্থানকে আরও দুর্বল করে দেয়।

সম্প্রতি বেলজিয়ামের একজন সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সম্ভবত আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে রাশিয়ান হীরার ওপর নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেবে জি-৭ ভুক্ত দেশগুলো। এদিকে ইউরোপের তিন দেশের (পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া ও হাঙ্গেরি) সরকার ইউক্রেনের শস্য আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

এর আগে, ইউক্রেনের প্রতিবেশী ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত পাঁচ দেশকে ইউক্রেন থেকে শস্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল ইউরোপীয় কমিশন। এমন কূটনৈতিক পরিস্থিতি আঞ্চলিক নিরাপত্তার হুমকিকে দিনদিন ত্বরান্বিত করছে। পরাক্রমশালী রাশিয়ার অনমীয়তা এবং ন্যাটোর সৃষ্ট নানাবিধ প্রতিবন্ধকতায় আপাতত যুদ্ধ অবসানের সম্ভাবনা দেখছেন না বিশ্লেষকরা। তবে ন্যাটোর যুদ্ধকৌশল অনেকটাই রাশিয়ার কাছে পরাস্থ হচ্ছে বলে মনে করছেন তারা।