শিখ নেতা নিজ্জর হত্যাকান্ডে ভারতের সম্পৃক্ততার অভিযোগের প্রমাণ চেয়ে সুস্পষ্ট তথ্য উপস্থাপনের দাবি তুলেছে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর।ভারত-কানাডার চলমান সংকটের এই পর্যায়ে কানাডাকে অভিযোগ প্রমাণের নির্দেশ দিয়েছে ভারত।
গত মঙ্গলবার(২৬ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার আগে নিউইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেছেন বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এই ধরনের বিচার বহির্ভূত হত্যা ভারতের নীতি নয়।যদি কানাডার কাছে নির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ এবং প্রাসঙ্গিক কোনো তথ্য থাকে তাহলে আমাদের জানান ।আমরা দেখার জন্য অপেক্ষা করছি।’
দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর আরও বলেছেন, একজন শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাকে হত্যার বিষয়ে কানাডার যে কোনো নির্দিষ্ট তথ্য খতিয়ে দেখার জন্য ভারত প্রস্তুত। হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যার সাথে ভারতের সম্পৃক্ততার অভিযোগকে অযৌক্তিক বলে উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।
জয়শঙ্কর বলেন, এই ঘটনায় দিল্লির কোনও ভূমিকা নেই বলে জানিয়ে আসতেছে ভারত সরকার।গত কয়েক বছরে কানাডা এ্ই বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি, সংগঠিত-অপরাধ, সহিংসতা, চরমপন্থার সাথে সম্পর্কিত দলটির সাথে গভীরভাবে মিশে গেছে বলেও জানান তিনি।
উক্ত অনুষ্ঠানে জয়শঙ্করকে ফাইভ আইসের মধ্যে ভাগ করা গোয়েন্দা তথ্য সম্পর্কেও জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, আমরা যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড সহযোগে গঠিত এই গোয়েন্দা-শেয়ারিং নেটওয়ার্কের অন্তর্ভুক্ত নই।তাই তাদের প্রকাশিত তথ্য সম্পর্কে তারাই বলতে পারবে।তবে তারা ভারতকে ভুলভাবে উপস্থাপন করছে।
এর আগে কানাডার একজন মার্কিন কূটনীতিক গত সপ্তাহে বলেন, ফাইভ আইস অংশীদারদের দেয়া গোয়েন্দা তথ্য কানাডার প্রধানমন্ত্রীকে ভারতের সম্পৃক্ততা সম্পর্কিত বিবৃতিটি দিতে সাহায্য করেছিল।
চলতি বছরের জুন মাসে ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার একটি মন্দিরের বাইরে গুলি করে হত্যা করা হয় হারদীপ সিং নিজ্জরকে। তাকে ২০২০ সালে ভারত সরকার কর্তৃক সন্ত্রাসী মনোনীত করা হয়।ভারত সরকার প্রায়ই পশ্চিমা দেশগুলোতে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের খালিস্তান বা আলাদা শিখ আবাসভূমির দাবিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। শিখ-সংখ্যাগরিষ্ঠ পাঞ্জাব রাজ্যে ১৯৮০ এর দশকে খালিস্তান আন্দোলন উত্তেজনার শীর্ষে উঠেছিল।বর্তমানে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত শিখ প্রবাসীদের এসব সহিংসতা থেকে দৃরে থাকার নির্দেশ দিয়ে আসতেছিলো ভারত সরকার।
এই মাসের শুরুর দিকে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো নিজ্জর হত্যার সাথে ভারত সরকারের এজেন্ট জড়িত ছিল কিনা তা তদন্ত করছে এমন তথ্য প্রকাশ্যে আনলে উত্তেজনা চরমে উঠে।কানাডার অভিযোগের পর ভারত একটি তীক্ষ্ণ বিবৃতি জারি করে। কানাডায় ভারত বিরোধী কার্যকলাপ এবং বিচ্ছিন্নতাবাদ প্রচার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে দেশটি।ভারতীয় কূটনীতিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা উস্কে দেওয়ার অভিযোগও করে ভারত।সংকটের শুরুতেই উভয় দেশ একে অপরের কূটনীতিককে বহিষ্কার করে।সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার কূটনৈতিক মিশনে নিরাপত্তার উদ্বেগের কারণে কানাডার নাগরিকদের জন্য ভিসা পরিষেবা স্থগিত করেছে ভারত।চলমান পরিস্থিতিতে কূটনৈতিক সম্পর্ক কোনদিকে গড়ায় এটিই এখন দেখার বিষয়।